পৃথিবীটা যেন আজ একেবারেই অন্ধকারে ঢেকে গেছে। বাঁচার শেষ নেশাটুকুও ধুলোতে লুটোপুটি খাচ্ছে। নেশা ছুটে যেতে যেতে নাড়া দিয়ে যায় জীবনের গল্প। যে কাহিনী মনকে বেঁধে রাখে ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতে! সারা জীবন স্কুল শিক্ষক বাবার আদর্শে অনেক কষ্ট করে বড় হয়েছে আমার বাবা। অনেক কাঁটাতারের বেড়া ডিঙ্গিয়ে কোন রকমে টিকে থেকে তিনি আশায় বুক বাঁধেন আমাকে নিয়ে! যে জীবন তিনি পেয়েছেন সন্তান হয়ে যেন সেই জীবনের স্বাদ আমাকে পেতে না হয়। মাস্টার্স পাশ করেও বিভিন্ন অফিস পাড়ার দুয়ারে দুয়ারে মাথা ঠুকে শেষাবধি একটা অফিসের কেরানীর চাকুরী করছেন তিনি। বাবার ইগো সমস্যা কোনদিনই ছিল না। কিন্তু আত্ম সম্মানবোধ ছিল ষোল আনা! পরিবারের কথা ভেবে সেই আত্মসম্মানকেও তিনি জলাঞ্জলি দিয়েছেন। নিজেকে এই কাজের যোগ্য ধরে নিয়েই শিক্ষায় তার থেকে অযোগ্য মানুষের সামনে মাথা নুইয়ে,সম্মান দিয়ে তাদের অর্ডার মেনে শরীরের ঘাম ঝরিয়েছেন। দিন যত গেছে জীবন তত কঠিনতর হয়েছে! দু'মুঠো ডাল ভাত জোগাড় করতে করতে শিক্ষা পেয়েছেন এই জীবনে আর যাই হোক সচ্ছলতা আসবে না! সেই সাথে নিজে যতই আদর্শ আর নৈতিকতার খোলসে নিজেকে ঢেকে রাখুন না কেন;প্রতিটাক্ষণ কঠিন পারিপার্শ্বিকতার বলয়ে টিকে থাকার যুদ্ধ করে যেতে হবে তাঁকে। এ যুদ্ধে জয়ী হওয়া যে কতটা দুরূহ তা উনি পদে পদে অনুভব করেছেন। আর তাই বোধহয় আমাকে এই যুদ্ধের মুখোমুখি কোনদিন হতে দিতে চাননি। আমাকে লেখাপড়ায় শ্রেষ্ঠ করতে আজ রেখে গেলেন নামকরা বোর্ডিং স্কুলে। বাড়তি খরচ উঠাতে বাবাকে নাইট ডিউটিতে কাজ করতে জয়েন করতে হয় একটা ফ্যাক্টরিতে।
বাবা মা আদর করে আমার নাম রেখেছেন সুজন। যার অর্থ পবিত্র আত্মা! সেই শৈশব থেকে মা সব সময় নামের অর্থ বুঝিয়ে অনেক কথা বলতেন । বাবা সবসময় আমাকে স্বপ্ন দেখাতে লাগলেন ঘর থেকে দূরে অন্য একটা সুন্দর পরিবেশে যেতে হবে মানুষের মত মানুষ হবার জন্য। একজন কেরানীর ছেলেকে ঘরে রেখে ভালো ভাবে শিক্ষা দেয়া প্রায় অসম্ভব! তাঁদের ধারণা বাবার জীবন যুদ্ধের সারাদিনের ক্লান্তি আর অভাবী সংসারে মায়ের হতাশা আর দীর্ঘশ্বাসের বাতাসে মনটাকে শান্ত রেখে লেখাপড়ায় মনযোগী হওয়া সুজনের পক্ষে অনেক কষ্টের হয়ে যাবে। এর থেকে ভালো সে শান্তিতে থেকে পুর্ণ মনোনিবেশ করে লেখাপড়া করে মানুষের মত মানুষ হয়ে উঠুক। পরিবারের অন্য সবাই কষ্ট করুক। আর তাই স্কুলের সেরা ছাত্র সুজনের ক্লাস এইটে উঠতেই ঘর ছাড়ার সময় হয়ে যায়। তার মত মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে যাবে শহরে বোর্ডিং স্কুলে পড়তে এ যেন অনেক বড় কিছু পাওয়া! এমন ভাব নিয়ে ওর ক্লাসের বন্ধুরা ওকে কাঁধ চাপড়িয়ে ভাগ্যবান একজন ভেবে মন খারাপ করে বিদায় দিয়েছে। বন্ধুবৎসল সুজন নতুন নতুন বন্ধু গড়ার স্বপ্নে যেন হাওয়ায় ভেসেছিল সেদিন। বাবার কষ্টের কথা ভেবে সে প্রতিজ্ঞা করে অনেক খেঁটে সে বাবার স্বপ্ন পূরণ করবে। বাবাকে তার আত্মসম্মান ফিরিয়ে দিয়ে গর্বিত করবে।
বাবা মা সুজনকে বোর্ডিং স্কুলের নির্ধারিত রুমে বসে পুনরাবৃত্তি করে যায় আদর্শ আর মানুষ হবার সব কৌশল। বাবা সুজনের হাত দুটো ধরে রাখে অনেকক্ষণ কিন্তু মুখে কিছুই বলেনা। বুকের মাঝে ভীষণ ব্যথা অনুভব হয়...। কিছু না বলেও বাবার মনের সব কথা তাঁর চোখ দেখে পড়ে ফেলে সুজন। তাঁরা বিদায় নিয়ে রুম থেকে বের হতেই সুজন দেখে হাতের মাঝে তিনটা পাঁচশত টাকার নোট! বাবা মায়ের চোখকে ফাঁকি দিয়ে যে এটা করেছে তা বুঝে বৃষ্টি ঝরা ক্ষণেও ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠে। সে জানে এই টাকাটা হয়ত বাবা কারো কাছ থেকে কর্জ করেছে অথবা কোন কিছু বিক্রি করে সংগ্রহ করেছে! টাকাটা তুলে ধরে ঝাপ্সা চোখের পর্দায়। বাবার রক্ত পানি করা ঘামে ভেজা মুখটা ভেসে ওঠে। বাবাকে ভীষণভাবে একটা আদর মাখা চুমু দিতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু বাবা তো চলে গেছে...! টাকাটা ঠোঁটে ছোঁয়াতে যাবে বাজপাখির মত ছোঁ মেরে কেড়ে নেয় কেউ! সামনে তাকিয়ে দেখে ওর বয়সী চারজন ছেলে। যে টাকাটা কেড়ে নিয়েছে সে টাকাটা নিজের পকেটে রেখে সুজনের গাল টিপে দিয়ে ব্যঙ্গ সুরে বলে- -কিরে ডগি কয়টা চিকেন খেয়েছিস? ছেলেটার কথা শেষ হতেই সবাই হেসে দেয়। যা দেখে সুজনের লজ্জা লাগে। সে বুঝে পায়না কেন এই ছেলেগুলো ওকে ওভাবে বলছে! সে দেখে ছেলেগুলো ওর ব্যাগ খুলে জামা কাপড়,বিছানা বালিশ সব হাতড়ে যাচ্ছে। নতুন কিনা দড়িটা দিয়ে মা বিছানা বেঁধে বলেছিল যেন দড়িটা যত্ন করে রাখি আবার ব্যবহার করার জন্য। সব ওলট পালট করে গতকাল মা যে নতুন গেঞ্জি আর প্যান্টটা কিনে দিয়েছে সেইটা একটা ছেলে তুলে নিয়ে নাক ধরে ইয়াক ইয়াক করছে! চিৎকার দিয়ে উঠে সুজন- - এইইই ঐটা আমার নতুন কাপড়...মা কিনে দিয়েছে রাখো তোমরা! কাপড়টা একরকম কেড়ে নিয়ে ব্যাগে রাখে আবার। যে ছেলেটা টাকা নিয়েছে সে একেবারে সামনে এসে গালে ঠাস ঠাস করে চড় মারতে থাকে! দেয়ালে ঠেসে ধরে মুখ চেপে ধরে। "চুপ ডগি...একদম শব্দ করবি না। আর কাউকে কিছু বলবি না। যদি কাউকে কিছু বলিস তাহলে...ঘ্যাচাংংং …মাথা রাজশাহী আর বডি বুড়িগঙ্গায় ওকে!" ভয়ে শিউরে উঠে সুজন। ছেলেটা পকেট থেকে টাকাটা বের করে দেখে নিয়ে আবার বলে "আর কোথায় কোথায় টাকা রাখছিস? বের কর...।" এই বলে সুজনের সারা বডি সার্চ করতে করতে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় হাত বুলিয়ে যায়। কোন কোন জায়গায় অতিরিক্ত চাপ দেয় যা সুজনের কাছে ভালো লাগেনা। সে বুঝে যায় ছেলেগুলো ভালো না। "বাবা কারো সাথে কোন্দল করতে যেও না। সবার সাথে বন্ধুর মত ব্যবহার কর,ভালবাসা দিও। মনে রেখ ভালবাসা ভালবাসার জন্ম দেয় আর কোন্দল ধ্বংস ডেকে আনে।" মায়ের বলা কথাটা মনে পড়ে। ভীষণ কান্না পায় তার। ছেলেগুলো যেতে যেতে আবার ঘুরে দাঁড়ায়। নেতা টাইপের ছেলেটা আবার বলে-"এই ডগি চিকেন খেতে চাইলে আমাকেও সাথে নিস। আর না পেলে আমাকে বলিস তোকেই আমি চিকেন বানিয়ে খাব।" আবার সবাই হেসে দেয়। সুজন কাঁপা কাঁপা গলায় বলে-''আমার নাম ডগি না সুজন...যার অর্থ পবিত্র আত্মা।" সবাই হেসে হেসে এবার বিদ্রুপ করে ওর নাম নিয়ে। একটা ছেলে এসে ওর গাল জিভ দিয়ে চেটে দিয়ে বলে " ইসসস কী বিশ্রী গন্ধ! পবিত্র জিনিষে গু-এর গন্ধ! হা হা হা...।” সুজন আর কিছু বলে না।
এভাবে প্রায় প্রতিদিন ছেলেগুলো সুজনকে বিভিন্নভাবে র্যাগিং করতে থাকে। সে দেখেছে বেশীর ভাগ ছেলেগুলো ওদেরকে ভয় পায়,এড়িয়ে চলে। একেতে সবকিছুই নতুন তার উপর এখানে পরিচিত কেউ নেই! কী করবে সে? কার সাথে বলবে এই অসহ্য যন্ত্রণার কথা? এখানে এসে পড়াশুনার চাপটাও বেড়েছে অনেক। সে জানে বাবা মা কতটা আশা নিয়ে তার উপর ভরসা করে এখানে পাঠিয়েছে। তাঁদের সেই আশা পূরণে যত পরিশ্রম তাকে করতে হয় সে করবে। "প্রতিযোগিতা পুর্ণ এই জীবনে মানুষ হতে গেলে অনেক খাটতে হবে। বাঁধা আসবে,কেউ কেউ টেনে ধরে রাখবে যেন সামনে এগিয়ে যেতে না পারে। কিন্তু মেধা দিয়ে,শক্তি ও সময় দিয়ে তাকে অতিক্রম করতে হবে। সফলতা পেতে গেলে হার্ড ওয়ার্ক করতে হবে।" বাবা এভাবেই বুঝিয়েছে তাকে! যেভাবেই হোক লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। সুজন পরাজয় মেনে নেবে না। দিন যেতে যেতে একদিকে ছেলেগুলোর অত্যাচার বেড়ে যায়;আরেকদিকে ভারি ভারি বইয়ের ভারে ওজন বাড়ে স্কুল ব্যাগের।
দুই মাস যেতেই মনের বোঝা আর ব্যাগের বোঝা টেনে নিতে অনেক কষ্ট হয় তার। আর ভালো লাগেনা এখানে...। আজ মাকে ফোন দেয়। সে বলবে এখান থেকে নিয়ে যেতে। কিন্তু মায়ের কণ্ঠ শুনে বুঝে নেয় মায়ের শরীর ভালো না। অভাবের সংসারে যেন অসুখের আনাগোনাটাও অনেক বেশী। এ যেন ধনী মানুষের টাকার দামে বাদশাহি বিলাসিতা আর গরীবের অভাবের দামে দুঃখ বিলাসিতা। চিকিৎসার টাকা নেই অথচ শরীরের ভাঁজে ভাঁজে রোগের ছড়াছড়ি। মাকে বলতে গিয়ে বলতে পারলনা কিছুই। কথা বলতে বলতে গলার কাছে আটকে থাকে কান্নার স্রোত। মায়ের কথায় ছোট্ট মন সব বুঝতে পারলেও মা সন্তানের মন বুঝতে আজ ভুল করেছে! ফোনটা রেখে সুজন ঘুরতেই ধাক্কা লাগে। মাথা উঁচু করে দেখে সর্বনাশের কঠিন চূড়ায় সে। ওকে ধরে নিয়ে বাথরুমে নিয়ে যায় ছেলেগুলো। জোর করে কমোডের পানি খাইয়ে দেয়। বলে কাল সকালের মধ্যে ওর বাবার কাছে যেন পাঁচ হাজার টাকা চায়। না হলে আরও কঠিন সাঁজা পাবে। সুজন জানে বাবা কোনদিন একসঙ্গে এতটাকা দিতে পারবে না।
নাওয়া খাওয়া ঘুম কিছুই হয়না এখন। রুম ছেড়ে সিঁড়ির নিচে আড়ালে বসে লেখাপড়া করে যায়। অনেক খেঁটে কিছুই মনে রাখতে পারছে না সুজন। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতেও সে হাঁপিয়ে যায়...। ওর মনে হয় সারা স্কুলের ছেলেগুলো ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে। সবাই ব্যঙ্গ করছে ওর নাম নিয়ে,পোশাক আর গরীব বাবার চাকুরী নিয়ে! ও ভাবে একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। এখানে প্রতি সপ্তাহে পরীক্ষা থাকে এবং প্রতিটা পরীক্ষায় সুজন খুব ভালো করেছে। শিক্ষকরা সবাই খুব খুশি তার প্রতি। কিন্তু খুশি হতে পারেনি বখাটে ছেলের দল। সুজন তার পরিশ্রমের যথাযোগ্য ফল পেয়েছে এটা মেনে নিতে না পেরে অত্যাচারের সীমা ছাড়িয়ে যায়। গতরাত সে একটুও ঘুমাইনি। অনেক খেটেছে। এবার সে প্রতিটা প্রশ্নের উত্তর আরও ভালো করে দিয়ে পূর্ণ মার্ক নিতে চায়। সে ক্লাসে সেরা ছাত্র তবে দুই মার্ক কম পেয়েছে। নাইনটি এইট পার্সেন্ট মার্ক পেয়ে সে বুঝতে পেরেছে আর একটু খাটলেই সে একশো পার্সেন্ট মার্ক উঠাতে পারবে। তাহলে সে কিছু টাকাও বৃত্তি হিসাবে পাবে যা এই বোর্ডিং স্কুলের নিয়ম। টাকাটা পেলে বাবাকে বলবে তাকে এখন কিছু টাকা কম পাঠালেও চলবে। ঐ টাকায় যেন মাকে ডাক্তার দেখানো হয়। কথাটা ভাবতেই অন্যরকম সুখ অনুভব করে। আজ পরীক্ষার সকালে খুশি মনে মায়ের দেয়া প্যান্ট শার্টটা পরে রুম থেকে বের হবে ঠিক সেই মুহূর্তে ছেলেগুলো চেপে ধরে। নেতা টাইপের ছেলেটা ওর পিছনে গেঞ্জিতে কীসব লিখে ছেড়ে দেয়। হেঁটে যেতে যেতে দেখে পিছনে সবাই হো হো করে হাসছে। আর সামনে অন্যরা তাকিয়ে দেখছে ওকে! কিছুই বুঝতে পারছে না সে। তবে ধরেই নিয়েছে পিঠে কিছু লিখেছে ওরা...! ক্লাসে ঢুকে নির্দিষ্ট সিটে বসতে যাবে শিক্ষক বসতে দেয়না! বলে - "সুজন তোমার গেঞ্জিটা খোল।" অবাক হয়ে যায় সুজন! চোখ বুলিয়ে নেয় সারা ক্লাস। দেখে সবাই হাসছে এবং তাদের মাঝে ছেলেগুলোও আছে। শিক্ষক আবার বলতেই গেঞ্জি খুলে খালি গায় হয়ে যায়। শিক্ষক এবার বলে গেঞ্জির পিছনে কী লেখা তা পড়ে শোনাতে! দ্বিধাগ্রস্থ সুজন কী করবে ভেবে পায়না। এবার শিক্ষক বেশ ধমক দেয়। গেঞ্জিটা চোখের সামনে মেলে ধরে-"আমার নাম সুজানা,আমি একটা মেয়ে। তোমরা কে কে চিকেন লাইক কর রাতে দেখা কর!" কণ্ঠে যেন ঝড় বাতাস বৈছে! শিক্ষক আবার বলে "চিকেন মানে কী জানো তুমি? মেয়ে! তো অর্থ কী দাঁড়ালো বুঝলে?” ক্লাসের সবাই হো হো করে হেসে দেয়। "সাইলেন্ট...!”গমগম করে উঠে শিক্ষকের কণ্ঠ! সুজনের কানের ভীতর শোঁ শোঁ আওয়াজ। অন্ধকার হয়ে আসছে সব...! শিক্ষক আবার গর্জন করে উঠে-"কে লিখেছে বল! কী ব্যাপার...কথা কানে যাচ্ছে না? " সুজনের মনে হয় ভূমিকম্প হচ্ছে...! অসহায় হয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতেই চোখ যায় বখাটে দলের দিকে...! কানে বাজে "যদি কাউকে কিছু বলিস তাহলে...ঘ্যাচাংংং …মাথা রাজশাহী আর বডি বুড়িগঙ্গায় ওকে!" সাথে মায়ের বলা কথা-"সবার সাথে বন্ধুর মত ব্যবহার কর ভালবাসা দিও। মনে রেখ ভালবাসা ভালবাসার জন্ম দেয় আর কোন্দল ধ্বংস ডেকে আনে।" শিক্ষককে কিছুই বলতে পারেনা সে। এর মাঝে পরীক্ষা শুরু হবার ঘণ্টা বেজে যায়। শিক্ষক বলে ক্লাস শেষে আবার এই নিয়ে কথা হবে। গেঞ্জিটা উল্টা করে উনি নিজেই পরিয়ে দেয়। সুজন মাথা নিচু করে বসে পড়ে। প্রশ্নপত্র হাতে নিয়ে দেখতে পায় সব অক্ষরগুলো চারিদিকে ছুটে ছুটে ওর সাথে মশকরা করছে। খাতায় কিছুই লিখতে পারছে না...। সাদা খাতায় ছবির মত দেখতে পাচ্ছে - বাবা ফাইল এক টেবিল থেকে আরেক টেবিলে ছুটছে! আরেকজন চা,আরেকজন পানি চাচ্ছে! বড় সাহেব চিৎকার দিয়ে বেল বাজিয়ে যাচ্ছে,বাবা সেদিকে ছুটে যাচ্ছে! সন্ধ্যায় ঘরে এসে খেয়ে আবার বের হয়ে যাচ্ছে টর্চ আর লাঠি নিয়ে! কোম্পানির সামনে ছোট্ট টুলে বসে ঝিমাতে ঝিমাতে চমকে দাঁড়িয়ে উঠে আবার টহল দিচ্ছে! বাবা হোঁচট খেয়ে পড়ে গেল! পায়ে ছেড়া স্যান্ডেলটা দড়ি দিয়ে বেঁধে নিয়েছে! সুজনের চোখের পাতায় কেবলই ভেসে উঠছে ঘামে চপচপ ভেজা বাবার ক্লান্ত শরীর...! সারা স্কুল তাকে নিয়ে হাসবে! তাকে সবাই ঘৃণার চোখে দেখবে...! সে কারো সামনে যেতে পারবে না আর। সে বাবার কষ্টার্জিত অর্থের মূল্যও দিতে পারলো না! বাবা মা সবাই তার প্রতি অখুশি হবে! এই মুখ সে আর কাউকেই দেখাতে পারবে না। গভীর রাতে যখন সারা স্কুল নিদ্রা দেবীর বুকে পরম শান্তিতে আশ্রয় নিয়েছে। থেমে থেমে চারিদিকে ঝিঁঝিঁর ডাক আর ব্যাঙের কলরব। মাঝে মাঝে আঁধারকে নিস্তব্ধ করে দিয়ে "ঘেউ ঘেউ" শব্দে ডেকে উঠছে কোন প্রভুভক্ত কুকুর। ঠিক তখন স্কুলের টহলরত দারোয়ান দেখতে পায় একটা ছোট্ট ছায়া হাতে একটা মোটা সাদা দড়ি নিয়ে ধীরে ধীরে হেঁটে যাচ্ছে সেগুন গাছটার দিকে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ফেরদৌসী বেগম (শিল্পী )
চমৎকার একটি টপিক নিয়ে এবং আপনার দক্ষ হাতের ছোঁয়ায় খুব সুন্দর গল্প লিখেছেন সেলিনা আপা। এমন স্বপ্ন ভঙ্গ ও হতাশান্বিত সুজনদের দেখলে বা গল্প পড়লে ভীষণ কষ্ট হয়। গল্পে ভোট সহ অনেক অনেক শুভকামনা রইলো।
তানি হক
আমাদের সতর্ক থাকা উচিত সাবধান থাকা উচিত । কারন এখন এরকম ঘটনা প্রাই ঘটছে । ঠিক এমন অবস্থার মোকাবেলা কিভাবে করা জায় বা কিভাবে করতে হয় । আমাদের নিজেদের এবং সন্তানদের অবশ্যই জানা দরকার । এবং শিক্ষকদের ও এই ব্যাপারে কড়া নজর সতর্ক থাকা দরকার । সুজনের মত আর কোনও মেধাবী ছাত্র ... নষ্ট মানসিকতার স্বীকার না হোক এই কামনা । আপু আপনাকে আমার ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা এই গল্পটির জন্য ... কামনা করি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করবে এই গল্প এবং আমাদের সচেতনতা , সাবধানতা । এবং প্রতিরোধ গড়ে উঠবে । আপনাকে সালাম ।
এস আহমেদ লিটন
সুজনের মত স্বপ্ন ভঙ্গ হচ্ছে আমাদের দারিদ্র্য সমাজের। প্রচুর মেধা থাকা স্বত্তেও এরা এগিয়ে যেতে পারে না। সামাজিক প্রতিকূলতার মাঝে নি:শেষ হয়ে যায়। হয়ত একদিন এ সুজন নিজ কক্ষপথে ফিরে আসবে, ফালতু কিছু ছেলে এদের পথ রোধ করতে পারবে না।
অসাধারন আপু! পূর্ণ ভোটের সাথে ভালবাসা রেখে গেলাম। আমার পেজে একটু ভুলগুলো ধরিয়ে দিলে দারুন খুশি হতাম।
"আরেকটু সাবধানতা অবল্মন করবেন" ঠিক বুঝতে পারলাম না কোথায় এবং কীভাবে সাবধানতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিচ্ছেন! ধন্যবাদ গল্প পড়ে পরামর্শ দেবার জন্য কিন্তু একটু খোলাসা করে দিলে সাবধান হতে সুবিধা হত। শুভকামনা রইল
আশা
বখাটেদের কারণে একটি মেধাবী ছাত্রের করুণ পরিণতি মেনে নেয়ার মতো না। আপনার এ লেখনি যদি তাদের একটুও সচেতন করে তেব অজপাড়া গাঁয়ের অসহায় মেধাবী মুখগুলো উপকৃত হবে। লেখার ধারা বরাবরের মতো সাবলিল সুন্দর।
আমার কাছে মনে হয় বখাটেদের কারণে মেধাবীদের ক্ষতি হচ্ছে না,ক্ষতি হচ্ছে ভালো মনের মানুষগুলো এই বখাটেদের অত্যাচারের প্রতিরোধ করছে না বিধায়! এই ক্ষেত্রে বাবা মা সন্তানকে এবং শিক্ষক ছাত্র ছাত্রীকে সঠিক শিক্ষা দিতে হবে। অন্যায় দেখলে সাহসী ও প্রতিবাদী হতে হবে। ভয় পেলে অন্যায় বাড়ে,কোন্দলের খারাপ ভালবাসা ভালো সন্তানকে বোঝালে এটাও বোঝাতে হবে অন্যায়কে ভয় করবে না। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ অসাধারণ মন্তব্যের জন্য। আমাদের দেশে বিষয়টি এখন ক্যান্সারের আকার ধারণ করেছে এর প্রতিকার প্রয়োজন। শুভকামনা রইল।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।