সিকাগোর রাস্তা দেখে আজকে খুবই ভালো লাগছে আলবার্টের। পুরো নাম আলবার্ট পারসনস, বয়স ৩৮। আলবার্ট পারসনস এর বিশাল সাইজের বাদামি গোফ তার উপরের ঠোটটাকে প্রায় ঢেকে দিয়েছে। ডানদিক দিয়ে সিতি করে চুল আচরেছে সে। চোখে দারুন উদ্দিপনা। তার শ্বাস ঘনো হয়ে গেছে। হৃদপিণ্ডে মনে হচ্ছে কেউ হাতুরি দিয়ে বারি দিচ্ছে। পুরো শরিরে অন্যরকম এক উত্তেজনা অনুভব করছে সে। আর করবে নাই বা কেন, আজকে তার মত সবাই সিকাগোর রাস্তায় নেমে এসেছে। কত মানুষ হতে পারে এখানে? এক হাজার, দুই হাজার নাকি এক লাখ , দুই লাখ ? না এর চেয়ে অনেক অনেক বেশি? ইতিহাস কি এর আগে কখনো এতো শ্রমিক কে রাস্তায় বের হয়ে আসতে দেখেছে? সবার চোখই আলবার্ট এর মত উদ্দিপ্ত। সবাই একই দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছে।
আলবার্ট পারসনসের ঠিক পাশে তার বন্ধু স্পাইস চিৎকার করে স্লোগান দিচ্ছে । তার সাথে সাথে সবাই চিৎকার করে স্লোগান দিচ্ছে। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে যাচ্ছে সিকাগোর রাস্তা। তার স্লোগানের মূল বিষয় কাজের সময় আট ঘন্টা করা। এর বেশি এক মিনিটও নয়। স্পাইসের সাথে স্লোগান দিতে দিতে এগোচ্ছে আলবার্ট। লুইসের সেই অসহায় চেহারাটা বার বার ভেসে উঠছে আলবার্ট এর চোখের সামনে। জতবারই লুইসের কথা মনে পরে ততো বারই চোখ ভিজে যায় আলবার্ট এর। আঠারো উনিশ বছরের টগ বগে যুবক, কি সুন্দর করে হাসতো সে। আলবার্টকে দূর থেকে দেখলেই এক গাল হেসে হাত উঠিয়ে ইশারায় হ্যালো বলতো। আলবার্ট এর সাথে লুইসের বয়সের পার্থক্য থাকলেও তারা ভালো বন্ধু ছিল। তাদের প্রিন্টিং কারখানায় সিগেরেট সম্পুর্ন নিষিদ্ধ ছিল, তাই আলবার্ট তার সিগেরেটের প্যাকেট বাসায়ই রেখে যেত। অবশ্য সিগেরেটের প্যাকেট বাসায় রেখে যাওয়ার আরেকটি কারন হচ্ছে লুইস কাজের ফাকে যখনই সময় পেত আলবার্টকে সিগেরেট খাওয়ার নেমন্ত্রন করত। আলবার্টও সানন্দে নেমন্ত্রন গ্রহন করত। রোজকার মত সেইদিনও আলবার্ট তার বন্ধু লুইসের সিগেরেটের নেমন্ত্রন গ্রহন করেছিল। যেহেতু কারখানায় সিগেরেট নিষেধ তাই তাদেরকে বাইরে আসতে হত। কারখানার বাইরে এক বিশাল গাছ । সেই গাছের নিচেই তাদের সিগেরেটের আস্তানা। অন্যদিন সিগেরেটের এই সময় গুলোতে খুব মজা করে লুইস। একটার পর একটা জোকস বলতে থাকে। আলবার্ট হাসতে হাসতেই ক্লান্ত হয়ে পরে। কিন্তু সেইদিন লুইসের মুখে একটুও হাসি ছিল না। তার চেহারায় ক্লান্তি আর হতাশা ছিল স্পষ্ট। সে এক নাগারে টেনে যাচ্ছিল তার সিগেরেট। তার চোখের দিকে তাকাণো যাচ্ছিল না। দেখলেই মনে হচ্ছিল চোখ কোটরের ভেতর আরো একটা গর্ত করে তার ভেতর লুকিয়ে আছে । আলবার্ট তার কাধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করেছিল – কি হয়েছে? লুইস মাথা নিচু করে তার গর্তে ঢোকা চোখ দুটি দিয়ে মাটিতে কি যেন খুজতে থাকে। মাটি থেকে চোখ না উঠিয়েই সে বলেঃ
আমি আর পারছিনা। প্রত্যেক দিনের এই কষ্ট আমি আর নিতে পারছিনা। চৌদ্দ পনের ঘন্টা করে প্রত্যেক দিনের এই অমানবিক অত্যাচার আমি আর সহ্য করতে পারছি না।
লুইসের এই কথাটা শুনে আলবার্টের বুকটা ধক করে ওঠে। এই কথা গুলোতো তার নিজেরো। শুধু পার্থক্য হল সে এখনো ভেঙে গুরিয়ে যায় নি। যেমনটা ভেঙে গেছে লুইস। আলবার্ট যানে এই কথা গুলো শুধু লুইসের না এই কথা গুলো তাদের কারখানার প্রত্যেকটা শ্রমিকের কথা। সেই দিন আলবার্ট আর লুইস সিগেরেট শেষ করে কারখানায় ঢোকার পর পরই লুইস মাটিতে লুটিয়ে পরে। আলবার্ট এক দৃষ্টিতে লুইসের মাটিতে লুটিয়ে পরা প্রান হীন দেহের দিকে তাকিয়ে থাকে।
সময় যত যাচ্ছে স্লোগানের তেজ ততো বাড়ছে। সব শ্রমিকের স্লোগান সিকাগোর বাতাসকে ভারি করে দিয়েছে। আলবার্ট এর মনে হোল আজকের এই দিন কোন সাধারন দিন হতে পারে না। আজকের এই দিন অবশ্যই একটি বিশেষ দিন। আজকের দিনটা মনে রাখা দরকার । দিন তারিখ সহ। হ্যাঁ আজকে ১লা মে ১৮৮৬। আলবার্ট পারসনস নিশ্চিত আজকের এই দিনটি ইতিহাসের পাতা থেকে আর মুছে ফেলা যাবে না। সে স্পাইসের সাথে চিৎকার করে স্লোগান দিয়ে এগোতে থাকে। তার চোখে উদ্দিপনা , তার চোখে সপ্ন। শেস্টাংশঃ আলবার্ট পারসনস এই আন্দোলনের দুই দিন পর শ্রমিকদের এক মিটিং এ অংশ নেয়। সরজন্ত্র করে তাকে এবং তার মতো আরো আট জনকে পুলিশ সেখান থেকে গ্রেফতার করে।পরে আলবার্ট পারসনসকে সহ তাদের আট জনকেই শ্রমিক আন্দলন এবং বিপ্লবের জন্যে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। ১১ নভেম্বর ১৮৮৭ সালে আলবার্ট পারসনসের মৃত্যুদন্ড কার্জকর করা হয়।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।