(এক দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধার বঞ্চনার কথা)
ক্রিং ক্রিং ক্রিং......!টেলিফোনটার কী আর্তচিৎকার রে বাবা!রিং-টোনটা চেঞ্জ করতে হবে।বাজার আর সময় পেলো না!এমনিতে দেরি হয়ে গেছে।বের হওয়ার মুহূর্তেই বেজে উঠলো!রাস্তায় যা জ্যাম,তারপর নতুন ড্রাইভার ।হাসপাতালে ঠিক সময় মত পৌঁছতে না পারলে রোগিদেরও জ্যাম লেগে যাবে।মাত্রই মোজাফ্ফর বেরিয়ে গেলো।তার অফিসের গাড়িতে আমার জায়গা নেই!এতো নিয়মনীতি আর সৎভাবে চলে,কী এমন পেলো সে জীবনে!পাওয়ার মধ্যে চাকুরীজীবনের এই একটা সর্বোচ্চ পদ।তার সমসাময়িক আর দশজন ডাক্তারের মত টাকাপয়সা,সম্পদও নেই তেমন!এই এক মানুষ বানিয়েছেন আল্লাহ্!শুধু পারে গাধার মত কাজ করতে আর ফলায় নীতিগিরি!মনটা খিঁচড়ে গেলো!বুয়া তো ফোন ধরবেই না!তাকে শেখানো হয়েছে,কল রিসিভ করে সালাম দিতে,সে কিছুতেই এই কাজটি করতে পারবে না,সালাম দিতে নাকি লজ্জা লাগে!আর ছোট কাজের মেয়েটা ফোনের কোন কথাই বোঝে না,তাই সেও ধারে কাছেও আসবে না!
অগত্যা দরজা থেকে ফিরে এসে আমাকেই রিসিভার তুলতে হলো।
:হ্যালো..
:স্লামালেকুম ভাবী।আমি শাহ্ আলম।ডা. ভাইকে তো এখানে দেখছি না!তিনি কোথায়?
:তিনি তো অফিসে চলে গেছেন।কোথায় দেখছেন না?আপনি কোথায়?
:ভাবী,আজ তো আমাদের উপজেলা মুক্তিযো্দ্ধা সংসদের ইলেকশন।আমি নবাবগঞ্জের ইলেকশন কেন্দ্রে।ভাই অফিসে গেলেন মানে?তিনি ভোট দেবেন না?
:সে কী আলম,আপনি জানেন না?তার নাম তো পরের কোন লিস্টে নেই,তিনি কীভাবে ভোট দেবেন?
:কী বলছেন ভাবী!আমাদের গ্রামের তো আমরা মাত্র ১৬জন সামনাসামনি যুদ্ধ করেছি,সবাই জানে,চেনে আমাদের।ডা. ভাই আর আমি এক বাংকারে থেকেছি,একসাথে বিপদ মাথায় নিয়ে কত যে অপারেশনে অংশ নিয়েছি!আসল মুক্তিযোদ্ধার নাম লিস্টে নেই মানে কী?আমরা যুদ্ধের পর অস্ত্র জমা দিয়ে একই সাথে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রলায় থেকে বিরাট ভলিউমে স্বাক্ষর করে আমাদের নামের আসল মুক্তিযোদ্ধার সনদ এনেছি একইসাথে।ওটা আছে না ভাইয়ের কাছে?এটাই তো আসল,এটার কোন দাম নেই?এদিকে আপনার দেবর কর্নেল সাব তো যুদ্ধের সময় বাচ্চা ছিলো,যুদ্ধের কাছ দিয়েও যায়নি!তার নামও পরের তালিকায় আছে,ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা!ও তো সকাল থেকেই দেখছি ভোট কেন্দ্রে ঘোরাঘুরি করছে!
:আলম ,এসব বলে আর কী লাভ বলুন?আসল সনদের কোনই মূল্য নেই!যারা পরে তালিকায় নাম উঠিয়েছে,তারাই মুক্তিযোদ্ধা,হাজার হাজার ভ্থয়া নাম তখন লিস্টে ঢুকিয়েছে!আপনার ভাইয়ের মত প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা অনেকেই বাদ পড়েছে!
:এটা কেমন করে হলো?নতুন করে লিস্টের সময় ডা. ভাই কোথায় ছিলেন?এটা আমরা কিছুতেই মেনে নেবো না।ভাইকে বলুন আবেদন করতে।
:আমরা তখন দেশের বাইরে ছিলাম।মোজাফফরের নাম লিস্টে না তুলে তার ভাই আজহারের নাম দিয়ে দিয়েছে,যে এখন কর্নেল।নাহ্ ,অনেক বলেছি,উনি আবেদন করবেন না!বলেন,‘সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে যে দেশে মুক্তিযোদ্ধারও পরিবর্তন হয়,সেখানে নাইবা থাকলো আমার নাম,ভ্থয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে থাকার লজ্জা থেকে তো বাঁচলাম!’আচ্ছা আলম,আজ রাখি,পরে কথা হবে।
মনটা খারাপ হয়ে গেলো।রিসিভার রেখে,তাড়াতাড়ি রওয়ানা হলাম হাসপাতালে।গাড়িতেও সারাটা রাস্তায় এ কথাগুলো মাথা থেকে সরাতে পারলাম না!এই ইস্যুটা যখনই মনে পড়ে,আমি নিজেকে সামলাতে পারি না।....
১৯৭১-এ মোজাফফর তখন এম.বি.বি.এস. ২য় বর্ষের(পুরাতন) ছাত্র।আমি সবেমাত্র ১ম বর্ষে ভর্তি হয়েছি।দেশে সে সময় অস্থিরতা আর টালমাটাল অবস্থা!রোজই মিটিং,মিছিল হচ্ছে।আমরা কমন রুমে বসে পোস্টার লিখছি,দেয়ালে দেয়ালে টানাচ্ছি।ভাসানী ভাই(ছাত্র ২য় বর্ষ,নতুন) জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়ে আমাদের বোঝাচ্ছেন,পোস্টারে কী কী লিখতে হবে,কী করতে হবে,সব গাইড করছেন।ক্লাশ-ট্লাশ তেমন হচ্ছে না!ছেলে মেয়েরা ধীরে ধীরে হল ছেড়ে চলে যাচ্ছে!
৭ই মার্চে রেসকোর্সে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষন!তারপর ২৫মার্চ,রাতের অন্ধকারে শুরু হয়ে গেলো ইতিহাসের জঘন্যতম,বর্বর হামলা,নিরীহ গণহত্যা!যার যার মত নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে.দলে দলে মানুষ প্রাণটুকু হাতে নিয়ে,সব সহায় সম্পদ ফেলে শহর ছেড়ে পালাতে লাগলো।কেউ গ্রামের বাড়িতে,কেউ আত্মীয়-বন্ধুদের বাড়িতে,কেউ বা পাশের দেশ ভারতের শরনার্থী শিবিরে আশ্রয় নিতে লাগলো!হাজার হাজার তরুণ ছাত্র,জনতা,কৃষক,শ্রমিক,ই.পি.আর,পুলিশ,বাঙ্গালী সেনাবাহিনীর সদস্য মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিলো!দীর্ঘ ৯মাস কীভাবে এই বাংলার মানুষ অসহনীয় অত্যাচার,নির্যাতন আর অসম যুদ্ধ মোকাবেলা করেছে,তা প্রতক্ষদর্শীরা ভুলবে না কখনো!পরবর্তী প্রজন্ম কিছু কিছু জানতে পারছে বইপত্রের লেখা পড়ে।তাতেও অনেক বিভ্রান্তি!সেগুলো আর এখানে লিখলাম না।
যুদ্ধের পর স্বাধীন দেশে আমরা আবার কলেজে ফিরে এলাম।বীরের বেশে আমাদের কলেজের কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ফিরে এলো!তাদের সম্বর্ধনা দেয়া হলো বিভিন্ন সংগঠন থেকে।মোজাফফর এই মেডিকেল ছাত্রদের মধ্যে তেমনি এক বীর মুক্তিযোদ্ধা।আমাদের সহপাঠী গারো রাজার ছেলে,উইলিয়াম ম্রং,মুক্তিযোদ্ধা,সেও ফিরে এলো লম্বা চুল,কাঁধে অস্ত্র,হাঁটু পর্যন্ত হাফ প্যান্ট পরনে!আরও ফিরে এলন,মুক্তিযোদ্ধা ওয়াহিদ ভাই,ইকবাল ভাই,বীরপ্রতীক শাহজাদা ভাই,বীরপ্রতীক মাহমুদ ভাই!তাদের সম্বরধনা অনুষ্ঠানে তারা মুক্তিযুদ্ধে তাদের অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা বর্ননা করলেন সবাই।শুধু ফিরে আসেন নি সবার প্রিয় সংগ্রামী ‘ভাসানী ভাই’!যুদ্ধে তিনি নিহত হন।আমাদের কলেজের মুক্তিযোদ্ধা ছাত্ররা শুধু মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে,নামমাত্র কিছু স্কলারশীপ পেতেন!আর কোন সুযোগ সুবিধা পাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।যথাসময়ে পাশ করে তারা নিজেদের পেশায় যোগ দিয়েছেন ।
আমি মুক্তিযোদ্ধার সহধর্মিনী হিসেবে গর্ব অনুভব করলেও,মোজাফফরকে এ নিয়ে কথা বললে সবসময় বলে,‘আমরা তো কোন কিছু পাওয়ার আশায় যুদ্ধে যাইনি।দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি,দেশ স্বাধীন হয়েছে।এটাই আমাদের বড় পাওয়া,শ্রেষ্ঠ পুরস্কার।এবার দেশটাকে সবাই মিলে সুন্দর করে গড়ে তোলাই আমাদের সবার চাওয়া।’
দেশ স্বাধীন হলো।মোজাফফর সবার মত অস্ত্র জমা দিলো।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রলায় থেকে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রসচিব স্বাক্ষরিত ও আঞ্চলিক অধিনায়ক প্রতিস্বাক্ষরিত আসল মুক্তিযোদ্ধা সনদ দেয়া হলো।এরপর ডাক্তারী পাশ করে এ পেশায়ই যোগ দিয়ে মনপ্রাণ ঢেলে কাজ কেও যেতে লাগলো।আমার বিয়ের পর ‘মুক্তিযোদ্ধা সনদ’টি আমি অতি যত্নে তুলে রেখেছি।আমরা তখন দেশের বাইরে।সে সময় নাকি আবার নতুন করে লিস্ট তৈরি হলো মুক্তিযোদ্ধাদের!দেশে ফিরে সব শুনে মেজাফফর বললো,‘আরে!সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে কি মুক্তিযোদ্ধাও পরিবর্তন হবে নাকি?যারা সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা তাদের তো আসল সার্টিফিকেট রয়েছেই।কেউ যদি বাদ পড়ে থাকে তবে প্রমাণ দিয়ে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করুক।আমরা কেন আবার লিস্টে নাম তুলতে যাবো!’
কথা তো সত্যই।এ নিয়ে আর কখনো মাথা ঘামাইনি।এর দরকার হবে ভাবিনি!আমাদের মেয়ের মেডিকেল এডমিশন টেস্টের সময় আবার সবাই বললো,মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের কোটায় আ্যাপ্লাই করতে।মোজাফফর প্রতিবাদ কেও বললো,‘মেধাভিত্তিক পরীক্ষায় এটা ঠিক নয়।মুক্তিযোদ্ধা সন্তান বলে কেন সে এরকম আলাদা সুবিধা পাবে!মেধার কমপিটিশনে যোগ্য হলে টিকবে,নয়তো বাদ পড়বে।আমরা তো কোন আলাদা সুবিধা নিয়ে ডাক্তার হয়ে আসিনি?’আমি তার কথায় কান না দিয়ে সবার কথামতো কাজ করলাম,মুক্তিযোদ্ধা সনদটি ফর্মেও সাথে জমা দেয়া হলো।অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয়,সেই সনদ গ্রহণীয় হলো না!পরবর্তীতে ছেলের ভর্তিও সময় এই ভুল আমরা আর দ্বিতীয়বার করিনি।অনেকে মোজাফফরকে বললো,‘আপনি আবার আবেদন করুন,মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম অন্তর্ভ্থক্তির জন্য।’আমিও বললাম,‘তুমি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হয়েও ,তোমার নাম লিস্টে নেই বলে তোমার ছেলেমেয়েরা কোন সুবিধা পেলো না!তুমি এতো বড় পদে চাকুরী কর,তুমি কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউনসিলে গিয়ে জানাও।’
মোজাফফর বলে,‘লিস্টে নাম নেই বলেই কি আমি অমুক্তিযোদ্ধা হয়ে যাবো?আর যারা লিস্টে মিথ্যে নাম তুলেছে,সেসব ভ্থয়ারা কি আসল মুক্তিযোদ্ধা হয়ে গেলো!’
আমি বলি,‘তাই তো দেখছি!তোমার আসল সনদের কোনই মূল্য নেই!কারণ পরের মুক্তিযোদ্ধা লিস্টে তোমার নাম নেই।যেসব ভ্থয়া লোকের নাম আছে,তারাই মুক্তিযোদ্ধা!তারা মুক্তিযোদ্ধার সব সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে!’
শুনলাম আমার দেবর কর্নেল আজহার,যে মুক্তিযুদ্ধের ধারে কাছেও যায়নি,তার ছেলে-মেয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় মেডিকেল কলেজ ও বুয়েটে ভর্তি হয়েছে!তার মানে সে ভ্থয়া হয়েও মুক্তিযোদ্ধার সমস্ত সুযোগ সুবিধা পেয়েছে!আজ আবার লজ্জার মাথা খেয়ে বুক ফুলিয়ে,মুক্তিযোদ্ধা সেজে ভোটও দিতে গেছে!
এরপর শুরু হলো চাকুরীতে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ২বছর এক্সটেনশন!আর যায় কোথায়!মেডিকেলে পড়ার সময়ে এবং পরবর্তীতে দীর্ঘ চাকুরী জীবনেও যাদের শুনিনি মুক্তিযুদ্ধে গেছে,তারাও দেখি সার্টিফিকেট যোগাড় করে ২বছর চাকুরীর মেয়াদ বাড়িয়ে নিয়েছে!বলাবাহুল্য ডা.মোজাফফরের চাকুরীর মেয়াদ বাড়েনি!
আমি ক্ষোভের সাথে ঝগড়া করি,বলি,‘বুঝলাম সে সময় কোন পাওয়ার আশায় যুদ্ধ কর নি,কিন্তু এখন যে কোন সুবিধাই পেলে না!’
মোজাফফর হেসে বলে,‘সুবিধা না পেয়ে কি আমরা না খেতে পেয়ে মরে গেছি?সবাই তো জানেই আমি মুক্তিযোদ্ধা।আর ভ্থয়া কে তাও জানে।’
আমি প্রচন্ড রেগে বলি,‘যতদিন তোমার পরিচিত মুক্তিযোদ্ধা আর আত্মীয়-বন্ধু,চেনা-জানা লোকেরা বেঁচে থাকবে,ততদিন জানবে তুমি মুক্তিযোদ্ধা।তারপর আর কে মনে রাখবে?তখন মিথ্য্রেটাই সত্যি হয়ে যাবে,ভ্থয়ারাই হবে আসল মুক্তিযোদ্ধা!সব না হয় বাদ দিলাম,কিন্তু যখন তুমি মারা যাবে,তখনও তো তোমাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন পর্যন্ত করা হবে না!দেশের পতাকাও পাবে না তুমি!আর তোমার ভাই আজহার মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও,মৃত্যুর পর দেশের পতাকা পাবে,রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন হবে তার!যারা পতাকা এনেছে,পতাকা তো তাদেরই পাওনা,অথচ শুধুমাত্র তালিকায় নাম নেই বলে তারা পাবে না!’
আমার মুক্তিযোদ্ধা স্বামী শিশুর সারল্যে হেসে ওঠে,‘মৃত্যুর পর কার কী হলো,কে কী পেলো,তাতে কী আসে যায়?বেঁচে থেকেও কত মুক্তিযোদ্ধা মানবেতর জীবনযাপন করছে,কে তার খবর রাখে?আল্লাহ্ তো আমাদের ভালোয় রেখেছেন।শোকর গুজার কর।আবার কখনো দরকার হলে লড়বো দেশের জন্য,কোন কিছু পাওয়ার আশায় নয়।’
আমি মন খারাপ ভাব নিয়ে বলি,‘আর তোমার ছেলেমেয়ে,উত্তরাধিকারীরা,তারাও তো মুক্তিযোদ্ধার সন্তান,মুক্তিযোদ্ধার বংশ হিসেবে গর্ব করতে পারবে না?সবাই বলবে,‘কে বলেছে তোর পিতা মুক্তিযোদ্ধা?কই তাকে তো রাষ্ট্রীয়ভাবে সমাহিত পর্যন্ত করা হয়নি,সম্মান দেয়া হয়নি?’
এবার ডাক্তার সাহেব চুপ করে থাকেন,বলেন,‘বাদ দাও তো,এই ভ্থত কাঁধ থেকে নামাও।’
নাঃ,এ ভ্থত আমার কাঁধ থেকে নামেনা!যখনই মনে হয় ভেতরটা প্রতিবাদে ফেটে পড়ে,একধরণের কষ্টের অনুভ্থতি নিয়ে ছটফট করি আমি!ডা.মোজাফফরের আসল মুক্তিযোদ্ধা সনদটি ,যত্নসহকারে যক্ষের ধনের মত আগলে রেখে দিয়েছি আমি।সময় পেলেই এটাকে বের করে পরম মমতায় বুকে চেপে ধরে রাখি,তারপর একসময় আঁচলে মুছে আবার লুকিয়ে রাখি!ভাবি ,এ আমার দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা স্বামীর মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র দলিল,চিহ্ণ,পরিচয়,সান্ত্বনা আর স্বাক্ষী।ভাবছি এই কাগজের সনদটিকেই বাঁধিয়ে রেখে দেবো পারিবারিক ছবির সারিতে।অন্ততঃ আমাদের ভবিষ্যত উত্তরাধিকারীরা যেন জানে,তারা এক দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধার বংশধর ।এটাই তো বড় পাওয়া।নাইবা পেলো কোন রাষ্ট্রীয়,সরকারী সুযোগ সুবিধা!