মাঘের পূর্ণিমা রাত । ঠান্ডা বাতাসের কারণে কিনা কে জানে বাঘা আজ কিছুক্ষ্ণণ পর পর ডেকে উঠছে।জামসেদ খুব বিরক্ত হয়ে বললঃ “ অই কুত্তার বাচচা কুত্তা , চুপ থাক ”। বাঘা কি বুঝলো কে জানে , চুপ করলো , কিন্তু মাটিতে পা ঘষতে লাগলো । জামসেদের মেজাজ আজ খুব খারাপ । গত দুই ঘন্টায় এই নিয়ে পাঁচবার পেসাব করতে ছুটছে সে।যেতে যেতে দরজার কাছে বসে থাকা পোয়াতি বিড়ালটাকে লাথি দিলো । খুব বেগ ছিলো , তাই পেছনের জংলাতে গেলোনা । চালা ঘরটার কোনায় বসে গেলো ।
টিপ টিপ করে বৃষ্টি পড়ছে । জামসেদের পেছন পেছন বাঘাও ঘরে ঢুকে গেলো । ভোল্টেজ খুব কম , যেনো জন্ডিস হয়েছে এমন একটা আলো সারা ঘর জুড়ে।পরিষ্কার করে কিছু দেখা যাচ্ছে না । জামসেদ হারিকেন ধরালো । কারেন্ট যেকোনো সময় চলে যেতে পারে । হারিকেনটা দরজার কাছে রাখলো । খাটের নিচ থেকে ট্রাংকটা বের করলো । সাদা রঙের পাঞ্জাবীটা বের করলো । ধোয়া একটা লুঙ্গিও নিলো । চুলায় গরম পানি বসালো । বড় ডেকচিটাও বের করলো । বাঘা আর কালী দরজার কোনায় বসে জামসেদকে দেখছে ।
চারপাশে মানুষের কোনো শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না । ঝিঁ ঝিঁ পোকারা এতোক্ষ্ণণ শব্দ করছিলো । বৃষ্টির দেখা পেয়ে ওরাও চুপ মেরে গেছে । চারপাশ কেমন যেনো অদ্ভুত নিরব , শুধু টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ হচ্ছে । বালতি নিয়ে জামসেদ গেলো কল থেকে পানি আনতে । বড় ডেকচিটা ভরতে ছয় বালতি পানি লাগলো । নিজের গোসলের জন্যও এক বালতি পানি আনলো । আব্বা বলে দিয়েছেন কাজে যাবার আগে পাক পবিত্র হতে । টিপ টিপ বৃষ্টিতে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে গোসল সেরে নিলো । সাথে ওজুও করলো । তারপর নামাজ পড়তে দাঁড়ালো । আব্বা বলেন কাজে যাবার আগে খেয়ে নিতে , কিন্তু ও কেনো যেনো এখনও খেতে পারে না । নামাজ শেষ করে বাইরে তাকিয়ে ও খুশি হয়ে গেল । কারণ বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেছে। জানালা বন্ধ করে, ম্যাচটা লুঙ্গিতে গুজে,শালটা গায়ে জড়িয়ে , বস্তাটা নিয়ে ঘর থেকে বের হতে গিয়ে মনে পড়লো বড় ডেকচিটা চুলায় বসানো হয়নি । আবার ঘরে ডুকে ডেকচি চুলায় বসিয়ে একটা বড় লাকড়ি ঢুকিয়ে দিল । কিছু তুষও ছিটিয়ে দিলো। ঘর থেকে বের হবার সময় বাঘাও বের হয়ে এল । সাথে সাথে কারেন্ট চলে গেলো । পূর্ণিমা রাত হলেও মেঘের কারণে সব অন্ধকার । বাঘা আসায় তাই জামসেদ খুশি হল ।
মতিনের বাড়ির পাশ দিয়ে যাবার সময় মতিনের বাচ্চাটা কেঁদে উঠলো । জামসেদের আবারও পেসাব ধরলো । কোনো ভাবেই চেপে রাখতে না পেরে মতিনের বাড়ির পেছনের বাঁশ বাগানে বসে পড়লো । আব্বা থাকলে তার এ অবস্থা দেখলে জুতোপেটা করতো । পেসাব করতে গিয়ে একটু ছিটা লুঙ্গিতে লেগে গেলো । আব্বা বলেছেন কাজে যাবার সময় অজু করতে । অজু তো গেলো । আবার অজু করেও লাভ নেই। কাপড় তো ময়লা হয়ে গেলো।বাড়িতে আর ধোয়া কোনো কাপড়ও নেই । মনে মনে নিজেকে গালি দিয়ে ও আবার এগোতে থাকলো ।রাস্তায় একটা মানুষও নেই । পেছনে ফিরে দেখলো বাঘাও নেই । মনের ভেতর কেনো যেনো কু ডাকে উঠলো । হঠাৎ ভয় করতে লাগলো । আব্বাটা যে কেনো এই সময় সদরে গেলো ? শীতের সময় ব্যবসা ভালো থাকে । হাসপাতালের বিকাশ কাকু এই সময়ই যে কেনো ডেকে পাঠালো ! কি নাকি একটা নতুন জিনিস শিখাবে । ভাবতে ভাবতে কবরের কাছে চলে এলো। বিজলী চাচীর নতুন কবরটা দেখা যাচ্ছে । আজ সকালে বাচ্চা হবার সময় মারা গেছে । জামসেদও জানাজায় এসেছিল।
কবরের কাছে এসে তো জামসেদ অবাক হয়ে গেল । কবর থেকে কেউ আগেই লাশ সরিয়ে ফেলেছে । তবে কি মিন্টুর কাজ ! আব্বা এই প্রথম ওকে একা একটা কাজ করতে দিলো আর ও যদি ঠিকঠাক মত কাজটা করতে না পারে তো আব্বা ওকে মেরেই ফেলবে । এমন সময় কাছেই একটা শেয়াল ডেকে উঠলো। জামসেদ হাফ ছেড়ে বাঁচলো ।
বস্তা থেকে টর্চ বের করে চারপাশে আলো ফেলতেই পাশের জংগলে সাদা কাপড় দেখতে পেলো।বস্তা থেকে রামদাটা বের করে সে ছুটে গেলো । কাছাকাছি হতেই বুঝতে পারলো শেয়াল নয় , এ হলো হায়েনা । তাও আবার চারটা । হায়েনারা তখন বিজলী চাচীর পেটের কাছটা খেয়ে ফেলেছে । একটা হায়েনাকে রামদা দিয়ে আঘাত করতেই বাকি তিনটা ওকে ঘিরে ধরলো...
পরদিন সকালে গ্রামের লোকজন দেখলো তিনটা লাশ পরে আছে । একটা হায়েনা আর দুইটা মানুষের লাশ।
আমরা জানি না পরদিন জামসেদের আব্বা নিজের ছেলের লাশ নিয়ে কি করবে...
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সূর্য
কংকাল কথা, হিমঘর..... আর এখানে ভাগার, একটা বিষয় টের পাচ্ছি মৃত্যু সম্পর্কিত লেখায় বেশ মনযোগ, গল্পগুলো যে ভাল লাগে তা আর "নতুন" সংখ্যার বিচারে নতুন করে বলতে হবে না। এই গল্পেও কি জামসেদদের কংকালের ব্যবসা ছিল? গল্প ছোটগল্পের পুরোটুকু স্বাদ দিয়েছে.................☼
জালাল উদ্দিন মুহম্মদ
গল্পের কাহিনীতে নতুনত্ব বিদ্যমান। কথাশিল্পের যাবতীয় বৈশিষ্ট্য লক্ষ্যনীয়। কাহিনীর সাথে অনুসঙ্গগুলো এসেছে স্বাভাবিকভাবে। অনেক অনেক ভাল লাগলো। আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভকামনা রইলো।
amar ami
আগেই পড়েছিলাম কিন্তু কমেন্ট করতে পারিনি, খুবই অসুস্থ ছিলাম পড়ার মুহুর্তে তবুও গল্পটা শেষ করেছিলাম তখন তাই এখন ভালোলাগা জানাতে আবার এলাম....এই ধরনের প্রেক্ষাপট আমার কিছুটা পরিচিতই, কিন্তু গল্পে এই প্রথম পড়লাম .....কবরের কাছে পৌছানোর আগ পর্যন্ত যে নিখুত বর্ণনা তাতে মুগ্ধ না হয়ে পারিনি, খুব ভালো লিখেছেন !
প্রেক্ষাপট পরিচিত এই কথাটা আগে জানলে তো আপনার সাথে আগে কথা বলতাম।আমি আগে কাগজে গল্প লিখে ফেলি।পরে টাইপ করি।কাগজে লিখা গল্প টা অনেক বড় ছিলো। কিন্তু প্রেক্ষাপট পরিচিত নয় বলে অনেক ছোট করে ফেলেছি। এখন কেমন আছেন? কি হয়েছে? এত কষ্ট করে অসুস্থ অবস্থায় পড়েছেন...অনেক ধন্যবাদ। কেউ অসুস্থ শুনলে আমার অস্থির লাগে। সাবধানে থাকবেন। শুভকামনা রইলো।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।