উলু বনে মুক্তা ছড়ানো বলে কথা। গাঁয়ের মানুষদের শত উপদেশ আর অনুরোধ হামিদ মিয়ার চিরাচরিত স্বভাবে চিড় ধরাতে পারেনি এতটুকু। তার ভিতরে লুকিয়ে থাকা হিংস্র পশুটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে বারবার। লোকটা দুবাই ছিল সাত বছর। এই সাত বছরে তার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তার কাল কুচকুচে গালের খোঁচা খোঁচা দাড়িগুলোকে সামান্য বড় করে একটা শেইপ দেয়া হয়েছে, তার রোগা লিকলিকে শরীরে মেদ জমে রীতিমত দানবাকৃতি ধারণ করেছে। আর সেই শরীরটাকে আবৃত করার জন্য শার্টের পরিবর্তে গোড়ালি পর্যন্ত ঢাকা কান্দুরা পড়ে আসছে অনেকদিন ধরে। পরিবর্তন এসেছে তার জীবনধারায়। সামনের আশ্বিন মাসে সে ঘরের বাঁশের বেড়াটিকে ইটের দেয়ালে রূপান্তর করার পরিকল্পনা নিয়েছে। শুধু পরিবর্তন হয়নি তার মনুষ্যত্বের। সবাই ভেবেছিল সাত বছর পর হামিদ মিয়া যখন দেশে এসে ছেলে রুস্তমকে দেখবে তখন একদম ভাল মানুষ হয়ে যাবে সে। কিন্তু রুস্তমের মার কপালে সেই সুখটুকু আসলনা। বিংশ শতাব্দীর এই যুগেও রুস্তমের মার চোখের পানি শুকায়না কখনো, কাঁদতে কাঁদতে তার চোখের কোণা ঘা হয়ে গেছে।
হামিদ মিয়ার আরো একটা নাম গ্রামে ব্যাপক জনপ্রিয়। ছোটবেলা থেকেই সবাই তাকে হাম্বা নামে ডাকে। এই নিয়ে বড় আফসোস হাম্বার মনে। নিজের আচরণ আর কাজের সাথে নামটা একদমই বেখাপ্পা। তাই নিজের দুঃখটা কিছুটা হলেও নিবারণ করার জন্য ছেলের নাম রেখেছে রুস্তম।মানের মধ্যে একটা বাঘ-সিংহ ভাব আছে।আর বড় মেয়ের নাম রেখেছে কুসুম। নিরীহ ভাবটা যেন সব কাজে বজায় রাখতে পারে তার জন্যই এই নাম।
কুসুমের বয়স এখন এগারো বছর। তবে এগারো বছর আগে কুসুম যেদিন পৃথিবীর আলো দেখেছিল সে দিনটি কিন্তু মোটেও সুখের ছিলনা। কুসুমের দাদী আঁতুড় ঘর থেকে বেড়িয়ে যেইনা বলল-
ওরে হাম্বা আজান দে। তোর ঘরে চাঁনমুখ কইরা কন্যা সন্তান আইছে, তুই বাপ হইচস।
কথাটা শুনা মাত্র হাম্বা মিয়ার দুই ছোঁয়াল শক্ত হয়ে গেল। সাথে সাথেই আঁতুড় ঘরে গিয়ে রুস্তমের মাকে চুলের মুঠি ধরে টেনে হিঁচড়ে ঘরের বাইরে নিয়ে আসল অনেক মানুষের সামনে নিজের পুরুষত্ব প্রমাণ করার জন্য। রুস্তমের মার উপর এলোপাথাড়ি লাথি মারার তালে তালে গালি বর্ষণ করতে থাকে সে। তার অপরাধ একটাই। সে মেয়ে সন্তানের জন্ম দিয়েছে।রুস্তমের মা’র তখনো রক্ত ঝরছিল। এমন শরীরে এত নির্মম অত্যাচার সইতে না পেরে দুইবার বিকট শব্দে চিৎকারের পর নিমিষেই নুয়ে পড়ে মেয়েটি। সেদিন পড়শিরা যদি এগিয়ে না আসত তাহলে হয়তোবা আর শেষ রক্ষা হতোনা রুস্তমের মায়ের। সীমাহীন অত্যাচারে যে চোখ বুঁজে গিয়েছিল একবার সে চোখ দিয়ে আর কখনই দেখা হতোনা এই পৃথিবীকে।
অথচ মেয়ে সন্তান জন্ম দেয়ার জন্য কি রুস্তমের মা কেবল একাই দায়ী ছিল? ছেলে সন্তান জন্ম নিলে পুরুষ সমাজ ঢাক-ঢোল পিটিয়ে নিজের গুনের কথা জাহির করে আর কন্যা সন্তান হলে সব দোষ শুধুমাত্র মেয়েদের। পুরুষ শাসিত সমাজের কোন বিধানে লেখা আছে এই নীতি? X আর Y ক্রোমোসোমের জটিল মারপ্যাঁচ বুঝেনা রুস্তমের মা। সে এটাও জানেনা যে কন্যা সন্তান জন্ম দেয়ার জন্য নারীরা নয় শুধুমাত্র পুরুষরাই দায়ী। আর জানলেই বা কি হত? সে তো কখনোই প্রতিবাদ করবেনা। ঘরকুনো ব্যাঙের মত বোবা কান্না করা ছাড়া আর কোন পথ জানা নেই তার। আবহমান গ্রাম-বাংলার নিরিহ পল্লী বধূর যাপিত জীবনের সকল বৈশিষ্ট্য ধরে রেখেছে সে। স্বামী প্রভুর মন জোগানোর জন্য এখনও প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। আর যাই করুক তাকে তো আর প্রতিবাদী হওয়া মানায় না।
হাম্বা মিয়া তার বউকে মেরে পৈশাচিক আনন্দ পায়। রুস্তমের মাকে মারা তার কাছে এখন নেশার মত। গাঁজাখোর মানুষ যেমন গাঁজা ছাড়া একদিনের জন্যও চলতে পারেনা, হাম্বা মিয়ারও বউকে মারা ছাড়া পেটের ভাত হজম হয়না। সবসময় রুস্তমের মাকে মারার জন্য নানা কারণ খুঁজে বেড়ায় সে। কোন কারণ না থাকলে এমনিতেই মারে। তবে বউকে মারার পরবর্তী ক্রিয়াকলাপেও তার এখন পরিবর্তন এসেছে। আগে বউকে মেরে ঘর থেকে বেড়িয়ে যেত সে। এখন রুস্তমের মা’র কান্নার শব্দ এড়িয়ে যাবার জন্য দুবাই থেকে আনা টেপ রেকর্ডার দিয়ে জোড়ে জোড়ে আরবি কিংবা হিন্দি গান শুনে আর গানের তালে তালে অন্ধের মত হাত পা ছোড়ে সে। আজো তার ব্যতিক্রম হয়নি। হাম্বা এইমাত্র তার নেশার খোরাক মিটিয়ে এসেছে। পাশের ঘর থেকে আসা রুস্তমের মা’র কান্নার শব্দ শুনা যাচ্ছে।
হাম্বা ছেলেকে আদেশ করে–
বাজান গান ছাড়োতো।একটু এনজয় করি।রুস্তম টেপ রেকর্ডারে গান ছাড়ে।গান চলছে-
মাইয়া হয় প্রেমের ভাণ্ড, মাইয়া হইল মা,
মাইয়া না হইলে ভবে আমরা আসতাম না,
সৃষ্টি করতে দুনোই লাগে নারী এবং নরগো,
প্রেম রাখিও অন্তরের ভেতর।
এই গান চলতে দেখে তৎক্ষণাৎ তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে হাম্বা।
এই গানের ক্যাসেট কে রাখছে এইখানে? চিৎকার করতে থাকে হাম্বা।
আমি জানিনা বাজান।উত্তর দেয় রুস্তম।
কুসুম কই? কুসুম....., ঐ কুসুম....জোরে জোরে চিৎকার শুরু করে হাম্বা। ততক্ষণে কুসুম এসে হাম্বা মিয়ার সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।একটা অপরাধ বোধ কাজ করছে তার মাঝে।
আইজকাল মা বুঝি তাইলে ভালই তালিম দেয় তাইনা?
মা ক্যান তালিম দিব? আমার কাছে মনে হইল গানডা আমনের হুনন দরকার, তাই......
চুপ কর বেয়াদব।কথা বলস কোন মুখে তুই?
জন্মের পর তো আমার মুখে মধু দেন নাই, দিছেন লবণ। মিষ্টি কথা কেমনে কমু।খালি কডা কথা বাইর হয়।
ও তাইনা? দেখ আইজ তোর মা’র একদিন কি আমার একদিন। মাইয়ারে এত লাই দিছে?
হাম্বা রুস্তমের মা’র ঘরের দিকে পা বাড়ায় আবার। কুলসুম হাম্বার পা জড়িয়ে ধরে।
বাজান গো আমার ভুল হইয়া গেছে।মার কোন দোষ নাই।আমি ক্যাসেট রাখছি।মারে মাইরেন না।মা মইরা যাইব।
কিন্তু হাম্বা কুসুমের কথা শুনলনা। পা ছাড়িয়ে চলে যায় সে। রুস্তমের মাকে মারার জন্য আরো একটা উপলক্ষ পেল সে।
পাশের ঘর থেকে রুস্তমের মা’র কান্নার শব্দ শুনা যাচ্ছে আবারো। কিন্তু সে শব্দটা স্বাভাবিক মানুষের মত নয়, যন্ত্রের মত। কুসুমের চোখে পানি ঝরছে অঝোরে। তার জন্যই মাকে আবার কষ্ট পেতে হল। কিন্তু রুস্তমের সেদিকে কোন খেয়াল নেই। পাশের ঘর থেকে ভেসে আসা করুন যান্ত্রিক শব্দগুলো রুস্তমের বিবেক কে নাড়া দিচ্ছেনা একটুও। সে আনমনে টেপ রেকর্ডারের বাটন গুলো নাড়িয়ে চাড়িয়ে দেখছে। এই দৃশ্যটা কুসুম সহ্য করতে পারলনা। রুস্তমের কাছে গিয়ে সজোরে তার গালে একটি চড় বসিয়ে দিল। রুস্তম চিৎকার করে বলে-
মা...আ...আ......আ...
খবরদার। তোর ঐ মুখ দিয়ে তুই মা ডাকবিনা। উনি শুধু আমার মা।আমার মা তোর মা হইতে যাইব ক্যান? আরে তুইতো ব্যথা পাইলে মা বইলা ডাকতে পারোছ, কিন্তু আমার মা তো একবারের জন্যও মারে ডাইকা ব্যথা কমাইতে পারেনা।
সাত বছরের রুস্তম শুধু হাঁ করে তাকিয়ে থাকে কুসুমের দিকে।
পাঁচ বছর পরের কথা। রুস্তমের বয়স এখন বার বছর। এই পাঁচ বছরে পৃথিবী সম্পর্কে তার ধারণা অনেক পালটেছে। সে এখন ভাল মন্দ বুঝতে শিখেছে। সে আগে ভাবত ছেলেরা বড় হয় বুঝি মেয়ে মানুষদেরকে অত্যাচার করার জন্য। সে ভাবতো বড় হয়ে সেও বউকে মারবে। কিন্তু তার ধারনা আমূলে পালটে গেছে এখন। সে তার মাকে অনেক ভালবাসে যা সে আগে বুঝতে পারেনি কোনদিন। রুস্তম আর রুস্তমের মায়ের মন ভাল নেই। কারণ কুসুমের বিয়ে হয়ে গেছে কয়েকদিন হল। এই কচি বয়সে মেয়েকে আরেক জনের ঘাড়ে চাপাতে পেরে যেন হাম্বা মিয়ার মাথা থেকে বিশাল পাহাড় সরে গেল। কুসুমের বিয়ের পর রুস্তমের মা এখন অনেকটা একা হয়ে গেছে। কেননা তাকে সব চেয়ে বেশি বুঝতে পারত কুসুম। মেয়েরাই বুঝি মায়ের দুঃখ বেশি বুঝে যতটা না ছেলেরা। কুলসুমের একটি কথাই যেন রুস্তমের সবচেয়ে বেশী মনে পড়ে-
খবর্দার। তোর ঐ মুখ দিয়ে তুই মা ডাকবিনা।
অথচ সেই রুস্তম কি আর আগের রুস্তম আছে এখন? কুসুম যখন স্বামীর হাত ধরে পরের বাড়ি যাচ্ছিলো, কুসুম বারবার রুস্তমকে অনুরোধ করে বলেছিলো-
ভাই আমার, তুই ছাড়া এখন মা’র আপন কেউ রইলনা, মা’রে একটু দেইখা রাখিস।
রুস্তম চেষ্টা করে তার মাকে সবসময় দেখে রাখতে, নিরাপদে রাখতে। কিন্তু সবসময় পারেনা। তার বজ্জাত বাপটা যেন আগের ছেয়ে আরো বেশী হিংস্র হয়ে গেছে। হাম্বা যখন রুস্তমের সামনে মাকে মারধর করে রুস্তম মা’র কষ্ট সহ্য করতে পারেনা। মাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে সে। কিন্তু হাম্বা রুস্তমকে সরিয়ে দিয়ে তার মনের খোরাক মিটায়, নেশা কাটায়। রুস্তমের মায়ের সাথে সাথে রুস্তমও কাঁদতে থাকে।
রুস্তমের মা কোনদিন রুস্তমকে ঘুম পাড়ানি গান গেয়ে ঘুম পাড়ায়নি। রূপকথার পাতালপুরীর রাজ কন্যার গল্পও শুনায়নি কোনদিন। কেননা রুস্তমের মা কথা বলতে পারেনা। স্বরযন্ত্র নামক যন্ত্রটি জন্মের পর থেকেই নেই তার। তবে রুস্তম তার মায়ের চোখ আর মুখের রেখায় যত গল্প পেয়েছে রুস্তমের কাছে মনে হয় পৃথিবীর অন্য কোন সন্তান মায়ের কাছ থেকে এত গল্প শুনতে পায়নি। রুস্তমের মা’র চোখের প্রতিটি শব্দই এখন রুস্তমের জানা। মানুষের যখন কোন ইন্দ্রিয় অচল হয়ে যায় তখন মনে হয় আরো ইন্দ্রিয় কাজ করতে শুরু করে। তাই শুধুমাত্র চোখের ইশারা আর ঠোঁট নাড়ানিতে রুস্তমের মা’র চোখে মুখে যে ভাষা ফুটে উঠে রুস্তমের কাছে তা পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর ভাষা।
ছোটবেলা থেকেই রুস্তমের প্রতি তার বোবা মায়ের খেয়ালের কোন অন্ত ছিলোনা। পৃথিবীর সব মায়েরাই তার সন্তানকে অনেক ভালবাসে। তবে রুস্তমের কাছে মনে হয় অত্যন্ত আট-দশ জন মায়ের চেয়ে তার মা তাকে একটু বেশীই ভালবাসে। বাবার এত নির্যাতনের পরেও কখনও এমন হয়নি যে তাদের চুলোয় আগুন জ্বলেনি। তা যতটা না স্বামীর কাছে নির্যাতিত না হবার ভয়ে তার চেয়ে বেশী রুস্তমকে যেন উপোষ না থাকতে হয় সেই জন্য।
হাম্বা মিয়া যেদিন রুস্তমের মাকে মারধর করে রুস্তম এখন সেদিন তার মায়ের কাছে শোয়। কেননা তার মা এখন আর এইসব অত্যাচার সহ্য করতে পারেনা। তার গায়ে জ্বর চলে আসে, সেই সাথে ঘন ঘন রক্ত বমি। রুস্তম রাতভর মায়ের সেবা যত্ন করে, মায়ের মাথায় জলপট্টি দেয়, মায়ের শরীরের জখমগুলোকে গরম পানি দিয়ে পরিষ্কার করার চেষ্টা করে। রুস্তমের মা’র শরীরের জখমের দাগগুলো কখনো শুকাতে পারেনা ঠিকমত। পুরাতন ক্ষতগুলো সারার আগেই নতুন ক্ষতের দাগ পরে তার শরীরে। মায়ের এত কষ্ট মেনে নিতে পারেনা রুস্তম। তাকে কিছু একটা করতে হবেই। রুস্তম যখন মাকে বলে-
মা...খুব কষ্ট না ?
মা তখন রুস্তমকে বুকে টেনে নিয়ে একটু হাঁসার চেষ্টা করে, রুস্তমের চুলগুলোকে এলোমেলো করে দেয়। শুধু মাত্র এই ছেলেটিই এখন রুস্তমের মা’র বেঁচে থাকার প্রেরণা। রুস্তমেরও ইচ্ছা করে সবসময় মায়ের গলা জড়িয়ে শুতে, মার চোখে চোখ রেখে রূপকথার গল্প বুনতে, মার বুকে মাথা রেখে মায়ের গর্ভে থাকাকালীন উষ্ণতা অনুভব করতে।
কিন্তু হাম্বা মিয়া তা হতে দেয়না। মা ছেলের মাঝে এই বাড়াবাড়ি রকমের ভাবটি তার মোটেও পছন্দ না। সে মনে করে রুস্তম শুধুমাত্র তার সন্তান।আর বোবা মেয়েটি শুধুমাত্র সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র। রুস্তমকে জন্ম দিয়েই তার কাজ শেষ হয়ে গেছে। সে কেন তার ছেলের ভাগ চাইবে ? হাম্বা কখনোই রুস্তমের ভাগ কাউকে দিবেনা। ছেলেকে সে তার মত করে মানুষ করবেই। এই জন্য পথে বাঁধা আসলে যা যা করা দরকার সব কিছু করতে প্রস্তুত সে।
একদিন ঠিক তাই হতে চলল। রুস্তমকে আজো তার মায়ের কাছে ঘুমোতে দেয়নি হাম্বা। রুস্তমের মা এই শোকে ছটফট করতে করতে কখন জানি ঘুমিয়ে গেছে। হাম্বা মিয়া যখন রুস্তমের মা’র ঘরে আসে তখন মাঝ রাত। কার্তিক মাসের ভরা পূর্ণিমা চলছে। জানালার ফাঁক গলে চাঁদের আলো ঘরে এসে যেন বড্ড রকমের বাড়াবাড়ি করছে। চাঁদের আলোতে হাম্বার হাতের নয় ইঞ্চি ছুরিটা একটু বেশীই চকচক করছে। গত কোরবানে গরু জবাই করার জন্য সে কিনেছে ছুরিটি। সেই ছুরিটা এখন খাঁড়া করে রুস্তমের মা’র বুকে চালানোর পালা। হাম্বা হাত উঁচিয়ে তার তার বাসনা চূড়ান্ত করার জন্য প্রস্তুত। ঠিক তখনি ধপাস শব্দে মাটিতে পড়ে গেল হাম্বা। রুস্তমের মা’র ঘুম ভেঙ্গে গেল। এই দুর্বল শরীর নিয়েও লাফ দিয়ে উঠে পড়ে সে। কিন্তু রুস্তমের মা এখন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা। হাম্বার পিঠে মেরুদণ্ড বরাবর গাছ কাটার দা-টি লেগে আছে। তার পেছনে দাড়িয়ে আছে রুস্তম। রুস্তমের মা যেন বলতে চাইছে –
বাজান তুই এটা কি করলি ?
মা আমারতো এইডাই করার কথা আছিল। আমিতো তোমারে মরতে দিতে পারিনা মা। আমি যে তোমারে অনেক ভালবাসি।
হাম্বা নেই আজ দুবছর হল। অথচ রুস্তমের মা এখনো সুখী হতে পারেনি। কেননা রুস্তম তার কাছে নেই। খুব ইচ্ছে করছে তার রুস্তমকে গিয়ে একবার বাবা বলে বুকে জড়িয়ে ধরতে, কপালে চুমু দিয়ে একটু আদর করে দিতে, পুঁটি মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খাইয়ে দিতে। গ্রীষ্মের খরা রোদে মাটি শুকিয়ে তাতে যেমন ফাটল ধরে, সেই ফাটল জোড়া লাগানোর জন্য যেমন পানি দরকার। রুস্তমের মা’র ঠিক একই অবস্থা। রুস্তমকে একবার দেখার জন্য বুকটা ছটফট করছে তার। সে ইচ্ছে করলেই জেল খানায় গিয়ে রুস্তমকে দেখে আসতে পারেনা এখন আর। পুলিশ তার ছেলেকে দেখতে দেয়না। কেননা রুস্তমের সাথে দেখা করতে গেলেই রুস্তমের মা’র কান্নায় জেল খানার আকাশ কাঁপতে থাকে, বাতাস ভারী হয়ে যায়। এখনো কিশোর আদালতে বিচার চলছে রুস্তমের।
রুস্তমের মা জানে তার রুস্তম একদিন ফিরে আসবেই। তাই রুস্তমের মা ধূ ধূ প্রান্তের দিকে চেয়ে থাকে সবসময়। তাকিয়ে থাকতে থাকতে তার চোখ ঘোলা হয়ে আসে। ক্লান্তিতে তার চোখ একসময় বুঁজে আসে। ঠিক তখন রুস্তম আসে। মাকে গলা জড়িয়ে ধরে বলে-
ঐ মা, তুমি ঘুমাইতেছ ? এই দেহ, তোমার রুস্তম ফিইরা আইছে। তোমার রুস্তম কি তোমারে ছাড়া থাকতে পারে মা? তুমি জানোনা মা রুস্তম তোমারে কতো ভালবাসে।
৩১ জানুয়ারী - ২০১১
গল্প/কবিতা:
৯ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪