আবু ওসমান ও পরী হিনা (দ্বিতীয় পর্ব )

গর্ব (অক্টোবর ২০১১)

হোসেন মোশাররফ
  • ৯৫
  • 0
  • ৩২
অর্থ সম্পদ ও ৰমতার মিথ্যা মোহ যুগে যুগে মানুষকে প্রতারিত করেছে। সম্পদের প্রাচুর্য মানুষকে গর্ব-অহংকার ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেনি। ৰমতার মিথ্যা আস্ফালন তাকে পশু কিংবা তার চাইতেও নিচে নামিয়ে দিয়েছে। তার অত্যাচার আর জুলুমের শিকার হয়েছে নিরীহ সাধারণ মানুষ। এটাই যেন পৃথিবীর অলিখিত একটি নিয়ম। যা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে অথচ তা কোথাও লেখা জোখা নেই। অত্যাচারীর অন্যায় অত্যাচারের জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে চিরকাল অসহায় মানুষ নীরবে চোখের পানি বিসর্জন দিয়ে এসেছে। এটাই যেন পৃথিবীর ইতিহাসে মানব প্রজন্মের জন্য গোপন বিরহ গাঁথা , যা আছে থাকবে এবং চিরকাল মানুষকে এর অভিশাপ বয়ে নিয়ে বেড়াতে হবে।

মরুর বুকে নির্জন এক প্রান্তর। সেখানে এক পাহাড়ের গুহায় ডাকাতদের আস্তানা। লুটের মালামাল আর সম্পদের পাহাড় জমে উঠেছে তাদের এই গোপন আস্তানায়। এত সম্পদ তাদের কী কাজে লাগবে নিজেও জানেনা তারা। পর পর তিনদিন তিনরাত ধরে পাহাড় পর্বত আর গিরিকন্দর পার করে ডাকাতদল সেখানে পেঁৗছুল। পরী হিনাকে সেখানে নিয়ে যেয়ে ঘোড়া থেকে নামাল তাদের সর্দার। তারপর তাদের লুঠ করে আনা মালামাল ভাগাভাগি হয়ে গেল। শুধু সোনা-দানা, হীরা-জহরত গুলো পাঠিয়ে দেয়া হল গুহার গোপন আস্তানায়। ডাকাতদের ঐ গোপন আস্তানাটি তাদের সর্দারের একান্ত নিজস্ব কোষাগার। গুহার ভিতরেই রয়েছে ঐ গোপন কোষাগার। গুহার ভিতরে যেন আর একটি গুহা। একটা ভারি পাথর চাপা দেয়া থাকে ঐ সুড়ঙ্গ পথটির মুখে। সেখানে জমা আছে রাশি রাশি স্বর্ণ-অলঙ্কার আর হীরা-জহরত। তার সাথে মিশে মিশে আছে কতশত মানুষের আর্তনাদ, চিৎকার আর হাহাকার ধ্বনি তার কোন ইয়ত্তা নেই।
ডাকাত সর্দার এবার সুরার বোতল হাতে নিয়ে ঘোলাটে চোখে একবার হিনার দিকে তাকাল। তারপর হো হো করে হেসে উঠল আনমনে নিজে নিজেই একবার। হাসি থামিয়ে চারদিকটা ভাল করে আর একবার দেখে নিল। বোধহয় তার চেলা গুলো সবাই জায়গা মতো পাহারায় আছে কিনা সেটাই একবার পরখ করে নিল সে। কেননা মরুর এই ভয়ঙ্কর নির্জন প্রান্তরে ডাকাত ছাড়া অন্য কোন জন-মানব কোনদিন চোখে পড়েনি কারো। একান্ত ভুল করেও কেউ কোনদিন এদিকে আসার সাহস দেখায়নি। ডাকাতদের যেন এ এক অভয়ারণ্য। বোতলের সবটুকু সুরা নিঃশেষে সাবাড় করে দিয়ে ডাকাত সর্দার এবার হুঙ্কার ছেড়ে বলল, 'কেউ বিশ্বাস করুক বা না করুক, হিনা এখন আমার কব্জায়। কার ৰমতা আছে আমার কাছ থেকে হিনা কে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়.....??'
ডাকাত সর্দারের হুঙ্কারে চারদিকে পিন-পতন নীরবতা। চারপাশটা আবার ভাল করে দেখে নিয়ে গলা নামিয়ে ডাকাত সর্দার বলল এবার, 'নাচ হিনা, নাচ; ফুর্তি মারার জন্যই তোমাকে নিয়ে এসেছি। কথা না শুনলে তোমার দশা হবে অন্য হিনাদের মতো।'
চোখের এক ইশারায় বুঝিয়ে দিল ডাকাত সর্দার হিনাকে। পাহাড়ের এক ধারে পড়েছিল কিছু নরকঙ্কাল। সেদিকেই ইশারা করল সর্দার। যেন পত্রপাঠ বুঝিয়ে দিল, সে আগেও এমন কাজ করেছে এবং তার কথা না শোনার ফলাফল হয়েছে মৃত্যু।
একটু বিরতি দিয়ে সর্দার আবার বলল, 'তবে তোমাকে আমি মারব না। তোমাকে বিক্রি করলে অনেক পয়সা হবে আমার। কায়রোর কোন ধনী লোকের বাঁদি হবে তুমি। নাও এখন খুশি কর আমাকে।'
সর্দারের নির্দেশে ইতিমধ্যে সবার হাতে হাতে সুরার বোতল পৌঁছে গেছে। সর্দার নিজেও নিয়েছে আর এক বোতল সুরা। তারপর হিনার দিকে সন্দেহের দৃষ্টি হেনে চেয়ে রইল সে। ভাবখানা এমন; যেন হিনা হুকুম তামিল করে কিনা, তা দেখার অপেৰায় সে প্রহর গুণছে। পরী হিনা আর দেরি করল না। শুরু করল তার নাচ। আর সেই সঙ্গে শুরু হয়ে গেল তাদের সুরা পানের মহোৎসব। এক হিনা থেকে তৈরি হল হাজার হিনা। সুরার ইন্দ্রজালে ডাকাতরা ভাবল তারা একটাকেই দেখছে বোধহয় হাজারটা। কিন্তু হিনা ততৰণে তার মায়ার মোহজালে বেঁধে ফেলেছে ডাকাতদের পুরো দলটাকে। তারপর তাদের সুরার বোতলে ওরা মিশিয়ে দিল ঘুমের তীব্র আরক, যা খাওয়ার সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়ল ওদের পুরো দলটি। এরপর হিনা কে রেখে তার দলবল সেখান থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল। নাচ থেমে গেল হিনার। ডাকাতদের আস্তানা এখন যেন মৃত্যুপুরী। মরা মানুষের মতোই তারা পাহাড়ের গায়ে গায়ে এদিক সেদিক এলোমেলো হয়ে পড়ে রইল সবাই। পরী হিনা এবার খুব সাবধানে এক একটা দশাশই ডাকাত কে পেরিয়ে তাদের গুহায় এসে ঢুকল। তারপর তাদের ধনরত্ন রাখার গোপন সুড়ঙ্গ টা খুব সহজেই খুঁজে বের করে ফেলল সে। আর যায় কোথায় , সুড়ঙ্গ মুখের চাপা দেয়া ভারি পাথরটা সরাতে তার একটুও সময় লাগল না। গুহার পাশেই পড়ে ছিল একটা মোটা কাপড়ের থলি। সেটাতে সে ভরে ফেলল অনেক ধনরত্ন। এরপর ডাকাতদের ওভাবেই ফেলে রেখে সে উড়ে চলে এলো আবার আবু ওসমানের বাড়ি।
আবু ওসমান পরী হিনাকে দেখে যারপরনাই চমকে উঠল যেন। কিছুটা ধাতস্থ হয়ে নিয়ে জোড় হাতে বলল সে, 'আমি গরিব মানুষ। দিন আনি দিন খাই, তাতেই আমার সুখ। কিন্তু তোমার মত পরীর পাল্লায় পড়ে জীবনটাই আমার খোয়া যায় কিনা ....??'
পরী হিনা আবু ওসমানের মনের কথা বুঝে চুপ করে রইল। একটু পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সে বলল, 'তোমার কোন ৰতি করতে চায়নি আমি। আর খোদার ইচ্ছা ছাড়া কেউ কারো ৰতি করতেও পারে না। সব তার ইচ্ছা-, কিন্তু দুনিয়াতে সুখ খুঁজতে চাওয়াটাই বোকামি।'


এ জীবন তো জীবন নয়, জীবন নামে খেলা
সামনে আছে আসল জীবন, সাঙ্গ হলে বেলা।
এ জীবনের সুখ পিয়াসি, পর জীবনে দুঃখী
বেলা শেষে শূন্য হাতে ফিরবে ঘরে তুমি।


আবু ওসমান পরী হিনাকে দেখে ভয় পেয়েছিল। কিন্তু তার কথা শুনে তা পুরোপুরি কেটে গেল। বলল এবার সে, 'কিন্তু আমার মতো গরিব মানুষের ঘরে সুন্দরী মেয়ে থাকা মোটেও নিরাপদ নয়। তাতে তোমারও বিপদ আমারও সাড়ে-সর্বনাশ।'
মৃদু হেসে পরী হিনা বলল, 'বিপদে পড়তে না চাওয়াটাই তো সবচে' বড় বোকামি। পৃথিবীতে মানুষ আসে বিপদ সামলাতে আর শেষ মেশ সবচে' বড় বিপদে পড়ে সে মৃত্যুর সময়।'
পরী হিনার কাছে কথায় হেরে আবু ওসমান বলল, 'তাহলে বল এবার, আবার কী বিপদে তুমি আমাকে ফেলতে চাও?'
পরী হিনা তখন তার থলে থেকে ধনরত্ন গুলো সব মেঝেতে উপুড় করে ঢেলে দিয়ে বলল, 'এবার তোমার জন্য আমি নিয়ে এসেছি অনেক ধন-সম্পদ। তবে সম্পদ কোন বিপদের কারণ না তার জন্য যে এর ব্যবহার জানে। আর সৎ মানুষেরাই এর ব্যবহার ভাল জানে। তাই তোমার জন্য আমি ওগুলো নিয়ে এসেছি। '
স্তূপীকৃত ধনরত্ন গুলো দেখে আবু ওসমানের চোখ মাথায় উঠল। কিন্তু তা কিছুৰণের জন্যে মাত্র। মুহূর্তেই নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, 'জানিনা এসব ধনরত্ন আবার আমাকে কী বিপদে ফেলবে। কিন্তু আমি না জেনে না শুনে কারও ধন-সম্পদে কোনদিন হাত দেয়নি। তা তুমি এসব কোথা থেকে এনেছ?'
'ডাকাতদের আস্তানা থেকে-' বলল পরী। তারপর একটু থেমে আবার বলল সে, 'আর এসবের মালিক এখন তুমি। তোমার ইচ্ছেমতো তুমি জমিয়ে রাখতে পার অথবা খরচও করে ফেলতে পার। তবে তুমি যদি মনে কর কাওকে দিয়ে দেবে, তাও দিতে পার। সেটা তোমার ইচ্ছে।'
ভিতরে ভিতরে যদিও লোভ জেগে উঠল আবুওসমানের। কিন্তু মনেমনে আবুওসমান প্রতিজ্ঞা করে ফেলল পরের ধনে সে যেমন আগে কখনো লোভ দেখায়নি এবারও দেখাবে না। এতসব ধন-সম্পদ তার হাতে এসে পড়লেও এসবের মালিক তো আর সে না। সে আগে যেমন ছিল এখনো তেমনি আছে। যদিও এতগুলো ধনরত্ন এর আগে আবুওসমান কোথাও কখনো দেখেনি। শুধু আবুওসমান কেন তার সাত পুরুষের কেউ কখনো দেখেছে কিনা সন্দেহ। কিন্তু এখন ওগুলো ওজন করতে হলে তো দাঁড়িপাল্লা দরকার। কিছুদিন আগেই ডাকাত পড়ে তার ঘর বাড়ি পুড়েছে, জিনিস পত্রও সব বেহাত হয়েছে। সামান্য একটা দাঁড়িপাল্লা নেই তার ঘরে। বাধ্য হয়ে স্ত্রীকেই পাঠাল সে পাশে প্রতিবেশীর বাড়ি।
আবুওসমানের প্রতিবেশী জসিম ছোটখাটো ব্যবসা করে তার দিন চলে। আবুওসমানের অবস্থা পড়ে যাওয়ার পর থেকে আর সবার মতো জসিমও তার সাথে সম্পর্ক ছেদ করেছে। এদিকে রাত গভীর হয়ে যাওয়াতে জসিম আর তার পরিবারের লোকজন সবাই ঘুমিয়ে পড়েছিল। শুধু জসিমের দশ বছরের মেয়েটিই জেগে ছিল। কেন জানি তার আজ ঘুম আসছিল না। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে জসিমের স্ত্রীও জেগেছিল। এমন সময় দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হল। রাত হয়ে যাওয়ায় জসিমকে ডেকে দিল তার স্ত্রী। ঘুম থেকে উঠে দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনে জসিম বলল, 'এত রাতে বাইরে কে দাঁড়িয়ে?'
আবুওসমানের স্ত্রী ৰীণ কণ্ঠে বলল, 'আমি ওসমানের পরিবার।'
তার কথা শুনে জসিম তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে রাগে গজ গজ করতে করতে বলল, 'এত রাতে আবার হতচ্ছাড়াটা কী করতে এসেছে।' অথচ মাত্র কিছুদিন আগেই তার কথা শুনলে দরদ উচ্ছলে পড়ত জসিমের।
জসিমের স্ত্রীর রাগ তার চেয়ে একআনা বেশি বৈ কম হল না। সে তার স্বামী কে পরামর্শ দিল, 'তুমি বলে দাও আমরা এখন কেউ বাসায় নেই। ব্যস, তাহলেই সব চুকে বুকে যাবে।'
স্ত্রীর কথা শুনে জসিমের যেন রক্ত মাথায় উঠল; রেগে আগ্নিশর্ম হয়ে বলল সে, 'তোমার কথা মতো চলতে গেলে তো দুনিয়া অন্ধকার হবে আমার। বলে দিলেই হলো বাসায় নেই, আমার গলাটা তো সে ঠিকই শুনবে, তবে?'
স্ত্রীও তো আর স্বামীর চাইতে কম যায় না, জসিমের মতো না থাকলেও রাগ তারও আছে। ৰেপে গিয়ে সেও চাপা গলায় বলল, 'শুনলে শুনল। দেশে কী জিন-ভূত নেই? নাকি শুধু মানুষ গুলোই আছে, যে শুনলে তোমার আহামরি এমন ৰতি হবে? আরে নাকে কেঁদে একটুখানি শুধু বলে দেবে বাড়ির মানুষ গেছে বেড়াতে আমরা ক'জন জিন-ভূত আছি বাসায়।'
স্ত্রীর কথার বাধ্যগত হয়েও আজ রাতে হঠাৎ জসিমের পুরুষত্ব জেগে উঠল। সে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, 'না, রাতদুপুরে এমন করে জলজ্যান্ত মিথ্যা বলা ঠিক হবে না। তার চেয়ে দু'টো ভাল কথা বলে বিদায় করে দি-'
তারপর সে দরজা খুলে মোলায়েম সুরে জানতে চাইল, 'কী চাই তোমার? '
আমতা আমতা করে আবুওসমানের স্ত্রী বলল, 'একটা দাঁড়িপাল্লার খোঁজে এসেছিলাম তোমার বাড়ি।'
এবার যেন সত্যিই আকাশ থেকে পড়ল জসিম। হতদরিদ্র হয়ে পড়া আবুওসমানের স্ত্রী কোথায় একটু খাদ্য খাওয়া চাইতে পারে রাত-বিরেতে। কিন্তু দাঁড়িপাল্লা দিয়ে কী কাজ তার? তাও এই রাতে?
প্রতিবেশীর সুখ খুশি মনে সহ্য করতে পারে এমন প্রতিবেশী পৃথিবীতে খুব কমই আছে। দাঁড়িপাল্লাৱ দিল ঠিকই জসিম কিন্তু স্ত্রীর পরামর্শ মতো তার দশ বছরের মেয়েটিকে পিছন পিছন পাঠিয়ে দিল সে। মেয়েটা দরজার ফুটোয় চোখ লাগিয়ে দেখে আসবে দাঁড়িপাল্লা চাওয়ার আসল রহস্যটা কী?
খানিক পরেই ফিরে এসে চোখ মাথায় তুলে বলল মেয়েটি, 'ওমা, রাশি রাশি ধনরত্ন গয়না গাটি। স-ব তুলেছে দাঁড়িপাল্লা।'
জসিমের স্ত্রীর ছিল জ্ঞান হারানো রোগ। মেয়ের কথা শুনেই সে জ্ঞান হারাল। অনেক রাতে তার জ্ঞান ফেরানো হলে সে শুধু একটা কথাই বলল তার স্বামীকে, 'কাল থেকেই সব বাদ দিয়ে তুমি জুতো সারার কাজ করবে। তোমার ঐ মুদিখানার ব্যবসার নিকুচি করেছি আমি।'
মাথা চুলকে তার স্বামী তখন বলল, 'তা না হয় করা গেল। দু'টো পয়সার জন্য মানুষ আজকাল কত কিছুই তো করছে। কিন্তু শুধু জুতো সেরে আবুওসমান এত টাকার মালিক হবে তাতো ভাবা যায় না। দেশে কী আর মুচি নেই।'
সদ্য জ্ঞান ফেরা জসিমের স্ত্রীর রাগ তাতে মোটেও কমল না। ভীষণ ৰেপে গিয়ে সে বলল, 'তোমার বুদ্ধিতে ধুয়ো দিয়ে দিয়েই এতকাল মুদি দোকানির স্ত্রীর বেশি আর কিছু হইনি আমি। পোড়া কপাল আমার, এমন স্বামী জুটেছে আমার কপালে চুলোয় আগুন ঠেলতে ঠেলতেই জীবন গেল; সুখের মুখ আর দেখা হল না।'
এত রাতে চেঁচামেচি শুনলে আশপাশের প্রতিবেশীরা জেগে উঠতে পারে। এমন কী আবুওসমানও টের পেয়ে যাবে। জসিম তাই চাপা স্বরে স্ত্রীকে ধমক দিয়ে বলল, 'আঃ! হয়েছে , এখন চুপ করতো বড়। লোক জানাজানি হলে কী বিপদটা হবে একবার ভেবে দেখেছ?'
কিন্তু জসিমের স্ত্রী তাতে মোটেও কর্ণপাত না করে আরও নাকে কান্না কেঁদে বলল, 'তোমার লোক জানাজানি চুলোয় যাক। সারা জীবন জ্বালিয়েছো, জ্বলতে জ্বলতে হাড় মাস সব এক হয়ে গেছে; আজ রাতেই এর একটা বিহিত চাই।'
অবস্থা বেগতিক দেখে জসিম নরম হয়ে বলল, 'ঠিক আছে, ঠিক আছে। বিহিত আজই হবে। তুমি আর চেঁচিয়ো না এখন, কালই আমি আবু ওসমানের বাড়ি যাচ্ছি। এর শেষ না দেখে আমার চোখে আর ঘুম নেই।'
জসিমের কপাল ভালই বলতে হবে। এত রাতে চেঁচামেচি শুনে প্রতিবেশীরাও কেউ জাগেনি আবুওসমানও টের পায়নি। তবে জসিমের স্ত্রীও তো আর কম চালাক না, তার চেঁচানটাও ছিল এমনই চেঁচান; যেন সাপও মরে আবার লাঠিও না ভাঙে। স্বামীকে শায়েস্তা করাই তার মূল উদ্দেশ্য ছিল।
পরদিন সকাল সকাল জসিম আবুওসমানের বাড়ি গিয়ে হাজির হল। তারপর তাকে বলল সে, 'অনেকদিন তোমার কোন খোঁজ-খবর নেয়া হয় না, তাই আজ একটু সকাল সকালই এলাম তোমার খোঁজ-খবর জানতে। তা ভাই ভাল আছ তো?'
অনেকদিন পর্যন্ত আবুওসমানের সাথে এমন ভাল ব্যবহার কেউ করেনি। শুধু ভাল ব্যবহার বললে ভুল হবে ডাকাতি হয়ে অবস্থা পড়ে যাওয়ার পর কেউ তার খোঁজটাও রাখেনি। আজ সকালে জসিমের উপর-পড়া হয়ে খোঁজ নিতে দেখে আবুওসমান অবাক হলেও মোটেও নিরাশ করল না তাকে। বেশ তাচ্ছিল্যের সাথেই জবাব দিল, 'আমাদের মতো গরিব মানুষের আর থাকা না থাকা। তা মিথ্যে বলব না, খোদা আমাদের ভালই রেখেছে।'
আবুওসমানের কথা শুনে জসিমের চোখ দুটো জ্বল জ্বল করে উঠল। আসল কথাটা কীভাবে পাড়বে ভেবে পেল না সে। ইতিউতি করে শেষ পর্যন্ত বলেই ফেলল, 'আমাকে তোমার জুতো সারার কাজ শেখাবে? জিনিসপত্রের দর বেড়ে যাওয়ায় মুদিখানার ব্যবসা আর চলছে না বিশেষ।'
জসিমের কথা শুনে আবুওসমান আকাশ থেকে পড়ল। কিন্তু নিরাশ করল না তাকে। বলল, 'তোমার মতো ভদ্র লোকের এই কাজ মানায়? দুনিয়ায় নীচ কাজ বলতে যদি কিছু থাকে তার মধ্যে এও একটা। মান-সম্মান আর ভদ্রসমাজে ওঠা-বসা সবই তোমার একদিনে মাটিতে মিশে যাবে।'
কিন্তু জসিম শুনল না সে কথা। সে নাছোড়বান্দা হয়ে বলল, 'আজ আমি বাড়ি থেকে পণ করে বেরিয়েছি তোমার কাছ থেকে জুতো সারা শিখব। এখন থেকে আমি লোকের জুতোই সারব, পরে যা হয় হবে; যে যা মনে করে, করতে পারে।'
তার কথা শুনে আবুওসমান অবাক হয়ে বলল, 'আজ পর্যপ্ত জুতো সেরে কেউ বড়লোক হয়েছে এমনটা কোথাও শুনিনি। তাও আবার মানুষের চোখে নিকৃষ্ট একটা কাজ....সে কাজ তুমি...??
আর রাখঢাক না রেখে জসিম এবার ভেঙেই বলল, 'তা তুমি এত ধনরত্ন কোথায় পাও হেঁ? কাল রাতে দাঁড়িপাল্লা পিছনে মেয়ে পাঠিয়ে সব জেনেছি আমি। এখন তুমি ভালই ভালই সব বলে দিলেই বেঁচে যাই আমি।'
আবুওসমান বুঝল রাতেই তার ধনরত্নের কথা ফাঁস হয়ে গেছে। উভয় সংকটে পড়ে গেল আবুওসমান। এদিকে হিনার কথাও ফাঁস করা যাবে না, আবার মিথ্যেও বলা যাবে না। তাহলে এখন উপায়?
উপায় একটা অবশ্যই আছে, মনে মনে বলল আবুওসমান। তারপর বলল সে, 'এ সব পরীর কারসাজি।'
'কোথায় সেই পরী? এখুনি আমাকে তার ঠিকানা দাও।' উত্তেজিত হয়ে বলল জসিম।
'থাম থাম। এখনি এত উতলা হয়ো না। তার ঠিকানা পত্র আমিও জানিনা। তবে এ বাড়িতে সে মাঝে মধ্যে আসে। সে নিজেই এসে আমার সাথে দেখা করে। আমি তার কাছে কিছু চাইনি সে নিজেই সব দিয়ে যায়। তার ঠিকানাও আমার জানা নেই।' আসল কথাটা গোপন করে বড় বিনয়ের সাথে সত্যি কথাটা সাজিয়ে বলল আবুওসমান।
তার কথা শুনে লোভে আর হিংসায় জ্বল জ্বল করে জ্বলতে শুরু করল জসিমের দুটো চোখ। তারপর সে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, 'তাহলে তোমার বাড়িটাই আমার কাছে বিক্রি করে দাও। তোমার বাড়িটাই চাই আমার। কত নেবে বল?'
হিংসার আগুন যখন একবার জ্বলে ওঠে কারও মনে তখন তাতে শুধু হিংসুকই জ্বলে না আশপাশের নিরীহ মানুষও জ্বলে। হিংসুক নিজে যেমন জ্বলে অপরকেও তেমন জ্বালায়। আদতে জসিমের সম্পদ মোটেও কম ছিল না। আবুওসমানও বুঝল বাড়ি বিক্রি করা ছাড়া এখন তার সামনে আর কোন পথ খোলা নেই। কেননা যুগে যুগে অসহায় আর দরিদ্র শ্রেণির মানুষের উপর সবল, ৰমতাধর আর সম্পদশালী মানুষরা জুলুম চালিয়ে এসেছে। তাদের অন্যায় আবদারের কাছে বারবার ভুলন্ঠিত হয়েছে গরিব অসহায় মানুষের মান-সম্মান। বিপন্ন হয়েছে তাদের যৎ-সামান্য সঞ্চিত সহায় সম্পদ। তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার কাছে বলি হয়েছে সাধারণ মানুষ। আবুওসমানও এর বাইরের কেউনা। তাই সে একান্ত বাধ্য হয়েই বাড়িটা বিক্রি করে দিল জসিমের কাছে।


এদিকে ঘুমের ওষুধের ক্রিয়া এতটাই তীব্র ছিল যে তিনদিন তিনরাত সমানে ঘুমল ডাকাত দল। চতুর্থ দিন শেষে মধ্যরাত পেরুলে তাদের ঘুম ভাঙল। ঘুম থেকে উঠে চোখ কচলে ডাকাত সর্দার দেখল তার ধনভাণ্ডার থেকে ধনসম্পদও লুঠ হয়েছে হিনাও ভেগেছে। আর সহ্য হল না তার। গগনবিদারী এক চিৎকার দিয়ে সে রাগে হিস্ হিস্ করতে করতে বলল, 'আবুওসমান হিনা তোরা কেউ আমার হাত থেকে বাঁচতে পারবি না।'
সর্দারের চিৎকার শুনে তার চেলাদেরও সব ঘুম ছুটে গেল। সবাই একে একে জেগে উঠল। মশাল জ্বলে উঠল চারদিকে। মশালের আলোয় ভাল ভাবে দেখল ডাকাত দলের সর্দার। তাদের ধন ভাণ্ডার থেকে অনেক ধনরত্নই লুঠ করে নিয়ে গেছে হিনা। কিন্তু হিনার পৰে কীভাবে এটা সম্ভব হল তা নিয়ে মোটেও মাথা ঘামাল না সর্দার। বরং সে ভাবল আবুও সমানেরও হাত রয়েছে তার ধন সম্পদ লুঠ হওয়ার পিছনে। তারপর আবার সে বিশাল এক হুঙ্কার দিয়ে বলল, 'আবুওসমান তুই আমার ধনভাণ্ডারে হাত দিয়েছিস। আজ তোর আর রৰা নেই। আমার হাত থেকে তোকে এখন আর কেউ বাঁচিয়ে রাখতে পারবে না।'
একবার অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে হো হো করে হেসে উঠল সর্দার। সবাই উদগ্রীব হয়ে অপেৰা করতে লাগল। এত বিপদের মধ্যেও ডাকাত সর্দারের হাসির রহস্য বুঝতে পারল না কেউই। হঠাৎ হাসি থামিয়ে ডাকাত সর্দার গুরুগম্ভীর স্বরে বলল, 'আর নর্তকী হিনা ভেবেছিস তুই পালিয়ে বাঁচবি। তোকে তো নাচতেই হবে....নাঃ তোর শাস্তিটা আমি নিজের হাতেই দেব। তোকে নাচতে হবে তারপর তোকে টুকরো টুকরো করা হবে। আরব সওদাগরের বাড়ির বাঁদি হওয়ার স্বপ্ন তোর শেষ। জেনে রাখিস আজ পর্যন্ত আমার হাত থেকে কেউ পালিয়ে বাঁচতে পারেনি।'
সর্দারের দাপানিতে নির্জন পর্বত প্রান্তর বারবার প্রকম্পিত হল। আবুওসমান আর হিনার মৃত্যুর দণ্ডাদেশ ঘোষণা করে সে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিতে শুরু করল।

রাত তখন গভীর হয়েছিল। কিন্তু জসিম আর তার স্ত্রীর চোখে ঘুম নেই। ছেলে মেয়েদের আগেই রেখে এসেছিল দূরে এক আত্মীয় বাড়ি। কেননা ধন-সম্পদ প্রাপ্তির কথা তাদের মাধ্যমেই বাইরের লোক জেনে যাবে। তাই ছেলেমেয়েদের আগেই সরিয়ে দিয়েছে তারা। তারপর তারা ঘরের বাতি সব নিভিয়ে সারা রাত পরী আগমনের সাধনায় লিপ্ত হল। বিভিন্ন স্তুতি বাক্য, ছড়া, মন্ত্র ; যা যা তাদের জানা ছিল সব বলতে লাগল একে একে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হল না। পরীর দেখা নেই, একরাত গেল দু'রাত গেল; এমন কী তিন রাতও গেল।
প্রতিরাতেই তারা জানালা খুলে অন্ধকার আকাশের দিকে দু'হাত তুলে সুর করে আবৃত্তি করেঃ
লাল পরী নীল পরী, তাড়াতাড়ি এসো বাড়ি
নিয়ে ধন রাশি রাশি, আরো এনো কাড়ি কাড়ি।

কিন্তু সব চেষ্টা বৃথা গেল জসিম আর তার স্ত্রীর। তৃতীয় রাত পার করে যখন চতুর্থ রাত পড়ল তখন তারা হয়ে পড়ল নাছোড়বান্দা। আবুওসমানের পোড়া বাড়ি বেশিদামে কিনে পরী যদি শেষ পর্যনত্দ নাই আসে তাহলে পুরো টাকাটাই গচ্চা যাবে তাদের। জীবনে লাভ ছাড়া ৰতি হয় এমন কোন কাজ করেনি জসিম। ভুলেও কোনদিন এক পয়সা দান করেনি কাউকে, খরচ হয়ে যাওয়ার ভয়ে নিজেও ব্যবহার করেনি সেসব। শেষ পর্যনত্দ নিশ্চিত লাভ জেনেই আবুওসমানের পোড়া বাড়ি কিনেছে সে তার গচ্ছিত ধন-সম্পদ ব্যয় করে। তাই চতুর্থ রাতে তারা নাওয়া খাওয়া ভুলে বেশুরো গলায় পরীর সাধনায় লিপ্ত হল। মাতালের মতো তারা পরীর নাম জপ করতে শুরম্ন করল। একজন যখন বলল লালপরী অপরজন বলল নীল পরী। জসিম যখন এক আন্দাজে 'রাশি রাশি' ভজতে লাগল ঠিক তখনই তার স্ত্রী ভজতে লাগল 'কাড়ি কাড়ি'। আর এতেই কাজ হল।
দূরে কোথায় ঘোড়ার খুরের শব্দ শুনতে পাওয়া গেল। জসিম তার স্ত্রীকে থামিয়ে দিয়ে বলল, 'পরী এবার শুনেছে আমাদের কথা। ঐ শুনতে পাচ্ছ, ঘোড়ায় চেপে আসছে পরী আমাদের বাড়ি। এবার আর পায় কে আমাদের? অনেক বড়লোক হয়ে যাব আমরা। তারপর জসিম উঠে দাঁড়িয়ে নাচতে লাগল আর বলতে লাগল, 'রাশি রাশি, কাড়ি কাড়ি'।
কিছুৰণের মধ্যেই ঘোড়ার পায়ের শব্দ বাড়ির কাছাকাছি এসে থেমে গেল। তারপর শোনা গেল ঘোড়ার চিঁহি ডাক। জসিম মনের আনন্দে তখনো নেচে চলেছে, মুখে তার একটাই কথা 'রাশি রাশি কাড়ি কাড়ি, অনেক ধনরত্ন; আমি বড়লোক হয়ে গেছি, আমাকে আর পায় কে?'
আর ঠিক তখনি বাইরে থেকে গুরম্ন-গম্ভীর শব্দ ভেসে এল, 'আবুওসমান ভাল চাস্ তো শিগ্গির দরজা খোল।'
জসিমের স্ত্রী চাপা স্বরে ভয়ার্ত কন্ঠে বলল স্বামীকে, 'এ যে মনে হচ্ছে ডাকু.....'
ধনের লিপ্সায় মাতাল জসিম তখন হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়েছে। সে বার বার একই কথা বলতে লাগল,
'ডাকু তুমি কোথায় পেলে, এ আমাদের পরী
আমরা নেব গয়নাগাটি, বেশিবেশি ভরি ভরি,
আরো নেব ধনরত্ন, রাশিরাশি কাড়িকাড়ি,
নীল পরী লাল পরী, এসোবাড়ি তাড়াতাড়ি।'

স্ত্রী তখন কাঁদ কাঁদ হয়ে বলল, 'তোমার পরীর নিকুচি করেছি আমি। এ যে পুরম্নষ মানুষের গলা, পরী কখনো পুরম্নষ হয়?'
স্ত্রীর কথা শুনে জসিমের পাগলামু ভাব কেটে গেল। কিন্তু ততৰণে সময় শেষ হয়েছে। বাইরে থেকে আবার গুরম্ন-গম্ভীর শব্দ ভেসে এল, 'এ আবুওসমান-, বাঁচতে চাসতো শিগ্গির দরজা খোল্। তোর বাড়ি আমরা ঘিরে ফেলেছি। পালানোর সব রাসত্দা তোর বন্ধ।'
ধন লিপ্সায় অন্ধ মানুষ বিপদে পড়লে তার বুদ্ধি বিভ্রম ঘটে। জসিমেরও তাই ঘটল। সে আবার বলতে শুরম্ন করল, 'ধনরত্ন গয়না গাটি, রাশি রাশি কাড়ি কাড়ি। নীল পরী লাল পরী।'
জসিমের স্ত্রীর ধন সম্পদের প্রতি লোভ যতই থাক তার মতিভ্রম হয়নি। স্বামীর বেহাল অবস্থা দেখে সে মনে মনে বুঝল এই মুহূর্তে ডাকাতদের কথা না শুনলে সামনে সমূহ বিপদ। তাই সে তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দিল।
ডাকাত সর্দার ভিতরে ঢুকেই হুঙ্কার ছেড়ে বলল, 'আবুওসমান কে তোরা কোথায় লুকিয়েছিস, শিগ্গির বের করে দে-'
জসিমের স্ত্রী কাঁদ কাঁদ হয়ে বলল, 'আমরা তার খবর জানি না।'
কিন্তু জসিমের সেদিকে কোন ভ্রম্নৰেপই নেই। সে দুলে দুলে ঘুরতে লাগল আর নেচে নেচে বলতে লাগল, 'ধনরত্ন গয়নাগাটি, বেশিবেশি কাড়ি কাড়ি; লাল পরী নীল পরী।'
ডাকাত সর্দার প্রথমে মশালের আলোয় ভাল ভাবে পর্যবেৰণ করল জসিম কে। তার ধারণা হল জসিম বোধহয় আবুওসমানেরই কোন নিকট আত্মীয়। লুটের ধন-সম্পদ ভাগাভাগি নিয়েই সে পাগল হয়েছে। তাই আর দেরি করল না সর্দার; তার এক চেলা কে চোখের একটু ইশারা করে দিল শুধু। সর্দারের আদেশ পাওয়া মাত্রই তরবারির এক কোপে ধড় থেকে মাথাটা নামিয়ে দেয়া হল জসিমের। চোখের সামনে স্বামীর মৃতু্য দেখে জসিমের স্ত্রী জ্ঞান হারাল।
পুরো বাড়িটা ডাকাতরা তন্ন তন্ন করে খুঁজে দেখল। কিন্তু কোথাও আবুওসমানের কোন হদিস না পেয়ে শেষে আবার ডাকাত সর্দার হুঙ্কার ছেড়ে বলল, 'আবুওসমান তুই আমার হাত থেকে পালিয়ে বাঁচতে পারবি না। এ পর্যনত্দ কেউ তা পারেনি। আমার সব গর্ব-অহঙ্কার তুই মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছিস্ , তোকে আমি ছাড়ব না।'
রাগে হিস্ হিস্ করতে করতে সর্দার সহ ডাকাত দল আবার ঘোড়ায় চেপে বসল। মরম্নর ধুলো উড়িয়ে ওরা প্রচণ্ড গতিতে রওনা হয়ে পড়ল ওদের আসত্দানার দিকে। কিছুৰণের মধ্যেই পাহাড়ের ধার ঘেঁষে গিরিপথ ধরে অদৃশ্য হল পুরো ডাকাত দলটি।
যুগে যুগে ধনসম্পদ মানুষের হাত বদল হয়েছে। যে তাকে পেতে চেয়েছে তার জন্য সে হয়েছে অভিশাপ। ধন সম্পদের লোভ মানুষকে নিঃস্ব করে ছেড়েছে, তাকে করেছে ধ্বংস; অথচ যে পেতে চায়নি তার পিছনেই ছুটেছে অবিরত। তার এই ছলনাময়ী খেলা চলেছে নিরনত্দর পৃথিবী জুড়ে।
তার ছলনার জালে পা দিয়ে কত নিরীহ সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে; কেউ তার খবর রাখেনি। অথচ তারপরও তা চলতেই থাকবে......পৃথিবীতে এটাই মানুষের জন্য সবচে' বড় অভিশাপ।

[গত সংখ্যায় প্রকাশিত 'ওসমান ও পরী হিনা' গল্পটির নাম পরিবর্তন করে 'আবুওসমান ও পরী হিনা' রাখা হল। ]
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
হোসেন মোশাররফ দেরিতে হলেও আপনার মন্তব্য পেয়ে অনেক ভাল লাগল, ধন্যবাদ আপনাকে ....সতত ভাল থাকুন....এফ আই জুয়েল....
এফ, আই , জুয়েল # রুপকথার আদলে হলেও গল্পটিতে শিক্ষনীয় দিক আছে । সম্পদের সাথে আকাংখার এক সুন্দর সমীকরন অনুরনিত হয়েছে গল্পটিতে ।।
হোসেন মোশাররফ মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ লতিফা সিদ্দিক, সতত ভাল থাকুন .....
লতিফা সিদ্দিক অন্যরকম একটা স্বাদ পেলাম আপনার গল্পে। খুব ভালো লাগলো।
হোসেন মোশাররফ মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ চৌধুরী ফাহাদ ......সতত ভাল থাকুন ....
চৌধুরী ফাহাদ রূপকথার গল্প বরাবরই ভালো লাগে, এবারও গল্পটি ভালো লেগেছে।
হোসেন মোশাররফ মন্তব্য করার জন্য আমার ধন্যবাদ নিন খোরসেদুল আলম ....সতত ভাল থাকুন ....
খোরশেদুল আলম মনের কল্পনা থেকে লেখা 'আবু ওসমান ও পরী হিনা' দ্বিতীয় পর্বটিও সুন্দর করে মিলিয়েছেন। মরুভুমী চোখে না দেখলেও আপনার গল্পে ঠিক যেন ভেসে উঠল মনের চোখে রাশি রাশি বালুময় প্রান্তর।
হোসেন মোশাররফ রূপকথার গল্প ভাল লাগার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ আশা ....শুভ কামনা রইল ...
আশা রূপকথার গল্প খুব ভালো লাগল। গল্পের মাঝে মাঝে কিছু শিক্ষণীয় বক্তব্যও পেলাম।

২৫ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৪০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪