অঝরা,
স্নিগ্ধাদের বাসার সেই দিনের কথা কি মনে আছে তোমার?
বিকেলের নমনীয়তায় প্রথম দেখেছিলাম তোমায়,
দেখেছিলাম, বর্ষার প্রথম বৃষ্টিতে ভেজা, একটা ফুল |
তুমি যখন ঝুম বৃষ্টিতে কাক ভেজা হয়ে ঢুকছো বাসায়,
মনে হহ্ছিল, পৃথিবীর সব সৌন্দর্য,
তোমার ভেজা চোখের পাতায় এসে জড়ো হয়েছে|
মনে হচ্ছিল, অমরাবতীর সরোবর থেকে উঠে আসা,
সুন্দরের দেবী যেন তুমি|
মায়াবী জীবন বড় খেলারাম,
আজ এই বৃষ্টি স্নাত বিকেল,তোমার সে চোখ মনে করিয়ে দিল|
প্রচন্ড ঝড়ে আর বর্ষায় মাঝে মাঝে আকস্মিক নুয়ে যাওয়া
নারকেল গাছ, সেই ভুবন ভোলানো মুহুর্তটির মত খেলা করছে |
তোমার মনে আছে, রবীন্দ্র সরোবরে আবৃত্তির উত্সবে,
তোমার বেদনা বিধুর কন্ঠের কান্না, আমরা শুনে ফেলার আগেই,
শুনেছিল আকাশ, তোমার আবৃত্তি শেষ হতেই, সে কি বৃষ্টি!
আমি বলেছিলাম, "তুমি আকাশকে কেন কষ্ট দিলে?"
"জাননা, আকাশকে কাদাতে হয় না, ছুয়ে দিলেই আকাশ কাদে" - বলে একটুকরো চাদের হাসি দিয়ে স্তব্ধ আমাকে মুগ্ধ করে,
চলে গিয়েছিলে |
অঝরা, আমার ভালো বাসা কি মনে আছে তোমার?
সেই যে বিশ্যবিদ্যালয়ের বকুল তলায়, তোমার আচলে মাথা মুছতে মুছতে, ভিজিয়ে দিয়েছিলাম তোমায় পানির ঝলকে |
তোমার কপট রাগে মাখা মুখের দিকে তাকিয়ে, বলেছিলাম -
"এইভাবে ভিজিয়ে দেব সারা জীবন, ভালো বাসায়,রাজি?"
তুমি তো রাজি ছিলে অঝরা, তোমার মন প্রাণ উজাড় করা
ভালবাসায়, সিক্ত ছিলাম আমি, আমরা বুঝেছিলাম,
বর্ষায় জন্ম নেওয়া ভালো বাসায়, জীবনভর ভিজব আমরা |
বরষা আজও আসে, ভিজিয়ে দিয়ে যায়,
আমাকে, শুধু একলা আমাকে |
আজ তোমাকে ঠিক সেই দিনগুলোর মত,
খুব কাছে পেতে ইচ্ছে করছে, ভালো বাসতে ইচ্ছে করছে,
আজন্মলালিত ভালবাসায় কি তুমি ভিজে চলেছ আজও?
আজও কি তোমার ভেজা আচল, প্রতি মুহুর্তে বলে,
"আমি ছিলাম, তোমার আচলের সুতো ছুয়ে" |
বরষা ভেজা আমার চিরদিনের ভালো বাসা,
বরষার বহতা জলে ভাসিয়ে দিলাম, তোমার কাছে যাবে বলে |
যদি তাকে দেখতে পাও, বুঝে নিও, আমি আছি, তোমার ভেজা চুলের চুইয়ে পড়া পানির মত, তোমারই শরীর ছুয়ে |
ভালো থেকো,
দিগন্ত প্লাবিত বরষার মত উচ্ছল থেকো,
ইতি,
তোমারি শ্রাবণ.