সারাদিনের খাটুনিতে একদম ক্লান্ত শরীর,একটু বিশ্রাম তাও রান্না বান্না নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়,রাতে চাঁদের আলোতে আবারও কাজ,বাবা হারুন মাঝি মানুষের জমি বর্গা নিয়ে জমিতে পসল পলায়,শীত বৃষ্টি রোদ সব সয়ে যখন পসলে ভরে যায় উঠান,খুসি হবার কথা যেখানে, সেখানে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকে মলিন মুখে,কি বা করার আছে জমির মালিকে তো দিতে হয়,জমির আয়তনে ধানের মাপ,যা থাকে তা খর কুটা ছাড়া কিছুনা,কপাল টা তার ভাঙ্গা কপাল,ভাঙ্গানে নদী সব নিল ভিটা বাড়ি ছিল জেইটুকুন জমি,হারাতে হলো প্রিয় তম স্ত্রী হাবিবকে,মেয়ে আয়শাকে নিয়ে কোনরম বেচে গেলেও জীবন হলো কঠিন,
বাবা খাওন হইচে,খাইয়া লও,রাইতে চাঁদের আলোতে বাকি ধান গুলি লইতে হবে সকালে আবার জমির মালিক আইবো.
--হরে মা,খেতে থাকতেই বইলা গেছেন তালেব মিয়া,
তার জমি আমি করি তাই তারেই আগে পসল দিতে হবে.
সকাল হতেই তালেব মিয়া এসে হাজির,
-কই মাঝি আচ নাকি বাড়িতে,
-- মিয়া সাব...আমি তো আপনার লাগায়ই বইসা আছি,
এবার পসল তেমন হয়নাই,আপনারে দেওনের পর যা থাকব তা দিয়া যে কি করি বুঝিনা,
-শোন মাঝি,তোমারে আমি আগেই কইছি,বয়স তো তোমার আর কম হইলোনা,এবার একটু বিশ্রাম নাও,মাইয়াডারে না হয় আমার বাড়িতে পাঠাইয়া দাও,নিজের কাম মনে কইরা করব আর মাসে মাসে টাকাও পাইব,তুমি মিয়া সুনলা ,যাগ্গে সেই কথা, তোমার লাইগা একটা ভালো খবর আছে,পরে যাইবার সময় কমুনি,
হারুন মাঝি পাল্লা দিয়া ধান মাপে আর ওই দিকে আয়শা বাবার দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে,হয়ত ভাবছে সব ধান যদি তাদের হইত তাহলে অভাবটাই থাকতনা,
-মাঝি তোমার মাইয়া কই, একটু পানি দিতে কও...
--কইরে মা আয়শা একটু পানি নিয়া আয়,
পানি খেয়ে উঠে দাড়ালো মিয়া সাহেব,
--কই মাঝি আস তোমার সাথে কথাটা শেষ করি.
গত বছর মাইডারে বিয়া দিতে পারলানা,তেমন কিছু তো চায়নাই,একটা ঘড়ি, সাইকেল,আর একটা পালং…তাও দিতে পরলানা,বিয়াটা ও হইলনা.
এবার বেশি কিছুই দেয়ন লাগবনা,ছেলেরে তুমি চেনবা,
কইরা গ্রামের রহিমের ছেলে,
--মিয়া সাহেব..ছেলের তো ....
--মাইয়াডার বয়স তো আর কম হইলনা এহন বিয়া না দিলে পরে বয়স বাইরা গেলে আর বিয়া দিতে পারবনা মাঝি.
--পোলাডার তো একটা.....
--গন্জে পান সুপারির দোকান আছে ,তোমার মাইয়া সুখেই থাকব.তুমি রাজি হইলেই আমি কথা কইতে পারি,
-তাদের দাবি দাবার কথা তো কইলেননা
--বেশি কিছু দেওন লাগবনা,গঞ্জের দোকানটা মেরামতের জন্য হাজার পাচেক টাকা দিলেই হইব,সব মিলাইয়া বিশ হাজার টাকার মত খরচ হইব তোমার .
--এত টাকা আমি পামু কই?
--আমি তাগরে ভাদ্র মাসের কথা কমু,তুমি প্রায় চার মাসের সময় পাইবা,তুমি কি কও?
--আপনি যা ভালো বুঝেন তাই হইব মিয়া সব.
আরেকটা কথা, পা খোরিয়া হাটলেও,বেস ভালো একটা পোলা,,তারা কিন্তু তোমার মাইয়ার লাইগা বইয়া থাকবনা.
--তুমি তো জন আমার একটা মেয়ে ছিল,থাকলে এত দিনে তোমার মাইয়ার মত হইত, এত দিন ধইরা তুমি আমার জমি দেখা শোনা করচ,তাই আমার একটা দায়েত্ব আছে,সব সময় তুমি আমারে গন্ডায় ছয় পাল্লা কইরা দিছ,এবার আমারে তিন পাল্লা কইরা দিও.
মিয়া সাহেবের এমন কথা শোনে মনটা ভরে গেল রহিম মাঝির,অনেক বড় স্বপ্ন দেখছে মেয়েকে বিয়ে দিবার,দু-দিন পর ছেলে পক্ষ মেয়েকে দেখতে এলো,মেয়েকে দেখে ওদের পছন্ধ হলো,ছেলেকে ৫হজর টাকা দিতে হবে এই সর্তে
বিয়ের দিন ধার্য হলো ভাদ্র মাসের শেষ শুক্রুবার বাদ জুম্মা,
পান-বাতাসা-আর বেলের সরবত দিয়ে মেহেমান দের আপ্পায়ন করা হলো.
আয়শার মুখে আনন্দের চাপ,তারপর ও বলল
-আমি জামুনা,আমারে বিয়া দিওনা,আমি গেলে কে দেখব বাবা ...
হারুন মাঝি মেয়েকে সান্তনা দিয়ে চলে গেল জমিতে ..
জৈষ্ঠ মাসের প্রায় শেষ,খুব পরিশ্রম করে ধানের চারা লাগিয়ে দিল জমিতে,দিন কয়েক পর বেশ রুষ্ট পুষ্ট হলো ধানের চারা গুলি.আষাঢ়ে নেই কোনো বৃষ্টি,ক্ষরায় সুকিয়ে মাঠ
পাটল ধরেছে মাটি নেই কোথা ও কোন পানি,
খোলা আকাশে,যদি এক টুকরু মেঘ জমা হত, তাও নেই,
বর্ষার মাঝা মাঝি সময় হলো বৃষ্টি,ধানের শীষে সাদা পুল দেখতে অপূর্ব,সারা মাঠে দুলছে সোনার ধান,আষাঢ়ের শেষে শ্রাবনের প্রথম গুরি গুরি বৃষ্টি,১৫-২০ দিন পর ধান উঠাবে কৃষকরা,কিন্তু বৃষ্টি যে থামছে না,কখন হালকা কখনো মাঝারি,কখনো আবার ভারী বৃষ্টি,সবারই মাথায় হাত,করছে দোয়া প্রভুর কাছে,যেন না আসে ঢল.নর্বনাশা শ্রাবন মানে কি কোনো কিছু,সব কিছু ভাসিয়ে দিল,ডুবিয়ে নিল সব শ্রাবনের ঢল স্রোতে,সোনার পসলে ভরা মাঠে পানি থৈ থৈ করে,কথাও কারো এত টুকু নেই আসা,হারুন মাঝি একে বারে ভেঙ্গে পড়ল,চোখের জলে ভাসলো তার বুক,
মাটিতে বসে,
--এই কি তোর বিচার?এক শ্রাবনে নিলি ভিটা বাড়ি জমি নিলি আমার স্ত্রী,এইবার বুঝি আমার মাইয়ার সুখ কাইরা নিলি,কি দেহস উপরে বইসা, তোর বানানু রঙ্গের মানুষ আছে কেমনে ,হেইডা দেখা বুঝি তুই মজা পাস?
বাবার এমন কান্না আর কি সহ করা যায়,বাবার কাছে বসে আয়শা বলল.
--যে আমার বাবর থনে কিছু চাইব না,যে আমার বাবা কষ্ট বুঝব আমি তারই ঘরে যামু,...............