আজ মন খারাপের দিন

বন্ধু (জুলাই ২০১১)

সোহেল মাহরুফ
  • ৫৩
  • 0
  • ৩২
বাস থেকে নামার পর ও নির্ঝরের মন খারাপ ব্যাপারটা ঘোঁচে না। সে ফুটপাত ধওে মানুষের ভিড় ঠেলে আগাতে থাকে। গ্রীষ্মের তপ্ত রোদের এই প্রচন্ড গরমে তেতে উঠা ফুটপাতে মানুষের এত ভিড় হওয়ার কথা না। তবু ও প্রচন্ড ভিড়। ঢাকা শহর বলেই কথা। এখানে সকাল দুপুর সন্ধ্যা নাই। সারাক্ষনই ভিড়। ব্যস্ত মানুষগুলো উধর্্বশ্বাসে ছুটে চলে। নির্ঝর হঠাৎ হাঁটা বন্ধ করে। হঠাৎই ভিড়ের মাঝে দাঁড়িয়ে পড়ে। কিন্তু ভিড়ের ধাক্কায় একজায়গায় দাঁড়ানোর উপায় নেই। তাই ভিড় ঠেলে পাশে গিয়ে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়ায়। তবু তার মন খারাপ ভাব কমে না বরং বেড়েই চলে। তাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সে মন খারাপের এ্যানাটমি করতে শুরু করে। ভাবে আসলে তো আজ তার মন খারাপ থাকার কথা ছিল না। বরং সকালে তার মনটা বেশ ফুরফুরেই ছিল। বিশেষ করে কাল রাতে সে ঝাক্কাস একখানা কবিতা লিখেছে। তাই সকালে কবিতখানা পকেটে নিয়ে বের হতেই তার মনে হলো- ব্যাটা সাহিত্য সম্পাদক এইবার কবিতা না ছাইপা যায় কই! কিন্তু পত্রিকা অফিসে ঢুকে সাহিত্য সম্পাদকের কুচকানো চেহারা দেখেই তার মেজাজ বিগড়ে যায়। তার উপর আবার তার লেখা দেখে গোঁফ নাড়ানো মন্তব্য শুনে মেজাজটা আরো বিগড়ে যায়। লেখাটা হাতে নিয়ে লেখার দিকে না তাকিয়েই তাকে আপাদমস্তক অবলোকন করে বলে উঠলেন-এইগুলা কি লিখছেন? এত সকালেই নিজেরে রবীন্দ্রনাথ রবীন্দ্রনাথ মনে হয়। জবাবে নির্ঝর কিছু বলে না। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।
তখন সে আবার বলতে শুরু করে- পোষ্টমডর্ানিজম- আল্ট্রামর্ডানিজম বুঝেন?
ও না সূচক মাথা নাড়ে। তারপর শুরু হয় তার লেকচার। বর্তমানে ভাল লেখকের অভাব, বাংলাদেশে অধিক পত্রিকা থাকার উপকারিতা এবং অপকারিতা-এসব বিষয়ে আর কি। সেখানে আরেকজন প্রতিষ্ঠিত লেখক ও বসে ছিলেন। তিনি মাঝে মাঝে ছুটে যাওয়া ইনফরমেশন দিয়ে ছুটে যাওয়া অংশগুলো জোড়া দিচ্ছিলেন। আর নির্ঝর শুধু মাথা নিচু করে হু হা করছিল। কিছুক্ষন পর বিজ্ঞ সাহিত্য সম্পাদক সাহেব বলে উঠলেন- হু হা করলে হবে না। পড়াশুনা করতে হবে। প্রচুর পড়াশুনা করতে হবে। লেখালেখি সাধনার বিষয়। সাধনা- সাধনা করতে হবে। ঐ যে একটা গান আছে না ' সাধন বিনে...
কিন্তু তিনজনের কেউই আর গানের কথা মনে করতে পারে না। তাই সাহিত্য সম্পাদকের হেড়ে গলার সঙ্গীত চর্চা তেমন আগায় না। বরং তিনি প্রসঙ্গ পাল্টে বলে উঠলেন- কাগজ কলম নাও। কিছু বইয়ের নাম বলছি। আজিজ মার্কেট থেকে কিনে নিয়ে পড়বা। প্রচুর পড়তে হইবো। লেখতে হইলে পড়াশুনার কোন বিকল্প নাই। কাগজ কলম নাও-বইয়ের নাম লেখো। ওর কাছে কাগজ কলম নাই শুনে তিনি আর একবার খেঁকে উঠলেন। তারপর তিনি নিজের থেকেই কাগজ কলম এগিয়ে দিয়ে বইয়ের নাম বলতে শুরু করলেন। জটিল জটিল সব নাম। নির্ঝরের ভাল লাগে না। তাই সে কাগজটা হাঁটুর উপর নিয়ে তাতে কিছু না লিখে শুধু আঁকিবুঁকি করে। মাঝে সাহিত্য সম্পাদককে উদ্দেশ্য করে দু'তিনটি অশ্রাব্য গালিগালাজ ও লিখে ফেলে। এ মুহূর্তে সেগুলো আবার উচ্চারণ করতে যাচ্ছিল। কিন্তু ফুটপাতের মানুষ তাকে পাগল ভাববে বলে মনে মনে সে গালিগুলো আবার উচ্চারণ করে।
সাহিত্য সম্পাদক সাহেব লেকচার দিয়ে যখন মোটামুটি ক্লান্ত তখন নির্ঝর আর কোন কথা খুঁজে পায় না। তিনজনই হঠাৎ নিরব হয়ে যায়। রূমের ভেতর অদ্ভুত নিরবতা নেমে আসে। নির্ঝরই আবার নিরবতা ভাঙ্গে। বলে উঠে- বস উঠি। দোয়া করবেন। ভবিষ্যতে যাতে ভাল লিখতে পারি। তারপর সম্পাদককে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সে রূম থেকে বেরিয়ে পড়ে। রূম থেকে বেরোতেই তার মেজাজ আরো বিগড়ে যায়। ভাবে এই লোকটার কথায় এতক্ষন হু হা করার দরকার কি ছিল। শুধু শুধু সময় নষ্ট। সে যখন লেখা ছাপবে না তখন তার মুখের উপর চলে আসলেই পারতো। তারপর রাস্তায় এসে উদ্দেশ্যহীন ভাবে একটা বাসে উঠে পড়ে। শাহবাগ এসেই মনে হলো তার আর কোথাও যাওয়ার নেই। তাই এখানেই নেমে পড়ল। এ নিয়ে কন্ডাক্টরের সাথে কথা কাটাকাটি মন খারাপটা আরো বাড়িয়ে দেয়। এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎই তার চোখ গিয়ে পড়ে জাদুঘরের গেইটে টাঙানো ব্যানারের উপর। "বনসাই প্রদর্শণী"। সে হঠাৎ ভাবে ভেতরে ঢুকে দেখা যাক। যদি বামুন গাছের দুঃখে মনের দুঃখ কিছুটা কমে। যেই ভাবা সেই কাজ।
সে জাতীয় জাদুঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ে। ঘুরতে ঘুরতে একটা টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ায়। টেবিলের উপরে সুদৃশ্য টবে ছোট ছোট গাছগুলো সাজানো। টেবিলের ওপাশেই একজোড়া কপোত কপোতী। অদ্ভুত তাদের ম্যাচিং। ছেলেটা প্রায় ছ'ফুট তিন ইঞ্চি আর সাথে মেয়েটা পাঁচ ফুট কিংবা চার ফুট দশ ইঞ্চি। ঠিক যেন বটবৃক্ষের সাথে লাগানো বটের বনসাই। উপমাটা মনে পড়তেই তার হাসি পায়। এর মধ্যে কপোত কপোতী হঠাৎ ফিসফিসানি সুরটা বদলে বলে উঠে-দেখো ঐটা দেখতে খুব সুন্দর না। জবাবে কপোত বলে- হুঁ ঠিক তোমার মত। এটা শুনে নির্ঝরের ও বেশ হাসি পায়। ওদিকে মেয়েটা তখন রাগে অগি্নশর্মা- কি বললে?
-না মানে তুমি দেখতে ওর মত।
-কি?
-বনসাই।
-কি বললে আবার বলো।
-সরি। আর বলবো না।
-না তোমাকে আবার বলতে হবে। নইলে এই টব তোমার মাথায় ভাঙ্গবো।
-সরি। বললামতো আর বলবো না।
-কান ধরে বলো যে আর বলবে না।
এবার ছেলেটাকে বেশ অসহায় দেখায়। সে একবার চারিদিকে তাকিয়ে নিয়ে চোরের মত কান ধরে বলে- আর বলবো না।
এই দৃশ্যটা নির্ঝরের ভাল লাগে না। এই অসহায় গাছের সাজানো প্রদর্শনী ও তার আর ভাল লাগে না। সে দ্রুত বের হয়ে যায়। বাইরে বের হতেই কড়া রোদে তার মাথা চনচন করে উঠে সেই সাথে পেটের ভেতর ক্ষুধাটা চনমন করে উঠে। হাতের দিকে তাকায় সময় দেখার জন্য। কিন্তু ঘড়িটা যেখানে থাকার কথা সেখানে নাই। তখনই মনে পড়ে সেটা কিছুদিন আগে পাশের রূমের ছেলেটার কাছে বিক্রি করে দিয়েছে-মেসের খরচ মেটানোর জন্য। তখন পকেটে হাত দেয়। এখন বিলাসিতা বলতে শুধু এই চলমান কথা বলার যন্ত্রটাই আছে। কবি গুন আদর করে এর নাম দিয়েছেন মুঠোফোন। কিন্তু এটা পোষা আর এক যন্ত্রনা। দু'দিন পর পরই তিনশ টাকা করে লোড করতে হয়। মাঝে মাঝে একদিন ও যায় না। এটা এখন আসলেই ওর জন্য যন্ত্রনা হয়ে গেছে। তবু ও এটা বাদ দিয়ে ও জীবন ভাবতে পারছে না। এসব ভাবতে ভাবতেই ও গেইটের বাইরে চলে আসে। ওর আর হাঁটতে ইচ্ছে করে না। তাই গাছের ছায়া দেখে একজায়গায় ফুটপাতের উপরই সে বসে পড়ে। পেটের ক্ষিধে কিন্তু মোটেই কমেনি। সে মোবাইল বের করে সময় দেখে। দেখে দুইটা বেজে দশ। এ দেখে পেটের ক্ষিধে যেন আরো বেড়ে গেছে। পকেটে আবার হাত ঢুকায়। কিন্তু পাঁচ টাকার একটা ধাতব কয়েন ছাড়া আর কিছুই তার হাতে বাজে না। সে হিসাব মেলাতে পারে না। পরেই মনে পড়ে যে গতকালই মোবাইলে দুইশো টাকার ফ্লেঙ্ িঢুকাইছে। তখন সব বিরক্তি গিয়ে পড়ে মোবাইলটার উপর। মনটা আরো খারাপ হয়ে যায়। ইচ্ছে হয় মোবাইলটা আছাড় দিয়ে ভেঙ্গে ফেলে। কিন্তু তাতে কোন লাভ হবে না। বরং তার অন্য কথা মনে পড়ে। সেদিন একটা দোকানে দেখে এক লোকের জরুরী একশ টাকার দরকার। লোকটা দোকানদারের মোবাইলে একশ টাকার ট্রান্সফার দিয়ে ক্যাশ একশ টাকা নিলো। নির্ঝরের আইডিয়াটা বেশ ভালই লেগেছে। ও আশেপাশে সে রকমের কোন দোকান খুঁজে পায় না। তাই ফুটপাতের উপর বসেই ভাবতে থাকে কি করা যায়। এখন মেসে গেলে ও পায়ে হেঁটে যেতে হবে। আর সেখানে গিয়ে ও কোন লাভ নাই। কেননা ওদের মেসে দুপুরে রান্না হয় না। তাই অন্য উপায় না দেখে ভাবতে থাকে পাঁচ টাকা দিয়ে কি পাওয়া যায়। সামনে বাদামের গাড়ি দেখে কোন কিছু না ভেবেই তিন টাকার বাদাম কিনে ফেলে। ফুটপাতের উপর বসেই বাদামের খোসা ছাড়িয়ে তৃপ্তি করে চিবোতে থাকে। আর ভাবতে থাকে কবি সুকান্তের কবিতার কথা- ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়। এরিমধ্যে বেরসিক মোবইলটা বেজে উঠে। স্ক্রিনে ভেসে উঠে বাল্যবন্ধু তামিমের নম্বর। ও বুঝতে পারে না কি এমন জরুরী দরকার যে এই ভরদুপুরে কল দিয়েছে। তাই কল রিসিভ করে না।। বাজতে বাজতে কেটে যায়। আবার বেজে উঠে। এবার অনিচ্ছাস্বত্ত্বে ও রিসিভ করে। ওপাশ থেকে বেশ আপন করা কন্ঠে- হাই দোস্ত কি খবর বল্। নির্ঝর হঠাৎ করে এমন আন্তরিকতার কোন কারণ খুঁজে পায় না। কেননা এর আগে ও নিজেই বেশ কয়েকবার ফোন দিয়েছিল। কিন্তু প্রত্যেকবারই পাশ কাটানো উত্তর পেয়েছে। একবার তামিমের অফিসেও গিয়েছিল লিটল ম্যাগের এ্যাডের জন্য। বিশাল অফিস তার-বিশাল কাজ কারবার। কিন্তু তামিম তো এ্যাড দেয়ই নাই বরং মনে হয়েছে কিছুটা বিরক্তই হয়েছে। তারপর নির্ঝর আর যোগাযোগ করেনি-তামিম ও না। তাই আজ তামিমের এই ফোন করার কোন কারণ খুঁজে পায় না। তাই সে নিরুত্তাপ ভাবেই উত্তর দেয়-এই তো ভাল। তোর কি খবর?
-আমাদের আর খবর দোস্ত। আছি ব্যস্ততার মধ্যে। তুই এখন কোথায়?
-আছি। ঢাকার শহরেই আছি।
-কোথায় আছিস্ বল্। আমি গাড়ি পাঠাচ্ছি তোকে নিয়ে আসার জন্য।
-মানে? হঠাৎ?
-দোস্ত এই শহরে তুই আমার একমাত্র বাল্যকালের দোস্ত। অথচ তোর কোন খোঁজ খবর রাখতে পারি না। কতদিন ধরে তোর সাথে দেখা হয় না। দোস্ত আইজ তোরে খুব দেখতে ইচ্ছা করতাছে।
নির্ঝর হঠাৎ উথলে উঠা এমন বন্ধুত্বের দরদের মানে বুঝতে পারে না। তাই পাশ কাটিয়ে বলে-দোস্ত আইজ মন খারাপ। অন্য একদিন আসবো। কিন্তু তামিম নাছোড়বান্দা। সে কিছুতেই ছাড়বে না।
-কি কস্ দোস্ত-তোর মন খারাপ! কবির আবর মন খারাপ কিসের? কবিরা তো বারোমাস ফুড়ফুড়ে মেজাজে থাকে। আয় চইলা আয়। একসাথে আড্ডা দিলে তোর মন ভাল হইয়া যাইবো। একথা শুনেই নির্ঝরের মন খারাপ ভাব অনেকটা কেটে যায়। তবু সে ভরসা পায় না। তাই বলে-বাদ দে দোস্ত। আরেকদিন আসবো।
- না না দোস্ত তোরে আইজই আসতে হবে। তুই কোথায় বল্। আমার ড্রাইভার এখনই গিয়ে তোকে তুলে নিয়ে আসবে। তারপর দু'জন মিলে একসাথে গল্প করতে করতে লাঞ্চ সারবো।
-দোস্ত লাঞ্চতো সেড়ে ফেলেছি।
-তাই। কোথায়? রাস্তার পাশের সস্তা হোটেলে?
- না দোস্ত একদম ফুটপাতের উপরে। শুকনা বাদাম চিবাচ্ছি।
- আফসোস্। দোস্ত তুই ছিলি আমাদের প্রাইমারী স্কুলের ফার্স্টবয়। অংকে, ইংলিশে সব সময় একশ পাওয়া ছেলে আর তুই দোস্ত তিন বেলা ভাত খাইতে পাস্ না। আফসোস্। জানোস দোস্ত তুই যেদিন তোর প্রথম কবিতাটা আমারে দেখাইলি সেইদিন ভাবছিলাম তুই একদিন ঠিকই রবীন্দ্রনাথ, শেলী ওগো মত কিছু একটা হবিই। আর আইজ তোরে ফুটপাতে বসে শুকনা বাদাম চিবাইতে অয়। আফসোস্। দোস্ত তুই অক্ষন আমার অফিসে চইলা আয়। তোরে আইজকা ফাইভ ষ্টার হোটেল থেইকা আইন্যা লাঞ্চ করাবো।
-দোস্ত আইজ না। অন্যদিন আসবো।
- না না আইজই আয়। তোর সাথে ইমপরটেন্ট কথা আছে।
-কি কথা মোবাইলে বল।
- না না মোবাইলে কওয়া যাইবো না। পারসোনাল কথা।
-অসুবিধা নাই বল্। আমর আশেপাশে কেউ নাই।
- না মানে কথা হইছে- কেমনে যে বলি।
-কি?
-না মানে সারাদিন ব্যস্ততার মধ্যে থাকি তো। কেমন রোবট রোবট মনে হয়। মাঝে মাঝে একটু আনন্দ ফুর্তিরও তো দরকার আছে। কি কস্ দোস্ত দরকার আছে না?
-তা তো অবশ্যই।
-তো হেভী একটা পিস্ যোগাড় করছি। অনেক কষ্টে ম্যানেজ করছি।
-বুঝলাম না। পিস্ কি?
-তোরে কেমনে বুঝাই। পিস্ মানে আর কি- মোবাইলে পরিচয়। তো অনেক কষ্টে ম্যানেজ করছি। একদিন দু'জনে একটু নিরিবিলি কাটাবো আর কি? হোটেল টোটেলে তো বুঝস্ কত ঝামেলা। পুলিশ, সাংবাদিক কত ঝামেলা হইতে পারে।
এসব শুনে নির্ঝর একটু শক্ত হয়ে যায়। বলে- তা আমি করবো?
-না মানে বলছিলাম তোর রূমটা তো দুপুরের দিকে খালি থাকে। তো তোর রূমের চাবিটা যদি দিস্। বেশি সময় নেবো না। জাস্ট ঘন্টাদুয়েক- তারপর চলে আসবো।
-সরি দোস্ত। তুই অন্যকিছু বল্। আমি আমার বেষ্ট ট্রাই করবো। কিন্তু এইটা পারবো না।
-কেন পারবি না। তোর তো কোন সমস্যা নাই।
-না না দোস্ত আমারে মাফ কর। আমি পারমু না।
-ক্যান তোর সমস্যা কি? দরকার হইলে তোর পুরা মাসের রূম ভাড়া আমি দিমু।
-মাফ চাই দোস্ত।
-আচ্ছা যা তোর প্রথম কবিতার বই বের করার সমস্ত খরচ আমি দিমু।
-সরি দোস্ত।
-আচ্ছা দরকার হইলে তোর জন্য ও এইরকম আরেকটা পিস্ যোগাড় কইরা দিমু। যা ইচ্ছা তাই করতে পারবি।
-দোস্ত আমারে মাফ কইরা দেওয়া যায় না।
হঠাৎ তামিম চটে যায়- হালার ভীতু কোথাকার। এইজন্যই তো কই তোর কবিতা কেউ ছাপে না ক্যান। ব্যাটা কবি কি এমনে এমনে অওন যায়। পিকাসো, ভোলদেয়ার, র্যাঁবো ওদের লাইফ দেখছোস্। ওগো বায়োগ্রাফী পড়ছোস্। জানোস্ কত অ্যাডভেঞ্চারাস ছিল ওগো জীবন যাপন। হালার মাইয়া কোতাকার। বলেই লাইনটা কেটে দেয়।
বাল্যবন্ধুর এমন গায়ে পড়ে দুবর্্যবহার ওর মনটা আরো খারাপ করে দেয়। ওর এই মুহূর্তে এই শহরে একটু ও ভাল লাগে না। মনে হয় এ শহর ওর জন্য না। ওর ইচ্ছে করে গাঁয়ে ফিরে যেতে। সেখানে গিয়ে গাঁয়ের ধারের নদীর তীরে শেষ বিকেলের ম্লান আলোয় বসে থাকবে। নদীর জলে টগর ফুলের ভেসে যাওয়া দেখবে। দেখবে সাদা বকেদের উড়ে যাওয়া। দেখবে সাদা কাশের বন। কাশের বনের ভেঁজা মাটিতে শুয়ে গড়াগড়ি খাবে। গায়ে মেখে নেবে সোঁদা মাটির গন্ধ। কিন্তু ও জানে এসব কিছুই সম্ভব হবে না। ওর পক্ষে আর ফিরে যাওয়া সম্ভব হবে না।
হঠাৎ সেদিন পত্রিকায় দেখা কবি সোহেল মাহরুফের একটা কবিতার শেষ কয়েক লাইন মনে পড়ে। মনে মনে লাইনগুলো আউড়ায়-

"যখন সকলেই ছুঁয়েছে কালিমা,
ডুবেছে আঁধারে
ভুলে নিজ নিজ ছায়া-
তখনও আমি ভালোবেসে
শুভ্র ও সুন্দর
আজ সেজেছি বেহায়া। "

নির্ঝরের মনটা আরো ভারাক্রান্ত হয়। বুক ভেঙ্গে বেরিয়ে আসে দীর্ঘঃশ্বাস।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সোহেল মাহরুফ ধন্যবাদ@Thousand_promises । নিজেকে আড়াল করলে কেন?
সোহেল মাহরুফ ধন্যবাদ @Akther Hossain (আকাশ)
সোহেল মাহরুফ ধন্যবাদ বিন আরফান ভাই । ভাল লাগছে আপনার সুন্দর মন্তব্য পেয়ে।
বিন আরফান. N/A অসাধারণ অনুভূতি. আমার হৃদয় ছুয়েছে.
সোহেল মাহরুফ ধন্যবাদ সেলিনা আপা সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
সেলিনা ইসলাম N/A বেশ সুন্দর একটা গল্প পড়লাম । ধন্যবাদ
সোহেল মাহরুফ ধন্যবাদ মিজানুর রহমান রানা ভাই, সুন্দর মন্তব্য দিয়ে অনুপ্রাণিত করার জন্য।
মিজানুর রহমান রানা অত্যন্ত পরিপাটি, চমৎকার একটি গল্প। পড়ে খুব ভালো লাগলো। ধন্যবাদ ও অভিনন্দন থাকলো।

২৫ মে - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৩০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“ ” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ , থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী