১.
লাল মিয়ার ক্ষিপ্র গতির সাথে তাল মিলাতে না পেরে বারো বছরের ফজার কণ্ঠে স্পষ্ট বিরক্তি,‘বাজান!আস্তে হাডো,মাজায় বিষ ধইরা গ্যাছে গা!’
লাল মিয়ার দৃষ্টি এখন দূরের আবছা বাঁশঝাড়টার উপর নিবদ্ধ। তার চলার গতি কমাবার লক্ষণ আপাততঃ দেখা যাচ্ছে না। কোনো এক অদৃশ্য আশঙ্কার কারণে সে ভেতরে ভেতরে উদ্বিগ্ন। বাইরে তার ছাপ অবশ্য নেই।
সময় ভালো না-বলাবলি করছে সবাই। উড়ো উড়ো খবর যা আসে তার ভেতরেও মাঝে মাঝে পাকা খবর দু’একটা পাওয়া যায়। এই যেমন গত দু সপ্তাহ যাবৎ শোনা যাচ্ছিল খানসেনারা এলো বলে!কুতুবপুরের চেয়ারম্যান হানিফ গাজি নাকি রীতিমত অভ্যর্থনা বাহিনী তৈরি করে রেখেছে। খানসেনার দল এলেই নিজ হাতে কমান্ডার সাবকে যেন সে ফুলের মালা পরাতে পারে তার রিহার্সালও নাকি কয়েকবার দিয়েছে। একপাল খাসী রেডি করে রেখেছে খানসেনাদের সম্মানে ভোজ দেবে বলে। এসবই শোনা কথা। সে তো আর নিজের কানে শোনার চেষ্টা করে না,তাই শোনা কথাই বিশ্বাস করতে হয়। তবে সে মাঝে মাঝে একটা দুটো খবর যাচাই করে দেখে। গত সপ্তাহে এমন একটা খবরটা যাচাই করার জন্যই তো কুতুবপুর গিয়েছিল। খাসীর পালকে নিজের চোখে স্কুলের খোলা মাঠে মহানন্দে ঘাস খেতে দেখে বিশ্বাস করল যে খানসেনারা এলো বলে!ঘামাচি ওঠা ভ্যাবসা গরমের স্তব্ধ সন্ধ্যায় স্কুলমাঠের অন্ধকার প্রান্তে দাঁড়িয়ে তার স্বগতোক্তি ছিল,‘বাছারা,রাক্ষসগো পেটেই তো যাইবা!অতো খাইয়া হইবডা কী!’
নিজ গাঁয়ের পথে যখন সে অর্ধেক পথ পেরিয়েছে এমন সময় তার মাথায় আইডিয়াটা এলো। আরে তাই তো!সুবর্ণ সুযোগ!এ সুযোগ হেলায় হারানো ঠিক হবে না। সময়টা উত্তাল,দেশে এই মুহূর্তে পুলিশবাহিনীর কর্মকান্ড নেই বললেই চলে। সবাই তটস্থ সম্ভাব্য খানসেনার ভয়ে!এখন ছোটখাট দূর্বলতার দিকে বেশিরভাগ মানুষই খেয়াল রাখতে পারবে না।পূত্রধন ফৈজুদ্দি গায়ে গতরে বেশ বড় হয়েছে।বাপকে উপযুক্ত সহায়তা দিতে পারবে। বিগত দুটো অ্যাসাইনমেন্টে ভালোভাবেই সে উতরেছে। তার ধারণার চেয়েও ভালো করেছে ফজা।একেই বলে বাপটা বেটা!ওর শরীরটাও বেশ পেছল ধরণের। তার এ ধরনের কাজে পেছল শরীরের প্রয়োজনটাই যে সবচেয়ে বেশি।
ঠিক তার এক সপ্তাহ পরেই খানসেনারা প্রাইমারি স্কুলে এসে ক্যাম্প ফেলল। হানিফ গাজির রাজকীয় সংবর্ধনা পেয়ে তারা সন্তুষ্ট। তার নেতৃত্বে শান্তি কমিটির ভার ছেড়ে দিয়ে খানের দল যোগ্য প্রতিদান দিয়েছে। ইদানিং নাকি খান কমান্ডারের নতুন নতুন বায়না মিটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হানিফ গাজি এবং তার বাহিনীকে।প্রতিদিনই সুন্দরী মেয়েছেলে হাজির করা চাট্টিখানি কথা নাকি!
লাল মিয়া গতি খানিকটা কমিয়ে পূত্রকে তার পাশে আসতে দিলো। ‘আরেট্টু বাজান!ঐ যে দূরে দ্যাহা যায় বাঁশের ঝাড়,ঐহানে যাইয়া আমরা বমু। খাইয়াও লমুনে।’
ফজা বাশঝাড়ের দূরত্ব আন্দাজ করে প্রমাদ গুনল। ওখানে পৌঁছতে এখনও কমপক্ষে ঘন্টাখানেক লাগবে। কয়েকদিনের বৃষ্টিহীন রাস্তায় গোড়ালি ডুবে যাওয়া ধুলোর ভেতর পা চালানো ফজার কাছে এখন অসম্ভব বোধ হচ্ছে। দিনকাল ভালো নয় এটা প্রমাণ করার জন্যই যেন রাস্তাঘাট জনমানবশূন্য। গত তিন ঘন্টা ধরে বাপপুত হাঁটছে। সাকূল্যে দেখা পেয়েছে তিনজন লোকের। সবার চেহারায় আতঙ্ক।পাশ কাটানোর সময় এমনভাবে তাকাচ্ছিল যেন,তারা তার উপর হামলে পড়বে!কথা বলা তো দূরের ব্যপার, মনে হচ্ছিল স্যাত করে বেরিয়ে যেতে পারলেই বাঁচোয়া। এখন কার কী উদ্দেশ্য-বলা মুশকিল!লাল মিয়াও দেখা পাওয়া লোকেদের মতোই একটা মাফলার দিয়ে মাথার পাশাপাশি মুখের দুই-তৃতীয়াংশ ঢেকে রেখেছে।
বারো বছরের ফজা অতকিছু বোঝে না। তার বোঝার কথাও না। সে রোমঞ্চের উত্তেজনায় বাপের সাথে কোথাও যাচ্ছে। যেমন গিয়েছিল গত দু’মাসে দুবার। তবে কোথায় যাচ্ছে-তা সে জানে না। এখনও বাপজান তাকে খুলে বলে নি। সময় হলেই বলবে। তবে আপাততঃ পরিশ্রমের তোড়ে তার রোমাঞ্চে ভাটা পড়েছে। তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে কাঠ।বলল, ‘বাজান পানি খামু।’
‘কইলাম তো ঐহানে যাইয়া লই। এইহানে তরে পানি কইত্থনে দিমু। ঐহানে এট্টা ডোবা আছে। ইচ্ছামতো খাইয়া লইস।’
বাঁশঝাড়ে যখন তারা পৌঁছল তখন সূর্য ডুবুডুবু। ঝাড়ের ভেতরের দিকে সুবিধাজনক আড়াল দেখে পূত্রধন ফজাকে নিয়ে লাল মিয়া অবস্থান নিল। তার পূর্বপরিচিত ডোবায় হাতমুখ ধুয়ে গামছায় বাঁধা চিরাগুড় খেয়ে মনের তৃষ্ণা মিটিয়ে নিজে ডোবার ঘোলাপানি খেল খাওয়াল পূত্রকেও । তারপর গামছা বিছিয়ে শরীরটা এলিয়ে দিলো।
আহ!কী আরাম!
শরীরে খানিক আরাম পেয়েই বোধহয় পূত্র ফজার কণ্ঠে নতুন করে জগৎ-সংসার সম্পর্কে কৌতূহল জেগে উঠল। তাই বাপকে প্রশ্ন,‘আইচ্ছা বাজান,মাইনষে কয় খানেরা নাকি খুব খারাপ? হেরা নাকি দ্যাশটা লইয়া যাইব? সইত্য নিহি?’
‘হ সইত্য।’
‘তাইলে ধরো আমাগো কেষ্টনগর গেরামডা তো কম বড় না!খাড়া করলে আসমান সমান উচা হইব। হইব না বাজান?’
‘হ হইব।’
‘তাইলে এত লম্ফা গেরামডারে উচা করব ক্যামনে? ক্যামনেই বা পেলেনে আর জাহাজে উডাইবো? এরম তো আরো কয়েক কুড়ি গেরাম আমাগো দ্যাশে আছে,আছে না? এট্টা গেরামই নিবার পারব না তো পুরা দ্যাশ ক্যামনে নিব?’
‘আরে বলদের পো বলদ!এই নেওয়া হেই নেওয়া না।’
‘তাইলে কোন নেওন?’
‘হোন তাইলে,আমর হইলাম গিয়া বাঙ্গালী। খানেরা হইল গিয়া পাকিস্তানী?’
‘আমরা পাকিস্তানী না? স্কুলে যে ছারেরা লাইন করাইয়া গান গাওয়াইতো-পাকিস্তান জিন্দাবাদ!আরো কইত আমরা হইলাম পাকিস্তানী।’
‘হেইডাও সইত্য। তয় এহন আর আমরা পাকিস্তানী না। শেখ সাব সাফ সাফ কইয়া দিছে আমরা আলাদা দ্যাশ করমু। হেই লইগ্যা খানেরা আমাগো দ্যাশ জোর কইরা নিতে চায়। আমাগো অত্যাচার করে। টাহা-পয়সা,মাল-সামান কাইড়া লইয়া যায়। কতায় কতায় আমাগো মাইরা ফালায়। এইডারেই কয় দ্যাশ লইয়া যাওন। বুচ্ছস?’
‘তাইলে তুমিও তো দ্যাশ নিয়া যাইতাছ,যাইতাছ না বাপজান?’
‘কী কস পোলা?’
‘এই যে তুমি কইলা খানেরা মাইনষের টাহা-পয়সা,মাল-সামান কাইড়া লয়। তুমিও তো মাইনষের টাহা-পয়সা মাল-সামান কাইড়া লও। তাইলে তুমিও তো দ্যাশ নিয়া যাইতাছ,তুমিও তো খারাপ।’
‘কী কলি হারামজাদা ফাজিল পোলা!আমারে খানেগো লগে তুলনা করস্!লাত্থি দিয়া হেই কান্দি হালাই দিমু!আমারে চেনস!আমি কি কাইড়া লই নি? আমি তো না কইয়া লই!কাইড়া লওন আর না কইয়া লওন এক কতা নিহি!’
‘নেওন দিয়া হইছে কতা!হেইডা কাইড়া হউক আর না কইয়াই হউক।’
ঠাস করে একখানা চড় কষে দিলো লাল মিয়া পূত্র ফজার গালে। ‘আর এট্টা কতা কবি তো মাইরা আড্ডিগুড্ডি ভাইঙ্গা হালামু!’
চড়টা বেশ জোরের সাথেই দিলো লাল মিয়া। হাতের আঙুল বসে যাওয়ার কথা। চারিদিকে অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে ততক্ষণে। ফজার ফোঁপানো কান্নার সুর অন্ধকারকে নাকি অদ্ভুত দর্শন মশাদের সাদর সম্ভাষণ জানাচ্ছে তাই সম্ভবতঃ নিরূপণ করছে বাঁশঝাড়ের নিস্তব্ধতা।
২.
দবির মেম্বার উসখুস করছে সেই সন্ধ্যা থেকেই। হবি দাবড়ানি দিলো দবির মেম্বারকে,‘আপনে এত বেআক্কেল ক্যা? কখন থেইক্কা কইতাছি চেয়ারম্যান সাব খানসাবগো লগে বৈঠক করতাছে।ক্যাম্পে আছে। অহন আপনের লগে দেহা হইব না। টাইম নাই। বাইত্তে যান গা।’
‘হ তুমি কও আর আমি বাইত্তে যাইগা। তুমিই তো দ্যাখতাছি আইজকাইল বড় চেয়ারম্যান হইয়া গ্যাছ গা। আমার পেরেশানি তুমি কী বোঝবা?’
‘আমার ভালো কতা যহন হোনবেন না তাইলে হারা রাইত বইয়া থাকেন।ঐ বারান্দায় গিয়া বইয়া থাকেন গা আর মশার কামড় খান গা। আমি বৈঠকঘরের দরজা লাগাই দিমু। সরেন।’
একজন মেম্বার হিসেবে প্রাপ্ত নূন্যতম সম্মানটাও সে হবির কাছ থেকে পাচ্ছে না। ব্যাটা চেয়ারম্যানের শালা বলে যারতার সাথে উল্টাপাল্টা কথা বলার সাহস পায়! অবশ্য নিজের লজ্জা-শরম থাকলে তো সে অন্যের মান বুঝবে। সারা বছর বোনের বাড়িতে পরে থাকে,আর চেয়ারম্যান তাকে কামলার মতো খাটিয়ে নেয়।এতে তার জাত যায় না। কেউ জিজ্ঞাস করলে বলে-আরে,বোনের বাড়ি তো নিজের বাড়িই। নিজের বাড়িতে কাজ করতে দোষ কি!বিরক্ত হয়ে দবির মেম্বার বলল,‘তা তোমার এত জ্বলে ক্যা আমি এইহানে বইয়া থাকলে? ছাল নাই কুত্তার বাঘা নাম।’ শেষের বাক্যটা অবশ্য শুনতে না পাওয়ার মতো মিনমিন করে বলল।
‘কি কইলেন?’
‘কইছি তুমি যাইয়া হুইয়া থাকো গা। আমি দেহা না কইরা যামু না।’
‘না,আপনে জানি কি কইলেন আমি হোনলাম।’
‘হোনছো!কী হোনছো!’
‘কুত্তা হিয়াল কি জানি এট্টা কইছেন!’
‘অই মিয়া তুমি কানে বেশি হোনো। কাইল বিয়ানবেলা উইট্টাই পয়লাই কান পরিস্কার করবা,বোচ্ছো?’
‘মেম্বার সাব বেশি বাইড়া গেছেন আপনে!আমারে গালি দিছেন!’
‘কী যে কও তোমারে আমি গালি দিতে যামু কোন দুঃখে!তুমি হইলা গিয়া চেয়ারম্যান সাবের আদরের শালা। তোমারে কি আমি গালি দিতে পারি!হালার পো হালা।’ এবারও শেষের বাক্যটা আস্তে বলল সে।
না,গালি দিছেন!’
‘আরে দেই নাই।’
‘হ দিছেন …’
‘কী হইছেরে হইব্বা!চিল্লাচিল্লি করস কার সাথে?’ বাহির থেকে গলা ভেসে এলো। সেই সাথে বারান্দায় টর্চের জোরালো আলো পড়ল।
দবির লাফিয়ে উঠল,‘চেয়ারম্যান সাব!আসসালামালাইকুম। আমি দবির।’
‘অ!দবির!তোমারেই তো খুঁজতাছিলাম। যাউক সময় মতোন পাইয়া গেলাম। ভালোই হইছে।’ চেয়ারম্যান হানিফ গাজি ঘরের ভেতরে ঢুকল। তার পিছু পিছু দুজন লোক। অস্ত্র তাদের হাতে।তবে তারা খান নয়,বাঙালিই।
দবির হাঁ করে অস্ত্র ধরা লোকগুলোর দিকে তাকিয়ে রইল। কোনোমনে বলল,‘খাইছে চেয়ারম্যান সাব!আপনের লইগ্যা তো দেহি অহন খানসাবেরা বডিগার্ড বানাই দিছে!আপনের আর কোনো চিন্তা নাই!চিন্তা আমার!আমারে বক্কইরার মুক্তির দলের লোকেরা পাইলে আস্ত থুইব না!গিল্যা খাইব। চেয়ারম্যান সাব কিছু এট্টা করেন!’
চেয়ারম্যান হবির দিকে তাকালেন,‘অই হইব্বা!তুই এহন যা। আর কোনো কাম নাই তর এহেনে।’
হবি একান্ত বাধ্য ছেলের মতো মাথা একদিকে কাত করে আস্তে বেরিয়ে গেল খিড়কি দরজা দিয়ে।হবির বেরিয়ে যাওয়ার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল চেয়ারম্যান। বেরিয়ে যেতেই অস্ত্রধারীদের একজনকে ইশারা করল দরজাটা লাগিয়ে দিতে। দরজা লাগানো হতে চেয়ারম্যান কণ্ঠ অনেকটা নিচু করে বলল,‘হোনো দবির,তোমার ভয় পাওনের কিচ্ছু নাই। মুক্তিরা দুইদিন ইট্টু লাফালাফি করছে। অহন আর করব না। হেই ব্যবস্খাই হইতাছে।আমাগো রাজাকার বাহিনীতে আরো লোক লাগব। তুমি দশ-পনেরজন পোলাপান দিবা।’
‘হেইয়া দেওন যাইব চেয়ারম্যান সাব। কিন্তু বক্কইরার …’
‘হেই কতাই তো কইতাছি।খানসাবগো লগে কতা কইয়াইলাম। পেলান-পোরোগেরাম সব পাক্কা। বক্কইরা গো আস্তানার খোঁজ পাওয়া গেছে। আইজ ফজরের আযানের আগেই আর্মি যাইব অগো আস্তানায়। সবকয়ডারে হয় ধইরা লইয়াইব নায় খতম করব। কাইল আগেই রেকি কইরা আইছিল সুলেমান রেজাকার। পোলাডার সাহস আছে। আর্মিরে রাস্তা দেহাই লইয়া যাইব ঐ সুলেমানই।’
‘কন কী?’
ফ্যা ফ্যা করে হাসল চেয়ারম্যান,‘আমি কি আর তোমার লগে মশকরা করতাছি!’
‘তাইলে তো কোনো চিন্তাই নাই,চেয়ারম্যান সাব!’
‘চিন্তা নাই আবার আছেও।’
‘কেমুন চেয়ারম্যান সাব?’
‘হোনো,হেরা হইল গিয়া পরদেশী মানুষ। আমাগো দ্যাশে আইছে আমাগো বাঁচানের লইগ্যা। হেগো ঠেকা কী আমাগো বাঁচানের? তোমার আমার উচিত না হেগো খুশি রাহোন? কও উচিত না?’
‘তা তো ঠিকই চেয়ারম্যান সাব। আমরা নাদান লোক হেগো লইগ্যা কী করতে পারি,কন?’
‘হেরাও তো মানুষ। নাকি কও দবির।’
‘হ।’
‘অগোও তো বিবি-বাচ্চা আছে,নাকি?’
‘হ।’
‘যুদ্ধ করতে আইছে বইলা কি অগো স্বাদ-আহ্লাদ নাই?’
‘আছে।’
‘আর জানোই তো যুদ্ধের ময়দানে যা পাওয়া যায় তাই গনিমত।’
‘বড়ই সইত্য কতা।’
‘তাই কমান্ডার সাবরে আমার কতা দিতে হইছে যে হেগো দশজন মাইয়া-ছেলে দিতে হইব।’
‘কন কী চেয়ারম্যান সাব!’
‘ঠিকই কই। বাঁচতে হইলে দিতে হইব। উপায় নাই!তাও আবার যা তা দিলে হইব না। চেহারা-সুরত ঠিক না থাকলে আমার চেহার-সুরতই গায়েব কইরা দিতে পারে। তুমি তো কোন ছার!বুচ্ছো নি দবির!একেবারে ঝাড়েবংশে নিকাশ হইয়া যাইবা।’
‘ইন্নালিল্লা!’
‘তাইলে অহন বোঝো আমাগো কী করন উচিত?’
‘আ আপনে যা কন চেয়ারম্যান সাব। আমারে খালি বাঁচান!আমি বাঁচতে চাই!’
‘বাঁচার রাস্তাডাই তোমারে কইতাছি দবির,হোনো। বক্কইরার বইনডার চেহারা-সুরত তো মাশআল্লাহ ভালোই। দশ গেরামে এমুন একখান খুঁইজা পাওন যায় কিনা সন্দ আছে। তোমার লগে সাতজন রেজাকার দিয়া দিমু অহন। তুমি গিয়া বক্কইরার বইনসহ আরো তিনচাইরডারে তুইল্যা নিয়াইবা। বোচ্ছো নি?’
‘চেয়ারম্যান সাব!আ আ আমি ক্যা ক্যা ক্যামনে …’
‘নাইলে তোমারেই ক্যাম্পে পাডাই দিতে হইব। বোঝবা নে তহন ঠ্যালা কারে কয়!’
দবির এবার বেকুব বনে গেল। তলপেটে চাপ অনুভব করতে লাগল। হতবিহ্বলভাবে কোনোক্রমে বলল,‘চেয়ারম্যান সাব,পা পা পারমু!’
‘তুমি এত ডড়াও ক্যা? তুমি তো খালি বাড়িডা দেহাই দিবা। বাকি কাজ তো অরাই করব।’
লাল মিয়া নিজের পিঠে হাত উল্টে চুলকাতে চুলকাতে অন্ধকারের ভেতর ফিসফিস করে বলল,‘ফজা!বাপজান আমার!’
ফজাও পিঠ চুলকাতে ব্যস্ত। কাচারি ঘরের পেছনের খড়ের গাদায় আর কাহাতক ডুবে থাকা যায়!শুধু পিঠ নয়,সমগ্র শরীরই কুটকুট করে কামড়াচ্ছে। সে শুধু দাঁতে দাঁত পিষে সহ্য করছে কোনোক্রমে। বাপের মধুর স্বরের ডাক শুনে সচেতন হয়ে উঠল,‘কও বাপজান!হোনতাছি!’
‘বেশি হয়রান হইয়া গেছ?’
হয়রান সে হয়েছে সত্যি। তবে উত্তেজনার বশে তেমন একটা টের পাচ্ছে না,‘না বাজান!’
‘আরো দুই মাইল অহন আমার লগে দৌড়াইতে পারবা?’
‘ক্যা? সিঁদ কাটবা না!চুরি করতে হইব না!’
‘না বাপজান,মা-বোইনের ইজ্জত যাইতাছে আর দ্যাশের লইগ্যা যারা যুদ্ধ করতাছে তাগো জান যাইতাছে!এমুন সময় চুরি কেমনে চোরেরও তো এট্টা ধর্ম আছে! এমুন সময় চুরি করলে অধর্ম হয়ে রে বাপ! খোদা তালায় ছাড়ব না! আমাগো জলদি পৌঁছান লাগব বাপজান!’
‘কই যাইবা?
‘যেহেনে গেলে কাম হইব।’
‘বক্করের কাছে যাইবা?’
‘হ।’
অন্ধকারের ভেতরেই ফজার চোখদুটো উজ্জল হয়ে উঠল,‘বাজান!হেয় নাকি মুক্তি!আমি মুক্তি দেখমু।আমি মুক্তি হমু!’
‘তাইলে বাজান তাড়াতাড়ি চলো!’
০৩ জুন - ২০১১
গল্প/কবিতা:
৯ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪