শিকড়ে ফেরা

দেশপ্রেম (ডিসেম্বর ২০১১)

নিলাঞ্জনা নীল
  • ৭৫
  • 0
মিতু ফ্রান্স এর রাজধানী প্যারিসে ওর পরিবারের সাথেই থাকে; বাবা পিটার এবং মা ডরোথির নয়নের মনি। একটি নামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে;পাশ্চাত্যের এই আলো ঝলমলে শহরে এত প্রাচুর্যের মাঝে থেকেও অনেকটাই নিঃসঙ্গ;কেনো যে সে আর সবার মতো হুল্লোরে মেতে আনন্দে বিভোর থাকতে পারে না! মিতুর সারাদিন কাটে পড়াশোনায়। গান শুনে ও মুভি দেখে কাটে অলস সময়গুলো; বাবা মার সাথে ওর সম্পর্ক খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ;একদিন সন্ধ্যাবেলা বাবার সাথে বসে মুভি দেখছিল মিতু্;হঠাৎ বাবার বুকে ব্যথা শুরু হয়। উনি বুঝতে পারেন বেশি সময় নেই ওনার হাতে। ডরোথীকে বলেন মিতুকে লুকিয়ে রাখা সেই কাহিনী জানাতে যা ওর অস্তিত্বের সাথে জড়িত;

২.
বাংলাদেশের একটি ছায়াঘেরা গ্রামের নাম উজিরপুর্;সেই গ্রামের কৃষক পরিবারের মেয়ে মিনা ; গ্রামের স্নিগ্ধ ছায়ায় বাবা মায়ের আদরে সে বেড়ে ওঠে ; ইচ্ছে তার অনেক পড়াশোনা করার; স্কুল জীবন শেষ করে মাত্র কলেজ এ পা রেখেছে সে;এমনই এক সময়ে পাকিস্তানী সেনারা নির্বিচারে নিরীহ মানুষ খুনে মেতে ওঠে রাতের আধারে। শোষণ মুক্তির দৃঢ় সংকল্পে শুরু হয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধ ; উত্তাল হয়ে উঠেছে দেশ;প্রতিষ্ঠিত একটি বিশাল সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এক অসম যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাংলার কৃষক, মজুর, ছাত্র জনতা। যুদ্ধের ডামাডোলে বন্ধ হয় স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়। মিনার অনেক আকাঙ্ক্ষার পড়াশোনাও থমকে দাড়ায়। শোষকের প্রতি প্রচণ্ড একটা ঘৃণা পুষে সেও গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করতে থাকে;

একই গ্রামের ছেলে জলিল। ধন, সম্পদ আর পেশি শক্তির প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় ত্রাসের সৃষ্টি করেছে;পাক হানাদার বাহিনীর হয়ে কাজ করত সে; মুক্তিযোদ্ধাদের খোজ দেয়া, যুবতি নারীদের ক্যাম্পে তুলে দেয়া তার দৈনন্দিন রুটিনে পরিণত হয়। এমনই একটা সময়ে মিনা জলিলের নজরে পড়ে যায়; এক সন্ধ্যাবেলা জলিল মিনাকে নিয়ে যায় আর্মি ক্যাম্প এ ;

যুদ্ধের মাঝামাঝি সময় তখন;পাকিস্তানী হানাদারেরা মুক্তিবাহিনীকে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। কোন রকমে লুকিয়ে ক্যাম্প থেকে পালায় মিনা; কষ্টের সময়গুলো তরতর করে যুদ্ধের ময়দানে হারিয়ে যায়। ইতোমধ্যে নিজের ভিতরে আরেকটি প্রাণের স্পন্দন টের পায় ও; মিশ্র একটা অনুভূতি আচ্ছন্ন করে ফেলে। এ প্রাণের স্পন্দন ওর ভেতরে প্রচন্ড একটা ঘৃণা হয়ে পোড়াতে থাকে। আবার নিজের শরীরের ভেতরে বাড়তে থাকা মাংশ পিন্ডটার প্রতি দূর্ণিবার একটা মায়াও সৃষ্টি হতে থাকে।

যুদ্ধে সাধারণ নিরীহ মানুষের প্রতি অত্যাচারের মাত্রা ক্রমশই বিশ্ব বিবেককে জাগ্রত করতে থাকে। অনেক বিদেশী এগিয়ে আসেন এই দুঃসময়ে, কেউ কলম হাতে অত্যাচারের কাহিনী লিখেন আবার কেউ আসেন চিকিৎসার মহান ব্রত পালনে।

নয় মাসের রক্ত ঝরানো যুদ্ধের পরে স্বাধিনতার সূর্য উকি দেয় বাংলার আকাশে। মাসের পর মাস ঘুরতে ঘুরতে এক গ্রামে গিয়ে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে মিনা;সেই গ্রামে ত্রাণ কাজে আসে একটি দল। তাদের সহযোগিতায় মিনা জন্ম দেয় এক কন্যা সন্তানের; সৃষ্টিকর্তার নিপূণ খেলায় তার ভিতরে জমতে থাকা অস্থিরতার পরিণতি দেখার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে মিনা; দলটির মাঝে পিটার ও ডরোথি ছিলেন দম্পতি ও নিঃসন্তান; পরম মমতায় তাঁরা কোলে তুলে নেন শিশুটিকে;

৩.
মন্ত্র মুগ্ধের মতো তার মায়ের কথা শুনছিল মিতু। মনে মনে একটা হিসেব মিলে যায় তার। যার রক্তে মিশে আছে এক মায়ের গ্লানি আর বিরত্ব, তার ভিতরে উচ্ছাসটা তাই আর সবার মতো ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেনি। মিতু এ মুহুর্তে স্তম্ভিত ও হতচকিত;এক সময় সম্বিত ফিরে আসলে ছলছলো চোখে ডরোথীর কাছে অনুমতি চায়, অন্তত একবার যেতে চায় ওর মায়ের কাছে। ডরোথি বলে দেন তার মায়ের ঠিকানা, যেখানে তার মাকে কবরে সম্মানের সাথে শুইয়ে দিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। আর পিটার নিজের হাতে লাগিয়ে দিয়েছিলেন একটি কৃষ্ণচূড়ার চারা।

মাটির রাস্তার পাশে লাল ফুলেদের ভারে নূয়ে পড়া কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে এসে দাড়ায় মিতু। পুরো প্রকৃতি যেন সেই কৃষ্ণচূড়ার মতো নতশিরে লাল সালাম জানাচ্ছে দেশের জন্য জীবন দেয়া মিনার স্মৃতিতে। অশ্রু সজল চোখে মনে মনে বলে ওঠে আমি গর্বিত আমি এক দেশ প্রেমিকের সন্তান;মা আমি তোমাকে দেখিনি কখনো, তবুও মা আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
নিলাঞ্জনা নীল ধন্যবাদ ফারুক....
ওয়াদুদ ফারুক আমার ভাল লেগেছে।
নিলাঞ্জনা নীল ধন্যবাদ প্রজাপতি......
নিলাঞ্জনা নীল ধন্যবাদ ভাইয়া....... @খোরশেদ......
প্রজাপতি মন মাটির রাস্তার পাশে লাল ফুলেদের ভারে নূয়ে পড়া কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে এসে দাড়ায় মিতু। পুরো প্রকৃতি যেন সেই কৃষ্ণচূড়ার মতো নতশিরে লাল সালাম জানাচ্ছে দেশের জন্য জীবন দেয়া মিনার স্মৃতিতে। অশ্রু সজল চোখে মনে মনে বলে ওঠে আমি গর্বিত আমি এক দেশ প্রেমিকের সন্তান;মা আমি তোমাকে দেখিনি কখনো, তবুও মা আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি। অনেক ভালো লাগলো ।
খোরশেদুল আলম গল্পটি ছোট হলেও বিশেষ অর্থবহন করে, শিকড়ে ফেরা। সুন্দর গল্প।
নিলাঞ্জনা নীল ধন্যবাদ পণ্ডিতমশায়........:D @মাহী
নিলাঞ্জনা নীল অনেক ধন্যবাদ আপনি এসেছেন বলে......:) @ মনির.

০২ জুন - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৩৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪