(১)
'বাবা, কষ্ট কি, কষ্ট কি?'
খাস্তগির তাকিয়ে থাকে ছেলের দিকে। কৌতূহলী চোখ কিন্তু ঠিক কৌতূহল নয় ; আবেগ, শংকা, উৎকণ্ঠা এবং কিংকর্তব্যবিমুঢ়তার ছাপ স্পষ্ট তার চেহারায়। ছেলেটার মুখে বুলির স্বতঃস্ফুর্ততা আসার সাথে সাথে কিন্তু এত প্রশ্ন ছিল না। এটা শুরু হয়েছে ইদানীং। স্কুলে যাতায়াত শুরু করার পর থেকেই এই কারন অকারন প্রশ্নরোগ পেয়েছে ছেলের। খাস্তগির বোঝে না এত প্রশ্ন এই এতটুকুন ছেলের মাথায় আসে কোথা থেকে। ওর বয়স চার পেরিয়েছে এই তো মাত্র মাসদুয়েক আগেই তো কেবল। ছেলের বোধহয় কোন কারনে ধারনা হয়েছে তার বাবা সবজান্তা এক প্রাণী।
টিভিতে এক দীর্ঘ শীর্ণ উলম্ব যুবককে দেখা যাচ্ছে। আধুনকিতায় আপাদমস্তক জর্জরিত। চুল আছে মাথায় , আছে মুখে দাঁড়ি গোঁফ সবই। কিন্তু সবখানেই কিম্ভুত। ঠিক যেন এক উদ্ঘট্টি। সে গাইছে 'আমি কষ্ট পেতে ভালবাসি..'
কিন্তু এ গান তো এই ছেলের নয় । খাস্তগিরের মনে পড়ছে না প্রকৃত শিল্পীর নাম। অথচ এক সময়ের প্রিয় শিল্পীর একজন। আজকাল শোনা হয় না। মনে সময় আর কষ্ট বেদনার বলি রেখা পড়েছে, সেগুলো বাড়ছে। তার উপর ছেলেটার এই প্রশ্ন ছোড়ার নতুন খেলা। একবার ভাবে বলে, 'বাবা এটাই কষ্ট, এই যে তুমি একের পর এক প্রশ্ন কর, আমার মনে যে সুপ্ত যন্ত্রনা দিয়েই যাও - সেটাই কষ্ট।' -সে উত্তরে ক্ষয়িষ্ণু কি বুঝবে?
ক্ষয়িষ্ণুর জিজ্ঞাসা থামছে না, উত্তর পাওয়ার আগে থামবেও না।
'কষ্ট কি, বলো না , বাবা বলো না?'
খাস্তগির আবার ভাবে একটা বকা লাগিয়ে দিলে কেমন হয়। চার বছরের ছেলে কষ্ট কি জানে না, এটা কি মানা যায়? কিন্তু ছেলেটা কেঁদে উঠবে। তার মাও এই সময় বাসায় নেই। পাশের বাড়ীর পড়শীতো সখির সাথে শপিংয়ে গেছে। এ অবস্থায় কাঁদানো কি ঠিক হবে? অবশ্য ক্ষয়িষ্ণু কেঁদে উঠলে বলা যেতো, 'এই যে কাঁদছিস এটাই কষ্টের ফল।'
তাহলে হয়তো সে আবার বলে উঠবে -বাবা কষ্টের ফল কি? খেতে কেমন- বলে উঠলেও আশ্চর্য হবে না খাস্তগির।
একটা চড় লাগিয়ে দেয়া যায়, তাতে কষ্ট মন থেকে দেহেও স্থানান্তর হবে ছেলেটার। ছেলের গায়ে অদ্যবধি সে হাত তোলেনি কখনও। আজ কষ্ট বোঝানোর জন্য হাত তুলে সে কষ্ট কি নিজের জন্যই এক নতুন কষ্টের স্তর হয়ে উঠবে না?
ছেলে বাবার হাত ধরে টানছে, 'বলো না, বলো না...'
আজ শুক্রবার । সকালে উঠেই তবুও বের হতে হয়েছিল খাস্তগিরকে। এক বাল্যবন্ধুকে পয়তালি্লশ হাজার টাকা ধার দিয়েছিল বছর দেড়েক আগে। শেষ তিনমাস তার পিছে, কাছে ঘুরে আর মেবাইলের তরঙ্গ ধরে খুঁজে বের করে পঁিচশ হাজার আদায় করেছে। বাকী বিশ আদায় করতে গিয়ে মনটাই বিষিয়ে গেছে। জামানো কষ্টের সামান্য পুঁজি বন্ধুর বিপদে দিয়ে কি আদৌতেই ভুল করেছিল? এখন তো তাই মনে হয় তার। ভুল থেকে শিক্ষা। কিন্তু কষ্ট থেকে কষ্টও যে এসেছে সাথে। সে কারনেই বন্ধুর খোঁজে বেরিয়েছিল ছুটির দিনে সকালেই । যাবার আগে বউয়ের মুখে হাসি ফোটানোর সূক্ষ্ম প্রচেষ্টায় বাজারটা করে দিয়ে গিয়েছিল। কাঁচাবাজারে কাঁচামালের আগুনের দাম মনটা এমনেতেই কষ্টে র্জজরিত করেছিল। এমনি করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির রেকর্ড কার্ল লুইসের দৌড়ের রেকের্ডের মত মুহূ মুহূ বেড়ে যেতে থাকলে কষ্ট ছাড়া মানুষের উদ্যাপনের জন্য আর কি অবষ্টি থাকবে! দামের সাথে পাল্লা দিয়ে খিঁচে যাওযা মন নিয়েই বন্ধুর বাড়ীর পথে পাড়ি দিয়ে গিয়ে সেখানে তাকে পাওয়া গেলো না। বউ বাচ্চা নিয়ে সে কঙ্বাজারে গেছে। মুখ দিয়ে একটা গালি ছাড়া আর কিই বা আসতে পারে। এসেও গেলো। মোবাইল নম্বরটাও বুঝি সে পাল্টেছে।
বউ তখন কল দিচ্ছিল। শপিংয়ে যাবে। তাড়াতাড়ি আসার তাগিদ। শুক্রবারেও কেনো যানজট কমেনা তা নিজের মনকেই যেখানে বোঝানো যায় না সেখানে গৃহলক্ষ্মী বউ কি করে বুঝবে। এ এক মহা কষ্ট। প্রতিটি যানজট সংসার সমাজে প্রতিনিয়ত কত যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করছে এই ঢাকার শহর তার হিসেব কে রাখে। অফিসের পথে আসা যাওয়ায় রোজকার কষ্টকর জ্যামের কষ্টেরতো তুলনাই নাই। আজ বাড়তি হিসেবে ছিল রাস্তায় একজন ভিআইপির আগমনাপেক্ষা। ঐ ব্যাটা রাস্তা দিয়ে যাবে বলে এত লাখ লাখ মানুষ লোকাল এবং সিটিং বাসে বসে এবং দাঁিড়য়ে সিদ্ধ হচ্ছে। বিষাক্ত গ্যাসে ফুসফুস যাচ্ছে ক্ষয়ে। ঘামের নিদর্শন ঝর্ণার পানিতে গোসলের চেয়েও স্পষ্ট হয়ে কাপড় ফুটে বেরিয়ে পড়ছে। এ হলো কষ্টের নিত্য চর্চা। কষ্ট চর্চা করতে হয় যে জাতিকে রোজ সে জাতির আর কর্ম চর্চা কখন হবে!
এই তো কত শত কষ্ট । কিন্তু এ কষ্ট এই বাচ্চা ছেলে কি বুঝবে। এ যে বলে বুঝাবার নয়। এ যে এ পোড়া দেশে জন্মানোর আবশ্যিক বোঝাবুঝির নিয়তি।
(২)
খাস্তগির ছেলের হাতটা কাছে টেনে নেয়। ভাল করে খুঁটিয়ে দেখে একটা সরু কাটা আঁচর। শুকিয়ে গেছে। সেটা দেখিয়ে ছেলেকে বলে, 'ক্ষয়িষ্ণু, এটা কবে কেটেছে?'
ছেলে উত্তর দেয় না। স্কুলে খেলা করতে গিয়ে কেটেছে , কিন্তু সে বলে না। সম্ভবত সে ভয় পেয়েছে। বললে যদি বাবা বকা দেয়। সে চুপ থাকে। খাস্তগির আবার বলে. 'যাক যেভাবেই কাটুক বাবা, কাটার পরে জ্বালা করেছে না, ঐ জ্বালাটাই কষ্ট।'
'কিন্তু মা বলেছে ওটা ব্যাথা।'
'যাহা ব্যাথা তাহাই কষ্ট...'
'তাহলে বাবা, ও গাইছে কেনো- কষ্ট পেতে ভালবাসে, ও কি পাগল, কষ্ট পেতে কেউ ভালবাসে কি করে?'
খাস্তগির মনে মনে বলে, ' এত পাকনা হৈছ , আর কষ্ট বোঝ না।'
তারপর চুপ হয়ে যায়। আসলে কি- কষ্ট কি ? সে কি সে নিজেও বোঝে। কষ্ট কি কেবলই সহ্য করার জিনিস। বন্ধুটি মোবাইল নম্বর পাল্টেছে। সে জানে না। এটাও তো কষ্ট। এটাও তো সহ্য। এক কষ্ট দিয়ে আরেক কষ্ট কি ঢেকে দেয়া যায়? তাহলে বন্ধুকে সামনে পেলেই একটা জোরে চড় মারলে কেমন হয়। ঠিক সেটা করতে হবে বন্ধুর বউয়ের সামনে। তাতে কি কষ্ট ঢাকা পড়বে? সাময়িক এক আনন্দ লাভ হবে হয়তো। তাহলে বিশ হাজার টাকার জন্য বন্ধুটিকে খুন করে ফেললে কেমন হয়। একজন খুনী হয়ে নিজের ভেতরে অনন্তকালের কষ্ট বসবাস করবে। বড় কষ্টের তলে চাপা পড়বে ছোট কষ্ট। এ কারনইে কি মানুষ কষ্ট দিয়ে কষ্ট ভোলে?
এ কারনইে বোধহয় এ দেশে এক সরকার পাঁচ বছর ধরে যে নির্বিচারে কষ্ট দিয়ে যায় আর জনগণ পরের নির্বাচনে তাকে পরাজিত করে সে কষ্টগুলো ভুলতে চায়। অথচ কষ্ট বাড়তেই থাকে। জাতিগত কষ্টগুলো যেন প্রচন্ড জ্যামিতিক...
খাস্তগির অবাক নিজের মনের ভেতর জমাকৃত কষ্টের এই এতরূপ ধারনায়। তারপর একটু শান্তির সুবাতাস লাগে গায়। মনে পড়ে অনলাইনের গল্পকবিতা.কম এ জুন মাসের কবিতা-গল্পের নির্ধারিত বিষয় 'কষ্ট', এই তো কত কিছু মাথায় এসে গেছে। রাতেই লিখতে বসতে হবে। অথচ সংসার জীবনের এই কষ্টকর দিনপাত শেষে লেখার সময় কই? সময় নেই, জীবনের অর্ধেক সময় কেটে গেছে ঘুমে আর বাকী অর্ধেক বুঝি পথের জ্যামে...এই লাইন দিয়ে একটা কবিতা লিখেই পাঠাবে কি না ভাবে সে।
তারপর একটা শব্দ । সম্বিত ফিরে পায়। চোখ বড় বড় হয়ে যায়। ছেলেটা টেবিল থেকে চায়ের কাপটা নিচে ফেলে দিয়েছে। ভেঙে খান খান হয়ে গেলো। কাচের টুকরো কিছু ভয়ে চলে গেছে যেন চেয়ারের তলে, কিছু খাটের তলেও লুকিয়েছে।
'এ কি করলি ক্ষয়িষ্ণু, ভাঙলি কেনো?' কণ্ঠে খাস্তগিরের রাগ রাগ ভাব।
'বাবা, কষ্ট দিলাম তোমাকে, আমি কষ্ট দিতে ভালবাসি...'
ছেলের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে পাঁচ আঙ্গুলের জোরালো স্পর্শ ছুড়ে দেয় ছেলের গালে। জীবনে প্রথম। ছেলে মুহূর্তে কেঁদে ওঠে। মনেমনে খাস্তগির ভাবে, ' এ তো শিশু নয় রে বাবা, এ তো পাকনা শিশু, এ ছেলে কি তার? ছিঃ ছিঃ এ হেন সন্দেহ, ছি ছিঃ বউ শুনলে আর আস্ত রাখবে সন্দেহ কি কষ্টের সূতিকাগার?'
ছেলে কাঁদছেই।
'বাবা, কাঁিদস না, যা তোর মাকে বলব না, এই আমি সব কাচের টুকরো উঠাচ্ছি। চুপ কর বাবা চুপ কর। তুই না কষ্ট কি বুঝতে চাইলি। এখন চড় খেয়ে বুঝতে পেরেছিস।'
তাও সে থামেনা। আওয়াজ বাড়ে। ওর মা এলে কেনো কাঁদালে সে জেরায় জর্জরতি করে দেবে। বলবে, 'এক ঘন্টাও ছেলেটাকে দেখে রাখতে পার না।'
'চল ক্ষয়িষ্ণু, চল রে বাবা দোকানে নিযে যাই। চকলেট খাবি। কিংবা একটা ফাইভ ষ্টার। '
এবার কান্না থামে। ছেলে মুহূর্তে স্যান্ডেল এনে পড়ে ফেলে। হঠাৎ ছেলের প্রতি অন্যরকম এক মায়ার আচ্ছন হয় মন। কত লক্ষ্মী। নিজে নিজে রেডি হতে পারে। মাথায় বুদ্ধিও বেশ। গর্ব গর্ব বোধ হয় খাস্তগিরের। এমন ছেলে তো তারই হবার কথা।
(৩)
ছেলের হাত ধরে দোকানের দিকে যাচ্ছে। বাসায় একটা বড় তালা ঝুলিয়ে বেড়িয়েছে। ক্ষয়িষ্ণুর মা যদি এসে দেখে মেইন গেটে তালা, বাড়ি মাথায় তুলবে। তার দোষ কি? রোজ দু'একটা ডাকাতির খবর তো শোনাই যায়। এত টেনশনে তবুও মানুষ গুলো ছুটছে। কোন ছোটার কমতি নেই। টাকাই মুখ্য আর যত কষ্ট-বেদনা-টেনশন সব তুচ্ছ। টেনশনই যেন এক মহাকষ্ট। এখন সেরকম কষ্ট হচ্ছে। যদি এই অল্পক্ষণে তালা ভেঙে ঢুকে পড়ে কেউ? আশাবাদী বাঙালী প্রাণ তো তারও। আশায় বেঁচে আছে এই শহরের মানুষগুলা। তাছাড়া আর সবই তো কষ্ট। সকাল থেকে সন্ধ্য পর্যন্ত সবই অনিশ্চিত। অনিশ্চয়তা আর কষ্ট যেন পরিপূরক। ৯ টা অফিসে ৯টায় পৌঁছাতে ঠিক কতক্ষণ আগে বের হতে হবে সে তথ্য কারও মাথায নেই। কোন আইনেও কি তা নির্ধারণ করা যাবে? পাট ভাঙা শার্টের ভাঁজটুকু বাসে ওঠার জন্য গুতোগুতিতে নষ্ট হয দিনের শুরুতেই। তারপর বাসের ভেতরে ঘন্টার পর ঘন্টা শার্টে শার্টে নিবির এক ঘামের সম্মেলন। অনির্দিষ্টকাল। এ মহা অসহ্য। অসহ্যই তো কষ্ট।
মনে মনে ঠিক করতে থাকে লেখার উপাত্ত-কোন কষ্টই পরিত্যাগ করা যায় না , নতুন কষ্ট দিয়ে পুরাতন কষ্টকে ঘুম পাড়াতে হয়। সুখ শান্তি দিয়েও এই ঘুম পড়ানোর কাজ করা যায়, কিন্তু সুখ যে বড় অস্থায়ী।
মনে মনে খুশি ভাব। বাহ! গল্পের একটা ভালো শুরু। কিন্তু কেউ আবার প্রবন্ধ বলে তিক্ত সমালোচনা করবে নাতো? বিষয় নির্ধারিত গল্প লেখার এই এক মহা সমস্যা তার। বিষয় ঠিক রাখতে গিয়ে কাহিনী এগোয় না , এগোয় বিষয়, তাই বারবার প্রবন্ধ হয়ে যায়।
ছেলে হাত ধরে টান দেয়।
'বাবা , বাবা, এই দেখো একটা বেলুনের প্যাকেট।'
আবারও ভ্যাবাচ্যাকা ভাব। কিংবা কষ্টই। ছেলে যা দেখাচ্ছে সেটা একটা কনডমের প্যাকেট। খাস্তগির চুপ করে থাকে। ঠিক বুঝতে পারে না। এ নিয়ে কি বলার আছে। সামনে কি প্রশ্ন তার সামনে আসবে ? মানুষগুলোও এত বেখায়াল আর নোংরা। যেখানে সেখানে ফেলে দেয়। মনে হয় জানলার বাইরে পুরো দুনিয়াটাই যেন ডাস্টবিন। এত নোংরা জাতি পৃথিবীর আর কোথাও আছে বলে মনে হয় না। জাতির কষ্ট খাস্তগির মনে মুহূর্তে যেন একিভূত হয়ে গেলো।
'বাবা, আমাকে একটা বেলুন কিনে দেবে। ঐ বেলুন। সেদিন মার কাছে দেখে চেয়েছিলাম। মা বকেছে। তারপর লুকিয়ে রেখেছে। তোমারা কি কর বেলুন দিয়ে? ফুলিয়ে ফুলিয়ে খেলা কর ?'
খাস্তগির বউয়ের উপর রেগে যায়, 'তাহলে ছেলে দেখেছে বাসায়, এতোটা কেয়ার লেস ও"
কিন্তু ছেলেকে কি বলবে খুঁজে পায় না। মনে কষ্ট ঘুরছে। পাশের এক জানালা দিয়ে একটা ছেলে ডেকে ওঠে, 'আই ক্ষষ্ণু।'
ছেলেটার সাথে কথা বলতে গিয়ে কনডমের কথা ভুলে যায় ক্ষয়িষ্ণু। খাস্তগির কি বাঁচা যেন বেঁচে গেলো। মনে হচ্ছে ঐ ছেলেটাকে গিয়ে একটা চুমু দিয়ে আসে। ছেলেটার পাশে জানালায় তার মায়ের মুখ দেখা যায। খুব মিষ্টি হাসি মহিলার। মিষ্টি কচি মুখ। মুহর্তে মনে নষ্ট কোষে আলোড়ন। চুমুটা যদি ছেলেটার গাল না ছুঁয়ে ঐ মুখে...ছিঃ তার ছেলে তার হাত ধরে আছে। এই কি মানুষ চরিত্র। হবে হয়তো। সে কারনেই আজকাল সমাজে বেড়েছ পরকীয়া। বাড়ছেই। একদিন হয়তো ছাপিয়ে যাবে। এ দেশে যা শুরু হয় তা না ছাপিয়ে থাকে নি কোনদিন। ঢাকা শহরের মোট রাস্তার দৈর্ঘ্যের চেয়ে দেখা যাবে গাড়ীগুলোর দৈর্ঘ্যের যোগফল বেশী। তারপরও প্রতিদিন গাড়ী নামছেই। গাড়ী ছাপিয়ে যাচ্ছে। এত টাকা তবুও এ জাতি গরীব। এ রহস্যের সমাধান ভীষণ কষ্টকর।
মহিলা সালাম দেয় খাস্তগির কে।
উত্তর দিতে দিতে ছেলের হাত ধরে সে এগিয়ে যায়।
দোকান থেকে ছেলের পছন্দ অনুযায়ী অনেক কিছুই কিনে দেয়ার ইচ্ছে থাকলেও আজকাল অতটা সাধ্য হয় না। হীনমন্যতাপূর্ণ একটা কষ্টে ছেয়ে যায় মন। সরকারী ব্যাংকের জুনিয়র অফিসার। বেতন আর কয় টাকা। বউয়ের ছোট ভাইটা শেয়ারের ব্যবসা করে। একটা বিও খুলে তার কাছে লাখ তিনেক টাকা দিয়েছিল বউ এর পীড়াপীড়িতে। আসলে হয়তো সেই সময়ের প্রেক্ষিতে সে বিনিয়োগে কোন ভুলই ছিলনা। তিন লাখ টাকা কয়েক মাসের মধ্যে ফুলে হয়ে উঠল পাঁচ লাখ। ওটাই সবের্্বাচ্চ। সেখান থেকে ষাট হাজার তুলেছিল। বউয়ের অনেকদিনের আবদার পুরণ করতে পেরেছিল। এক ভরির দুটো হাতের স্বর্ণের চুরি কিনে দিয়েছিল বউকে। শ্যালকের মুখের হাসিতে তারা স্বামী স্ত্রীও হাসত রোজ। অথচ কি থেকে কি হয়ে গেলো। এখন যা শেয়ার আছে তার বর্তমান মূল্য গত সপ্তাহে হিসেব নিয়ে দেখেছিল মাত্র এক লক্ষ ছিযাত্তুর হাজার টাকা। আরও কমছে। গরীবের টাকাগুলো কারা যেন কেড়ে নিয়ে ভরাপেট আরও ভরাচ্ছে।
ছেলে দোকানের সবগুলো ফাইভ ষ্টার কিনতে চায়। খাস্তগির তাকে মিথ্যে বোঝায়। বলে, 'নষ্ট হবে।'
তার অবশ্য কিনে দেয়ার ইচ্ছে ঠিকই হয়। তবুও কিনে দেয় মাত্র দুটো। এক একটা ৩৫ টাকা করে দাম। দোকানে আছে প্রায় ১৫ বিশটা। ৭০০ টাকার চকলেট একদিনে কেনার সাধ্য এ দেশে আর ক'জন্যই আছে। দিনে একটা করে কিনলেও মাসে ১০০৫ টাকা। একটা চকলেটের দাম এত কেনো হবে সে বোঝে না?
চকলেটের সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। ছেলের প্রশ্ন করা বন্ধ হয়েছে। পুরো রাস্তা সে আর কোন দিকে তাকিয়ে উত্তরের ব্রিবত অবস্থার সৃষ্টি করলোনা।
(৪)
চকলেট একটা খাওয়া শেষ হবার আগেই মা চলে এল। বুদ্ধিমতি নারী, তালার বিষয় বুঝে গেলো। খাস্তগির জানে নারীরা বিশেষ করে বউ নারীরা কথা শোনাতে পছন্দ করে। বলুক না। শুনতে শুনতে একদিন পুরুষেরা সব শোনা জনিত বিষয়ে অভিযোজিত হয়ে যাবে। যেমন রোজকার শহুরে কষ্টগুলো আজ সয়ে সয়ে অভিযোজিত হয়ে তো গেছেই প্রায়। হয়তো এমন হবে যানজট না পেরিয়ে গেলে সেদিনটা কোন কাজেই আর বসবে না মন। মন বড় আজব খাদক, সে কষ্টও গিলে খায়। হজম হয়, না হয় বদহজম।
চকলেট খাবার শাস্তি দিল ক্ষয়িষ্ণুকে তার মা। এখনই তাকে ঘুমাতে হবে। সে না ঘুমালে দুপুরের রান্না দেরী হবে। খাস্তগির দ্রুত হিসেব মেলায়। ছেলেটা ঘুমাতেই পিসিতে গিয়ে বসে। যদি গল্পটা লিখে ফেলা যায়।
কত স্বপ্ন ছিল। কত আশা ছিল। খাস্তগির লেখক হতে চেয়েছিল। টেবিলের দুটো ড্রয়ার ভর্তি তার গল্পের পান্ডুলিপি। বোন দুলাভাইয়ের ঘাড়ে বসে খেত। সেটা বিয়ের আগে। অনার্স তখন শেষের পথে। টিউশনি করে যা পেত তা দিয়ে নিজের সব খরচের পরও ভাগ্নে ভাগি্নর জন্য দু একটা চকলেটও তখন কেনা যেত। তখন টাকার সাথে দ্রব্রের মূল্য এত তফাৎও হয়নি। ঢাকার যানজট তখনও অনেক বেশীই ছিল। তবে সেটা এই নিথড় স্থিতি জড়তার অনন্তকালের ঘোরের মধ্যে থাকতনা। সেই সময়। রাতে বসে বসে কেবল গল্প লিখত খাস্তগির। তারপর অনার্স শেষে। মাষ্টার্সে উঠেই এই সরকারী ব্যাংকের চাকুরীটা পেয়েছিল তাও এক খালুর জোরে। বেতন বেশ অল্প তুবও অনেক টাকা মনে হত তখন সে জমানো টাকায় পরবর্তর্ী বইমেলাতে সুনামধ্যন এক প্রকাশককে ধরে বেশ কয়েকহাজার টাকা খসিয়ে দুটো বই প্রকাশ করে ফেলল। তারপর বিক্রি হলো না মেলাতে একটাও। সাহিত্য পাড়ায় কদচিৎ আনাগোনা ছিল তার। সেখানে এক বড় ভাই বললেন, 'আরে খাস্তগির, বই প্রকাশের আগে পাঠক নেটওয়ার্ক তৈরী করতে হয়। নেটওয়ার্ক থাকলে যা ই লিখবে তাই চলবে। প্রকাশকও ডাকবে। বিনে পয়সায় ছেপে দেবে বই।'
খাস্তগিরের সে বড় ভাই আজও লিখে চলেছেন লিটল ম্যাগে। কিন্তু নেটওযার্ক তার আজও কমপ্লিট হয় নি। প্রকাশ হয় নি কোন বই। ইদানীং নানান ব্লগে তার লেখা চোখে পড়ে। বিয়ের পরেও একটা বই প্রকাশ করেছিল খাস্তগির। বউ আর বউয়ের বান্ধবীরা ছাড়া সে বই আর কেনেনি কেউ। শেষ সে বইটি প্রকাশের সময় এক সুহৃদ সাহিত্যিক বন্ধু বলেছিল , 'নামটা তোমাকে ডুবাবে। ও নামে হবে না। খাস্তগির রহমান ছেড়ে রাখ ক্ষয়িষ্ণু রেহমান। কিংবা আরেকটু জটিল- ক্ষয়িষ্ণু বিদ্ধান টাইপ কিছু।'
খাস্তগির সে বিষয় বোঝেনি । তবে নামটা সে কাজে লাগিয়েছে ছেলের নাম রাখার সময়।
অভিজ্ঞতায় খাস্তগির মেনে নিয়েছে নেটওয়ার্ক থিউরীই সত্য। এটা নেটওয়ার্ক যুগ। সবকছিূ ছড়িয়েছে নেটের মত। রাস্তার যানজটগুলোও ঠিক এক একটা নেটওয়ার্ক। ভেব মনে মনে হাসে সে আবার। তেমনি নেটওয়ার্ক এ দেশের আনাচে কানাচে পদ্বতির ভাঁজে ভাঁজে ছেয়ে থাকা দূর্নীতি। এ নেটের জট খেলা যায় না। এ কষ্ট দেয়। ভুক্তভোগী মাত্রই দূর্নীতির কষ্টে ব্যাথিত এবং ভূক্তভোগী কে নয়?
নেটওয়ার্কের সন্ধান করেছে সে এই কয়েকবছর ফেসবুকে, অনলাইনের যত্র তত্র লিখে লিখে। নেটওয়ার্ক তৈরী কতটুকু হয়েছে সে জানে না। তবে মনে শান্তি এসেছে। ব্লগে তাৎক্ষণিত মন্তব্য তাকে লেখক হিসেবে একটা আলাদা পরিতৃপ্তি দেয়। একটা গল্প পোষ্ট করার পর পরই যদি কেউ লিখেও দেয়-ভাই এ গল্প বেশ জটিল, কিংবা আপনার লেখা ভালো লাগেনা, আপনি খাপ ছাড়া লেখেন অথবা আরও তিক্ত কিছু তাতেও সে খুশি হয়। একজন তো পড়েছে অন্তত।
গল্প কবিতা.কম এ আরও বড় প্রত্যাশায় লেখা শুরু করে খাস্তগির। এখানে কেবল লেখক আর লেখক। লেখকগণই পাঠক সকল। সমালোচনার মাত্রা তাই শৈলীযুক্ত ও যৌক্তিক হবে । সে মন্তব্য চায় শত শত তাই যে যাই বলুক। সে ভোটও চায়। সে একটা প্রতিষ্ঠা চায়। সে লেখক হতে চায়। অথচ এখানেও ধীরে ধীরে গজিয়ে ওঠা সেই নেটওয়ার্কের ধাঁধা তাকে কষ্ট দেয়। সে বোঝে না একজন লেখক কাম পাঠক অন্য লেখা না পড়েই মন্তব্য কি করে করে। কিছু মুখস্ত লাইন ও কেউ কেউ লিখেই যাচ্ছে মন্তব্যগুলোতে গল্পের পর গল্পে , কবিতার পর কবিতায়। কষ্ট পায় খাস্তগির। কিন্তু সে থামেনা। তার লেখা সে লিখেই যাবে। সে লিখছেও। এত দিনের অভিজ্ঞতায় সে জানে এ দেশে প্রিয় আর প্রকৃষ্ট হবার মাঝে বিস্তর তফাৎ। সে কারনেই তো অযোগ্য লোকগুলো হয়ে ওঠে কর্ণধার। ক্ষমতা আর জ্ঞানের সমাহার এ দেশে খুব কম মানুষের মাঝেই আছে। না হলে আন্তরিকতায় যানজটও কবেই দূর হয়ে যেত। আসলে লেখার অভ্যাস এবং লেখা শুরুর আগে দরকার ছিল রিডার্স নেটওয়ার্ক ক্রিয়েটিং থিউরী শেখা। সে শিক্ষা হয়নি। যার হয় তার গোড়াতেই হয়, যার হয় না তার কোন দিন হয় না। আজও এখানে সেই শিক্ষার অভাবে খাস্তগিরের হৃদয় নিংড়ে লেখা গুলো কেউ তেমন একটা পড়ে না। কেউ কেউ তেলের ড্রাম নিয়ে পিসির সামনে বসে। পোষ্ট খোলে আর ঢালে। তেলের অনেক দাম। অত টাকা কই তার। অত সময়ও নেই। লেখকের কাজ লেখা। পাঠকের কাজ পড়া। মধ্যবর্তী কাজটি যে কার, অনেক অনির্ধারিত বিষয়ের মত সে বিষয়ও এ জাতির কাছে অনির্ধারিত।
তবুও লিখতে হবে। লেখকের জন্য লেখার বিকল্প নেই। মন্তব্য আর ভোটে লেখকের মতি নেই। তবুও লোভ আছে। মানুষ লোভের উধের্্ব উঠলে তো জাতিগত বৈষম্য দূর হতো কবেই।
(৫)
খাটের উপর ছেলেটা ঘুমোচ্ছে। বিদ্যুৎ চলে গেছে। ছেলেটা ঘামছে। খাস্তগিরও ঘামছে। সব কটা জানালা খুলে দিল। তপ্ত রোদে বাতাসটাও গরম। বিদু্যতের এই আসা যাওয়ার অনবরত খেলাটা আর কারও ভালো লাগে না। তবুও কষ্ট এখানে সহ্যর শেষ সীমা পেরিয়ে মরে গেছে কবেই।
পিসিটা অফ হয়ে গেছে। লেখা শুরু করার আগেই শেষ। মনের ভাব কি এতক্ষণ অপেক্ষা করবে? ছোট রান্না ঘরটার দিকে তাকিয়ে বউয়ের জন্য মায়া হয়। ঘেমে তার ব্লাউজ শাড়ী একাকার। ব্রা'র ফিতে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে ভেজা ব্লাউজ ফুঁড়ে। সে দৃশ্য দেখে খোলা জানালার ওপাশে কার আবার পরকীয়া ভাব জাগে ভেবে ভয় হয়। বউয়ের কাছে এগিযে যায়। তাতে ছোট ঘরের গরম আরও বেড়েই যায়। বউ তবুও হাসে। ভালবাসার এই ক্ষুদ্র ক্ষনগুলোতে কষ্টের প্রবেশ বড় বাধাগ্রস্থ।
বউকে কাছে টানার ইচ্ছে হয়। বউ বলে, 'দূর! বাবু জেগে যাবে। '
বউকে ছেড়ে ঘরের ভেতর আসতে থাকে আর বলে , 'বউ দেখি একটা আইপিএস কেনা যায় কিনা?'
তারপর অর্থ কষ্টের চিন্তায় আশা অপুর্ণের কষ্ট জাগে খাস্তগিরের প্রানে।
পথ ঘাট, কর্ম কাজ, মন মনন সর্বত্র শতকোটি অসামাঞ্জস্য, ঘন্টায় ঘন্টায় সামাজিক যন্ত্র কষ্ট বিষয়টা আসলে খুব খেলো করে দিয়েছে। রোজ হত্যা লুণ্ঠন ডাকাতি হচ্ছে। কেউ কষ্ট পাচ্ছে না। সবাই নিজেকে টিকিয়ে রাখতে ভীষনভাবে ব্যস্ত। কষ্ট আজ মৃত। আজ শুধু বেঁচে থাকার প্রানন্ত অর্বাচিন প্রচেষ্টা।
এর মাঝে একটু লিখতে না পারলে কি আর খাস্তগিরের কি থাকলো। সেই লেখার জগতে নেটওয়ার্কের ফাঁদ।
গল্প কবিতা.কম একজনকে দেখা গেলো সব গল্প আর সব কবিতায় একই মন্তব্য জুড়ছে। তার কাছে সব লেখাই - এক কথায় অসাধারণ। তার নেটওয়ার্ক তৈরীর এ চিরন্তন চাটুকরী নীতি হয়তো পরিবেশগত কারনে সঠিকও। ওদিকে একজন আবার নিজেই ডজনখানেক আইডি খুলে নিজের লেখাই অসাধারণ বলছে। এ নিয়ে বেশ আলোচনাও হয়েছে। পরিবেশটা গুমট হয়ে যেতে বসেছে। কবি সাহিত্যিকরা নাকি মুক্তবোধের হয়। এখানে মুক্ত বোধ গুটিকয়েকে প্রবাহিত। বাকীরা তবে কি কবি সাহিত্যিক নয় ? যে লেখে সেই লেখক। তাহলে যে লেখে সেই মুক্ত চিন্তক নয় কি? খাস্তগির খেয়াল করে ধীরে ধীরে সেও কেমন একপেশে একটা মনোভাবের হয়ে উঠেছে এই সাইটে। সেও কিছু লোকের নিবের্াধ আচরণে বিরক্ত হয়ে একপেশে ভাব চর্চায় ডুবে যাচ্ছে। বিরূপতা জেগেছে যাদের প্রতি তাদের লেখা ভালো হলেও সুন্দর মুক্তবোধ সেখানে কাজ করছে না। এই যদি হয় অবস্থা তাহলে নেটওয়ার্ক হবে কি করে। নেটওয়াার্কের অভাবে এখানেও কি পরাজয়?
মাথায় গল্পটা বসিয়ে ফেলতে হবে। বিদু্যৎ এলেই দ্রুত টাইপ করতে হবে। কষ্ট নিয়ে লেখা গল্পে কেউ মন্তব্য করলে যদি কষ্টই না পাওয়া যায়, তাহলে সে গল্পের অভিব্যক্তি আর কি হলো। খাস্তগির ভাবতে থাকে, এক কষ্ট দিয়ে যে আরেক কষ্ট ঢাকতে হয়। কষ্ট নিয়ে কি লিখবে ভেবেই যেন আরেক কষ্টকর অধ্যায়।
হঠাৎ দুলে ওঠে চারপাশ। তাদের এই তিনতলার ঘর যেন হেলে যাচ্ছে। একবার বামে একবার ডানে। বউটা দৌড়ে আসে। খাস্তগিরও লাফিয়ে ওঠে।
তাদের দূজনের যৌথ আলিঙ্গনের মধ্যে এখন ক্ষয়িষ্ণু। এক সাথে মুহূর্তে দরজা খুলে বেরিয়ে আসে সিঁড়ি কোঠায়। তারপর এক দৌড়ে নিচে।
ততক্ষণে ভূমিকম্প থেমে গেছে। বেশ ভয়াবহ একটা ভূমিকম্প হয়ে গেলো। কয়েক সেকেন্ড। কিন্তু সবার আগে তাদের যে পরিচয় এখানে ফুটে ওঠে তা হলো বাবা-মা। তাদের সন্তানের চিন্তা সবার আগে ঢোকে মাথায়। তাকে বাঁচাতে হবে। ক্ষয়িষ্ণু ঘুম ভেঙেছে আগেই। সে হাসছে।
সে বলে ওঠে, 'বাবা খাটটা দুলছিল কেনো?'
'ভুমিকম্প হয়েছিল তাই।'
'ভূমিকম্প কি?'
খাস্তগির যুতসই একটা উত্তর খুঁজতে থাকে। ছেলের মা বলে, 'চুপ কর। ভূমিকম্প হলো ঘোড়ার ডিম।'
'দূর বাবা, মা না কিছু জানে না। আমি জানি ভূমিকম্প হলো মাটির নাচ...'
বাবা-মা দুজনেই হেসে ওটে। সিঁড়ির দিকে পা দেয়। ছেলের মুখে মিষ্টি দুষ্টু হাসি। ছেলের সজীব সুন্দর ভবিষ্যত স্বপ্ন ভাসে দু'জন। মুহূর্তে জগতের সকল কষ্ট তাদের গিলে খায় ছেলের সে হাসি।