অদৃশ্য বন্ধু

বন্ধু (জুলাই ২০১১)

রফিকুজ্জামান রণি
  • ২২
  • 0
  • ১৬
এক.
রাহাত সবেমাত্র বাজারের ব্যাগ হাতে বাড়ির কাছাকাছি এসে পেঁৗছলো। ওদের বাড়ির একপাশ দিয়ে সবুজ মাঠের বুক চিরে অদৃশ্য শব্দের ছন্দ-তালে ধীরগতিতে ছুটে চলছে এক বিশাল পাকা রাস্তা। সে রাস্তার রাঙা চরণখানি চুমিয়ে অতৃপ্তচিত্তে বয়ে চলছে বজরী খাল। খালের ওপাশেই রাহাতদের বাড়ি। দু'পাড়ের মধ্যে বাঁশের সাঁকো বন্ধন। সাঁকো পেরুলেই রাহাত বাড়িতে গিয়ে পেঁৗছবে।
রাহাত বাড়িতে যাওয়ার বাসনা নিয়ে সাঁকোর ওপরে পা বাড়ালো। ঠিক ওই মুহূর্তে তার নজর গেলো সাঁকোর নিচে পড়ে থাকা একটি পরিত্যক্ত জালের দিকে। ওই জালের মধ্যে কী যেনো ধস্তাধস্তি করছে। প্রথমে সে বড় আকারের কোনো মাছ মনে করে সেখানে ছুটে গেলো। কাছে গিয়ে সে দেখে বিস্মিত হয়ে ওঠলো। জালের ভেতর এক বিশাল গোখরা সাপ আটকানো। বর্বর জালের হাত থেকে সে রক্ষা পাওয়ার জন্যে বার বার জোরালোভাবে নড়েচড়ে ওঠে। কিন্তু ব্যর্থ প্রয়াস। যতই সে ছুটার চেষ্টা করে ততোই সে জালের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। রাহাতকে দেখে সাপটার নড়াচড়ার সেন্টিমিটার দ্বিগুণ হারে বেড়ে গেলো। একেকবার রুগ্ন গরুর মতো উচ্চস্বরে হুশ হুশ করে ওঠে। বার বার তীব্রক্ষোভের রোষানলে পুরে সে ফণা তুলতে প্রাণপন চেষ্টা চালাচ্ছে। তাতেও ফলাফল শূন্যের কোঠায় দাঁড়ালো। বরং জাল তার অফুরন্ত শক্তির দাপটে গোখরার ক্ষোভের ডানা থেকে কিছু পালক খসিয়ে দিলো। ফলে শত চেষ্টাতেও সে ওই জালের কারাগার থেকে রেহাই পেলো না। গোখরা যতোই বেরুবার চেষ্টা করে, জাল ততোই তাকে জড়িয়ে ধরতে উদ্গ্রীব হয়ে ওঠে। হয়তোবা আর একটু পরেই জালের অসীম ক্ষমতার কাছে পরাজয় বরণ করে হতভাগা গোখরা পান করবে মৃতু্যর অনিবার্য চিরতিক্ত সুধা।
সাপটার দুর্গতি দেখে রাহাতের মনে শোকের মেঘ এসে ভর করলো। সাপটার জন্যে তার মনের আকাশ ভেঙ্গে মমতার বৃষ্টি অঝরধারে ঝরতে লাগলো। সে কিছুতেই নিজের মনকে সামলাতে পারলো না। অবশ্যই রাহাত জানে যে, সাপ মানুষের চিরশত্রু। কিন্তু সে এটাও জানে যে, শত্রুর বিপদে মুখ ফিরিয়ে নেয়াটা কোনো ভালো মানুষের কাজ নয়। শত্রুকেও বিপদ থেকে উদ্ধার করা মহত্বের কাজ। দুর্বল সময় শত্রুকে ঘায়েল করা বীরত্ব নয়, বরং সকল শত্রুতাকে ডিঙিয়ে মমতার বন্ধন দিয়ে পৃথিবীকে জয় করাটাই সবচেয়ে বড় বীরত্বের কাজ। প্রকৃত বীর যারা, তারা শত্রুকে কখনোই ভয় করে না। প্রকৃত মানুষ কখনো কাউকে আবদ্ধ রেখে কিংবা জোরপূর্বক কারো স্বাধীনতাকে হরণ করতে চায় না। সকল শত্রুতাকে ধুলোয় মাড়িয়ে যারা ভালোবাসার পবিত্র হাত বাড়িয়ে দেয়, তারাই তো প্রকৃত মানুষ। তাই সে সকল ভয়-ভীতি হজম করে সাপটাকে ছেড়ে দেয়ার দৃঢ়প্রত্যয় গ্রহণ করলো।
রাহাতের মা সাদিয়া বেগম নখ কাটার জন্যে বাজার থেকে একটি ব্লেড আনার জন্যে রাহাতকে বলেছিলেন। রাহাত সেই ব্লেডটি বের করলো এবং শান্ত দুটি পা ফেলে চলে গেলো গোখরাটির কাছে। প্রথমে সে গোখরাটির মাথায় শক্তভাবে ধরলো। তারপর মাটিতে রেখে তার লেজের ওপর শক্তভাবে পা ফেলে চাপ দিয়ে আস্তে আস্তে জালটা কাটার চেষ্টা করলো। যদিও ইতোপূর্বে সাপটি ছুটার জন্যে জোরালোভাবে নড়াচড়া করছিলো কিন্তু হঠাৎ সে কী মনে করে যেনো শিশু-বাচ্চার মতো একেবারে নীরব পুতুল হয়ে গেলো। আস্তে আস্তে প্রায় পুরো জালটিই সে সাপের গা থেকে আলাদা করে দিলো। এবার বাকি শুধু মুণ্ডুটা।
কমলের পাপড়ির মতো কোমল দুখানি হাতে রাহাত গোখরার মাথার জালটি আলাদা করানোর সময় হঠাৎ তার অসাবধানতার ফলে ধারালো ব্লেডের আঘাতে সাপটির মাথায় একটু বড় ধরনের চোট লাগলো। সাথে সাথে তীরের মতো তার মস্তক থেকে রক্ত প্রবাহিত হতে লাগলো। এতে রাহাত নিজেও নিজের ওপর ভীষণ ক্ষিপ্ত হলো। যাহোক সমস্ত জাল সাপটার শরীর থেকে আলাদা করে তাকে ছেড়ে দিলো রাহাত। ছাড়া পেয়ে সাপতো দে ছুট। একটু দূরে গিয়ে সে বিশাল ফণা তুলে রাহাতের দিকে তাকালো। যদিও এতোক্ষণ রাহাত নির্ভিক ছিলো। কিন্তু এবার সে ঘাবড়িয়ে গেলো। এমনকি ভয়ে তার শরীর থরথর করে কাঁপতে আরম্ভ করলো। কারণ সে জানে সাপকে কষ্ট দিলো সাপ রাতে এসে তার প্রতিশোধ নেয়।
একটু পরে সাপটি ফণা নামিয়ে আস্তে আস্তে চলে গেলো খালপাড় দিয়ে অজানার উদ্দেশ্যে। তখনো মাথা থেকে অকাতরে রক্ত ঝরছিলো। রাহাত ভয়ের পোশাক পরাবস্থায়ই বাড়িতে ফিরে গেলো। মনে মনে দোয়া-দরুদ পড়তেও তার হাড় কেঁপে ওঠছে।
বাড়িতে গিয়ে সে তার মায়ের কাছে পুরো ঘটনার বিবরণী ভীতুকণ্ঠে পেশ করলো। তার মা প্রচণ্ডভাবে ক্ষেপে যায়। হাউমাউ করে কাঁদতে আরম্ভ করলেন তিনি। রাহাতের এমন দুঃসাহসের জন্যে তাকে অনেক বকাঝকাও করেন তিনি। 'সবসময় বীরত্ব দেখানো ভালো নয়' বলে তিনি একমাত্র ছেলেকে উপদেশ দিতে লাগলেন। ছেলের ভীতিকর অবস্থা দেখে তিনি তাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, চিন্তা করিস্ না বাবা, ভাগ্যিস সাপ তোর কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। তোকে তোর পরাণ চাচার কাছে নিয়ে যাবো। তিনি 'সাপ খিলান' জানেন। তিনি যদি সাপ খিলান করেন তাহলে সাপ ডরেও বাড়ির ধারে-কাছে পা ফেলবে না। তবে সাবধান! ভবিষ্যতে এমন বীরত্ব ভুলেও দেখাবি না।
সন্ধ্যায় রাহাতের মা তাকে সঙ্গে নিয়ে পরাণ মিয়ার বাড়িতে গিয়ে পরাণ মিয়ার কাছে সবকিছু খুলে বললেন। পরাণ মিয়া কোনো চিন্তা না করার জন্যে তাদেরকে পরামর্শ দেন। তিনি বললেন, 'যার উপকার করেছ তুমি। সে কখনোই তোমার ক্ষতিসাধন করবে না, যদি পারে তাহলে সে উপকারই করবে। প্রাণীরা উপকারের প্রতিদান অপকার দিয়ে করে না। উপকারীকে সবাই ভালোবাসে। যে অপরের অনিষ্ট কামনা না করে, তার অনিষ্টও কেউ কামনা করে না। অনিষ্টকারীকে শয়তানও পছন্দ করে না।' পরাণ মিয়ার কথামতো মা-ছেলে বাড়ি ফিরে গেলো। দেখা গেলো পরাণ মিয়ার কথাই দিনের আলোর মতো সত্য- রাতে সাপের কোনো নাম-গন্ধও নেই। তারপর চলে গেলো অনেকদিন। এক সময় সবাই গোখরাটার কথা প্রায় ভুলেই গেলো।

দুই.
এরই মধ্যে চলে গেলো প্রায় দু'টি বছর। রাহাত এবার এসএসসি পরীক্ষাথর্ী। তাই এখন তার লেখাপড়ার সাথে সাথে টাকা-পয়সারও কিন্তু অনেক দরকার। যেহেতু তার বাবা পৃথিবীতে বর্তমান নেই। সেহেতু তার মা-ই একমাত্র সম্বল। সারাদিন তিনি সাংসারিক কাজকর্ম সেরে অবসর সময়ে সেলাই কাজ করে সংসার পরিচালনা করেন। বলতে গেলে সেলাই কাজের আয় দিয়েই তাদের সংসার চলে। বিভিন্ন রেডিমেড গার্মেন্টস্ পোশাক থাকার কারণে এলাকার মানুষও এখন প্রায় দর্জিবিমুখী হয়ে পড়েছে। বলতে গেলে সবাই এখন রেডিমেড জামা-কাপড় বেশি গায়ে দেয়। তারপরও টুকটাক যা পায় তাতেই মা-ছেলের সংসার বেশ চলে।
ইতোমধ্যে রাহাতের নির্বাচনী পরীক্ষার ফলাফল সহ ফরম ফিলআপের তারিখ ঘোষণা করে দেয়া হয়ে গেছে। যদিও নির্বাচনী পরীক্ষায় সে সবচেয়ে ভালো ফলাফল করেছে কিন্তু তারপরও ফরম ফিলআপের কথা ভেবে সবাই চিন্তিত। তার মায়ের যে আয় তাতে ফরম ফিলআপ করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। দু'বেলা অন্ন জোগার করতেই যার দেহের হাড় কেঁপে ওঠে তার ওপর আবার ফরম ফিলআপের জন্যে তিন হাজার টাকা বাড়তি খরচ- কীভাবে সম্ভব! তাছাড়া সময়ও এতো কম দেয়া হয়েছে যে, কারো কাছে চেয়ে কিংবা কিস্তি উঠিয়ে টাকা দেয়ার কোনো উপক্রম নেই। তারপরও ছেলেকে নিয়ে তার মায়ের মনে অনেক আশার অরুণ উদয় হয়।
ধীর পায়ে হেঁটে একসময় ফরম ফিলআপের শেষ তারিখ এসে দুয়ারে দাঁড়ালো। আগামীকালই লেট ফি সহ ফরম ফিলআপের শেষ তারিখ। আগামীকালের মধ্যেই ফরম ফিলআপ করা না হলে এ বছর পরীক্ষা দেয়া কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। রাহাতের মা অনেক কষ্টে যে টাকা জোগার করেছে তাতে ফরম ফিলআপের অর্ধেক টাকাও জোগার হয়নি। অনেক জায়গায় টাকা ধার চেয়েও পায়নি, এমনকি সুদেও কারো কাছে টাকা ধার পায়নি। অনেকে দেবে বলে আশ্বস্ত করেও এর মধ্যে কোনো প্রতিফলন ঘটাতে পারেনি। হয়তোবা তাই রাহাতের মায়ের বরফের মতো সুন্দর মুখখানি আজ নীরব মেঘে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। রাহাত মনোক্ষুণ্ন হয়ে ওই রাতে খানাদানা না করেই ঘুমিয়ে পড়েছে।
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে রাহাত 'মা' 'মা' বলে চেঁচামেচি আরম্ভ করলো। তার মা দৌড়ে এসে জানতে চাইলো, কোনো বিপদ হলো কি-না। রাহাত বললো, 'মা আমার বালিশের কাছে এতো টাকা কে রেখে গেছে? সাথে দেখো এক টুকরো কাগজ আর কিছু সুন্দর কলম। রাহাতের মা কাগজটা হাতে নিয়ে দেখলো, এটি একটি চিরকুট। তাতে লেখা, 'রাহাত! আমি জানি তোমার বাবা নেই। তোমার মা-ই পরিবারের আয়ের উৎস। সামনে তোমার কেন্দ্রীয় পরীক্ষা। তাই তোমার অনেক টাকা-পয়সা দরকার। তাই তোমাকে আমার পক্ষ থেকে সামান্য উপহার দিলাম। এটাকে করুণা মনে করে উপেক্ষা করলে ব্যথা পাবো। ইতি- অদৃশ্য বন্ধু।
রাহাত ও তার মা বিস্ময়াবিভূত হয়ে ভাবলো, কে এমন 'অদৃশ্য বন্ধু', যে বিপদের দিনে দেবতার মতো নিভৃতে এসে এতো বড় উপকার করে যায়! যাহোক, রাহাতের ফরম ফিলআপ করার টাকা-পয়সার জন্যে আর কোনো চিন্তা করতে হলো না। সব উটকো ঝামেলার পালা শেষ। নিশ্চিন্তে তার ফরম ফিলআপের কাজ সম্পন্ন হলো। এখন একটাই চিন্তা শুধু লেখাপড়া আর লেখাপড়া।
আর দুই-তিন দিন পরেই রাহাতের পরীক্ষা শুরু। এমন সময় তার ভালো ভালো খাবারের দরকার। দরকার যথাযথ পুষ্টিকর খাদ্য। কিন্তু তার মা যতটুকু সম্ভব হয় তাতে কোনো ত্রুটি রাখেন না। তারপরও অনেক কিছুই করা সাধ থাকলেও সাধ্যের অভাবে করতে পারেন না তিনি। রাহাতও বুঝের ছেলে।
আগামীকাল সকাল দশটায় রাহাতের প্রথম পরীক্ষা ইংরেজি ১ম পত্র দিয়ে সূচনা হবে। তাই রাতে তার মা বেশি পড়াশোনা না করার জন্যে বলেছেন। বেশি রাত জাগলে শরীর খারাপ করতে পারে। তাছাড়া সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই সবকিছু প্রস্তুত করতে বলেছেন তিনি। রাহাতও তাই করলো। রাতে খুব বেশি পড়াশোনা না করেই ঘুমিয়ে পড়লো সে। কারণ লেখাপড়া তো আগেই শেষ। এখন তো একটু ভালোভাবে দেখাশোনা করার পালা।
ভোরের পাখির কলগুঞ্জনে তাড়াতাড়ি রাহাতের ঘুম ভেঙ্গে গেলো। নামাজের জন্যে তৈরি হওয়ার সময় সে আবার দেখতে পেলো তার বিছানায় অর্থাৎ বালিশের কাছে বিভিন্ন প্রকারের ফল-ফলাদি এবং ছোট একটি পাত্রভর্তি দুধ। আর একটি অভিনন্দনপত্র, সেই সাথে ছোট্ট চিরকুট আকারের একটি কাগজে সুন্দর হাতের লেখা একটি চিঠি। এবারও রাহাত তার মাকে চেঁচামেচি করে ডেকে আনলো। মা ছেলে যৌথভাবে চিঠিখানা মন দিয়ে আনন্দচিত্তে পড়লো। তাতে লেখা- "প্রিয় রাহাত। আজ তোমার প্রথম পরীক্ষা। তাই তোমাকে আন্তরিক অভিনন্দন। তুমি পরীক্ষাতে ভালো ফলাফল করলে আমি খুব খুশি হবো। যেহেতু তোমার এখন পরীক্ষা, সেহেতু তোমার পুষ্টিকর অনেক খাদ্যের প্রয়োজন। আমি জানি, তোমার মা খুব ভালো মানুষ। তিনি ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও সাধ্যের অভাবে তোমার অনেক চাহিদা মেটাতে পারেন না। তাই আমার পক্ষ হতে সামান্য উপহারটুকু তুমি সানন্দে গ্রহণ করো। এটাকে করুণা কিংবা অন্য কোনো ভুল ধারণায় প্ররোচিত হয়ে উপেক্ষা করলে ভীষণ আকারের ব্যথা পাবো। ইতি-অদৃশ্য বন্ধু।"
চিঠিখানা পড়ে রাহাতের মায়ের চোখ অশ্রুতে সিক্ত হয়ে গেলো। তার ধারণা তার ছেলের এমন ভালো বন্ধু আছে এটা নিশ্চয়ই তার ভালো কোনো কর্মের ফসল। তিনি ছেলেকে বুকে টেনে নিয়ে চড়ুইপাখির পালকের মতো কোমল দুটি হাতের মমতাময়ী পাপড়িগুলো ছেলের মাথায় দিয়ে আদর করে বলতে লাগলেন, "যার কেউ নেই তার আল্লাহ্ আছেন। হয়তো আল্লাহ্র করুণাই আমাদের ওপর অলৌকিকভাবে বর্ষিত হচ্ছে।" যাহোক রাহাত নামাজ পড়তে চলে গেলো।
সবকিছু সেরে মাকে সালাম করে পরীক্ষা দিতে চলে গেলো রাহাত। পরীক্ষা শেষ করে সোজা বাড়িতে ফিরে এলো সে। পরীক্ষা এতোই ভালো হয়েছে যে, বাঁধভাঙ্গা খুশির তোড়ে মাকে জড়িয়ে ধরলো সে। তার মা-ও তাকে অন্তর থেকে দোয়া করে দিলেন।
ওই রাতেও আবার তার পরীক্ষা ভালো হওয়ার জন্যে তাকে অভিনন্দনপত্রসহ বিভিন্ন দেশী ও বিদেশী পুষ্টিকর ফল-ফলাদি বালিশের কাছে দিয়ে গেলো সেই অদৃশ্য বন্ধু। এভাবে চলতে লাগলো প্রতিদিন। প্রতিরাতেই তাকে নিত্য-নতুন সুস্বাদু ফল-ফলাদি দিয়ে তার অদৃশ্য বন্ধু তাকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করে। যার ফলে রাহাতের শারীরিক গঠন আগের থেকে অনেক সুন্দর ও পুষ্টিকর হয়ে ওঠলো। তার দেহের বেশ পরিবর্তন ঘটলো। তার মেধার প্রখরতাও বেশ বৃদ্ধি পেতে লাগলো। ঘটেছে চিন্তা-চেতনার বেশ পরিবর্তন। ভালো ভালো খাওয়া-দাওয়ার মধ্য দিয়ে নিশ্চিন্তে তার পরীক্ষা চলতে লাগলো। তার মাথায় এখন একটিমাত্র চিন্তা ঘুরপাক খায়, কীভাবে তার অদৃশ্য বন্ধুকে একনজর দেখা যায়।
পরদিন রাহাতের শেষ পরীক্ষা। সব পরীক্ষা শেষ হয়ে এখন বাকি শুধু চতুর্থ বিষয়। তার ধারণা পরদিন যেহেতু পরীক্ষা শেষ, তাই হয়তোবা সেদিনের পর তার অদৃশ্য বন্ধু তার কাছে আর না-ও আসতে পারে। তাই সেদিনই তাকে দেখার সুযোগ খুঁজতে হবে। তাই সে সিদ্ধান্ত নিলো রাতে সে ঘুমুবে না। ঘুমের ভান করে থাকবে আর যে স্থানে প্রতিদিন তার জন্যে উপহার রেখে যায় সে স্থানে হাতে রেখে শুয়ে থাকবে। যখনই কোনো কিছু হাতে লাগবে তখন সে টুপ করে জেগে ওঠবে।
রাতে সিদ্ধান্ত মোতাবেক সে শুয়ে পড়লো। বুদ্ধি করে বিদু্যতের সুইচটাও হাতের নাগালে রেখে দিলো সে। নিঃশব্দ পায়ে ধীরে ধীরে হেঁটে চলেছে রাত। একে একে নিভে গেলো পৃথিবীর সকল বাতি। ঝিঁঝি পোকারাও ঘুমের তন্দ্রায় ক্লান্ত হয়ে গান-বাদ্য ছেড়ে ঘুমিয়ে পড়েছে তাদের স্বপ্নপ্রাচীরের কোমল বিছানায়। জানালায় গ্রিলের ফাঁক দিয়ে দুষ্টু ছেলের মতো উঁকি মেরে তাকিয়ে আছে নিঘর্ুম চাঁদ। কোথাও কোনো কুকু-বিড়ালের শব্দ নেই। জোনাকি পোকারা নিশীথদেবীর কাছ থেকে ছুটি নিয়ে বিশ্রামের জন্যে চলে গেছে আপন গন্তব্যে। সমস্ত পৃথিবীকে যেন রাতের দুর্ভেদ্য কালো পর্দায় আচ্ছন্ন করে রেখেছে। সৃষ্টিজগতের সকল প্রাণী যেন রাতের শীতল কোলে পরম শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েছে। অদৃশ্য পায়ে হেঁটে হেঁটে রাত এখন গন্তব্যের মধ্যপ্রান্তে এসে ঠেকেছে। রাহাত এখনো তার সিদ্ধান্তে অটল। তাই তন্দ্রার কোমল ছোঁয়া তার গায়ে তিলসম প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি।
এরই মধ্যে হঠাৎ করে রাহাতের হাতে ঠাণ্ডা ভাব অনুভূত হলো। টুপ্ করে সে অন করে দিলো বৈদু্যতিক সুইচ। প্রথমে সে তার অদৃশ্য বন্ধুকে দেখে অাঁতকে উঠলো। সে আতঙ্কিত চোখে দেখলো ইয়া বড় ফণা তুলে দাঁড়িয়ে আছে এক বিশাল গোখরা সাপ। রাহাতকে দেখার সাথে সাথে সাপটা তার ফণা নামিয়ে ফেললো। কুর্নিশ করার মতো মাথাটা অবনত করে রাহাতের জন্যে আনা উপঢৌকনগুলো বিছানায় রেখে সাপটি দ্রুত চলে গেলো বেড়ার ফাঁক দিয়ে। যখন সাপটা তার মাথা অবনত করলো, রাহাত স্পষ্ট দেখতে পেলো সাপটার মাথার একাংশে একটু কাটা দাগ। সঙ্গে সঙ্গে রাহাতের মনে পড়ে গেলো সেই দু'বছর আগের ঘটনার কথা।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
AMINA লেখায় ও ভাষায় দখল আছে।কল্প কাহিনী হিসাবে ভাল।
কনিকা কনা অনেক ভালো।
সূর্য শিশুতোষ কাহিনী হিসাবে খুবই সফল বলতে হবে। লেখকের প্রশংসা করতেই হয়। সাপকে আমরা সবচেয়ে অকৃকজ্ঞ প্রাণী হিসাবেই জানি। সাপও যে উপকারীর উপকার করে সেটা টেনে এনে কৃতঘ্নদের লজ্জা দেয়াও হলো। (নড়াচড়ার সেন্টিমিটার দ্বিগুণ হারে বেড়ে গেলো>>> এই জায়গাটায় ব্যপক মজা পেয়েছি)
junaidal ভাল লাগল। শুভ কামনা রইল।
Shopnarani অসাধারণ গল্প।
শাহ্‌নাজ আক্তার সাপ ও মানুষের মধ্যে যে বন্ধুত্বের উদাহরণ তুমি দিয়েছ ...এক কথায় তা অনবদ্য ....আমার খুব ভালো লেগেছে , যদিও সাপ বলে কথা , ভয়ে আমার গা শিরশির করতে লাগলো , যাক তুমি ভোট পেলে .
এফ, আই , জুয়েল # প্রয়োজন না হলে অহেতুক বর্ননা বেশী করার দরকার নাই । গল্পের থীম ভালো । শিক্ষনীয় বিষয় সহ রোমাঞ্চও আছে যথেষ্ট ।আমাদের মনো-জগতে এই জাতীয় ধারনার প্রভাব অনেক বেশী ।।
এমদাদ হোসেন নয়ন বাস্তবতার নিরিখে গল্প চাই/তুমি পারবে বন্ধু তাই।

০৩ মে - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪