ব্যথার উপাসন হল না সমাপন ...

ব্যথা (জানুয়ারী ২০১৫)

সেলিনা ইসলাম
  • ১১
  • ৩১
ঠিকানাটা খুঁজে পেতে বেশ সময় লাগলো! ঠিক খুঁজে পেতে বললে ভুল বলা হবে। ঠিকানাটা চিনে নিতে বেশ সময় লাগলো! অথচ কয়েক বছর আগেও এটাই ছিল নিজের একমাত্র আশ্রয়স্থল! একমাত্র সুখের ঠিকানা। যে ঠিকানার স্বর্গীয় রাজ্যে পার করেছে দীর্ঘ দশটা বছর। যেখানে সাত বছরের ছেলে ভুবন আর পাঁচ বছরের মেয়ে ভূমীকে নিয়ে আশিক আর চৈতালি'র কেটেছে সুখের দিনকাল। ওদের খাবারের কোন অভাব ছিল না। কেবল ছিল না বিলাসিতার সমাহার! ছিলনা গাড়ী,পাকা বাড়ী আর রঙ বাহারি জীবন যাপন। "এদেশে থেকে কিছুই হবে না! কেবল ধুঁকে ধুঁকে হতাশা নিয়ে মরতে হবে। জীবনের কোন নিশ্চয়তা নেই,নেই কোন সুন্দর ভবিষ্যৎ। এভাবে কী বেঁচে থাকা যায়!" আর তাই সোনার হরিণের পিছনে ছুটতে ছুটতে চৈতালির পরামর্শে আশিক পাড়ি জমায় সুদূর আমেরিকা। তার মন চায়নি ছেলে মেয়ে আর প্রিয়তমাকে রেখে একা যেতে! কিন্তু চৈতালির কথা "পাঁচ বছরের ভিজিট ভিসা পেয়েছ! যদি একটু কষ্ট কর তাহলে এই পাঁচ বছরের আয় দিয়েই,আমাদের ও আমাদের সন্তানদের জীবন যাপনের সব রঙ মেখে মিলে মিশে বাকী জীবন কাটিয়ে দিতে পারব!”একজন পিতার কাছে মাত্র পাঁচ বছরের বিচ্ছেদ সুন্দর একটা জীবনের নিশ্চয়তা দেবে! এর চেয়ে আর বেশি কিবা চাওয়ার আছে? আশিক চৈতালির কথা মেনে নিয়ে চলে যায় বন্ধু জহরের কাছে স্বপ্নের দেশ আমেরিকাতে।

আমেরিকা গিয়ে আশিক দেখতে পায় বন্ধু জহরের অবস্থা খুবই খারাপ! কোন কাজ নেই,থাকার জায়গা নেই। তাই সে বেশ কিছুদিন এখানে সেখানে ঘুরে একটা বাঙালি মালিকানাধীন গ্রসারিতে খুব সামান্য বেতনে কাজ করতে থাকে। দেশে বসে আমেরিকার ডলার নিয়ে যে স্বপ্ন জাল বুনেছিল সেই স্বপ্নের জাল পনের দিনেই ছিঁড়ে যায়! দেশে খুঁড়িয়ে চলা ব্যবসাটা গুটিয়ে এবং জমিজমা সামান্য যা ছিল সব বিক্রি করে বাইশ লক্ষ টাকা খরচ করে সে চলে এসেছে। এখন থাকার মাঝে বসত ভিটাটুকুই সম্বল!
অনেক বাঁধা পেরিয়ে,হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে সপ্তাহ শেষে যে অর্থ আসে হাতে; তা দিয়ে নিজের থাকা খাওয়া চালালে দেশে আর কিছুই পাঠানো হবে না! ফিরে যাবে সে পথও বন্ধ! কী করবে সে দেশে গিয়ে? আর তাই ঘর ভাড়া বাঁচাতে থাকার জায়গা বেছে নেয় একটা গির্জা। যেখানে সে কেবল রাতের বেলা গির্জার এক কোণায় দেশ থেকে আনা চাদর বিছিয়ে কাপড়ের ব্যগটাকে বালিশ বানিয়ে ঘুমিয়ে থাকে! ভোর হতেই সব গুছিয়ে ব্যাগে ভরে পাশে থাকা একটা পার্কের বেঞ্চে গিয়ে বসে ঝিমাতে ঝিমাতে অপেক্ষা করে কাজের সময়ের! কোনদিন দুইবেলা দুইটা বার্গার বা পিঁজা খেয়ে দিন কাটায়! কোন দিন এককাপ কফি আর বিস্কিট। ঠাণ্ডা পড়তেই বেড়ে যায় কষ্ট! এতো কষ্টের মাঝেও প্রতিদিন ছেলে মেয়ে আর চৈতালির সাথে কথা না বললে একেবারেই ভাল লাগে না তার। ফোন করলেই ছেলে মেয়ে কত রকম খেলনা,গাড়ী আর পুতুলের বায়না নিয়ে বাবাকে বারবার বোঝাতে থাকে! তাদের চাওয়া বায়না অনুযায়ী সবকিছু না আনলে তারা বাবার সাথে কথা বলবে না সে অভিমানটুকু দেখাতেও ভুল করেনা। আশিক সব কথা শুনে যায় আর নীরবে হু হু করে কাঁদে। "বাবা সব কিছুই আনবে!" এই আনন্দে ওরা মাকে ফোনটা ধরিয়ে দিয়ে উল্লাস করতে থাকে। প্রিয়তমার কণ্ঠস্বর শুনে বুকের ভেতরটা হিম হয়ে আসে। বরফ গলা ঝড়ে খুব তোলপাড় করে। প্রিয়তমাকে জড়িয়ে ধরে কষ্টের তরী ভাসাতে খুব ইচ্ছে করে! ইচ্ছে করে বারবার বলতে " তোমাদের সবার মাঝে থেকে যে সুখ,সে সুখ এই একাকীত্ব জীবনে নেই! এ কষ্ট সইবার মত ধৈর্য আমার নেই চৈতালি।" কিন্তু কিছুই বলতে পারেনা। তার অনুপস্থিতিতে সৃষ্ট হাজারো সমস্যার কথা তুলে ধরে চৈতালি টাকা পাঠানোর তাগাদা দেয়। আশিক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আশ্বাস দেয়,যেভাবেই হোক সে প্রতি মাসে যত টাকা পাঠানো সম্ভব তা পাঠাবে। মনে পড়ে স্কুলে খেলার প্রতিযোগিতায় দৌড়ের কথা! তখন ভীষণ দুর্বল ছিল সে। কিন্তু তার জেদ এবার সে যেভাবেই হোক ট্রফি নিবে। দুরু দুরু বুকে প্রতিযোগী সবার সাথে গিয়ে দাঁড়ায়। প্রথমে বেশ খানিকটা দৌড়ে হাঁপিয়ে গেলে ভাবে থেমে যাবে। এমন সময় কানে ভেসে আসে মায়ের চিৎকার "ভাগ আশিক ভাগ, দৌড় দে! আর একটু বাবা,এবার ট্রফি তোকে পেতেই হবে...। ভা...আ...গ...!” অন্যরকম এক শক্তিতে সেদিন অনেক জোরে দৌড়ে প্রথম হয়ে ট্রফি হাতে নিয়ে সে কী আনন্দে ভেসেছিল সে! আজ জীবনের এই দৌড়ে সন্তানদের মুখ ভেসে উঠে দু'চোখের তারায়! মনে হয় ওরাও মায়ের মত বলছে "বাবা পারবে তুমি,তুমিই পারবে বাবা! তোমাকে যে পারতেই হবে!” আশিক এই জীবনকে যুদ্ধ হিসাবে নিয়ে নেয়! এই যুদ্ধে জয়ী হবার প্রতিজ্ঞা করে! যেভাবেই হোক তাকে জিততেই হবে।

দু'বছরে অনেকখানি গুছিয়ে আনে জীবন। একজনের সাথে বেড ভাড়া করে! দেশে থাকতে রুম ভাড়া,পেয়িং গেস্ট কত কি জেনেছে কিন্তু বেড ভাড়া!? একটা রুমে ও সহ মোট ছয়জন থাকে।একটা রুমের ভীতরে চারটা বেড । এরই একটা বেড রাতে একজন আর দিনে একজন করে শেয়ার করে। দিনে যে কাজ করে সে রাতে ঐ বেডে ঘুমায় আর রাতে যে কাজ করে সে দিনে! দু'জনে মিলে একজন সমান ভাড়া দেয়। আর উভয়ে যদি কোন কারণে একী সময়ে ঘরে থাকে তাহলে আশিককেই সেক্রিফাইস করে নিচে শুতে হয়। কারণ বেডটা অন্যজনের টাকায় কেনা! তবুও সে খুশি,চাইলেই বিশ্রাম নিতে পারছে। এক বেলা আলু ভর্তা,ডাল,আর ভাত খেতে পারছে! দেশে চৈতালিকে বলে দেয় ছেলেমেয়েকে লেখা পড়ায় ভাল,এমন একটা স্কুলে ভর্তি করে দিতে। আর তার জন্য যত টাকা লাগে সে পাঠাবে।

ধীরে ধীরে কষ্টও সয়ে যায়...। আশিকের কাজের গতি দিনে দিনে যত বাড়তে থাকে,দেশের সাথে যোগাযোগটাও তত কমতে থাকে। এখন শুধু প্রতিমাসে টাকা পাঠিয়ে,তা ঠিকমত পেয়েছে কিনা তার খবরাখবর নেয়। এ নিয়ে কারো কোন অভিযোগ নেই। সে যখন সময় পায় তখন চৈতালি ব্যস্ত ! আবার চৈতালি যখন ঘুমহীন রাত কাটায় প্রিয়তমের ফোনের আশায়,তখন সে কাজে ব্যস্ত। এক সময় দু'জনেই সবকিছুতেই অভ্যস্ত হয়ে যায়। আশিক অনুভব করে ছেলে মেয়ের নামটাও এখন মনে করতে গেলে বেশ ভাবতে হয়! মেশিনের মত চলতে চলতে পাঁচ বছর কেমন করে কেটে যায় আশিক বুঝতে পারেনা। ভিসা শেষ কিন্তু কিছুই করা হলনা। দেশে অন্তত একটা টু ইউনিটের পাঁচতলা বাড়ী না করে গেলে থাকা এবং আয়ের কোন পথ থাকবে না। চৈতালি বলে আর দুই বছর থেকে বাড়ীটা শেষ করি তারপর এসো! আশিকের আর ভাল লাগেনা এই একাকী যান্ত্রিক জীবন। বাচ্চা দুটোকে কোলে নিয়ে আদর করতে ভীষণ মন চায়! মন চায় প্রিয়তমার কাঁধে মাথা রেখে শান্তির নিঃশ্বাস নেয়। কিন্তু তা হবার নয়। দেশে ছেলে মেয়ে লেখাপড়া, নাচ,গান,ধর্মিয় অনুশাসন সবকিছুতেই পারদর্শি হয়ে উঠছে কেবল মাত্র টাকার জোরে। এখন গেলে সব কিছু বন্ধ দিয়ে সবাইকে নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। এই ভাল সে একা কষ্ট করুক অন্য সবাই ভাল থাকুক।

বন্ধু জহরের পরামর্শে ভিসার তোয়াক্কা না করে গা ঢাকা দিয়ে কাজ করতে থাকে আশিক। বাঙালি মালিক হওয়াতে কোন সমস্যা হলনা। কিন্তু এই কাজ করে খুব একটা রোজগার হয় না। তাই সে আরও একটা কাজ করে। রুমমেটরা যখন আড্ডা আর ফুর্তিতে মত্ত আশিক তখন সতেরো আঠারো ঘণ্টা কাজ করে ক্লান্ত ! প্রতি মাসে বাংলাদেশের দুই লাখ টাকা দেশে পাঠিয়ে দেয়। এভাবে আরও পাঁচ বছর থাকার পরে বাড়ীর কাজ শেষ করে ফেলে। ওদিকে গত তিন বছর ধরে বন্ধু জহর সেও কিছু না বলে কোথায় যেন চলে গেছে। এবার আর মন চায়না প্রবাসে থাকতে। আশিক ভাবে চৈতালিকে না জানিয়ে গেলে কেমন হয়? ও জানলে আরও কিছুদিন হয়ত থাকতে বলবে। আর তাই সে কাউকে কিছু না বলে দেশে টাকা পাঠিয়ে আরও কিছু টাকা হাতে জমিয়ে ছুটে যায় জন্মভূমির কোলে। জীবনে প্রথম সে অনুভব করে স্বর্গীয় আনন্দ কাকে বলে! এ আনন্দ তার জীবনে পাওয়া কোন আনন্দের সাথে মেলাতে পারেনা! প্রথম প্রিয়তমাকে কাছে পাওয়া,প্রথম বাবা হবার আনন্দ সবকিছুকে ছাপিয়ে যায় জন্মভূমির মুক্ত বাতাসে শ্বাস নেবার আনন্দ। প্লেন ল্যান্ড করতে করতে যখন তার চাকা দেশের মাটি ছুঁয়ে বিকট শব্দ করে কলিজাটা কাঁপিয়ে দেয়,আশিক তখন সোঁদা মাটির স্পর্শ অনুভব করে বুকের জমিনে। হু হু করে কেঁদে দেয় অনিন্দ্য আহ্লাদে!

বিমান বন্দর থেকে বের হয়ে একটা ট্যাক্সি নেয়। ভুবন আর ভূমী কত বড় হয়েছে তা ভেবে পুলকিত হয় সে। ওদের জন্য কিনে আনা খেলনাগুলো ব্যাগের উপর থেকে হাত দিয়ে অনুভব করে। ওরা না চায়তেও ওদের জন্য সারপ্রাইজ দিতে দামি ফোন এনেছে। কতদিন ওদের সাথে কথাও হয়না।"আচ্ছা ওরা কী ওদের বাবাকে চিনতে পারবে!” কথাটা মনে হতেই মিট মিট করে হাসে।" চৈতালি নিশ্চয় এই হঠাৎ চলে আসায় অনেক অভিমান করবে? নিশ্চয় অনেক বকাবকি করে এক সময় বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে জলের নদীতে হাবুডুবু খাবে! ওর ওতো তাকে ছেড়ে থাকতে অনেক কষ্ট হয়েছে?” ট্যাক্সিটা খুব জোরে ব্রেক করায় ভাবনার তার ছিঁড়ে সামনে তাকায়! এ কোথায় নিয়ে এসেছে তাকে?! "আরে ভাই আমি বলেছি রামপুরা যাব। আপনি এখানে কোথায় নিয়ে এসেছেন...? ”ড্রাইভারকে বলা কথাটা শেষ হতেই পাশের দরজা খুলে একজন কালো মত লোক পিস্তলের বাঁট দিয়ে মাথায় খুব জোরে বাড়ী মারে। ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হয়। গভীর অন্ধকারে ডুবে যেতে যেতে আশিকের বুঝতে বাকী থাকেনা সে কিডন্যাপ হয়েছে!

দিন চলে যায় স্রোতের মত। প্রায় তিন বছর ধরে কুক্ষিগ্রামে দেখা যায় একজন পাগলকে! যে চুপচাপ বসে থাকে একটা গাছের নিচে। কেউ খেতে দিলে খায়,না দিলে না খেয়ে ওখানেই পড়ে থাকে। দু একজন পাশ দিয়ে যেতে যেতে দু এক টাকা ছুঁড়ে মারে পাগলটার গায়। বিড়বিড় করতে করতে টাকাটা তুলে নেয় হাতে! একদিন ভোরের আলোয় পাগলটার মনে পড়ে ছায়া ছায়া কিছু ঘটনা! সামনে যাকে পায় তাকে জিজ্ঞাসা করে সে এখানে কীভাবে এলো? লোকের মাধ্যমে জানতে পারে সে পাগল হয়ে এই তিন বছর ধরে এই গ্রামেই ঘুরে বেড়িয়েছে! সবাই তাকে তার নাম ঠিকানা জিজ্ঞাসা করলে বিড়বিড় করে আমেরিকা,ইয়ারপোর্ট,ভুবন,ভূমী আর চৈতালি এই শব্দ গুলোই কেবল বলতে পেরেছে। মাথাটা এখনো অনেক ভার মনে হয়। খুব ঝাপ্সা ঝাপ্সা পুরো ঘটনাটা মনে পড়ে। এক সময় ছেলে মেয়ে প্রিয়তমা সবার চেহারা একে একে মনের পাতায় ভেসে উঠে। আর দেরী না করে সে ট্রেনে উঠে বসে। মনে পড়ে জীবনে একটু বেশি শান্তি পেতে কত কষ্ট সে করেছে! কতগুলো বছর ঝরে গেছে এই ছোট্ট জীবন থেকে ! এখন আর দেরী সইছে না তার! ছুটে ছুটে খুব কষ্টে বাসার ঠিকানায় এসে গেঁটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে।
এতো বিশাল বড় বাড়ী! ভীতরে যাবে কিন্তু দারোয়ান তাকে ঢুকতে দিচ্ছে না। মুখ থেকে সব কথা কে যেন কেঁড়ে নিয়েছে। রুগ্ন ছিন্ন কাপড়ে,চুল দাঁড়িতে ঢাকা আশিক থর থর করে কেঁপে যাচ্ছে! খালি পায়ে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে, বাড়ীর আশে পাশে ঘোরাঘুরি করেও কারোর দেখা পেল না। হাঁপাতে হাঁপাতে অনেক খানি জিভ বের হয়ে লালা বের হচ্ছে! খক খক করে কেশে যায় সে! আলসারের ব্যথাটা হুড়মুড় করে মুখ দিয়ে নাড়ীভুঁড়ি বের করে দিতে চাচ্ছে! আর দাঁড়াতে পারেনা! পেট চেপে ধরে খোঁড়াতে খোঁড়াতে বাড়ীর পাশের পার্কে গিয়ে পানির ট্যাপ থেকে ঢক ঢক করে পানি খায়! পকেটে থাকা টাকাগুলো স্পর্শ করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে...হেঁটে যায় রাস্তা পার হয়ে একটা দোকানে...। কী ভেবে হাতে তুলে নেয় সব চেয়ে কমদামী কাফনের কাপড়। বাদামী রঙের প্যাকেটটাকে বুকের সাথে জাপটে রেখে খক খক করে কেশে যায়! তারপর বেঞ্চে গিয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকে! যে আশিক সারা জীবন কষ্ট করে প্রবাসে থেকে স্বপ্ন দেখেছে দেশে গিয়ে রাজার মত বিলাসী জীবন যাপন করবে! সে আজ সবচেয়ে কম মূল্যের শেষ বসনের কাপড় ক্রয় করে পরম সুখ খুঁজে পায়। এক সময় কাশতে কাশতে বেঞ্চে শুয়ে পড়ে...।

মনের মাঝে অচেনা ব্যথারা গল্প তৈরি করে যাচ্ছে নির্বিঘ্নে! মন পাখিটা বেদনার সূর ভুলে ছটফট করছে শেষ নিঃশ্বাসে! আদর মাখা সেই দিনগুলো সব ধীরে ধীরে মনের বাতায়নে উঁকি দিয়ে,কেঁদে কেঁদে ঠিক গলার কাছে এসে থমকে যায়! গোধূলির আলো রঙ ছড়িয়ে ফুলের সুবাস ছড়ায়! চৈতালির খোঁপায় বেলি ফুলের মালা পরিয়ে দিয়ে লেপটে ধরে নিজের বুকের সাথে। কচি ডগার মত মটমট করে ভাঙ্গে আবেগ মোড়ানো প্রেম। আদরে আদরে ভরে দেয় তৃষ্ণার্ত মন! "এই চা গরম! চা গরম চা!" স্বপ্ন ভেঙ্গে যায় বাচ্চা ছেলেটার চিৎকারে! অস্থিরতা আর দুর্বলতা জড়িয়ে ধরে পা। অনেক কষ্টে আবার ছুটে আসে বাড়ীর দরোজায়। এবার দারোয়ানকে কোথাও দেখা যায়না। গেটের ছোট্ট খোলা দরজা ডিঙিয়ে দেখতে পায় ধবধবে সাদা দামী গাড়ীটা! কাঁপা কাঁপা হাত বুলিয়ে নেয় কিছুক্ষণ। গাড়ীর শার্সিতে নিজেকে দেখে নিজেই আঁতকে উঠে আশিক! চমকে উঠে গেটের বাইরে "পো...ও...পোপোও..." গাড়ীর হর্ণের শব্দে। দৌড়ে এসে দারোয়ান দরোজা খুলে দিতেই লাল রঙের চকচকে মারুতি সুজুকিটা প্রবেশ করে! আশিক সাদা গাড়ীটার আড়ালে থেকে ভীরু চোখে দেখে-লাল গাড়ী থেকে সুন্দরী এক নারী নেমে আসে! বুকের ভীতরে হুহু করে শীতল বাতাস বয়ে যায়- "চৈতালি...!" প্রায় চিৎকার করে ডাকতে যাবে এমন সময় দেখে,গাড়ীর ভীতর থেকে বের হয় বন্ধু জহর! আশিক'র হাত পা বরফের মত ঠাণ্ডা হতে থাকে! পাশাপাশি দু'জনে দু'কদম হেঁটে যায়। হঠাৎ চৈতালি থমকে দাঁড়ায়। ঠিক যেন শিকারি জন্তুর মত বাতাসে গভীরভাবে কিছু একটা শুঁকে নেয়। দূরে দাঁড়িয়ে প্রিয়তমার হারানো অভ্যাসের কথা ভেবে আশিক অসহায়ভাবে পলকহীন দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে থাকে। বুকের ভীতরে হৃদপিণ্ডের উঠানামা অনেক বেড়ে গেছে-"এই বুঝি উল্কা বেগে ছুটে এসে বুকে ঝাঁপ দিয়ে জড়িয়ে ধরবে কেউ। এই বুঝি জ্বেলে দেবে নিভু নিভু আলো!” চৈতালি ফিস ফিস করে বলে-
“ ও এসেছে ! ও এখানেই কোথাও আছে"!
“ কতবার বলেছি ও নেই,সমস্ত নিউইয়র্ক শহর তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি! অন্য শহর গুলোতেও খোঁজ নিয়েছি...ও বেঁচে নেই চৈতি!"জহরের কণ্ঠে বিরক্তি ঝরে পড়ে।
“ না না আমার মন বলছে ও ধারে কাছেই কোথাও আছে। প্লিজ...আজ আমার জন্যই ওকে আমি...উফ... " দুর্বলতায় কথা জড়িয়ে আসে।
“ভীতরে গিয়ে ওষুধ খেতে হবে...চল...” মৃদু ধমকে জহর চৈতালিকে ধরে নিয়ে যেতে যেতে আশিকের দিকে চোখ পড়তেই হুঙ্কার ছাড়ে-
"দারোয়ান! দারোয়ান!” ছুটে আসে দারোয়ান। আশিক কখন যে আড়াল থেকে বের হয়ে এসেছে সে নিজেও জানেনা! কিছু বলার আগেই দারোয়ান দেখে ফেলে তাকে।
"আরে! আপনি আবার ভিক্ষা করতে আসছেন মুরুব্বী...? যান যান বের হন,বের হন।" ধাক্কাতে ধাক্কাতে প্রায় গেটের কাছে নিয়ে আসে!
আশিকের চোখ বেয়ে সমুদ্রের ঢল নামে...থির থির করে কেঁপে যায় ঠোঁট। ক্লান্ত চোখে চোখাচোখি হয় চৈতালি'র সাথে।
"চৈতালি…চৈতি...!” ঘৃণায় চোখ ঘুরিয়ে নেয় মাটির দিকে। হৃদয় ভাঙার শব্দে অবশ হয়ে আসে শরীর! শেষ সম্বল প্যাকেটটা জাপটে ধরে আস্তে আস্তে বের হয়ে আসে বাড়ীর ভীতর থেকে। ব্যথার ভারে নিচু হয়ে হেঁটে যায় সামনের দিকে......।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মাইদুল আলম সিদ্দিকী হৃদয় বিদারক! ভালো থাকুন সবসময়... উপহার দিয়ে যান এরকম হাজার হাজার লেখনী।
ভালো লাগেনি ২৫ জানুয়ারী, ২০১৫
আশিক বিন রহিম ভালো লাগা জানিয়ে গেলাম
ভালো লাগেনি ২৪ জানুয়ারী, ২০১৫
শেখ শরফুদ্দীন মীম ভালো লিখেছেন দিদি। আমার ছোট্ট কবিতাটুকু সময় করে পড়বেন।
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি বেশ ভাল গল্প......অনেক ধন্যবাদ....
ভালো লাগেনি ১৯ জানুয়ারী, ২০১৫
জসীম উদ্দীন মুহম্মদ দিন চলে যায় স্রোতের মত ------- মনের মাঝে অচেনা ব্যথারা গল্প তৈরি করে যাচ্ছে নির্বিঘ্নে!--------- অসাধারন উপমা !! পুরো লেখাটি পড়লাম আপি । কিছু কিছু লাইন কবিতাকেও হার মানায় !! সার্থক ছোট গল্প ।। সালাম জানবেন।
ভালো লাগেনি ১৭ জানুয়ারী, ২০১৫
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন আশিকের...ভাগ্য না কর্মফল? ভাল লিখেছেন। ভাল লেগেছে।শুভেচ্ছা রইল।
ভালো লাগেনি ১০ জানুয়ারী, ২০১৫
"আশিকের...ভাগ্য না কর্মফল?"আমার তো মনে হয় দুটোই কর্মে ভুল ছিল বিধায় হয়তবা ভাগ্য অনুকূলে ছিল না! গল্প ভাল লাগায় কৃতার্থ হলাম। নিরন্তর শুভকামনা রইল । ভাল থাকুন...
ভালো লাগেনি ১৫ জানুয়ারী, ২০১৫
জাতিস্মর কয়েক জনের মধ্যে আপনি একজন। যাদের লেখা পড়ে মন্তব্য করতেও বেশ সাহসের প্রয়োজন হয়। আপনি চমৎকার লেখেন। অতি চমৎকার। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা, দীর্ঘজীবী হন আপনি আর দীর্ঘজীবী হক আপনার কলম। সাহস করে আরেকটা কথা বলি, আমারো একটা ছোট্ট গল্প আর একটা ছোট্ট কবিতা আছে। সময় পেলে পড়ে দেখবেন।
ভালো লাগেনি ৭ জানুয়ারী, ২০১৫
মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম! ধন্যবাদ সময় দিয়ে পড়ে সুন্দর মন্তব্য দেবার জন্য সতত শুভকামনা।
ভালো লাগেনি ১৫ জানুয়ারী, ২০১৫
গোবিন্দ বীন ভাল লাগল।আমার কবিতা ও গল্প পড়ার আমন্ত্রন রইল।
ভালো লাগেনি ৭ জানুয়ারী, ২০১৫
ধন্যবাদ শুভকামনা রইল
ভালো লাগেনি ১৫ জানুয়ারী, ২০১৫
সৃজন শারফিনুল সত্যি অসাধারণ, কি বলবো বুঝতে পারছিনা। অনেক অনেক শুভ কামনা।
ভালো লাগেনি ৪ জানুয়ারী, ২০১৫
সময় দিয়ে গল্প পড়ার জন্য ধন্যবাদ শুভকামনা রইল
ভালো লাগেনি ১৫ জানুয়ারী, ২০১৫
জুন হৃদয়কে ছুঁয়ে গেলো। অনেক ভালো লিখেছেন। শুভ কামনা রইলো।
ভালো লাগেনি ১ জানুয়ারী, ২০১৫
অনেক ধন্যবাদ শুভেচ্ছা রইল
ভালো লাগেনি ১ জানুয়ারী, ২০১৫

২৭ মে - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১২০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪