একজন মুক্তিযোদ্ধার হাহাকার

আমার স্বপ্ন (ডিসেম্বর ২০১৬)

সেলিনা ইসলাম
  • ১২
হেইদিন যহন অত্যাচার সইতে সইতে
পিঠটা গেছিল দেয়ালে ঠেইকা?
মায়ের বুকে আসন নিছিল হগুণের পাল
মায়ের নিঃশ্বাস নিতে হইছিল কিযে কষ্ট
ফলন জমি ফালাইয়া গর্ভবতী বৌরে রাইখ্যা
মা’রে শ্বাস দিতে হেইদিন আমিও করছিলাম যুদ্ধ।

শীতে কাঁপন ধরছে,জুতা পায়ে নাই দগদ্গা ঘা হইছে
মাইলের পর মাইল চিটা পেট লইয়া এক একটা
পিশাচরে ধইরা ধইরা মাডির পেডে ঢুকাইয়া দিছি।
শিকল দিয়া বাইন্দা আমার মায়ের-
ফলত বাগানে চোখ ফালাইল!
জিব্বা দিয়া লালা ফালাইছে বইলা
আঙ্গুল দিয়া চোখ উপড়াইয়া ফেলছি
জিব্বা টাইনা ছিঁইড়া,মায়ের শিকল খুইলা মুক্তি আইনা দিছি!

কিন্তুক আইজ...
মুক্তিযুদ্ধ তোমাগ কাছে এট্টা ইতিহাস
কিন্তুক এই মোর কাছে,মোর কাছে জ্বলন্ত আগুন !
জ্বলজ্বলা সইলতার নাহান এহনো পুইড়া মারে
দগদগা ঘা মোর বুহের মধ্যিখানে ।
হেইদিন যখন হুয়ারের পাল পিঁপড়ার নাহান,
সারিসারি দল বাইন্দা মোর ঘরে হানছিল-
সামনে তহন পথ দেহাইয়া লইয়া আইল
রহমত আলীর হগুনের চউখ !

আমার দশ বছরের মাইয়াডারে নিয়া
আদিম খেলায় উডছিলো খেকুরের রব
সাদা টুপিহান খুইল্লা পকেটে রাখছিলো
লোভিষ্ট ঐ পিশাইচ্চার প্রাণ ।
দাউদাউ কইরা জইল্লা যায় ঘর
পাঁচ বছরের পোলার হয় জিন্দা কবর
যে মাটিরে আজ দেহো তুমি হবুজ
আমি দেহি মোর জানের রক্ত দখল!

এহনও চিক্কর পারে মাইয়া "বাজান গো...
মোরে মুক্তি আইন্না দাও গো বাজান”!"
আসমানে অহনো হকুনের পাল পাখনা ঝাঁপটায়
মাডিতে দেখি টকটকা রক্তের নিশান... ।
আমার মাইরে নিয়া যে তামসা করে
তারে আমি ধ্বংস করি! কিন্তু তোমরা!?
ক্যামনে বুঝাই,এইডা আমগো জন্মতরী
এইডা কেবলই তোমার আমার
শেষ আশ্রয় বসতজমি।

আমার দুক্কু কেডায় বুঝব? তুমি বুঝবা? এই তুমি...?
নাহ...আইজ গো পাঁচচল্লিশ বছরেও খাঁ খাঁ মন
এট্টু ফোঁটা প্রেম জাগাইতে পারে নায়-
জননীরে অবহেলার এত খামতি ক্যান কইতে পারো?!

তোমরা সবাই ঝিম থাকো তাই জননীর কোলে শত্রু জম্মে।
কিন্তুক তুমি কী জানো?
হেইদিন হাতের মধ্যিখানে ঠান্ডা বোমাডা লইয়া
আগুনের মধ্যে ঝাঁপাইয়া পড়ছিলাম,
দানবের হাসি চিরতরে মিডাইয়া দিছিলাম!
চাইয়া দেহ তোমরা,এই...এ...ই হানে মনে হয়
আইজও হাতের মধ্যি ঠাণ্ডা বোমাডা ধইরা আছি
মোর কানে এহোনো বাজে ঠা ঠা গুলির হব্দ
তোমরা তোমাগো ইতিহাস নিয়া গর্ব হর
চিক্কর থামাও না,গুলির হব্দ থামাও না,হুদাই ফাল পাড়ো।

আমি অশিক্ষিত্ হইয়া,দুইডা পা দিয়া দর্প দিছি
শিক্ষিত্ হইয়া পারো না এগুলান থামাইতে?
কেন্ পারো না! মাথার গামছাডারে বানছি হক্ত হইরা ,
সময় অহন... সময় অহন ঢইলা পড়ে আন্ধারের বুকে!
আহো -কে আইবা আলো জ্বালতে!কে আইবা আও...
শিয়ালের পাল অহনো রক্তের হলী খেলে
ঘুম আহেনা কাডেনা রাইত বিরেত
আও...তোমরা বোমাডারে নিয়া ক্ষ্যান্ত কর
ক্ষ্যান্ত কর মোর অনাকাঙ্ক্ষিত,অপূর্ণ কাজ।







আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
গোবিন্দ বীন শিয়ালের পাল অহনো রক্তের হলী খেলে ঘুম আহেনা কাডেনা রাইত বিরেত আও...তোমরা বোমাডারে নিয়া ক্ষ্যান্ত কর ক্ষ্যান্ত কর মোর অনাকাঙ্ক্ষিত,অপূর্ণ কাজ।ভাল লাগল।আমার কবিতা পড়ার আমন্ত্রন রইল।
অনেক ধন্যবাদ সতত শুভকামনা।
রাজু এককথায় , দারুণ !
অনেক ধন্যবাদ শুভকামনা রইল।
জয় শর্মা (আকিঞ্চন) এই যে আপনারে কইতাছি আপা- পাঁচচল্লিশ বছর পরেও যেন আবার চোখের সামনে খুইজ্জা পাইছি নিজের মায়েরে! চোখের সামনে যেন হক্কল দৃশ্য ফুটে উঠতাছে। দারুণ কাব্যরূপ! ভোট আর ঢের শুভকামনা।
অনেক অনেক ধন্যবাদ শুভকামনা রইল।
মহাসিন মহী নমস্কার করি প্রথমেই এমন কাব্য প্রতিভার প্রতি কেননা এমন কবিতা কালে ভদ্রে জন্মে। অসাধারণ আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার এর মাধুর্যতাকে আরও দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে, আর কবিতাটিকে অনন্য অসাধারণ করে তুলেছে এর বাচনভঙ্গি, কী বলব এক কথায় অসাধারণ । আজকের দিনের লেখনীতে সাধারণত প্রাঞ্জলতা অভাব খুব বেশি কিন্তু এই লেখাটিতে বা কবিতাটি সে গণ্ডি ছাড়িয়ে গিয়ে উঠে গেছে অনেক দূর ।
অনেক অনেক ধন্যবাদ নিরন্তর শুভকামনা রইল।
Fahmida Bari Bipu Chomotkaar Apa! Kobita Tatei ebar matiye dilen!!
কেতকী আমার গায়ের রোম খাড়া হয়ে গেছে! চোখের কোনে পানিও চলে এসেছে। সশ্রদ্ধ সালাম রইল এমন অসাধারণ কবিতায়। আবৃত্তি করার জন্যে দারুণ একটা কবিতার জন্ম হলো। কবিতা পড়ার পর ভোটের যেই বাটনটা ঠিক উপযুক্ত মনে হয় তাই চাপি। এই কবিতা পড়ার পরও একটা বাটনের দিকেই চোখ পড়লো। আমি সেটাই চাপবো।
কাজী জাহাঙ্গীর এক কথায় তুলনাহীন । পরাণডা জুড়াই দিছেন গো আপা, হেইদিন যেই হুগুন গুলারে খতম কইরা মুক্তি আইনছিলাম, আইজ হেই হুগুন গুলার ‍কিছু নতুন বাচ্চা জন্মাইয়া আবার আমাগো অধিকার কাইড়া লইতাছে, যদি আরেকখান ঠান্ডা বোমা হাতে পাইতাম গো আপা...... একটু আবেগি হয়ে গেলাম। অনেক শুভ কামনা আর ভোট রইল।
চমৎকার মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম। আন্তরিক ধন্যবাদ ও নিরন্তর শুভকামনা।

২৭ মে - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১২০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী