দেখতে দেখতে শীতকালটা এসেই পড়ল। বর্ষায় ঠিক হয়েছিল মিজান মামার বিয়ে হবে শীত কালে। এই বিয়ে নিয়ে মামা যতটা না খুশি তারচেয়ে হাজার গুনে উৎসাহ আমার বেশি। তাই বলে এটা ভাবা যাবে না- মামু ভাগিনা যেখানে একই কাজ সেখানে....
মানে আমার আপাতত বিয়ে করার কোন সম্ভাবনা নাই। যাক আমার কথা, মামার কথায় ফিরে আসি। স্কুলে যখন আমরা মাত্র ফাইভ পাশ দেই সেই সময় মামা চুটিয়ে প্রেম করে বেড়ান। শেষ ক্লাসের ছাত্র তিনি।
নানার ধানের গোলায় সব সময় তালা লাগানো থাকে। তার পর ও কিছু ধানের বস্তা উধাও হয়ে যায় কোন কুল কিনারা করতে পারেন না। আমি কিন্তু ঠিক ই জানি ধান গুলা কার পেটে যায়। কিন্তু নানাকে বলি না।
মামার হাতে শীতকালে একদিন সিকো ফাইভ ঘড়ি আর চোখে কালো চশমা দেখে নানা বললেন- হারামজাদা তর বাপে অইল চাষা তার পোলায় পড়ে ঘড়ি? তুই কোন বালেষ্টর অইছস। বছর বছর এক ক্লাসে পড়াইতে পড়াইতে আমি অইতাছি ফতুর আর নোয়াবজাদায় পড়ে ঘড়ি। কই পাইছস এইটা?
মামার বুদ্ধি সুদ্ধই বরাবরই ভাল, তাই মামাকে আমার বেশি পছন্দ । হুট করে উত্তর দেয় এই শীতে তোমার গরুর পাল লইয়া মাঠে যাই। গরু ছাইড়া দিলে কোন কাম থাকে না। আমি হাবু মোড়লের গরুর লাইগা কিছু ঘাস কাইটা দেই আর তার ক্ষেত পাহারা দেই। মোড়ল সাব আমারে কিছু টেকা দেয়, হেইডা জমাইয়া না ঘড়িডা কিনলাম।
আমি সামনে দাড়িয়ে থেকে কোন মতে হাসি চেপে রাখি। মনে মনে বলি নানা তোমার গোলার ধান ঐ ঘড়িতে পাইবা।
কোন রকমে মামা ছুটে পালালেন সেখান থেকে। আমি হাসতে হাসতে দম বন্ধ হবার জোগাড়। এদিকে নানাকে আমার দিকে তেড়ে আসতে দেখে হাসিতে হঠাৎ ব্রেক করতে হলো।
ঐ শালা তুই হাসতাছস ক্যান তুই ও তো তোর ঐ ছাগল মামার মতই অইবি। সারা দিন কোন কাম নাই ঐ হারামজাদার লগে জোকের মত লাইগা থাকস।
আমিও মামার পথ ধরলাম। মানে পড়ি কি মরি দে দৌড়।
পরদিন মামার ডেটিং এ যাবার কথা। পৌষ মাসটা কোন রকমে পানি না ছুঁয়ে কাটিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু ডেটিং এ গেলে যদি নানার মতো তার ডেট ও বলে বসে "শুটকিওয়ালা" তাহলে তো বিরাট ফ্যাকরা। আমি মামাকে বুদ্ধি দিয়ে বললাম
মামা বেশি কইরা সেন্ট মাইরা লও গন্ধ বাইর অইব না।
মামার মনে কথাটা বেশ ধরল। অন্তত আর যাই হোক গোসল করার কথাতো বলি নাই। সেন্টের শিশি হাতে নিয়ে মামা বললেন- এই জন্যে তোরে আমি অনেক পসন্দ করি ভাগিনা। ঠিক সময়ে ঠিক বুদ্ধি দিতে তোর জুড়ি নাই।
বোতলের অর্ধেক সেন্ট গায়ে মেখে মামা মহা খুশি। যাক গা থেকে আর শুটকির গন্ধ বেরুচ্ছেনা।
ঘণ্টা খানেক পরে মামার সামনে আর টিকতে পারলাম না। সেন্ট আর মামার গায়ে ঘামের গন্ধ মিলে মিশে একটা গন্ধের ককটেল হয়ে গেছে। এই গন্ধের কোন নাম দেয়া যায় না। মামাও সে ব্যাপারটা খেয়াল করেছেন।
ভাগিনারে ফলত উল্টা হইলরে, এখন তো আগের থেইকা খারাপ অবস্থা। কি করমু এহন।
গ্রামের বাড়ি, রান্নার বিশাল অসুবিধা। নানী সারা দিন রান্নার লাকরির ব্যবস্থা করতে করতে বয়স দ্বিগুণ বাড়িয়ে ফেলেছেন। মামা যখন চুপি চুপি রান্না ঘরে পানি গরম করতে গেলেন কোত্থেকে যেন নানা দৌড়ে এসে বললেন-
হারামজাদা নওয়াবের পুত। উনার গরম পানি লাগব গোছল দিতে। খাড়া গরম পানি তোর ........ দিয়া দিতাছি।
মামা আর গরম পানি ..... দিয়া নেয়ার রিস্ক নিলেন না। তার চেয়ে দৌড় দেয়াটাই উপযুক্ত মনে করলেন এবং দিলেন ও।
আমি ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেলাম। মামার এত আরাধনার ডেটিং কি মিস হয়ে যাবে। আমার ও একটা দুঃখী দুঃখী ভাব চলে এসেছে।
নারে মামা গোছলডা এইবার করন ঐ লাগব। আর উপায় নাই।
মামা তুমি ১০বছরের রেকর্ড ভাংবা? শীত কালে গোছল করবা?
কিছু করনের নাইরে মামা। দেহি একটা চাইনিজ গোছল করমু, আয়।
চাইনিজ গোসল আমি কখনো দেখিনি। তাই ঐ টাইপের একটা গোসল দেখার লোভ আর সংবরণ করতে পারলাম না।
মামার জন্য গামছা লুঙ্গি আর মোটা একটা কাঁথা নিয়ে পুকুরের ঘাটের দিকে রওনা দিলাম। মামা কাঁথাটা গায়ে জড়িয়ে গলায় গামছা পেঁচালেন। আমি চাইনিজ গোসল দেখার জন্য উদ্গ্রিব হয়ে ঘাটের কাছে বসে রইলাম। কাঁথা পেঁচানো শেষ হলে মাথাটা নিচু করে আমায় ডাকলেন
মাতায় পানি ঢাল।
আমি পানি ঢালতে লাগলাম। মামা অর্ধেক করে কাটা ৫৭০ সাবান মাথায় ঘষতে লাগলেন। সাবানের ফেনা যেন মামার মাথার সাথে আড়ি দিয়েছে। যতই ঘষছেন ফেনা আর উঠছেনা।
নকল সাবান রে মামা? ফেনা উঠে না কেন?
মামা সাবান নকল না তোমার মাথায় এত ময়লা হইছে যে ফেনাও লজ্জা পাইছে।
এই শীতের হাড় কাপানো ঠান্ডায় আমি আর পানিতে পড়ার রিস্ক নিলাম না। চুপচাপ মামার মাথায় পানি ঢালতে লাগলাম। একবার, দুইবার, তিনবার সাবান দেয়ার পর মামার মাথায় সাবানের ফেনা দেখা দিল।
ফেনা ঠাণ্ডায় মামা। খুশি খুশি একটা ভাব নিয়ে মামা বললেন।
হ ফেনাতো মাথায় অইছে ঠিকই তবে পুকুরের পানি যে কালো অইয়া গেল হেইডার কি অইব। নানা দেখলে তোমার ...... দিয়া এই পানি দিয়া দিবনে।
বেশি কতা কবি না তাইলে কিন্তু পানিতে ফালাইয়া দিমু।
আমি আবার ও চুপ করে গেলাম। মামার মাথা ধোয়ার পালা শেষ হলে গলার গামছাটা খুলে মাথাটা মুছে ফেললেন।
মামা তোমার চাইনিজ গোছল কি শেষ।
আরে না ব্যাটা মাত্র তো মাথা অইল।
মাথা যে মুইছা ফালাইলা!
মাথার গোছল শেষ এইবার বাকিডা দেখ।
আমি আবার চাইনিজ গোসলের বাকিটা দেখার আনন্দে সামিল হলাম। মামার মাথাটা পুরোপুরি শুকানোর পরে গায়ের কাঁথাটা আমার হাতে দিলেন তার পর গায়ের জাম্পার (সোয়েটার) খুললেন, সার্ট খুললেন, সেন্টু গেঞ্জি খুললেন। মামার এত খোলাখোলি দেখে আমার শীত আরো বেড়ে গেল। এইবার কাঁথাটা কোমরের নিচে পেঁচিয়ে নিলেন। আর জাম্পারটা নিলেন মাথায় পেঁচিয়ে। গামছাটা পানিতে ভিজিয়ে তাতে ৫৭০ সাবান ঘষলেন। সেই সাবানে ভেজানো গামছায় বুক পিঠ আর হাতগুলো ঘষতে লাগলেন। সব ঘষা শেষ হলে গামছাটা আবার পুকুরের পানিতে ধুয়ে ফেললেন। গামছাটা না চেপেই সেটা দিয়ে বুক পিঠ আর হাতগুলো মুছে নিলেন। তারপর গামছা আবার ধুয়ে নিয়ে শরীর মুছে ফেললেন এবং পরিধেয় কাপড়গুলো এক এক করে গায়ে জড়ালেন।
মামা চাইনিজ গোসল কি শেষ?
আবার কাঁথাটা গায়ে জড়িয়ে নিয়ে লুঙ্গিটা মালকোচা মারলেন। ঠিক গা ধোয়ার নিয়মেই পা দুটোও ধুয়ে ফেললেন।
ব্যাস অইয়া গেছে।
কি? তোমার চাইনিজ গোসল?
হ।
মামা চাইনিজরা কি সামনা আর পাছা গোসল করায় না?
শালার পো খাড়া তর উত্তর দিতাছি- বলেই মামা তেড়ে এলেন। আমি লাগালাম দৌড়। আমার ছোট মাথায় কোন ভাবেই এলো না এই প্রশ্নে মামা আমাকে দৌড়ানি কেন দিলেন।
আজ অনেকগুলো বছর পরে আমি খুব উদ্গ্রিব হয়ে আছি, মামা বিয়ের সময়টায় এই শীতে কী আবার চাইনিজ গোসল দিবেন কিনা দেখার..................
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।