এত বালুর মধ্যে হাটার একটা মজাই আলাদা | সমুদ্রের ধারে এলেই যেন মনটা অস্থির হয়ে ওঠে অহনার | বালুতে পা ডুবিয়ে রাখা যেন পানিতে পা ডুবিয়ে রাখার চাইতেও অনেক আনন্দের | একটা অন্যরকম অনুভূতি ছেয়ে যায় পুরো শরীর আর মন জুড়ে | হাত দিয়ে ছুঁয়ে দিলে বালুর কণা গুলো যেন পিঁপড়ের মত দৌড়া দৌড়ী শুরু করে | আনন্দের বন্যায় হাসতে থাকে অহনা, ঠিক বাচ্চা একটা মেয়ে যেন |
একদৃষ্টিতে চেয়ে থাকে | যত দেখে তত যেন নতুন করে আবিষ্কার করে সিক্ত | এই হাসিটা দেখবার জন্যে আজীবন চেয়ে থাকতে পারবে যেন | মানুষ এত সুন্দর হয় কি করে? আজ এতগুলো দিন পরেও, ঠিক সেই আগের মতই লাগে অহনাকে | অর চোখের দিকে তাকানো মাত্রই, একটা পাগল করা অস্থিরতা সব সময় সিক্তকে কোথায় যেন নিয়ে যায় |
"সিক্ত, এই সিক্ত, কি করছ? এদিকে এস না প্লিস |" ঘোর থেকে যেন জেগে ওঠে সিক্ত | এক টুকরো হাসি খেলে যায় ওর ঠোটে | চুপি চুপি হেটে পেছনে গিয়ে দাড়ায় | অহনা তখন বালু আর পানির মধ্যে দুষ্টুমি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে | পেছন থেকে দু হাত দিয়ে চোখ ঢেকে ধরে সিক্ত |
"এক মুহূর্ত কণ্ঠ না শুনলে এত অস্থির হয়ে ওঠ কেন বল তো? আমি কি হারিয়ে গেছি, বোকা মেয়ে | তোমাকে ছেড়ে কোথায় যাব?"
একটা বিমর্ষ ভাব যেন অহনার মুখ চোখে খেলেই চলে গেল | চোখ ছাড়াবার চেষ্টা না করে ডান হাতের বালু ছোট করে সিক্তর গালে লাগিয়ে দেয় অহনা,হেসে ওঠে ছোট্ট মেয়ের মত খিল খিল করে |
" তবে রে, দাড়াও দেখাচ্ছি মজা |" হাতে করে ভেজা বালু নিয়ে খুব যত্ন করে অহনার গালে লাগিয়ে দেয় | একটুও নড়ে না অহনা, ওর হাত ইচ্ছে মত বালু লাগাতে ব্যস্ত তখন সিক্তর গায়ে | ঠোটের আর চোখের কোণে লেগেই আছে দুষ্টুমি হাসি |
মন মত বালু লাগিয়ে হা হা করে হেসে ওঠে সিক্ত | "কি সুন্দর যে লাগছে তোমাকে, ঠিক যেন বালু রানী, হা হা হা |" কপট রাগে ওর দিকে তাকায় অহনা | "আমি বালু রানী হলে আপনি কি, বালু রাজা মশায়, হি হি হি |"
খুব মজা পেয়ে হাসতে থাকে অহনা | একমনে ওর চোখের দিকে চেয়ে থাকে সিক্ত | এই হাসি, এই চোখ, পৃথিবীতে আর কোনো সুন্দর এর চে সুন্দর হতেই পারে না | অহনার কোলে মাথা রেখে বালুর মধ্যেই শুয়ে পড়ে সিক্ত |
"এই কি কর? বালু নিয়েই শুয়ে পড়লে যে,শাড়িটা ময়লা হয়ে যাবে তো |" সিক্তর মাথায় হাত রাখে অহনা | মাথা নিচু করে কি যেন খুঁজতে থাকে | "কি হলো, বললে না, কি কর ?"
অহনার গালের বালু গুলি সরিয়ে দিয়ে গালটা টিপে দেয় সিক্ত, "আমার সোনা বৌ এর চোখের গহিনে হারিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি |"
"ইশ কি ঢং, আমার চোখ মোটেও সুন্দর না, আমি জানি |" খোঁচা দেয় সিক্তকে |
ইউনিভার্সিটির দিন মনে পড়ে যায় সিক্ত | অপরাজেয় বাংলার ঠিক পাশেই দাঁড়িয়েছিল ক্লাস হবে না বলে | আচমকা কলা ভবনের দরজায় চোখ পড়তেই হত বিহ্বল হয়ে যায় | একটা চোখ, এমন সুন্দর চোখ, পৃথিবীতে আছে? বিশ্ববিদ্যালয়ের কত হাজার মেয়েই তো দেখেছে | এমন চোখের দেখা তো কোনদিন পায় নি | ওই চোখের প্রেমেই পড়ে যায় সিক্ত, প্রথম দেখায় প্রেম যাকে বলে | খোজ নিয়ে জানতে পারে সেকেন্ড ইয়ার, ইংলিশ ডিপার্টমেন্ট |
পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে টি এস সি চত্বর এর অপেক্ষা যেন আর সইছিল না | সেকেন্ড ইয়ার এর লোপা কে চেনা ছিল আগে থেকেই,ছোট করে সব বলেছে লোপা কে,অনেক অনুরোধ এর পর লোপা রাজি হয়েছে আজকে অহনা কে নিয়ে আসতে, কিন্তু ওকে প্রতিজ্ঞা করিয়েছে যেন কোনদিন অহনা কে কষ্ট না দেয় |
কষ্টের কারণ জানত সিক্ত,কিন্তু কোনদিন কাউকে বুঝতে দেয়নি | ওই চোখের মালিক যে, তার মনটা খুব দরকার,তখন সেটাই শুধু ওর মাথায় ঘুরপাক খেয়েছে |
সেই শুরু, দেখতে দেখতে ছয় মাস | একদিন আড়াল থেকে মা কে দেখালো সিক্ত,সুন্দরের প্রতিমা দেখলেন যেন মা | এমন একটা বউ ই তো তার দরকার ছেলের জন্যে |
তারপর কত যুদ্ধ | ভালবাসার জন্যে যুদ্ধ মানুষ করে | কিন্তু এ বড় আজব যুদ্ধ | নিজের ভালো বাসাকে স্থাপিত করবার জন্যে, শক্ত করে ধরে রাখবার জন্যে |
তারপর আজ, তিন বছর কেটে গেছে | অসম্ভব সুখী আজ সিক্ত অহনা কে নিয়ে | যত দিন যায়, ততই যেন ওর ভালো বাসা বেড়েই চলেছে | একটা মুহূর্ত অহনা ছাড়া ভাবতে পারে না সিক্ত | আর অহনা যেন সিক্তর কণ্ঠ না শুনলে অর্ধমৃত হয়ে যায় | এত ভালো কেউ কাউকে বাসতে পারে, ওদের বোধ হয় জানা ছিল না | জীবনে অনেক ভয়ংকর সত্য থাকে যাকে মেনে নিতেই হয় | কিন্তু সেই ভয়ংকর সত্য যেন ভালো বাসার বন্যায় ভেসে গেল,সব কষ্ট কে হারাবার যুদ্ধে যেন জয় হলো ভালো বাসার |
একদৃষ্টিতে স্মৃতি ভাবছিল সিক্ত | হঠাত অহনা ছটফট করে উঠতেই সোজা হয়ে বসলো | "আহহহহহঃ আহহহহহহ" চোখ ডলতে ডলতে ছটফট করছে অহনা |
"কি হলো, কি হলো, দেখি দেখি" ওর হাত ধরে সিক্ত |
"চোখে কি যেন গিয়েছে,বিঁধছে খুব" অসহায় এর মত নড়ে ওঠে অহনা |
আস্তে করে চোখের ভেতরের ছোট্ট বালুকণা বের করার চেষ্টা করে সিক্ত | অন্য হাতে আলতো করে ওর কাঁধ ধরে থাকে |
"এবার দেখো তো | ভালো লাগছে কিনা ?" চোখের ওপর থেকে হাত সরায় সিক্ত | চোখের পাতা একত্র করে অহনা | ঠোটের কোণে ভেসে ওঠে আবার দুষ্টুমি হাসি | চোখ খুলে সিক্তর কপালে হাত রাখে |
"হ্যাঁ, এখন ঠিক আছে |" আলতো করে বলে অহনা |
"আমি থাকতে কোনদিন একটু কষ্ট ও পেতে দেব না | কি ভয় পেয়েছিলাম, ওই চোখে আমার সব, একটু কিছু হলে তোমার, আমার মাথা খারাপ হয়ে যায় |" দু হাতের তালুতে অহনার মুখটা তুলে ধরে সিক্ত | "আমার জীবনটা যে তোমার জন্যে বউ |"
"আমি তোমাকে আমার কাছ থেকে কোনদিন হারাতে দেব না, কোনদিন না | আমিই বা কেমন করে থাকব |" আলতো করে সিক্তর বুকে মাথা রাখে অহনা |
বিকেলের সূর্য তখন হেলে পড়েছে সমুদ্রের বুকে | গোধূলির রাঙ্গা রঙের দিকে তাকিয়ে শক্ত করে অহনাকে বুকের ভেতর ধরে রাখে সিক্ত | হাজার আনন্দের শিহরণে চোখ ভিজে ওঠে অহনার |
সব পাওয়ার আনন্দ, অশ্রু হয়ে ভিজিয়ে দেয় অহনার অনিন্দ্য সুন্দর জন্মান্ধ চোখের পাতা |
০২ জুন - ২০১১
গল্প/কবিতা:
১৮ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।
প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী