ইচ্ছে পুরি

ইচ্ছা (জুলাই ২০১৩)

আলী ইবনে মুসাই
রাজ্যের নাম ইচ্ছে পুরি। বামনদের এক বিশাল রাজ্য । এ রাজ্যে না আছে কোন রাজা না আছে রানি। যুগ যুগ ধরে পালা ক্রমে রাজ্যটি শাসন করে আসছে দুই বুড়ি। বামনরা বিশ্বাস করত এই দুই বুড়িই তাদের যাদু দিয়ে ভুতুং এবং পাতুং রাজ্যের রাক্ষস এবং খোক্ষসদের ইচ্ছে পুরি থেকে দূরে রেখেছে। ইচ্ছে পুরির ঠিক পাশের রাজ্যই হল ভুতুং। বিশাল এক রাজ্য। সব রাক্ষসেরা ভুতুং এই বাস করে। এদের প্রধান খাদ্য বামনের রক্ত। তবে এরা পাতুং রাজ্যের খোক্ষসের মত এতটা বেপরোয়া নয়। খোক্ষস বামন দেখলেই ঘার ধরে মটকে দিয়ে ঘারের নিচে কামর দিয়ে সব রক্ত চুসে খেত। কিন্তু রাক্ষস বামন পেলে আগে তাকে কিছু দিন খাওয়ায়। খাইয়ে মোটা তাজা করে। তারপর আস্তে আস্তে শরীরের রক্ত অল্প অল্প করে চুসে খায় । এই রাক্ষস এবং খোক্ষসের হাত থেকে বাচতে বামনদের তাই এই দুই বুড়ির জাদুর ওপরই ভরসা করতে হয়।


এই দুই বুড়ির এক বুড়িকে সবাই চেনে গোলাপি বুড়ি নামে। গোলাপি বুড়ির গায়ের রঙ দুধে আলতায়। তাই বামনরা তাকে গোলাপি বুড়ি বলেই ডাকে আর আরেক বুড়িকে ডাকে নাক উচু বুড়ি বলে। নাক উচু বুড়ির নাকটা এতই উচু যে গতবার বন্যার সময় বামনরা বন্যার পানি থেকে বাচতে ঐ নাক ধরে ঝুলে ছিল প্রায় তিন মাস। নাক উচু বুড়ির এই উপকারের প্রতিদান দিতেই বামনরা ইচ্ছে পুরির সব দায়িত্ব তাঁর হাতে তুলে দেয়। আর নাক উচু বুড়িও বামনদের আস্যস্ত করে যে সে তাঁর যাদু দিয়ে রাক্ষস এবং খক্ষসের হাত থেকে ইচ্ছে পুরি কে রক্ষা করবে।



ভুতুং এবং পাতুং রাজ্যের রাজাদের এই ইচ্ছে পুরির প্রতি বেজায় লোভ। লোভ টা দিন দিন শুধু বেড়েই যাচ্ছে। শুধু যে বামনদের রক্ত খেতে তারা মুখিয়ে আছে তা কিন্তু নয়। ইচ্ছে পুরির দিকে এদের লোভের আরেকটা বিশেষ কারন রয়েছে। আর এই বিশেষ কারনটি নাক উচু বুড়িকেও চিন্তিত করে তুলেছে। সে জানে গোলাপি বুড়িও ঠিক একই ভাবে চিন্তিত কিন্তু এখন যেহেতু রাজ্যের সব দায়িত্ব তাঁর হাতে। তাই তাঁর চিন্তাটাই একটু বেশি। নাক উচু বুড়ি যখন গভীর চিন্তায় মগ্ন ঠিক তখনই তাঁর মোবাইলটা বেজে উঠল। বুড়ি তাঁর নাকটা আকাশের দিকে তুলে ফোনের দিকে তাকালো । ভুতুং রাজ্যের মহারাজার কল। ভয়ে ভয়ে ফোনটা রিসিভ করে কানে দিয়ে বললঃ “হ্যালো মহারাজ!”
ঐ পাশ থেকে গম্ভির গলায় ভুতুং মহারাজ “ কি শুনছি এসব নাক উচু বু (ভুতুং রাজ্যের মহারাজ বুড়ি কে আদর করে নাক উচু বু ডাকে।)”
বুড়িঃ “না মানে !”
মহারাজঃ “কথা কি সত্য? বামনরা নাকি পুরোটা তৈরি করে ফেলেছে।”
বুড়িঃ “না না মহারাজ। এতই কি সোজা। এখনো পুরোটা তৈরি হয় নি, সময় লাগবে।”
মহারাজঃ “তুমি থাকতে ওরা এই কাজে হাত দিলো কিভাবে তুমি দেখ নাই। তুমি যান না ওরা এইটা তৈরি করে ফেললে আমাদের আর কিছুই খাওয়ার থাকবে না। তখন কি আমরা আঙ্গুল চুসব। আর বামনের রক্ত খেয়ে তো তোমারো অভ্যেস হয়ে গেছে। তুমিও কি বামনের রক্ত না খেয়ে বাচতে পারবে বল।”
বুড়িঃ “মহারাজ আপনি চিন্তা করবেন না আমি দেখছি কি করা যায়।”
এই কথা বলে ফোনটা নামিয়ে রাখল নাক উচু বুড়ি। বামন গুলো যে সত্যিই শিরি তৈরি করতে পারবে সেটা কে বুঝেছিল? শিরি তৈরির কাজে প্রথম প্রথম দুই বুড়িই বামনদের বেশ উৎসাহ দিত। কারন হাজার হাজার বছর চেষ্টা করেও রাক্ষস আর খোক্ষস রা এই শিরি তৈরি করতে পারে নি। আর বামনরা এই শিরি তৈরি করে ফেলবে ! প্রশ্নই আসে না। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে বামন গুলো যখন শিরির কয়েকটা ধাপ তৈরি করে ফেলল , তখন দুই বুড়িই টেনশনে পরে গেল। গোলাপি বুড়ি পাতুং রাজ্যের রাজাকে আশ্বস্ত করল যে সে যখন ক্ষমতায় আসবে তখন এই সিরি তৈরির কাজ বন্ধ করে দেবে আর আগের মতই খোক্ষসদের জন্য বামনের রক্ত পাঠাতে থাকবে গোপনে। কিন্তু গ্যারাকলে পরল নাক উচু বুড়ি। কারন সে এখন পুরো ইচ্ছে পুরির ক্ষমতায়। শিরিটা যদি হয়ে যায় তো ভুতুং রাজ্যের মহারাজকে যে রিষ্ট পুষ্ট বামন ভেট হিসেবে সে দিয়ে আসছিল তা দেয়া বন্ধ হয়ে যাবে। আর সবচেয়ে বড় কথা হল বামনরা যদি একবার এই শিরি দিয়ে চাদে চলেই যায় তাহলেতো সর্বনাশ হয়ে যাবে!


বামনদের স্বপ্ন , একদিন তারা এই শিরি দিয়ে চাদে উঠবে। সেখানে তারা নিজেদের একটা রাজ্য করবে একদম নিজেদের। কোন বুড়ির জাদুর দরকার হবে না। থাকবে না কোন রাক্ষস খোক্ষসের ভয়। তাদের মধ্যেই রাজা হবে তাদের মধ্যেই রানি হবে। সবাই সবাইকে ভালো বাসবে। কোন কালো জাদু থাকবে না। এই কথা চিন্তা করলেই নাক উচু বুড়ির ব্লাড প্রেসার বেড়ে যায়। ইচ্ছে করে খোক্ষসদের মত কয়েকটা বামন ধরে সাথে সাথে গলা মটকে রক্ত চুসে খেয়ে ফেলতে। আবার অনেক কষ্টে নিজেকে সামলায়।
বামন গুলো তৈরি করছে চাদে যাবার শিরি । যদিও কাজটা বেজায় কঠিন তারপরো আস্তে আস্তে চাদে যাবার শিরিটা তৈরি হচ্ছে। শিরিটা রাখা হয়েছে ইচ্ছে পুরির প্রধান শহর স্বপ্ন নগরে। বামনরাও এখন খবর পেয়ে গেছে যে দুই বুড়িই এই শিরি তৈরির কাজ বন্ধ করতে ষড়যন্ত্র করছে। ভুতুং আর পাতুং রাজ্যের সব রাক্ষস খোক্ষস বামনদের রক্ত চাটতে মুখিয়ে আছে। তারপরো বামনরা প্রানপন কাজ করেই যাচ্ছে । শিরিটা তৈরি করতেই হবে , চাদের নরম আলোয় বসতির স্বপ্ন এখন তাদের রক্তে মিশে গেছে। সবাই মিলে আরো নিখুত ভাবে কাজ করতে হবে। এখনো অনেক কাজ বাকি।



[বিঃদ্রঃ বামন হয়ে চাদ ছোয়ার স্বপ্ন সব বামনই তাঁর জীবনে দেখে। আমিও এখন মাঝে মাঝে রাতের বেলায় যখন চাদের দিকে তাকাই তখন বামনদের সেই শিরিটা খুজি । মনে হয় হঠাৎ একদিন দেখব শিরি বেয়ে বেয়ে সব বামন চাদে উঠে তাঁর রুপালি আলোতে হারিয়ে যাচ্ছে। সেই দিনের অপেক্ষায় রইলাম । আর সব বামনদের জন্যই রইল সুভ কামনা।]
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
স্বাধীন দুটো বুড়ি কি সে সিড়ি গড়তে দিবে? ভাল লাগল।
বুড়ি রা সিড়ি গড়তে দেবে কিনা তা তো জানি না। তবুও আশায় বুক বেধে আছি। ধন্যবাদ :)
তাপসকিরণ রায় lekhati shishu kishor galper paryaye parbe--etake sadharan rupkathaar beshee kichhui mane holo na.
দেশের যা অবস্থা দরবেশের এক ফু তে রাজ্য উড়ে যাচ্ছে, এর মধ্যে এই লেখাটাকে কিছু না মনে হওয়াই আমার জন্যে ভালো । (রসিকতা) :) ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্যে। :) দাদা আপনি কিন্তু চমৎকার লিখেন।
এস, এম, ইমদাদুল ইসলাম দুই বুড়ির রাজ্য থেকে বামনদের মুক্তির পথ বাতলে দিতে হয়তো নতুন কোন রূপক পেয়ে যাব, সে প্রত্যাশায় রইলাম । "শিরি" নয় বানানটা "সিঁড়ি" হবে। আপনার নিজের কপিতে ঠিক করে নিলে ভাল হবে ।
ধন্যবাদ সংসধোনের জন্যে। :)
এই যা আগের কমেন্টেও বানান ভুল করলাম । :(
মিলন বনিক রূপকথার আদলে সুন্দর গল্প...ঝুব ভালো লাগলো....
ধন্যবাদ দাদা। :) ঝুব (হয়ত টাইপো মিস্টেক) কিন্তু তারপরো ঝুব ভালো লাগাটা আমারো বেশ ভালো লেগেছে। আবারো ধন্যবাদ দাদা :)
ঝুব (খুব)-টাইপিং মিসটেক...
চিশতিয়ার আহমেদ খান শুভ এক কথায় অসাধারণ ! গল্পটি পড়ে হঠাৎ বুকের বা পাশে চাপা কষ্ট অনুভব করলাম ।
এফ, আই , জুয়েল # বাস্তবতার নিগূঢ় তত্ত্ব গল্পে চলে এসেছে । ব্য্ঙ্গ--বিদ্রুপ আ উপমার ফুলঝনিতে দারুন একটি লেখা । অনেক সুন্দর ।।
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন হ্যা, অপেক্ষায় থাকলাম। সিন্তু সিঁড়ি তৈরির চেষ্টা কি আমরা বামনরা করছি? চমৎকার লাগল রূপক গল্পটা। শুভেচ্ছা রইল।

০৩ জুন - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী