ছোট ছোট দুঃখ কথা

পূর্ণতা (আগষ্ট ২০১৩)

হোসেন মোশাররফ
  • ১৩
দেখতে দেখতে বছরটা কেটে গেল। জীবন থেকে আরও একটা বছর ঝরে গেল। আবদুল মজিদ জানে না তার এই অনিশ্চিত যাত্রার শেষ কোথায়?
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠা, মুখ ধোয়া, নাস্তা করা,কাজে বের হওয়া। বিকেলে বাসায় ফিরে প্রাত্যাহিক কাজ-কর্ম সেরে বিছানায় যাওয়া -এটাই কী জীবন? না, তারপরও আছে। বিয়ে-শাদী করা, সন্তানাদি হলে তাদের লালন পালন করা। তারপর জীবন থেকে বিদায় নেয়া। কিন্তু তারপরও খটকা লাগে আবদুল মজিদের মনে। না, শুধু প্রাত্যহিক কিছু কাজকর্ম আর ছক বাঁধা জীবনের ঘেরাটোপে বাঁধা বন্দি মানুষের জীবন, জীবনের নিগূঢ়তম অর্থ বহন করতে পারে না।
বাইশ বছরের আবদুল মজিদের মাথায় কথাটা বাইশ বার পাক খেয়ে ফেরত আসে। কিন্তু কোন সমাধান খুঁজে পায় না সে। আবদুল মজিদের কোন বন্ধু-বান্ধব নেই। সম্ভবত সবকিছু নিয়ে বেশি বেশি ভাবার কারণেই বন্ধু নেই তার। পৃথিবীতে আপন বলতে তার এক বোন আছে গ্রামের বাড়িতে। বছর দুই আগে তার বিয়ে হয়ে যাওয়ায় আবুদল মজিদ ঢাকায় পাড়ী জমায়। শাহজাহান পুর রেল কলোনীর ধারে এক খুপড়ি টিন শেড মেস ঘরে ঠিকানা হয় মজিদের। ছোটখাট একটা দোকানের কর্মচারি হিসাবে একটা চাকরিও জুটে যায় মজিদের। বেতন দুই হাজার পাঁচশত টাকা।
আবদুল মজিদ ভালই জানে তার মনের কথাগুলো সবাই কে বলা মোটেও ঠিক হবে না। কেননা সবাই তো আর তার মতো না। সাধারণত তার বয়সে সবাই হাওয়ায় ভেসে চলে। তাই দোকানে চুপচাপ থাকে সে। মেসে ফিরেও চুপচাপ। বয়সটা অল্প হলেও আবদুল মজিদ ভালই জানে কথা বলার অনেক বিপদ। বুঝে শুনে কথা বলতে না পারলেই বিপদে পড়ে মানুষ। কোথায় কোন কথাটা বলতে হবে এটাই মানুষের সবচেয়ে বড় উপলদ্ধির বিষয়।
শুক্রবার দোকান ছুটি। কাজ নেই, কর্ম নেই, কোথাও বেড়ানোর জায়গাও নেই তার। মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়ে ইমামের সাথে বন্ধুত্ব হয়ে যায় মজিদের। তার সাথে কথা বলে বেশ ভাল লাগে মজিদের। তার মতো সামান্য দোকানের কর্মচারির সাথেও বেশ সখ্যতা গড়ে ওঠে ইমামের। একদিন সুযোগ মতো ইমামের কাছে তার মনের সব কথা খুলে বলে মজিদ।
তার অদ্ভুত কথাগুলো শুনে মোটেও ঘাবড়ায় না ইমাম। বরং বলে, ‘তোমার চিন্তাগুলো খুব সুন্দর। আসলে পৃথিবীতে এমন কোন মানুষ নেই যে নিজের ইচ্ছায় এখানে এসেছে। অথচ ফিরে যাওয়ার সময় সে মোটেও ফিরে যেতে রাজি হয় না। সাধারণত কাওকে তার অনিচ্ছায় কোথাও পাঠানো হলে সে সেখান থেকে ফিরে আসতে পারলেই বাঁচে। কিন্তু পৃথিবীতে মানুষের ক্ষেত্রেই তার উল্টোটা দেখা যায়। কারণ কী জান, বেশির ভাগ মানুষই জানে না পৃথিবীর এই জীবন আসলে নকল জীবন। আসল জীবন পরকালে। যে এই জীবন কে আসল মনে করবে এই জীবন ই তাকে বিপদে ফেলে দেবে। ভোগ-বিলাস আর সেই সঙ্গে অশান্তি আর দুশ্চিন্তায় ভরে যাবে তার জীবন।’
আবদুল মজিদ মনে মনে বুঝতে পারে ত্যাগেই মানুষের জীবন পূর্ণ হয়। আর তাতেই শান্তি, তাতেই তৃপ্তি।
একদিন এক বন্ধুর সাথে হঠাৎ দেখা হয়ে যায় মজিদের। বিদ্যুত চমকের মতো অবাক হয় মজিদ। গ্রামের দরিদ্র ছেলে জলিল। হঠাৎ এখানে কী ভাবে এল সে। প্রথমে ভেবেছিল বোধহয় দেখতে ভুল করেছে সে। তারপর সাহস করে কথা বলতেই ভুল ভেঙে গেল তার। জলিল তাকে দেখে কেঁদে ফেলল; বলল, অভাবের সংসারে বাবা হঠাৎ মারা যাওয়ায় দু’ দিন না খেয়েছিল। ছোট দুই ভাই বোন আর মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে শেষ পর্যন্ত ঘরে বসে থাকা তার পক্ষে আর সম্ভব হয়নি।
মজিদ তাকে সান্তনা দেয়। বলে, ‘ঢাকা শহরে কেউ কারো দিকে ফিরেও তাকায় না। খোদার একান্ত ইচ্ছা না থাকলে তোমার সাথে আমার দেখা হতো না। তোমার কপাল ভাল, কোন চিন্তা করো না।’
আবদুল মজিদের সাথে জলিল থাকল পুরো একমাস। শেষে একটা গার্মেন্টসে কাজ জুটে গেল তার। ফ্যক্টরির পাশেই একটা ছোট মেসে তার থাকার ব্যবস্থা আর প্রয়োজনীয় কিছু টুকিটাকি জিনিস-পত্র কিনে দিল মজিদ। কেনাকাটা করতে গিয়ে মাসের বেতনের পুরো টাকাটা একদিনেই খরচ হয়ে গেল মজিদের। বাকি মাসটা কীভাবে চলবে তার এখনো জানে না আবদুল মজিদ।
ফুরফুরে মেজাজে মেসে ফিরতে ফিরতে একটা কথাই বার বার তার মনে পড়ল। মসজিদের ইমাম বলেছিল তাকে ভোগে নয় ত্যাগেই শান্তি। তাতেই তৃপ্তি।
আবদুল মজিদ জীবনের অর্থ খুঁজে পেয়েছে। তার জীবন পূর্ণতা লাভ করেছে, এখন থেকে সে পরিপূর্ণ জীবন উপভোগ করতে পারবে। কারণ সে এখন জানে বাকি মাসের উপায় তার কোন না কোনভাবে হয়ে যাবে। কিন্তু জলিলের উপকারে লাগার সুযোগ হয়তো আর পাবে না সে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সূর্য যার নেই সেই অন্যের সাহায্যে এগিয়ে আসে। অথচ যাদের ভুড়ি ভুড়ি আছে তারা এগিয়ে এলে কত মানুষ নিজেদের জীবন পাল্টে ফেলতে পারতো। তবে কিছু কিছু মজিদ তাদের লজ্জা দিতে বেঁচে আছে, বেঁচে থাকবে। ভালো হয়েছে গল্প মোশাররফ ভাই।
onek valo laglo, val thakun. dhonnobad apnake.......
মিলন বনিক ত্যাগেই সুখ...ভোগে কষ্ট...সুন্দর উপলব্দি...ভালো লাগলো....অন্যের জন্য কিছু করতে পারার আনন্দটাই অন্যরকম...
asun ei anondo amra sobai vaga vagi kore upovog kori.......dhonnobad.....
তানি হক খুব সুন্দর আত্ম উপলব্ধি আর শিক্ষা মূলক গল্প ... পূর্ণতা সংখ্যা একটু অন্য রকম উপস্থাপনার গল্প উপহার দিলেন মোশারফ ভাই ... ত্যাগেই শান্তি। তাতেই তৃপ্তি। ... আপনাকে আন্তরিক মুবারকবাদ জানাই ... গল্পটি প্রিয়র তালিকায় তুলে নিলাম ... সালাম ও শুভেচ্ছা
omon golpo samne paben hoito ba tobe ebar ektu onno rokom golpo upohar diechhi.....dhonnobad apnake ( Eid bishesh songkhyar `Pajir pa jhara' kobitati porar onurodh thaklo....)
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন ....ভোগে নয় ত্যাগেই শান্তি...। আমাদের বিশ্বাস তার উল্টোটাতে। তবে আ মজিদেরমত মানুষ এখনো আছে, না হলে আমরা টিকে আছি কী করে? ভাল লেগেছে। শুভেচ্ছা রইল।
হাবিব রহমান ত্যাগেই পূর্নতা, বিষয় বস্তু ভাল। গল্পটাও সাজিয়েছেন ভাল। ভালই।লাগলো আমার...!.

২৫ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৪০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪