অসম্ভবের পায়ে

নতুন (এপ্রিল ২০১২)

বশির আহমেদ
  • ৩২
  • ১৯
প্রতি বারের মত চৈত্রসংক্রান্তিতে তিন দিন ব্যাপি রাবানের মেলা বসেছে । দুই বন্ধু তমাল আর প্রেম মেলার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছে । ব্রাক্ষ্রন্দী থেকে রাবান প্রায় বিশ কিলো মিটার । সাইকেল নিয়ে তারা বেড়িয়ে পড়ল । সকাল তখন নয়টা । আকাশ নির্মল পরিস্কার । শহর ছাড়িয়ে গ্রামের মেঠো পথ ধরল । সাইকেল ছুটে চলছে । হাঁড়িধোয়া নদীর তীর ঘেষে মেঠো পথ। নদীটি জীর্ন শীর্ন। পানি কুঁচ কুঁচে কাল। নদীটি কচুরী পানায় ভরে আ‡ছ | দুই পাড়ে কুল বধুরা এটো বাসনাদি মাঝছে । শীর্ন নদীটি একে বেঁকে মেঘনায় গিয়ে মিশেছে । বর্ষায নদীটি যৌবন ফিরে পায় । নদীর পাড়ের মানুষ সবাই কৃষিজিবী । চরনগরদী এসে নদী উত্তর মুখী বাঁক নিয়েছে । চরনগরদীতে ছোট্র একটি বাজার বহু দিনের পুরানো । সপ্তাহে এখানে দুই দিন হাট বসে ।

চরনগরদী বাজারে এসে তারা সাইকেল থেকে নামল । এলাকাটি সাগর কলা উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত । যে দিকে চোখ যায় শুধু কলা ক্ষেত আর কলা ক্ষেত । ক্ষেতে ক্ষেতে কলার কাঁদি ঝুলছে । বাজারে দুই দিন কলা বেচা কেনা হয় । কলার কাঁদির উচ্ছিষ্টাংশ এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে । একটি চা দোকনে এসে বসল। চা খেয়ে চাঙা হয়ে আবার রওয়ানা হল রাবানের পথে ।

রাবান এলাকাটি টেঙর এলাকা । কোথাও উঁচ কোথাও নিচু । পাহাড়ী লাল মাটি । উঁচু জমিতে জন বসতি আর বাগান । আম, জাম, কাঠাল, বেল,জলপাই গাছের ফাঁকে ফাঁকে আনারস বাগান। গাছে গাছে কঁচি কাঁঠাল, আম, বেল ঝুলে আছে । বসত বাড়ীতে মাটির তৈরী ঘর । অনেকটা সেমিপাঁকা দালান ঘরের মত । কোন কোন বাড়ীর মাটির ঘর দ্বিতলও কারূকার্যময় । প্রতিটি বাড়ীর আঙিনায় গোলাপ, জবা, জুই, কামিনি, বেলী ফুল ফুঠে আছে থরে থরে। কোন কোন বাড়ীতে কাঠালী চাপা ও দেখা যায় । এখানকার বেশীর ভাগ মানুষ হিন্দু ধর্মাবলম্বী | রাবানের এই মেলা হিন্দু ঐতিহ্যেরই ধারক।

তমাল আর প্রেম যখন রাবান মেলা প্রাঙ্গনে এসে পৌছল তখন বেলা সাড়ে এগারটা । বিশাল এলাকা জুড়ে মেলা বসেছে। আট দশ একর জমি নিয়ে মেলা । চারদিক থেকে হিন্দু পুন্যার্থিসহ দলে দলে লোক জন মেলায় আসছে । এই মেলা এখন হিন্দু ,মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান মিলন মেলায় পরিনিত হয়েছে । মেলার মাঝ খানে বড় একটি কালী মন্দির । কালী মন্দিরের চার পাশে নাটঘর, শিব লিঙ্গ, বৈষ্ণব আখড়াসহ অনেক গুলো ছাদ দেয়া খোলা বিশ্রামাগার । মন্দিরের দক্ষিন পাশে শান বাধানো ঘাট সহ বিরাট পুকুর । মন্দিরের ঘর গুলে মুলত কয়েকটি বিশাল বট বৃক্ষকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে এসে তমালের মনে হল এইতো সেই ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড়। চারি দিকে মেলার কোলাহল থাকলেও বিশ্রামাগারে বসেই পথের ক্লান্তি দুর হয়ে গেল। বেশ কিছুক্ষন বসে থাকল।
প্রেম বলল- তমাল চল এবার মেলার কোথায় কি আছে একবার ঘুরে দেখে নিই ।
তমাল উঠে পড়ল । ঘুরে ঘুরে দেখছে । কি নেই মেলায়। নাগর দোলা ,চড়কি, পুতুল নাচ, সার্কাস, জোয়ার আসর । এক এক পাশে এক এক দোকানীরা পসড়া সাজিয়ে বসেছে । কোথাও মাটির তৈজস পত্র, কোথাও কাঠের আসবাব । কোন কোন দোকানে টাটকা জিলাপী ও আমৃত্তি ভাজা হচ্ছে।
মান্ডা ,বাতাসা,চিনির তৈরী হাতি, ঘোড়া, মাছ । কোথাও নিমকি,মুড়ালী ,তিলের খাজা, কদমা ইত্যাদি ।
মুড়ি মুড়কির দোকানে-ছাট খৈ, বিন্নি ধানের খৈ,।

দেখতে দেখতে তারা মালার দোকানের সামনে এসে দাড়াল। হরেক রকমের পুতির মালা ঝুলছে। তমালের ছোট বোন তমা আসার পথে বলে দিয়েছে- ভাইয়া আমার জন্য পুতির মালা আনিস কিন্তু । ছোট ছোট কাঠের পুতির মালা তমালের খুব পছন্দ হল । সে কিনতে উদ্যত হল । প্রেম বলল দোসত এগুলো কিন্তু বৈষ্ণব মালা। তোর বোন কে পড়ানো যাবেনা। তবে তোর বোন গলায় পড়ে বৈষ্ণবী সাজতে চাইলে পড়তে পারবে ।
প্রেম আরোও বলল- এ গুলো রুদ্রাক্ষের মালা । এসব মলা পুজারী ও বৈষ্ণব বৈষ্ণবীরা ব্যবহার করে ।
সামনে আরও অনেক মালার দোকান দেখা যাচ্ছে । সামনে এগিয়ে গেল । একটি দোকানে কাঠের ছোট ছোট পুতির মালা দেখতে পেয়ে দাড়াল । মালাটিতে হাত দিতে যাবে । একটি কিশোরী মালাটা তার আগেই হাতে নিয়ে নিল । ডানে তাকিয়ে প্রেম আর তমাল হতবাক । দুটি কিশোরী একই রঙয়ের পোষাক পড়া । মেলায় আগত আর দশ জন থেকে সম্পুর্ন আলাদা । তমাল অবাক বিষ্ময়ে কিশোরীদের দিকে তাকিয়ে রইল । এ মেলায় যেন ঠিক তাদের মানায় না। তমালের মনে হচ্ছে- ¯স্বর্গ হতে দূর্গা আর স্বরসতি যেন মর্তে নেমে এসেছে।
মেয়ে দুটির চোখে চোখ পড়তেই তারা দ্রুত মালার মুল্য পরিশোধ করে কোথায় যেন হারিয়ে গেল।
তমাল অন্যান্য মালা থেকে বেছে দুটি মালা কিনে নিল।
মেলার কেনা কাটায় মন নেই। তার চোখ শুধু এদিক সেদিক কি যেন খুঁজে বেড়াচ্ছে। সামনে এগোতে গিয়ে বার বার হোচট খাচ্ছে ।
প্রেম বলল কি দোস্ত-মেয়ে দুটির প্রেমে পড়ে গেলে নাকি?
তমাল জবাব দিল না। তারা দ্রুত সামনে এগিয়ে গেল। অনেক ঘুরেও মেয়ে দুটির দেখা পাওয়া গেল না।

প্রখর রোদ। বাতাস থাকলেও মেলায় আগত লোক জনের ভীর ও অনেক ক্ষন ঘোরার ফলে হাফিয়ে উঠেছে। প্রেম বলল-চল সেই বিশ্রামাগারে গিয়ে বসি।
দুজন বিশ্রামাগারে ফিরে এল। বসে সামনের দিকে তাকাতেই দেখতে পেল সেই মেয়ে দুটি পুকুর ঘাটে বেল গাছটির নিচে বসে আছে। দৃষ্টি তাদের পুকুরের জলের দিকে। তমাল লক্ষ্য করল তাদের পরনে কাঠালি চাপা ফুলের রঙয়ের সেলুযার ওড়না ও জারুল ফুলের রঙয়ের কামিজ। এক জনের মুখের আদল কিছুটা লম্ভাটে অন্য জনের গোলগাল । টানা টানা চোখ। বাশীর মত নাক। মাথায় উভয়ের ঘন কাল চুল।
পুকুরের জল বাতাসে ছোট ছোট ঢেউ তুলছে। রোদের আলো পড়ে তা চিক চিক করছে রূপালি ইলিশ মাছের মত। ঘাটে বসা মেয়ে দুটি যেন জল থেকে উঠে আসা জলপরী। ঠিক যেন কবি রবিঠাকুরের কবিতার মত-
পূর্ন স্ফুট পুষ্প যথা শ্যামা পত্র পুটে
শৈশবে যৌবনে মিশে উঠিয়াছে ফুটে এক বৃন্তে
বিস্তৃত নীল সমুদ্রে প্রথম ঊষার মত।
তমাল এক দৃষ্টে তাদের দিকে থাকিয়ে আছে । মেয়ে দুটি উঠে পড়ল । তাদের দিকে চোখ পড়তেই মুচকি হেসে মেলার ভীরে মিশে গেল ।

তমাল আর প্রেম আরো কিছুক্ষন বসে রইল। প্রেম বলল- ক্ষিদে পেয়েছে চল কিছু খেয়ে নিই। তমালেরও অনেক ক্ষিদে পেয়েছে। সেই সকালে বাসা থেকে দুটো পরটা খেয়ে বেড়িয়েছে আর খাওয়া হয়নি। চল বলে তারা উঠে পড়ল। পা বাড়াল জিলেপীর দোকানের দিকে। একটি দোকান তিন দিক পর্দা দিয়ে ঘেরা। ভেতরে কয়েকটি চেয়ার পাতা। তারা ঢুকে পড়ল দোকানে। দোকানে ঢুকেই অবাক; সেই মেয়ে দুটি দোকানে বসে গরম গরম জিলাপী খাচ্ছে । তমালদের দেখতে পেয়ে অবাক বিষ্ময়ে এক জন আর এক জনের মুখ চাওয়া চাওয়ি করল । প্রেম আর তমাল একটু ইতস্তত করে চেয়ার টেনে বসে পড়ল । মেয়ে দুটি আড় চোঁখে বার বার তাদের দেখছে । দ্রুত খাওয়া শেষ করে বেড়িয়ে গেল । বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত তারা মেলায় ঘুরে ঘুরে কিছু বাঁশ বেতের তৈজস পত্র কিনল ।

ইতো মধ্যে আরও বেশ কয়েক বার মেয়ে দুটি তাদের সামনে দিয়ে হেটে গেছে । আড়ালে আবডালে তাদের কর্ম কান্ড লক্ষ্য করেছে । বেলা পাঁচটার দিকে তারা মেলা থেকে বাড়ীর পথে রওয়ানা দিল ।

দু বন্ধুর মধ্যে প্রেম ধবধবে ফর্সা । গোলগাল চেহারা। অনেকটা বলিউডের নায়ক আমির খানের মত। তমাল বেশ লম্বা ,গায়ের রঙ উজ্জল শ্যামলা । খেলোয়ারী পেটানো শরীর । উভয়ের বাড়ী একই পাড়ায় । তারা সরকারী কলেজে অনার্স ক্লাসের দ্বিতীয বর্ষের ছাত্র।

প্রায় চার মাস পরের ঘটনা। তমাল আর প্রেম কলেজ অডিটরিয়ামের নীচ তলায় ক্রীড়া কক্ষের বারান্দার রেলিংয়ে বসে গল্প করছে । পেছন থেকে নারী কন্ঠে বলছে-এই যে দাদা, দাদা কলেজে ভর্তি ফরম কোথায় পাওয়া যাবে ?
তমাল পেছন ফিরে ভুত দেখার মত চমকে উঠল।
মেয়েটি আবার প্রশ্ন করল দাদা ভর্তি ফরম কোথায় পাব ।
তমাল নিজকে সামলে নিল । মেয়ে দুটি আর কেউ নয় রাবানের মেলায় দেখা সেই মেয়ে দুটি । তমাল বলল- আসুন আমার সাথে । মেয়ে দুটি তার পিছু পিছু এগিয়ে গেল ।
অফিস কক্ষে প্রচুর ভীড় । সবাই ভর্তি ফরম নিতে ভীড় করেছে । বিশাল লম্ভা লাইন । লাইনে দাড়িয়ে ফরম নিতে অনেক সময় প্রয়োজন । তমাল বলল-আপনারা এখানে দাড়ান আমি আসছি বলে অফিস কক্ষে ঢুকে পড়ল । তমাল কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত এজিএস । ভর্তি ফরম নিতে তার কোন বেগ পেতে হল না । দুটি ফরম হাতে নিয়ে সে বেড়িয়ে এল । ফরম দুটি মেয়েদের হাতে তুলে দিল ।
প্রেম জানতে চাইল আপনারা কি আজই ফরম ফিলাপ করে জমা দেবেন ?
গোলগাল চেহারার মেয়েটি জবাব দিল-হ্যাঁ।
প্রেম আবার জানতে চাইল-প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র কি সাথে এনেছেন ?
মেয়েটি বলল- হ্যাঁ।
প্রেম আর তমাল মেয়ে দুটোকে নিয়ে অডিটরিয়ামের দিকে এগিয়ে গেল। ক্রীড়া কক্ষে ঢুকে দাবা টেবিলের কাছে এসে দাড়াল । মেয়ে দুটিকে টেবিলে বসে ফরম ফিলাপ করতে বলল।
তারা ফরম ফিলাপ করতে শুরু করল। মেয়ে দুটি আজ পড়েছে কৃষ্ণচুড়া রঙয়ের সেলুয়ার ওড়না ও হালকা গোলাপী রঙয়ের কামিজ । কপালে সিদুর রঙয়া ছোট্র টিপ ।
গভীর মনোযোগ ও নিপুন হাতে ফরম দুটো ফিলাপ করে তারা তমালের হাতে তুলে দিল ।
ফরম হতে দেখা গেল লম্ভা আদলে মুখের গড়নের মেয়েটির নাম প্রতিভা আর গোল আদলের মেয়েটির নাম অনুরাধা । বাড়ী পারুলিয়ায়।
তমাল প্রেম ও মেয়ে দুটিকে বসতে বলে-ফরম, ছবি ও প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রাদি নিয়ে অফিস কক্ষের দিকে চলে গেল ।
অনুরাধা প্রেম কে জিঞ্জেস করল -দাদা আপনাদের দুজনের নাম তো জানা হল না ।
প্রেম জবাব দিল- আমার নাম -প্রেম কুমার মিত্র আর ওর নাম তমাল হাসান।
অনুরাধা আবার জানতে চাইল -আপনদের বাড়ী কোথায় ?
প্রেম বলল-এই কলেজের পেছনে ।
তমালের নামটা শুনে প্রতিভা কিছুটা আতকে উঠল যেন।

অল্প কিছুক্ষনের মধ্যে তমাল দুটো প্রবেশ পত্র হাতে করে ফিরে এল। প্রবেশ পত্র হাতে দিতে দিতে বলল আগামী রবিবার দিন পরীক্ষার সময় সুচি ও দিন তারিখ জানানো হবে ।
অনুরাধা বলল-দাদা আমাদের কে কলেজটা একটু ঘুরিয়ে দেখাবেন ?
তমাল আর প্রেম তাদের নিয়ে বাইরে বেড়িয়ে এল । প্রতিভা বলল –দাদা আপনারা কি এ কলেজই পড়েন ?
প্রেম বলল- হ্যাঁ । এ কলেজেই দ্বিতীয় বর্ষ সন্মান ।
প্রতিভা আর অনুরাধা বুঝল কিনা বুঝা গেল না। কলেজের দোতলায় ক্লাস চলছে তাই তারা দোতলায় গেল না। শহীদ মিনার ও বিঞ্জানাগার ঘুরে কলেজের পুকুর পাড়ে এসে থামল। বাধানো পুকুর ঘাট। ঘাটের দুপাড়ে বড় বড় দুটি তমাল গাছ। ছায়া ঘেরা মনোরম পরিবেশ। ঘাটে বসার পাকা দুটি বড় বেঞ্চ। সিড়ি নেমে গেছে পুকুরের জলের কিনারা পর্যন্ত। প্রতিভা ছায়া ঘেরা বেঞ্চে বসে পড়ল। অনুরাধা ও তাকে অনুসন করল। পুকুরে রক্ত শাপলা আর কিছু পদ্ম ফুল ফুটে আছে। প্রতিভা হঠাৎ উঠে সিড়ি দিয়ে নেমে জলের কিনারায় গেল। জলে হাত ছোঁযাল। হাতের ছোঁয়ায় জল নেচে উঠল। অনুরাধা নেমে গেল। শাপলা আর পদ্মের সাথে মেয়ে দুটি একাকার হয়ে উঠল ।

প্রতিভা একটু লাজুক ¯স্বভাবের না জানতে চাইলে কোন কথা বলছেনা । অনুরাধার কোন জড়তা নেই। সে প্রগলভা। অনর্গল কথা বলে যায়।
প্রেম জানতে চাইল-এত দুরের পথ আপনারা কিসে এলেন ?
অনুরাধা বলল- আপনারা আমাদের অনেক সিনিয়র দয়া করে আমাদের তুমি বলে সম্ভোধন করলে খুশি হব।
প্রেম বলল -ঠিক আছে। এবার বল কিভাবে এলে।
অনুরাধা বলল- ট্রেনে।
ফিরবে কি ভাবে ?
জবাবে বলল-একটার ট্রেনে।
তখন বেলা প্রায় সোযা বারটা । তমালদের দ্বিতীয় ক্লাস টা শুরু হযে গেছে । আজ আর ক্লাসে যাওয়া হল না । কথায কথায অনেক সময় পেরিয়ে গেল । ট্রেন আসার সময় হয়েছে । অনুরাধা প্রতিভা উঠে পড়ল। তমাল আর প্রেম রেল ষ্টেশন পর্যন্ত তাদের এগিয়ে দিল । ট্রেনে উঠার আগ পর্যন্ত প্রতিভা বার বার তাদের দিকে তাকাল।

রবিবার দিন প্রতিভা অনুরাধা কলেজে এল। কলেজে ঢুকেই প্রতিভার চোখ যেন কাকে খুঁজছে। চারদিক ঘুরে ঘুরে তাকাচ্ছে। খুঁজে পাচ্ছেনা । আকাশের ঝলমলে সূর্যটা যেন আলোহীন মনে হচ্ছে । অফিস কক্ষের সামনে রক্ষিত নোটিশ বোর্ডে টাঙ্গানো ভর্তি পরীক্ষার তারিখটা জেনে নিল । সাহস করে অফিসে ঢুকল । কাউন্টারের ভেতর কয়েক জন বসে আছে । অনুরাধা এক জনকে জিঞ্জেস করল- দাদা তমাল দা কে কোথায় পাওয়া যাবে ?
লোকটি জানতে চাইল -কোন তমাল দা ?
প্রতিভা বলল- তমাল হাসান । কলেজের দ্বিতীয় বর্ষ অনার্সে পড়ে ।
লোকটি বলল- ও আচ্ছা আমাদের কলেজের এজিএস তমাল ভাই । যান দোতলায় ছাত্র সংসদ কার্যালযে পেতে পারেন। সিড়ি দিয়ে উপরে বা দিকে ।
অফিস কক্ষ থেকে বের হয়ে তারা সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে এল। বাদিকে উপরে তাকাতেই চোখে পড়ল ছাত্র সংসদ কার্যালয়। অনুরাধা কক্ষে উঁকি দিল। ঐতো তমাল দা সবার মাঝে বসে আছে। পাশে প্রেম সহ কয়েক জন।
অনুরাধা ডাকল- তমাল দা।
ডাক শুনে সবাই পেছন ফিরে তাকাল। তমাল অনুরাধাকে দেখতে পেয়ে বলে উঠল -আরে অনুরাধা তুমি ?
তোমরা বস আমি আসছি বলে প্রেমকে নিয়ে বাইরে বেড়িয়ে এল। প্রতিভা বাইরে বরান্দায় পায়চারী দিচ্ছে। তমালকে দেথতে পেয়ে তার ভেতর এক আনন্দের শিহরন ঝিলিক দিয়ে উঠল। প্রতিভা চুপ করে রইল। কপট অভিমানে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইল ।
তমাল শুধাল -কেমন আছ প্রতিভা ?
প্রতিভা আস্তে করে জবাব দিল -ভাল।
চার জন নিচে নেমে এল। তমাল কলেজ কেন্টিনের দিকে পা বাড়াল। কেন্টিনের এক কোনে এসে বসল।
প্রতিভা মুখ খুলল- তমাল দা আমরা আজ আসব আপনিতো তা জানতেন। তাহলে সংসদে বসে ছিলেন কেন ?
তমাল জবাব দিল -তা জানতাম। সত্যি কথা কি তোমাদের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম । স্যরি ।
আপনি কলেজের নির্বাচিত এজিএস এ কথাওতো আমাদের বলেন নি।
তমাল জবাব দিল -বললে কি করতে ? আমাদের সাথে মিশতে না এইতো ?
অনুরাধা বলল-না না তা নয় দাদা। অন্যের মুখ থেকে জানলাম তো তাই প্রতিভার একটু অভিমান হয়েছে।
আলাপে পরিবেশ অনেক হালকা হয়ে এল। জানা গেল প্রতিভা বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। বাবা ব্যবসায়ী সুখী পরিবার। অনুরাধারা দুই ভাই একমাত্র বোন। অনুরাধা সবার ছোট। দুই ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে।

এভাবে কেটে গেল দুইটি বছর। পদ্মা মেঘনা যমুনার জল অনেক গড়িয়েছে। এইচ এসসি পরীক্ষা শেষ হয়েছে আড়াই মাস আগে। তমালদের অনার্স ফাইনাল শেষ হয়েছে অনেক আগেই। ফলাফলের অপেক্ষা। ইতো মধ্যে তমাল উচ্চশিক্ষা বৃত্তির জন্য কানাডায় আবেদন করেছে। বৃত্তিটা পেলে পড়াশোনার জন্য কানাডা যাবে। এইচ এসসি পরীক্ষার পর আর প্রতিভার সাথে দেখা নেই।

আজ এইচ এসসি পরীক্ষার ফল বেরোবে। কি এক অভিমানে আজ তমাল কলেজ মুখো হয় নি। বাসায় তার ঘরে বিছানায় শুয়ে শুয়ে রবীন্দ্রনাথের যোগাযোগ উপন্যাসে চোখ বুলাচ্ছে। উপন্যাসের অক্ষর গুলো বার বার প্রতিভার মুখ হয়ে ফুটে উঠছে।

বেলা তখন বারটা। গেট দিয়ে মনে হলো কয়েক জন ঢুকল। তমালদের বাড়ীটি প্রায় এক বিঘা জমির উপর। চারপাশে ইটের দেয়াল। ভেতরে বাবার যত্নে গড়া আম, কাঠাল ,জাম, লিচু ,জলপাই, পিয়ারা আর নারকেল গাছ। দক্ষিন কোনে লেবু,করমচা, জামরুল, তেজপাতা,এলাচ,দারুচিনি গাছ। এত বড় বাড়ীতে দুটি মাত্র টিনশেড সেমিপাকা ঘর। একটিতে বাবা মা আর ছোট বোন অন্য ঘরটিতে থাকে তমাল। তমালের ঘরটি মাঝারি আকারের । কোন কক্ষ নেই । উভয় ঘরেই বিশাল বারান্দা। বাড়ীর ভেতর বেশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। ছিম ছাম। বাবা মায়ের ঘরের বরান্দার এক পাশে রান্না ঘর ও খাবার টেবিল। তমালের ঘরটি বেশ গোছানো। উত্তর দিকে সোফাসেট, দুটো সোকেস, একটি ওয়ার্ডরোভ, একটি কাঠের আলমারী । সোকেসের একটিতে বই অন্যটিতে তমালের খেলোয়ারী জীবনে পাওয়া বিভিন্ন উপহার সামগ্রী। এক কোনায় পড়ার টেবিল পাশে বেতের তৈরী বুক সেলফ। দক্ষিন পাশে খাট পাতা।

তমা ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলল -ভাইয়া দেখ কে এসেছে । তমাল বিছানা থেকে উঠে বসল । হাতের বইটা বন্ধ করে বালিশের পাশে রাখল । তাকিয়ে দেখল তমার পিছু পিছু সাথী, প্রতিভা আর অনুরাধা ঘরে ঢুকছে। প্রতিভার মুখটা ভার ভার । কোন কথা বলছেনা । মনে হচ্ছে অভিমানে বুকটা ফেটে যাচ্ছে ।
তমাল দ্রুত তাদের বসতে বলল । সাথী আর অনুরাধা সোফায় গিয়ে বসে পড়ল। প্রতিভা ঘরের চার পাশটা খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগল। সোকেসের সামনে দাড়িয়ে তমালের পাওয়া উপহার সামগ্রীর দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকল। তার পর আস্তে আস্তে কোনার দিকে এগিয়ে গেল । পড়ার টেবিলটায় কতক্ষন হাতাল । চেয়ারে বসে টেবিলে মাথাটা রাখল ।
অনুরাধা রসিকতা করে বলল- কিরে প্রতিভা টেবিলটা এতই যদি তোর পছন্দ তবে টেবিলের মালিককে সাড়া জীবনের জন্য আপন করে নিলেই তো পারিস।
প্রতিভা জবাব দিল- চাইলেই কি সব পাওয়া যায় ? বলেই প্রতিভা মুখ ঢেকে ফুঁফিয়ে কেঁদে উঠল।
তমাল কি করবে কি বলবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। তমা ট্রেতে করে কিছু মিষ্টি নিয়ে ঘরে ঢুকল। সবাইকে পরিবেশন করল। প্রতিভা মিষ্টিটায় হাত লাগাল না্‌।
অনুরাধা বলল- তমাল দা আপনি নিজ হাতে না খাওয়ালে অভিমানির মান ভাঙ্গবেনা ।
তমাল এগিয়ে গেল্‌ কাঁটা চামচে একটা মিষ্টি তুলে প্রতিভার সামনে ধরল। প্রতিভা তমালের কোমরে মাথাটা ঠেকিয়ে কাঁদতে শুরু করল। তমাল অপ্রস্তুত হয়ে গেল। আলতু করে হাতটা প্রতিভার মাথায় পরম মমতায় বুলিয়ে দিল।
মা ঘরে এল। সবাইকে দুপুরের খাবারের আমন্ত্রন জানাল। খাওয়া শেষে বিকালের ট্রেনে প্রতিভা অনুরাধা চলে গেল।

প্রতিভা অনুরাধা কলেজে অনার্স কোর্সে ভর্তি হল। মাঝে মাঝে তমালের খোঁজে বাসায় আসে। গল্প করে চলে যায। তমালের পরীক্ষার ফল বেড়িয়েছে। মাষ্টার্স কোর্সে ভর্তির পালা। সময় সুযোগে কলেজে ঢু মারে। প্রতিভার সাথে দেখা হয়।

ছয় মাস পরের ঘটনা। বেশ কিছ দিন যাবত প্রতিভা কলেজে আসছেনা। অনুরাধার ও দেখা পাওয়া যায় না। প্রতিভার খোঁজে তমাল কলেজে গেল। সাথীর কাছে জানতে পারল প্রতিভার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। এক সপ্তাহ পর অনুরাধা তমালদের বাসায় এল। তমালের হাতে একটা খাম ধরিয়ে দিয়ে বলল- দাদা প্রতিভার বিয়ে হয়ে গেছে গত সোমবার। বরের বাড়ী নারায়নগঞ্জ। বরের হোসিয়ারীর ব্যবসা। বিয়ের আগের কয়েক দিন আপনাকে ¯স্বরণ করে অনেক কেঁদেছে । এই খামটা আপনাকে পৌছে দিতে বলেছে । তমাল খামটা হাতে নিয়ে বোবার মত বসে রইল।

দীর্ঘক্ষন পর নিজকে সামলে নিয়ে আস্তে আস্তে খামটা খুলল। খামের ভেতর বিশাল একটি চিঠি। লেখা গুলি মুক্তার দানার মত। মানুষের হাতের লেখা এত সুন্দর হয় চিঠিটা না দেখলে তমাল কখনো বিশ্বাস করত না। প্রতিভা অনেক যত্নে অনেক আদরে লিখেছে তা বুঝা যায়। তমাল চিঠিটা পড়তে শুরু করল।

তমাল দা,
আমায় ক্ষমা করবেন। আমার পত্রটা যখন আপনার হাতে পৌঁছবে তখন আমি অনেক দুরে। বিগত প্রায় তিনটি বছর মনের সাথে, পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুশাসনের সাথে অনেক যুদ্ধ করেছি । শেষ পর্যন্ত পারলাম না । পারলাম না ধর্মের বেড়া জাল ছিড়তে। পারলাম না বাবা মায়ের মনে আঘাত দিতে। তাদের স্নেহ মমতার কাছে নিজের সুখ, আশা-আকাঙখাকে বলি দিতে বাধ্য হলাম।
আপনার কি মনে পড়ে রাবানের মেলায় সেই প্রথম দেখা হবার কথা ? মেলায় ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত আমরা দুজন বসে ছিলাম পুকুর ঘাটে । আপনারা এসে বসে ছিলেন বৈষ্ণব আখড়ার বিশ্রাম খানায়। আপনি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলেন আমাদের দিকে। আমার মনে হয়ে ছিল আপনি যেন ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছেন আমাকে । আবার জিলেপী দোকানে আমরা দুজন জিলেপী খাচ্ছিলাম । আপনারা এসে বসলেন আমাদের পাশে । বার বার আড়ালে আবডালে আপনাকে দেখছিলাম খুটিয়ে খুটিয়ে। আপনাকে দেখে সে যে কি ভাল লেগে ছিল। মনে হয়ে ছিল আপনি যেন আমার কত চেনা। ইচ্ছে হয়ে ছিল গরম জিলেপী আপনাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিই। কি এক মাদকতা যেন আমাকে পেয়ে বসে ছিল। মেলা থেকে চলে যাই যাই করেও যাওয়া হচ্ছিল না। দুর থেকে বার বার আপনাকে দেখতে চেষ্টা করেছি। বিকেল পাঁচটায় আপনারা যখন সাইকেলে চড়ে রওয়ান হয়ে ছিলেন। ইচ্ছে করে ছিল আপনার সাইকেলের পেছনে বসে আপনাকে জড়িয়ে ধরে চলে যাই আপনার সাথে। বাসায় ফিরে সে দিন সারা রাত ঘুমুতে পারিনি। বার বার আপনার সেই মুখটি চোখের সামনে ভেসে উঠে ছিল। অজানা অচেনা এক মানুষের জন্য মনটা বার বার হাহাকার করে উঠত।

প্রথম দিন কলেজে ঢুকে সেই আপনাকে আবার দেখলাম। মনটা আনন্দে নেচে উঠে ছিল। ফরম জমা দিতে আপনি চলে যাবার পর প্রেম দার কাছে আপনার নামটা জানলাম। নামটা শুনার পর আতকে উঠেছিলাম। মনে মনে
বলে ছিলাম পোড়া কপালি তোর কপাল পোড়ল বলে। তার পরও জেনে শুনে বিষ পান করে ছিলাম। আমি আপনার প্রেমে পরে গেলাম। যা আপনাকে আমার মুখ ফুটে কোন দিন বলা হয়নি। ফরম জমা দিয়ে আপনি এলেন। আমরা কলেজ দর্শনের ছুতায় আপনার সঙ্গ কামনা করে ছিলাম। কি যে ভাল লেগেছিল বলে বুঝানো যাবেনা। পুকুর ঘাটে এসে ইচ্ছে করেই আমি ঘাটের বেঞ্চিতে গিয়ে বসে ছিলাম। আরো কিছুক্ষন আপনার সঙ্গ পাবার আশায়। আপনার কাজ থাকতে পারে সে কথা এক বার ও মনে পড়েনি। এক সময় জলে আপনার ছায়া চোখে পড়ে গেল। নেমে গেলাম জলের কাছে। ছুয়ে দিলাম আমার দযিতার মুখ। আমার আরাধ্য দেবতার চরন।

ষ্টেশনে এসে ট্রেনে উঠলাম। মন পড়ে রইল আপনার কাছে। ট্রেন ছেড়ে দিল জানালায় মাথা গলিয়ে বার বার আপনাকে দেখতে চেষ্টা করলাম। ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বাড়ী ফিরলাম। দ্বিতীয দিন কলেজে এসে আপনাকে দেখতে না পেয়ে অনেক কষ্ট পেয়ে ছিলাম। মনে মনে প্রতিঞ্জা করেছিলাম আপনাকে না পেলে এ কলেজেই ভর্তি হব না। খুঁজে আপনাকে পেলাম মনটা ভাল হয়ে গেল।

কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সকালের প্রথম ক্রীড়া একশ মিটার দৌড়। আপনি দৌড়াচ্ছেন। সবাইকে পেছনে ফেলে আপনি প্রথম হয়ে গেলেন। আমার সে কি আনন্দ। ইচ্ছে করেছিল দৌড়ে গিয়ে আপনাকে জড়িয়ে ধরে--------ভরিয়ে দেই। একে একে সবগুলো খেলায় আপনি প্রথম হয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ছিলেন। ট্রেন এসে পড়ায় পুরস্কার পর্বটা আর দেখা হয়নি। পর দিন আপনি আমাকে একটা ক্রেষ্ট দিয়ে ছিলেন। যা আমি আজও সযতনে তুলে রেখেছি।

পরীক্ষার পর তিন মাস কলেজে যাওয়া হয় নি। আপনাকে দেখতে না পেয়ে কি দুঃসহ যাতনায় যে কাটিয়েছি। জলের মাছ যেমন ডাঙ্গায় তুললে ছটফট করে আমিও তেমনি সারাক্ষন ছটফট করেছি। রাধা বিনুদীনির মত মনে হয়েছে-ঘর কইনু বাহির, বাহির কইনু ঘর। পর কইনু আপন, আপন কইনু পর।
মাঝে মাঝে রাগ হতো আপনি কেন ছলছুতোই আমাকে দেখতে আসেন না। আবার নিজকে নিজেই প্রভুত দিতাম সে তো আর আমার ভাল বাসার কথা জানে না। সে তো আর আমায় আমার মত করে ভাল বাসে নাই। সারাক্ষন কৃষ্ণ বিরহে রাধার মতো-দুহু করে দুহু কাঁদে বিছেদ ভাবিয়া, আধ তিল না দেখিলে যায় যে মরিয়া।

পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিন কলেজে এসে আপনাকে খুজে পেলাম না। ভাল ফল করেও মনে কোন আনন্দ হল না। সাথীকে নিয়ে আপনাদের বাড়ী গেলাম। আপনি বাড়ী আছেন শুনে মনটায় আনন্দ ঝিলিক দিল। আপনাকে ঘরে বসে থাকতে দেখে অভিমানে বুকটা আবার ভরে উঠে ছিল। আপনার ঘরে ঢুকে আপনার ঘরের পরিপাটি দেখে অভিভুত হয়ে গেলাম। কোন পুরুষ ছেলের ঘর এমন পরিপাটি হয় তা আপনার ঘর না দেখলে আমি বিশ্বাস করতাম না। আপনার বিভিন্ন খেলার উপহার সামগ্রী দেখে মনে মনে বলে ছিলাম এই হচ্ছে আমার। একান্তই আমার ভাল বাসার মানুষটির । আপনার পড়ার টেবিলে বসে মনে হয়ে ছিল এ যেন আমার চির চেনা । আমার আরাধনার ধন । অনেক শান্তি অনেক তৃপ্তির স্থান । কিন্তু মনে খচখচ করে কাঁটার মত বিধে ছিল ধর্মের বেড়াজাল । আপনি একটা মিষ্টি নিয়ে আমার পাশে এলেন । তখন নিজকে আর সংবরন করতে পারলাম না । আপনার পরশ পাবার আশায় আপনার গায়ে মাথা ঠেঁকিয়ে দিয়ে ছিলাম। আপনার পরশ পেয়ে কেঁদে উঠে ছিলাম। চোখের জল বাঁধ মানছিল না। আপনি আমার মাথায় হাত রাখলেন। আমার জনম স্বার্থক হল । সকল রাগ সকল অভিমান ধুঁয়ে মুছে সাফ হযে গেল ।

প্রথম পরিচয়ের দিন থেকে আজ অবধি আপনাকে ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারছি না। এই পোড়া দেহটা হয়ত অন্য কারো ভোগবিলাশের সামগ্রী হবে তবে মনটা পড়ে থাকবে আপনার কাছে আপনারই চরনে।
ইতি,

হতভাগি
প্রতিভা।
তমাল চিঠিটা কয়েক বার পড়ল । আকাশের রঙটা কেমন যেন বদলে গেছে । বাতাসে ধোঁয়া ধোঁয়া ভাব । গাছ গুলো মলিন বিবর্ন । সবুজ যেন কোথায় হারিয়ে গেছে । চিঠিটা ভাঁজ করে ডাইরিটার ভেতর সযতনে রাখল । তমালের বারবার কবি গুরুর শেষ জীবনের লেখা কবিতার কয়েকটি লাইন মনে পড়তে লাগল-
রূপ নারায়নের কুলে
জেগে উঠিলাম
জানিলাম এ জগৎ
স্বপ্ন নয় ।
রক্তের অক্ষরে দেখিলাম
আপনার রূপ
চিনিলাম আপনারে
আঘাতে আঘাতে
বেদনায় বেদনায়
সত্যযে কঠিন
কঠিনেরে ভাল বাসিলাম-

তমালের কানাডার বৃত্তিটা হয়েছে। মা, বাবা আত্নীয়পরিজনের সকল বাধা নিষেধ উপেক্ষা করে কানাডার পথে পাড়ি জমিয়েছে। আর কেউ না জানুক তমালের মা বুঝে গেছে তমাল আর কোন দিন দেশে ফিরবে না
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
বশির আহমেদ ভাই খন্দকার আনিছুর রহমান জ্যুতি আপনার সুন্দর মন্তব্য ও মূল্যায়নের জন্য অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ । গল্পটির সার্বিক ঘটনা প্রবাহ যথাযথ রাখতে গিয়ে আর ছোট করা সম্ভব ছিল না । ভবিষ্যতে আপনার মতামত স্বরণ রাখতে চেষ্টা করবো ।
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি খুব ভালো গল্প বনর্না এবং ভাষা প্রাঞ্জল .....এক কথায় শুখপাঠ্য....তবে গল্পের পরিধি আর একটু ছোট করা গেলে ভালো হতো।....বশির আহম্মেদ ভাই আপনাকে অশেষ ধন্যবাদের সহিত মূল্যায়ন করলাম...৫
বশির আহমেদ রোদের ছাযা আপনার পরামর্শ আমার ভবিষ্যতের পাথেয় হয়ে থাকবে । সুচিন্তিত মতামতের জন্য ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা ।
বশির আহমেদ ভাই বিষন্ন সুমন আপনার ভাল লাগায় আমি যারপর নাই ধন্য । আপনাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা ।
রোদের ছায়া রোমান্টিক গল্প পড়তে ভালো লাগে ........ধর্মের বেড়াজাল অনেক সম্পর্কের বিনাশ ঘটে এটাই যেন রীতি হয়ে দাড়িয়েছে , তবে পাঠককে নতুন কিছু দিতে পারতেন লেখক .........গল্পের শেষ টুকু একটু অন্য রকম হলে আরো ভালো লাগত কিনা ভাবছি... ভোট করলাম উপরের দিকেই .
বিষণ্ন সুমন গ্রামীন পটভূমিতে বেশ রোমান্টিক গল্প । তবে লিখায় ওপাড় বাংলার কিছুটা ছাপ পেলাম । বর্ণনা শৈলীর গতিময়তার জন্য এক নিশ্বাসে পরে নেবার পর মনে হলো শেষটা একটু অন্য রকম হতে পারত । ধন্যবাদ বশির ভাই ।
বশির আহমেদ আহমাদ মুকুল ভাই দেরীতে হলেও আপনি আমার গল্পটি পড়েছেন দেখে খুব খুশি লাগছে ।
বশির আহমেদ ধন্যবাদ আবু ওয়াফা মো: মুফতি ।
বশির আহমেদ সেলিনা ইসলাম আপনাকেও শুভেচ্ছা ।
আহমাদ মুকুল দারুন মুন্সিয়ানায় লেখা গল্প। ভাল না লেগে পারে?

০৭ এপ্রিল - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৩৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪