শুক্রবার সকালে নীরব বাসায় বসে পত্রিকা পড়ছে। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে খুব। রহিম (কাজের ছেলে) এসে চা দিয়ে গেল। চায়ের কাপ হাতে নিয়েই নীরব জানালার পাশে গিয়ে দাড়াল। জানালার ফাক দিয়ে বৃষ্টি দেখছে সে। অনেকদিন বৃষ্টি দেখা হয়না এমন করে। মাঝে মাঝে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে। আজ অফিসে যাওয়ার তাড়া নেই। ভাল করেই বৃষ্টি উপভোগ করা যাবে। আসলে নীরব একটা প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকুরী করে। তেমন একটা ছুটি পায়না। হয়তো তাই প্রকৃতির সুন্দর রুপ দেখার সুযোগ হয়ে উঠেনা তার। বৃষ্টির গতি আরো বেড়ে গেল। বৃষ্টির ছোয়া পেয়ে সবুজ গাছগোলো যেন আরো সবুজ হয়ে উঠেছে।
হঠাৎ কলেংবেল বেজে উঠল। সাধারণত এমন সময় কেউ আসার কথা না। তার মাঝে বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি। দরজা খুলতেই খুব দ্রুত একটা মেয়ে ঘরে ডুকে পড়ল। মনে হয় বৃষ্টির তাড়া খেয়ে এসেছে। সারা শরীর ভেজা মেয়েটার।
- হুম ! এবার চা দিতে বলুন। নাহলে আবার আমার গলা বসে যাবে।
- চা বানানোর দুধ শেষ হয়ে গেছে। আর বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি এখন যাওয়া যাবে না।
- ঠিক আছে রঙ চা হলেই হবে।
- রহিম...... মেডাম কে চা দিও। রঙ চা। এবার বলুন কে আপনি ?
_ ও হ্যা ! দেখুন তো কেমন মানুষ আমি ? আমার নামটাই এখনো বলিনি। আমি নীতি। আপনার হবো বউ। হি হি হি !!!
- মানে ???????
- আজ আমাদের বাসায় আপনার বাবা গিয়ে আপনার সাথে আমার বিয়ের কথা ঠিক করে এসেছেন।
- মেডাম চা !
- চা খেতে খেতে নীতি- আমি আপনাকে যেমন ভেবেছিলাম আপনি আসলে তেমন না। তার চেয়েও সুন্দর, ভদ্র এবং ভালও মনে হচ্ছে। কিন্ত দেখুন আমি আমার অনার্স ফাইনাল না দিয়ে বিয়ে করতে চাইনা। এই কথাগুলো আমি আমার বাসায় ও বলতে পারতাম। কিন্ত এতে তেমন লাভ হত বলে মনে হয়নি। তাই সরাসরি আপনার কাছে আসা।
- নীতি ! আপনি কোথাও ভুল করছেন। আমার বাবা নেই। আর আপনার সাথে আমার বিয়েও ঠিক হয়নি।
- মানে ? আপনি নীরব না ?
¬- হুম ! কিন্ত আপনি যার কাছে এসেছেন সে নীরব ৩য় তলায় আর এইটা ২য় তলা।
চায়ের কাপ থেকে মুখ সরিয়ে নীতি একটু লজ্জিত হয়ে.........
- ইস !!! আমি যে একটা বোকা মেয়ে তারই প্রমাণ দিলাম এখন।
- না ঠিক আছে । আপনি বরং আপনার হবো বরের সাথে দেখা করে আসুন।
- তার আর প্রয়োজন হবে না আশা করি।
- মানে ?????????
- মানে আপনাকেই আমার খুব পছন্দ হয়েছে। আচ্ছা ! আপনি বিয়ে করেননি তো ?
- রহিম তখন সামনেই ছিল। আমার দিকে তাকিয়ে বলল- ভাইজান ! মেডাম কিন্ত দেখতে খারাপ না। আপনার সাথে মানাইবো।
- আমি ওকে ধমক দিয়ে সরিয়ে দিলাম।
নীতি একটু হাসল... আমি আজ আসি। তবে আবার আসবো বলে নীতি সেদিনের মত চলে গেল।
আজ অফিস থেকে বাসায় ফিরে শুনলাম ৩য় তলার রফিক চাচা আমার খোজ করছিলেন। ফ্রেশ হয়ে চাচার সাথে দেখা করতে গেলাম। ওনার সঙ্গে প্রায়ই টুকিটাকি বিষয়ে কথা হয় আমার । দরজায় নক করতেই চাচার ১৫-১৬ বছরের মেয়ে তানিয়া বেরিয়ে এল।
- চাচা আছে বাসায় ?
- হুম ! ভাইয়া আপনি ভিতরে এসে বসেন। আমি আব্বুকে ডেকে দিচ্ছি।
- হুম !!!
- নীরব বাবা এসেছো ?
- জ্বি চাচা ! শুনলাম আপনি আমার খোজ করছিলেন।
- আসলে তেমন কিছু না। তোমার কাছে দুঃখ প্রকাশ করতে গেছিলাম।
- চাচা ! আপনার মত মানুষের আবার দুঃখ কিসের ?
- চাচা গলাটা একটু নরম করে...বাবা তুমি আমার ছেলের মত। তাই তোমার কাছে বলছি। যে সন্তান মা-বাবাকে কষ্ট দেয় তারা কোনদিন সুখি হয়না।
- হঠাৎ করে চাচা এমন কথা কেন বলল ঠিক বুঝলাম না।
- বাবা জানো ! আমার এক বাল্য বন্ধুর মেয়ের সাথে আমার ছেলে নীরব এর বিয়ের কথা ঠিক করেছিলাম। মেয়ের নাম নীতি। খুব ভাল মেয়ে। নম্র,ভদ্র,শিক্ষিত। এবার অনার্স-এ পড়ছে। বিয়ের সব কিছু ঠিক ঠাক। কিন্ত আমার ছেলেটা আমার মান-সম্মান সব কিছু ধুলোই মিশিয়ে দিল। গতকাল খবর পেলাম সে এক মেয়েকে বিয়ে করে লন্ডন চলে গেছে। এখন আমি সফিকের(চাচার বাল্য বন্ধু) কাছে কি জবাব দিব ? এ মুখই বা কিভাবে দেখাবো ?
- আমার এখন কি বলা বা কি করা উচিৎ বুঝলাম না।
- বাবা নীরব একটা কথা বলি ?
- হ্যা বলুন...
- দেখ বাবা তুমি তো এখনো বিয়ে করোনি। তা ছাড়া তোমার বিয়ে করার যতেষ্ট বয়সও হয়েছে। তোমার মা-বাবা বেচে থাকলে হয়তো কথাটা তারাই বলতো। কিন্ত............ তোমার চাচা হিসেবে কথাটা আমিই বলি। তুমি এবার সংসারি হও।
- হ্যা চাচা আমিও বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করছিলাম।
- তাহলে বাবা আরেকটা কথা বলি ?
- হ্যা চাচা বলুন...।
- বলছিলাম তুমি যদি নীতিকে বিয়ে কর তাহলে মেয়ের জিবনটা বেচে যায়। আর মেয়েটাও দেখতে শুনতে খারাপ না। এখন তুমি যদি বল আমি ওর বাবার সাথে কথা বলতে পারি।
- ঐ দিনের ঘটনার পর থেকে নীতির প্রতি আমার কেমন যেন একটা মায়া জন্মে গেছে। হয়তো এটাই ভালবাসার একটা অংশ। আজ আমি নীতিকে সত্যি আপন করে চাই। কিন্ত চাচাকে সরাসরি কথাটা বলতে পারলাম না। শুধু বললাম ! চাচা আমি ভেবে আপনাকে জানাব।
- আচ্ছা ! তবে যাই করো একটু তারাতাড়ি করো।
- হুম !!!
অফিসে বসে আছি। কিন্ত কাজে মন বসছে না। শুধু নীতির কথা মনে হচ্ছে। বস্ কে বলে আজ একটু আগেই অফিস থেকে বেরিয়ে গেলাম। বাসায় গিয়ে দেখি নীতি। আমি আমার চোখ দুটুকে বিস্বাশ করাতে পারলাম না। একজন রমনী তার সংসার যেভাবে গুছিয়ে রাখে, ঠিক সেভাবে নীতি আমার সারা বাসা গুছিয়ে রেখেছে। আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই নীতি রান্না ঘরের দিকে চলে গেল। আমিও আর কিছু বলার চেষ্টা না করে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। এরই মাঝে নীতি টেবিলে খাবার সাজিয়ে ডাকতে শুরু করলো। তার মানে নীতি অনেক আগেই এসেছে। খাওয়া-দাওয়া করতে করতে প্রায় ১১টা বেজে গেল। কিন্ত নীতির বাসায় যাওয়ার কোন আগ্রহ দেখতে পেলাম না।
- অনেক রাত হইছে। তুমি বাসায় যাবে না ??
- নীতি চুপ করে বসে রইল !
- কোন সমস্যা ?
- নীতি তখনও চুপ করে বসেই রইল।
- কিছুক্ষন পর আমি আবার নীতিকে বললাম। দেখ নীতি অনেক রাত হইছে তোমার এখন বাসায় যাওয়া উচিৎ ।
- আমি আর বাসায় যাব না। এখনেই থাকব।
- মানে ???????
- মানে আমি আর ও বাসায় একা যাব না।
- পাগলামি করো না নীতি। তোমার বাবা-মা চিন্তা করবে।
- এ নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না। আমি বাসায় বলে এসেছি যদি ফিরতেই হয় তবে একা না সাথে স্বামী নিয়ে ফিরবো।
- আমি আর কথা বাড়ালাম না। এমন কি আমার মনের কথাটাও ওকে বলতে পারলাম না।
কয়েকদিন এভাবেই চলল... আজ সকালে নাস্তা করে অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলাম। এমন সময় হঠাৎ নীতি এসে পাশে বসল।
- এভাবে আর কতদিন চলবে ?
- তাহলে তুমি কি করতে চাও ?
- আমাকে বিয়ে করবে ??
- আমি তখনও কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। তাই বিসিয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলাম অফিসের কথা বলে।
অফিসে আজ Boooosssss আসেনি। তাই একটু আগেই অফিস থেকে বেড়িয়ে পরলাম। কিন্ত আজ গাড়িতে করে বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে না। আজ রিক্সায় করে বাসায় যাব। অনেক দিন রিক্সায় উঠা হয় না। রিক্সায় বসে নীতির কথা ভাবছিলাম। এমন সময় মোবাইলে একটা ফোন আসল। পকেট থেকে বের করে দেখি নীতির ফোন। ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে নীতি-- হ্যালো ! নীরব তুমি বাসার সামনে এসে আমাকে একটা ফোন দিও। আমি বের হব বলে লাইনটা কেটে দিল। বাসার সামনে গিয়ে নীতিকে ফোন দিতেই নেমে এল। নীল রঙ এর শাড়ী পরেছে নীতি। দেখতে নীল পরির মত লাগছে। আমাকে দেখে নীতি এগিয়ে এল । আমার হাত দুটু চেপে ধরে বলল- চল বিয়ে করে ফেলি। আমি একটু সময়ের জন্য বোবা হয়ে গেলাম। কিছুই বলতে পারলাম না।
হইছে আর ন্যাকামি করতে হবে না। আমি জানি তুমিও আমাকে অনেক ভালবাস। কিন্ত মুখ ফোটে বলতে পারছ না। আচ্ছা এমন কেন তুমি ? এ সামান্য কথাটুকু বলতে পারছ না ?
না মানে...মানে...
হইছে আর মানে মানে করতে হবে না। চল......
সেদিন হঠাৎ করেই আমাদের বিয়েটা হয়ে গেল। রফিক চাচা খবরটা শুনে তো মহা খুশি। তিনিই নীতির মা-বাবাকে বুঝিয়ে সুজিয়ে শান্ত করলেন। পরে নীতির বাবা-মা ও আমাদের বিয়েটা মেনে নেয়। তারপর থেকে আমাদের ছোট্ট সংসার ভালই যাচ্ছে। মাঝে মাঝে টুকিটাকি বিষয় নিয়ে আমার উপর ও রাগ,অভিমান করে বসে থাকে। আমি যখন বুঝতে পারি ও আমার উপর অভিমান করে বসে আছে। তখন ওর অভিমান ভাঙ্গানোর চেষ্টা করে যাই। তবে কোনদিনও ব্যর্থ হয়নি ওর রাগ ভাঙ্গাতে। আমি কোনদিন ভাবি নি নীতির মত কেউ একজন আমাকে এত ভালবাসবে। সত্যি আমি খুব ভাগ্যবান।
দেখতে দেখতে আমাদের সংসার জীবন তিন-বছরে পা দিল। কিন্ত এর মাঝে একদিনও নীতিকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়নি। আসলে প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকুরী করি। এতে তেমন একটা ছুটি পাওয়া যায় না। তবে এ নিয়ে আমার উপর নীতির কোন অভিযোগ নেই।
আজ অফিসে যাওয়ার কিছুক্ষন পরই Booossss এর রুম থেকে ডাক পরল। নীরব, তোমাকে কালই চিটাগং যেতে হবে ১৫ দিনের জন্য। আমি চাই তুমি যাও এবং সব কিছু সামলে আসো। আমি আর আপত্তি করিনি। কারন এ ফাকে মা-মেয়েকে নিয়ে ঘুরে আসা যাবে। পাঠককে জানিয়ে রাখি আমাদের ছোট্ট সংসারে ছোট্ট একটা মানুষের ও আগমন ঘটে। সে আমার মেয়ে “ কথা ” । কথা দেখতে ঠিক তার মায়ের মত হয়েছে। আমার দু-বছরের মেয়ের মুখের কথা শুনে মাঝে মাঝে আমি অবাক হয়ে যাই।
বাসায় ফিরে চিটাগং যাওয়ার টিকেট দুইটা নীতির হাতে দিতেই যেন অনেক চেনা একটা হাসি অনেক দিন পর দেখলাম। চিটাগং যাওয়ার ব্যাপারটা এমন কি নীতির হাতে টিকেট দেওয়ার দৃশ্যটুকু মেয়ের চোখ এড়াতে পাড়ল না। কথা আমার কাছে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল। আব্বু তুমি আম্মুকে অনেক ভালবাসো তাই না ? আমি ওর মুখে এমন কথা শুনে অবাক না হয়ে পারলাম না। দেখি ও উত্তরের আশায় চোখ বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। উত্তরে - মামনী, আমি শুধু তোমার আম্মুকে না তোমাকেও অনেক অনেক অনেক ভালবাসি। আব্বু ! তুমি সত্যি অনেক ভাল,বলে কথা আমার গালে একটা চুমু দিয়ে ঘুমানোর জন্য চলে গেল।
রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে নীতি কাপর গোছাতে শুরু করল। কারন কাল সকাল ৯টায় বাস তখন এত সময় পাওয়া যাবে না।
- হুম ! অনেক দিন কোথাও যাওয়া হয়না তো তাই......গেলে ভালই লাগবে।
- কিন্ত তারপরও আমার যেতে ইচ্ছা করছে না।
- তাহলে আমি এই ১৫ দিন তোমাদের ছেড়ে থাকবো কি করে ? তাছাড়া কথাকে যদি বলি যাব না তখন ওর মনের অবস্থাটা কি হবে একবার ভাব। কিছুক্ষন কি যেন চিন্তা করল নীতি। হয়তো মেয়ের কথা। অবশেষে নীতি যেতে রাজি হয়।
রাত ১১টা আমি ঘুমিয়ে পরলাম। একটা বাজে স্বপ্ন দেখছিলাম নীতিকে নিয়ে। হঠাৎ ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। তখন প্রায় ৩টা বাজে। পাশে তাকিয়ে দেখি নীতি নেই। বারান্দার গ্রীল ধরে দাড়িয়ে আছে নীতি। আমি পাশে গিয়ে ওকে স্পর্স করলাম। কিন্ত ও একটুও চমকিয়ে উঠেনি। মনে হ্ল সে আগে থেকেই জানত আমি ওর পাশে গিয়ে দাড়াবো। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। নীতি আমার দিকে না তাকিয়েই বলল- উঠে এলে যে ?
- না এমনি...। তুমি ঘুমাওনি????
_ না ঘুম আসছে না।
- কেন খারাপ লাগছে ?
- না এমন কিছুনা......... দেখ কি সুন্দর বৃষ্টি হচ্ছে।
- হুম !
- তোমার মনে আছে ঐদিনের কথা ? যেদিন আমি ভুল করে তোমার ঘিরে এসেছিলাম ?
- হুম ! ঐ বৃষ্টির কারনেই তো আমি তোমাকে পেয়েছি।
- দেখতে দেখতে দিনগুলি কিভাবে চলে গেল তাই না ?
- হুম ! সত্যি ভাবতে অবাক লাগে সেদিন আমরা একে অপরকে চিন্তাম না। আর আজ আমাদের ঘরে পুতুলের মত একটা ফুটফুটে মেয়ে আছে।
- আচ্ছা আমি যদি না থাকি তুমি কি আবার বিয়ে করবে ? আমার মেয়েটাকে কোনদিন মায়ের অভাব বুঝতে দিবেনা তো ?
- তুমি থাকবেনা মানে ? আর কোনদিন এমন কথা মুখে আনবেনা। তুমি না থাকলে আমি কি করে থাকবো বল ?
- ঠিক আছে আর বলব না। তবে আমায় একটা কথা দাও please ! কথাকে তুমি মানুষ করবে ? ওকে তুমি একজন ডাক্তার হিসেবে গড়ে তুলবে কথা দাও ।
- কথা দিলাম। আমি আমার দেহের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও তোমার কথা রাখার চেষ্টা করে যাব। তুমি শুধু আল্লাহ’র কাছে দোয়া কর।
-নীতি আমার কাধে মাথা রেখে আস্তে করে বলল - যাক ! তুমি আমাকে একটা চিন্তা থেকে মুক্তি দিলে।
-নীতি ঘুমাতে চল...... কথা মামনীর কপালে একটা চুমু দিয়ে নীতি ঘুমিয়ে পড়ল নীতি।
সকাল ৮টা । আমরা সব ঠিকঠাক করে নাস্তা সেরে বের হলাম। আমরা আধ-ঘন্টার মধ্যেই Bus Stand পৌছে গেলাম। আশে পাশে হকারদের হৈ চৈ শুনা যাচ্ছে। Bus ছাড়তে আরো ২০মিনিট বাকি। এ ফাকে কথার জন্য চিপস্ আর জুস নিতে নিচে নামলাম আমার সাথে কথাও ছিল। ফিরে আসার কিছুক্ষন পরই bus ছাড়ল। আমরা বেশ মজা করেই চিটাগং পৌছালাম। আমরা একটা হোটেলে উঠলাম। অবশ্য চিটাগং আমার এক মামার বাসা আছে । কিন্ত এতদিনের জন্য মামার বাসায় থাকব এতে নীতি রাজি হয়নি। তাই হোটেলে উঠা। অফিসে কাজে ১৫দিনের জন্য চিটাগং আসা। কিন্ত ৬দিনেই কাজ শেষ হয়ে গেল। এখন চিন্তা করছি ওদের নিয়ে কোথায় যাওয়া যায়। এমন সময় কথা মামনী এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল- আব্বু খালামনী বলছে কক্সবাজার নাকি অনেক সুন্দর । আব্বু চল না আমরাও যাই। Good idea ! তবে তোমার আম্মুকে রাজি করানোর দায়িত্ত কিন্ত তোমার done ?
OK done !
মেয়ে তার মাকে যেভাবেই হোক রাজি করে ফেলছে। পরে নীতি নিজেই এসে আমাকে বলল- এই তোমার তো কাজ শেষ চল আমরা কক্সবাজার থেকে ঘুরে আসি। আমি একটু না বোধক উত্তর দিলাম- না তোমার ভাল লাগবে না থাক যাব না। দেখি কথা মামনী আড়াল থেকে হি হি হি হি হি !!!!!! করে হাসছে। ওর হাসি দেখে নীতি বুঝে গেল যে আমরা বাপ-মেয়ে ওর সাথে একটু অভিনয় করলাম। ও আচ্ছা! তোমরা বাপ-মেয়ে আগে থেকেই ঠিক করে ফেলছো কক্সবাজার যাবে। আর এখন আমাকে বোকা বানানো হচ্ছে তাই না ? যাও আমি যাব না। কথা ওর মাকে জড়িয়ে ধরে বলল আম্মু চল না যাই। - না আমি যাব না। তুই তোর আব্বুকে নিয়ে যা।
আমি জানি নীতি আমার উপর রাগ করেছে। তাই আমি না বললে ও যাবে না। ঠিক আছে! কথা তোমার আম্মুকে বল ও না গেলে আমিও যাব না। - আম্মু তুমি না গেলে আব্বুও যাবেনা। তাহলে আমি কার সাথে যাব ? - হয়ছে আর অভিনয় করতে হবে না । বল আমি যাব। - আব্বু......আম্মু যাবে বলেছে।
নীতি আমার উপর রাগ করে বেশিক্ষন থাকতে পারেনা । আমি ওর হাত দুটো চেপে ধরলাম। ও আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। - সত্যি যাবে কক্সবাজার ? - হুম যাব। - তবে চল আমরা আজই যাই। - না । কাল যাই...... - Ok madam ! - Thank you sir ! হি হি হি ! এ নিয়ে বেশ হাসা-হাসি হল।
পরদিন সকালে আমরা কক্সবাজার রওনা হই। কক্সবাজারও আমরা বেশ মজা করেই পৌছালাম। ওখানেও আমরা একটা হোটেলেই উঠেছি। অনেক জার্নি করে এসেছি। আজ আর বাইরে যেতে ইচ্ছে করছে না নীতি বলল। কথাকেও বেশ ক্লান্ত মনে হল।
তারপরদিন সকালে আমরা সমুদ্র সৈকতে গেলাম। কথা মামনী তো আনন্দের জোয়ারে বাসছে। আব্বু চল আমরা পানিতে নামি...... আমি কথাকে নিয়ে ব্যস্থ হয়ে পরলাম। আমাদের সাথে নীতিও সমুদ্রে নেমেছিল। কিছুক্ষন পর এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখি নীতি নেই। কোথাও নেই। এদিকে কথাও বার বার আমাকে ওর মায়ের কথা জিজ্ঞেস করছে। কিন্ত আমি কোন উত্তর দিতে পারলাম না। আমাদের খোজা-খুজি দেখে পাশের লোকজন এসে ভিড় করতে শুরু করল। পুরো ঘটনা শুনার পর কেউ কেউ বলছে নীতি পানিতে ডুবে গেছে। কিন্ত এ কথা আমি বিস্বাশ করতে পারিনি। কারন নীতি আমার পাশেই ছিল। অনেক খোজা-খোজির পরও সেদিন নীতিকে আমরা পাইনি। ৩দিন পর নীতির মৃত দেহটা আমরা খুজে পাই।
নীতিকে হারানোর পর আমি একেবারেই ভেঙ্গে পরলাম। আমার পাশে দাড়ানোর মত কেউ ছিল না। আমি আমার দু-বছরের মেয়ে কথাকে মা ছাড়া কিভাবে মানুষ করব তাও বুঝতে পারছি না। অবশেষে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে সিলেট আর ফিরব না। নীতির স্মৃতি নিয়ে বাকি জিবনটা এখানেই কাটিয়ে দিব। সব কিছু শুনার পর আমার অফিসের Boss কক্সবাজারেই আমার একটা চাকুরীর ব্যবস্থা করে দিলেন।
অবশেষে নীরব নীতির স্মৃতি বুকে নিয়ে কক্সবাজারেই রয়ে গেছে। আজ কথাকে স্কুলে ভর্তি করাবে সে। নীরব নীতিকে কথা দিয়েছিল তার দেহের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও কথাকে সে মানুষ করবে। একজন ডাক্তার হিসেবে গড়ে তুলবে কথাকে। নীরব তার মেয়ে কথাকে আজও মায়ের অভাব বুঝতে দেয়না। ওর যখন যা প্রয়োজন নীরব তা নিজ হাতেই করে দেয়।
আজ নীতি নেই। কিন্ত বেচে থাকার জন্য নীরবকে নীতি সবচেয়ে দামি একটা উপহার দিয়ে গেছে। সে হল তার মেয়ে কথা। আজও নীরব নীতির দেয়া সেই মুল্যবান উপহারটা নিয়ে বেচে আছে। আর নীতিকে দেয়া সেই কথা পুরন করার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
অবাধ্য রোবোনা
সবাইকে ধন্যবাদ।
আসলে আমি এই সাইটে নতুন । আর আপনাদের কেমন গল্প ভাল লাগে এটা বুঝারও একটা বেপার আছে। এইটা আমার প্রথম গল্প যদিও অনেক আগের লেখা। আশা করি পরবর্তিতে আরো ভাল কিছু দিতে পারব ইনশাল্লাহ !!! সবাই দোয়া করবেন।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।