অত্রির সেই মানুষটা এবং অন্যরকম একটি দেশ

দিগন্ত (মার্চ ২০১৫)

জলধারা মোহনা
  • ১৩
  • ১৯
সাদা ক্যানভাসে নীলচে সবুজ রঙের আচড় দিতে দিতে অন্যমনস্ক হয়ে জানালার বাইরে তাকালো অত্রি.. তার পেন্টহাউস প্রায় আকাশের কাছাকাছি। দূর বহুদূর পর্যন্ত অনায়াসে চলে যায় দৃষ্টি.. জানালার ওপারে বাস্তবতার লেশমাত্র নেই, শুধু স্বপ্ন আর স্বপ্ন! আকাশ এখন মেঘাচ্ছন্ন.. বৃষ্টি আসবে বোধহয়। দূরে সমুদ্রের সাথে আকাশ মিলেমিশে একাকার.. যাকে লোকে ভালোবেসে বলে দিগন্ত। সেই ছোট্টবেলা থেকে সে দেখে আসছে দিগন্তের রঙ নীলচে সবুজ.. টারকোয়াজ ক্রেয়ন দিয়ে ড্রয়িং খাতায় দিগন্তরেখা আঁকতো সবাই। অত্রি মা কে প্রশ্ন করতো, দিগন্ত কেন ওই একটা রঙ দিয়েই আঁকতে হবে? সাত রঙেও তো দিগন্ত আঁকতে পারে সে! মা হেসে বলতো, দিগন্ত ওই নীলচে সবুজ রঙেরই হয় বোকা মেয়ে! মা যখন আচমকা হারিয়ে গেলো, সে খুঁজতে গেলেই বাবা তাকে বারান্দায় নিয়ে যেতো.. আর বলতো, দূরের ঐ দিগন্তে আছে মা, এইতো কদিন পরেই চলে আসবে। কিন্তু না.. আর কখনো আসেনি তার মা। পরে সে জেনেছে মা দিগন্তে যায়নি, মারা গিয়েছে। তবে অত্রি দিগন্তে যে কাউকে হারিয়ে ফেলেনি তা নয়। সে দিগন্তে বিসর্জন দিয়েছে তার বাবা কে...
এখন আর এসব নিয়ে ভাবে না অত্রি। তবে এখনও তার প্রিয় রঙ নীলচে সবুজ.. দিগন্তের রঙ।
এইমুহূর্তে অবশ্য দিগন্তে কোন রঙ নেই, মেঘলা আকাশ মানেই সাদাকালো ক্যানভাস.. তার ফেলে আসা জীবনের মতো। তবে এখন তার জীবন অন্যরকম.. এই জীবনে সাতরঙ আছে, কবিতা আর রঙতুলি আছে, সাফল্য আর স্বাধীনতা আছে। অত্রির নিজের দিগন্ত এখন আবারও রঙিন.. কারন আর সবকিছুর সাথে সাথে তার আছে নীলচে সবুজ ভালোবাসা।
অত্রির হঠাত্‍ মনে পড়ে গেলো তার বাবার কথা.. সেই আগেকার ছোট্টবেলার বাবা, যার পরিচয় ছিল শুধুই তার নিজের বাবা। তার বাবা রাজনীতিবিদ.. এটুকুই জানতো সে, তার মানে যে কি তাও সে ভাবেনি তখনও। যখন একটু একটু করে বুঝতে শিখলো রাজনীতি কি.. তখনই তার নিজের আদর্শের সাথে সংঘর্ষ বাঁধলো বাবার আদর্শের। তার বাবা রাজনীতির উঁচু পর্যায়ের নেতা, যার কথায় এবং টাকায় উঠে আর বসে সহস্র লোকজন। কিন্তু তার কাজে এসবের প্রভাব পড়েনা.. রাজনীতি করে নিজের জীবনে সাফল্য আনলেও দেশের বা এলাকার জন্য কিছুই করা হয়নি তার। তাই অত্রির সাথে তার বাবার সম্পর্ক তর্কবিতর্কের বেড়াজাল বুনে একটু একটু করে বিষিয়ে যেতে লাগলো। তারপরেও কেটে যাচ্ছিলো দিনরাত্তির.. সব ওলোটপালোট হয়ে গেলো একদিন।
দেশে তখন রাজনৈতিক অস্থিরতা.. তার বাবাও তাই ব্যস্ত ভীষণ! অত্রি বাইরে যেতে গিয়ে কি যেন নেবে বলে বাড়িতে ফিরতেই দেখে একগাদা নিম্নশ্রেনীর লোকজন বসার ঘরে.. সে দোতলায় তার ঘরে গিয়েও বাবার গলা শুনে বাইরে বেরিয়ে আসলো। শুনতে পেলো তার বাবা বলছে, হরতাল সফল করতে হলে কিছু বাস ট্রাক তো জ্বালাতেই হবে। এতে অল্পকিছু মানুষ মরলে কি করা যাবে! অত্রি তার নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলো না। সেদিন রাতে বাবার সাথে তুমুল ঝগড়া হলো তার.. একপর্যায়ে রাগ করে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে গিয়ে খালার বাসায় গিয়ে উঠলো অত্রি। সারাটা রাত অস্থিরতা আর মুঠো মুঠো দুঃস্বপ্ন। পরদিন পেপারে কয়েকটা বাসে পেট্রোল বোমা আর পুড়ে যাওয়া মানুষগুলোকে দেখে মরে যেতে ইচ্ছে করলো তার। সেইদিন থেকে দৃঢ়প্রতিজ্ঞা করলো অত্রি, ভূলে যাবে সে তার নিজের পরিচয়.. ভূলে যাবে ওই নোংরা মানুষটা তার বাবা। ভূলেও গেলো সে.. একেবারেই মুছে ফেললো অতীতের সবকিছু। কাজ করতে লাগলো দেশের মানুষের জন্য.. সে এবং আরো অসংখ্য তরুন তরুনী মিলে। তারা সবাই বুঝতে পেরেছিলো দেশের এই দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে হাল ধরতে হবে তাদেরকেই। এমনই এক উন্নয়ন কর্মকান্ডে পরিচয় হলো সেই মানুষটার সাথে..
যার জন্য এতদিন অপেক্ষা করছিলো অত্রি এবং সারাদেশের মানুষ। মানুষটা রাজনীতি বুঝতে চায় না.. চায় শুধু দেশ কে বুঝতে। তার দুচোখে অপার স্বপ্ন.. দেশের উন্নয়নের জন্য, দেশের মানুষের জন্য। সেই মানুষটার জীবনের সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেললো অত্রি.. আর সেই মানুষটা নিজেকে আর অত্রিকে জড়িয়ে ফেললো দেশের সাথে।
বাইরে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে.. সাদাকালো প্রকৃতির জলখেলা। অথচ অত্রির ক্যানভাসের প্রকৃতিতে শুধু রঙ আর রঙ.. নীলচে সবুজ দিগন্তে জ্বলজ্বল করছে আগামীর সূর্য। দূরে কোথাও বিদ্যুত্‍ চমকালো বিকট শব্দে। অত্রি ভয়ে চমকে উঠলো। ঠিক তখনি তার পেছনে দাড়িয়ে কাঁধে হাত রাখলো সেই মানুষটা.. দীঘলদেহী আত্মবিশ্বাসী এক স্বপ্নপ্রিয় দেশপ্রেমিক, যার হাতে একটু একটু করে গড়ে উঠছে নতুন এক দেশ.. যে দেশে শুধুই উন্নয়ন আর অনাবিল প্রশান্তি। অত্রির হৃদয়ে এখন পরম নির্ভরতা.. সে জানে এই মানুষটার হাত ধরে সে নিজে এবং তার দেশের মানুষ একদিন ঠিক পৌছে যাবে সাফল্য এবং ভালোবাসার নীলচে সবুজ দিগন্তে.....
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ruma hamid আপনার লেখাটি পড়েই এই সংখ্যার ইতি টানছি । যদিও ইচ্ছে থাকলেও ব্যাস্ততার কারণে সবার লেখা পড়তে পারিনি । আপনার লেখার হাত অনেক ভালো ।শুভকামনা রেখে গেলাম মোহনা ।
এ আমার সৌভাগ্য। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ :)
রবিউল ই রুবেন গল্পটি ভালো লাগলো.
তাই? আপনাকে ধন্যবাদ :)
আখতারুজ্জামান সোহাগ শেষটা পড়ে দারুণ আশাবাদী হয়ে উঠলাম। দারুণ লাগল আপনার কথামালা। দেশটা এগিয়ে যাক, সেভাবেই, যেভাবে আপনি চেয়েছেন। শুভকামনা গল্পকারের জন্য। আঁকাআঁকি করতে পছন্দ করেন বলে মনে হলো। ভালো থাকবেন।
লিখতে লিখতে আমিও আশাবাদী হয়ে উঠেছিলাম। দেশটা এগিয়ে যাক.. যেভাবে আমি চাই, আমরা চাই। আবোলতাবোল আঁকাআকি করি মাঝে মাঝে। আপনাকে ধন্যবাদ.. ভালো থাকবেন :)
সোহেল আহমেদ পরান গল্পের বিষয়-ভাবনা খুব সুন্দর। বর্ণনা আরো প্রাণবন্ত হবার সুযোগ ছিলো। গল্গের ক্লাইম্যাক্সটা আরো টানটান করলে ভালো লাগতো। শুভেচ্ছা অনেক। সাথে সমর্থন।
সত্যি কথাটি তাহলে বলেই ফেলি.. গল্প লিখতে গেলেই আমার সময় সীমা এলোমেলো হয়ে যায়। এর আগের বার গল্প কবিতার জন্য একটা গল্প লিখতে গিয়ে ওটা প্রায় উপন্যাস হয়ে গিয়েছিল, তাই আর দেয়াই হয়নি! আর তাছাড়া গল্প বেশি বড় হয়ে গেলে সবাই বিরক্ত হয়ে যেতে পারে ভেবে তড়িঘড়ি শেষ করে দিয়েছিলাম.. তবে শেষটা যেমন ভেবেছিলাম ঠিক তেমন করে তৃপ্তি সহকারে সমাপ্তি টানতে পেরেছি। দারুন মন্তব্য করেছেন.. আপনাকে অনেক ধন্যবাদ :)
শুভকামনা আপনার জন্য। ধন্যবাদ
গোবিন্দ বীন ভাল লাগল,পাতায় আমন্ত্রন রইল।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ :)
সৃজন শারফিনুল কে বলেছে আপনি গল্প লিখতে পারেন না, আপনি তো অসাধারণ লিখেন।। অনেক শুভ কামনা,....
হা হা হা.. তাই নাকি? আমি তো ভয়ে ভয়ে আছি কি যে আবোলতাবোল লিখলাম.. আপনার কথায় সাহস পেলাম। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ :)
রুহুল আমীন রাজু ANEK VALO LAGLO .....(AMAR PATAI AMONTRON ROILO )
আমন্ত্রন গ্রহন করলাম.. আপনাকে অনেক ধন্যবাদ :)
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্ আসলে আমরা মুখে যতই বলি, রাজনীতির ছায়া আমাদের সবার মাঝেই কিছু না কিছু প্রভাব বিস্তার করে বসে আছে । আপনি কী রাজনীতির প্রভাব মুক্ত ? তবে লেখার মাঝে একটা দারুন শক্তিশালী বক্তব্য ক্রিয়শীল ।
রাজনীতির ছায়া প্রভাব তো ফেলবেই.. চারপাশে নিত্যদিনের অস্থিরতা। তাই আমি, আপনি, আমরা, আমাদের লেখা গল্প কবিতা.. সবকিছুতেই রাজনীতি প্রভাব পড়ছে। এখন শুধু সেই মানুষটার অপেক্ষা, যে এসে শক্ত হাতে হাল ধরতে পারে এই দেশটার। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ :)
জুন খুব ভালো। হৃদয়কে ছুঁয়ে গেলো। খুব ভালো সাজিয়েছেন। ভালো লাগা সাথে ভোট রেখে গেলাম।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ :)
মনজুরুল ইসলাম সেচতন স্বেদশ ভাবনা।অিত্র চিরত্র অেনক স্বাথর্কভােব ফুেট উেঠেছ।চািলেয় যান গল্প েলখা। শুখ কামনা।

১৪ জুলাই - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৪৯ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "পদত্যাগ”
কবিতার বিষয় "পদত্যাগ”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ জুন,২০২৫