স্বপ্নভঙ্গ

বর্ষা (আগষ্ট ২০১১)

বশির আহমেদ
  • ১৮
  • 0
চৈত্রসংক্রান্তির পর হতে আজ প্রায় পনের দিন । কোন বৃষ্টি নেই। বাইরে কাঠফাটা রোদ । মাঠঘাট ফেটে চৌচির । উপর আকাশে মাঝেমধ্যে দুএকটি সাদা মেঘের টুকরো দক্ষিন থেকে উত্তর দিকে ভেসে যাচ্ছে । জালু ক্ষেতে নিড়ানী দিতে দিতে ঘেমে ভিজে শেষ । সারা গা থেকে নুনাজল বেয়ে বেয়ে মালকুচা মারা লুংগিটা ভিজে শরীরের সাথে লেপ্টে আছে । মনে হচ্ছে সে যেন এই মাত্র পুকুর থেকে ডুব দিযে এসেছে । কচি কচি ধানপাট গুলো কেমন যেন মিয়ে যাচ্ছে । ভাবনায় পড়ে গেল জালু । সহসা বৃষ্টি না হলে ধান পাট ভাল হবেনা । জালু মনে মনে ভেবে রেখেছে এবার পাট বিক্রি করে ফাতুকে বিয়ে করে ঘরে তুলবে । ফাতু তাদের গ্রামেরই মেয়ে । ছোট বেলা থেকে ফাতুকে তার পছন্দ । শৈশবে যখন আম কুড়াতে যেত তখন ফাতু জালুর পাশে পাশে থাকত । ফাতু আম কুড়িয়ে নিজে না রেখে জালুকে দিত । আবার জালু যখন তেতুল গাছ থেকে তেুতুল পেড়ে আনত তখন জালু ফাতুকে দিত । ছোট কাল তেকেই দুজনের মাঝে বেশ ভাব । ফাতু জঙ্গল থেকে দল কলসের ফুল তুলে এনে মালা গেথে জালুকে পড়িয়ে দিত । নিজেদের গাছের বড়ই, আম, জাম সবার অলক্ষ্যে জালুকে এনে খাওযাত । পাড়ার সবার সাথে শালুক কুড়াতে গেলে ফাতু জালুর কাছা কাছি থাকত । আড়লে আবডালে জালুর গায়ে চিমটি কাটত । জালু তারা করলে খিল খিল করে হাসত । হাসলে ফাতুর গালে টোল পড়ে । জালুর খুব ভাল লাগে । জালুর শত অত্যাচারেও ফাতু কখনো ওহ শব্দটিও করেনা । এভাবে দিনে দিনে তারা বড় হয়ে উঠল । ফাতু এখন অনেক বড় হয়েছে। আগের মত আর যখন তখন ঘরের বাইরে যেতে পারেনা । ফাতু ফর্সা না হলেও দেখতে বেশ সুন্দর হয়ে উঠেছে । চার দিকে সবার নজর যায় তার উপর । মাঝে মাঝে সখী মিনাকে নিয়ে এবাড়ী ওবাড়ী ঘুরতে বের হয । ফাতুর আসল উদ্দ্যেশ্য জালুদের বাড়ী । প্রায় প্রতিদিন ঘুরতে বেড়িয়ে জালুর মায়ের কাছে গিয়ে বসে । গল্পের ছলে জালুর মায়ের এটা ওটায় হাত লাগায । জালু বাড়ী থাকলে ঠাট্টার ছলে দুজনের কথা হয় । চোখা চোখিসহ ভাব বিনিময় হয়। মাঝে মাঝে মিনার মাধ্যমে তার মনের কথা জানায় । ফাতু তার বাবা মায়ের এক মাত্র সন্তান । জমি জিরাত যা আছে তাতে তাদের সংসার ভাল ভাবেই চলে যায়। জালুও বাপ মরা মায়ের এক মাত্র সন্তান । বাবা মারা যাওয়ার পর মা জালুকে অনেক কষ্টে লালন পালন করে বড় করেছে । স্কুলে দুই ক্লাস পর্যন্ত পড়েছে । বাবা মারা যাওয়ায় আর স্কুলে যাওয়া হয়নি । মাকে নিয়ে বাবার রেখে যাওয়া জমিতে ফসল ফলায় । তাতে মা ছেলের মোটমুটি চলে যায় । প্রায় এক মাসপর দুপুর থেকে ঊত্তরাকাশে মেঘ জমতে শুরু করল। সন্ধ্যার আগ মহূর্তে কাল বৈশাখী ঝড় বৃষ্টি শুরু হলো । ঘন্টাখানেক বর্ষনের পর তপ্ত মাঠ হতে সুধা মাটির মৌ মৌ গন্ধে চারিদিক ভরে উঠলো । দেখতে দেখতে কয়েক দিনের মধ্যে দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ সবুজে সবুজে ছেয়ে গেল । পাট গাছ গুলো লক লক করে বেড়ে উঠতে লাগল । ক্ষেতের পানে তাকিয়ে জালুর মন ভরে
উঠল । জালু মনে মনে ভাবে পাট বিক্রির টাকা দিয়ে নতুন একটা ঘর বানাবে । আগামী অগ্রানে নবান্নের পর ফাতুকে বউ করে ঘরে তুলবে । দেখতে দেখতে বর্ষা এসে গেল । নদীতে বন্যার পানি বাড়তে শুরু করল । নদী ছাপিয়ে বানের পানি মাঠে ঢুকতে শুরু করেছে । টানা সাতদিন ধরে অভিরাম বৃষ্টি হচ্ছে । ঘর থেকে বেড় হওয়া মুসকিল । ফাতু একদিন আর জালুদের বাড়ীতে আসেনি । ফাতুকে দেখতে না পেয়ে জালুর মনটা কেমন যেন আকুপাকু করে
উঠছে । অগত্যা কোদাল খুজার ছুতায় জালু ফাতুদের বাড়ী এসে ঢুকল । ফাতুর বাবা জালুকে ঘরে বসতে দিয়ে ফাতুকে ডাকল- মা ফাতেমা তোর জালু ভাইকে কোদালটা এনে দে তো মা । ফাতু বৃষ্টিতে ভিজে গোয়াল ঘর থেকে কোদাল এনে দুয়ারের কাছে রাখল । জালু কোদাল নিয়ে চলে যেতে উদ্যত হলে ফাতু বলল- জালু ভাই বস । একটু সীমের বিচি ও বাদাম ভাজা মুখে দিয়ে যাও । বলেই একটি বাটিতে কিছু সীম বিচি ভাজা এনে সামনে রাখল । এমন বাদলা দিনে সীম বিচি ভাজা খেতে অনেক মজা । জালু আর ফাতুর বাবা সীম বিচি ভাজা খেতে শুরু করল । খেতে খেতে ফাতুর বাবা বলল জালু মিয়া তোমার জমিতে পাটতো দেখছি মাশাল্লা ভালই হয়েছে । মনে হয় মিয়া তুমি এবার চল্লিশ পঞ্চাশ মন পাট পাবা । জালু বলল কাকা দোয় কইরেন ।যেন সময় মত পাট গুলো কাটতে পারি । ইতোমধ্যে ফাতু রান্না ঘর থেকে অনেক গুলো বাদাম ভেজে একটি পুটলি বেধে জালুর হাতে দিয়ে বলল-জালু ভাই বাদাম গুলি চাচীরে দিলাম । তুমি নিয়া যাও । বৃষ্টিতে ভিজাইও না কিন্তু । ঘরে তো ছাতা মাথলা কিছু নাই তাই দিতে পারলাম না । জালু কোদালটা একহাতে ও বাদামের পোটলাটা লুঙ্গির ভাজে লুকিয়ে যাই কাকা বলে দৌড় দিল । ফাতু এক দৃষ্টে জালুর গমন পথের দিকে তাকিয়ে রইল । বর্ষার ঢলে বন্যার পানি ক্রমে বাড়ছে । মাঠে পাট ক্ষেতে পানি ঢুকতে শুরু করেছে । নতুন পানি পেয়ে পাট যেন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে । সাত দিনের মাথায় জালুর পাট ক্ষেতে কোমর পানি হয়ে গেল । এখন পাট কাটা না হলে গাছের গোড়ায় গুটি হয়ে পাট নষ্ট হয়ে যাবে । জালু পাশের বাড়ীর সুলতান আর মতিকে পাট কেটে দেবার জন্য বায়না করে এসেছে । বিকাল থেকে জালু পাট কাটার দা ধাঁর দিতে শুরু করল । পরদিন খুব ভোরে তিন জন পাট কাটতে শুরু করল । পাট কেটে জাঁকদিয়ে তারা পানি থেকে উঠে এল । পাট পচার এ কয় দিন হাতে কোন কাজ নেই । জালুর প্রিয় দোস্ত মজনু । মজনু প্রায়ই জমিতে ফলানু আদা রসুন, হলুদ নিয়ে গঞ্জের হাটে যায় । জালু কোন দিন গঞ্জে যায়নি । বেশ কিছুদিন যাবত জালু ভাকছে সে মজনুর সাথে গঞ্জে যাবে । গ্রামের অনেকের কাছে শুনেছে গঞ্জে নাকি অনেক কিছু দেখার আছে । যাত্রা পালার মত পর্দায় নাকি জীবন্ত ছবি দেখা যায় । বেশ কিছু দিনে অল্প অল্প করে টাকা জমিয়েছে । মার জন্য শাড়ী ও ফাতুর জন্য রঙিন ফিতা, লাল চুড়ি, আলতা আনবে বলে মনে মনে স্থির করে রেখেছে । বেশ গরম পড়েছে জালু ঘর থেকে বাইরে এসে গাছ তলায় বসল । দক্ষিনা বাতাসে চোখে তন্দ্রা এসে গেল । মাথার গামছাটা বিছিয়ে শুয়ে পড়ল । কখন ঘুমিয়ে পরেছে জানেনা । জালু দেখতে পাচ্ছে একটা ময়ুর পক্ষী নাও এসে জালুর সামনে ভিরেছে । জালু ফাতুকে নিয়ে নাওয়ে উঠে পড়েছে । নাও এগিয়ে চলছে সাতসমুদ্র তের নদী পাড়ি দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে । হঠাৎ একটি দৈত্য এসে ফাতুকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে । ফাতু চিৎকার করছে আর বলছে জালু ভাই আমাকে বাচাও বাচাও । জালু ভাই কি ঘুমিয়েছ ? অ জালু ভাই, জালু ভাই । কে ? কে ? বলে জালু ধরমর করে উঠে বসল । আমি, আমি মিনা । অ তুই । কিরে মিনা কি খবর ? জালু ভাই তুমি নাকি গঞ্জে যাইবা ? তোকে কে বলল ? হুনছি একখান থেকে । বলত কথাটা ঠিক কিনা ? হ কথাটা ঠিকই হুনছস । ফাতু এই কয়ডা টাকা তোমারে দিতে কইছে । কেন রে ? গঞ্জে থেকে তার জন্য দুইডা ছিক্কা আইনা দিতে কইছে । ছিক্কা কেনরে ? তোরা পাট দিয়া ছিক্কা বানাইতে পারস না ? দুর বোকা তুমি কিছু বুঝনা । এই ছিক্কা সেই ছিক্কা না । তবে কি ? এইডা হল গিয়া বেলাউজের নিচে পড়নের ছিক্কা । দুইটা আনবা । দুই রঙয়ের । একটা সাদা আর একটা কালা । বলেই মিনা টাকাটা রেখে দৌড়ে পালাল । জালু কোন দিন এই ছিক্কা দেখেনি । কি দাম কোথায কিনতে পাওয়া যায় তাও জানেনা । সে ভাবনায় পড়ে গেল । লজ্জায় কাউকে জিজ্ঞেস ও করতে পারছেনা । শুনলে সবাই হাসি ঠাট্টা করবে । প্রতি বুধবার সকাল থেকে গঞ্জের হাট বসে । মজনুর সাথে সকাল সকাল বেড়িয়ে পড়ল । মজনু এক ঝাপি হলুদ নিয়েছে । জালুর মাথায় বার বার ফাতুর ছিক্কা কেনার কথাটা ঘুরপাক খাচ্ছে । রেল লাইন দিয়ে তারা হেটে যাচ্ছে । সে ভাবছে মজনুকে কথাটা বললে কেমন হয় । সে বিয়ে করা পুরুষ সে নিশ্চয় তার দাম ও কোথায় পাওয়া যায় তা জানে । কিন্তু মজনুকে কথাটা বলবে কেমন
করে । মজনু কি ভাববে সে আবার ঠাট্টা করবে নাতো ? শেষ পর্যন্ত লজ্জার মাথা খেয়ে মজনুকে কথাটা বলেই ফেলল । মজনু বলল দুর বোকা এতে এত লজ্জা পাচ্ছিস কেন ? আজ কালকের যুগে সব যুবতী মেয়েরা এই ছিক্কা অর্থাৎ ব্রেসিয়ার পড়ে । তোর ভাবীও তো পড়ে । আমিতো প্রায়ই তাকে কিনে দেই । বিয়ের পর তোর বউকে তো তোর ই কিনে দিতে হবে । এ নিয়ে চিন্তা করিসনা আমি তোকে দেখিয়ে দেব । শুণে জালুর মাথা থেকে বিরাট একটা বোঝা যেন নেমে গেল । ছোট্র নদীটা পার হয়ে গঞ্জের হাটে যখন পৌছাল বেল তখন প্রায় এগারটা । মজনু এক ঝাপি হলুদ তিরিশ টাকায় বিক্রি করে দিয়ে জালুকে নিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে সিনেমা হলের সামনে এল । বিরাট একটি ঘর লোকে লোকারন্য । মানুষ লাইন ধরে দাড়িয়ে আছে । মজনু গিয়ে লাইনে দাড়িয়ে পড়ল । জালুকে বলল তুই ঝাপিটা হাতে নিয়ে ঐ দোকানের সামনে দাড়া । বেশ কিছুক্ষন অপেক্ষার পর মজনু বারটার সো এর দুটি টিকেট হাতে নিয়ে এসে বলল আয় ঝাপিটা হোটেলে রেখে আসি । সিনেমা হল থেকে তারা যখন বেড় হল বেলা তখন তিনটা । জালুর খুব ক্ষিধা পেয়েছে । মজনু জালুকে নিয়ে ঝাপি রাখা হোটেলে ঢুকে পড়ল । টাকি মাছের ভর্তা,গরুর মাংস আর ডাল দিয়ে তারা খাবার সারল । দুজনের খেতেই দশ টাকা চলে গেল । জালু ভাবতে লাগল দশ টাকায় তার সংসারে সাতদিন চলে যায় আর গঞ্জে এক বেলা খেতে দশ টাকা । সে মনে মনে বলতে থাকে আগামীতে এলে বাড়ী থেকে খাবার নিয়ে আসবে । হোটেল থেকে বেড়িয়ে তারা বাজার করতে দোকানে ঢুকল । জালু ফাতুর জন্য ছিক্কা ছাড়াও চুরি, ফিতা আলতা কিনল । মায়ের জন্য সাত টাকা দিয়ে একটি শাড়ী কিনে বাড়ীর দিকে রওয়ানা দিল । তারা যখন গ্রামে এসে পৌছাল তখন রাত হয়ে গেছে । উঠানে পা দিয়েই দেখতে পেল তার ঘরের সামনে অনেক মানুষের ভীড় । ঘরে দেখতে পেল তার মাকে ঘিরে বসে আছে ফাতু, মিনা, ফাতুর মা, দেলু চাচী সহ অনেকে । জালুকে দেখেই সবাই বলতে শুরু করল এত দেরী করে ফিরলে বাবা তোর মা বার বার তুকে খুজছে । জালু জানতে চাইল কি হয়েছে মার ? দৌড়ে মায়ের কাছে গেল । কি হয়েছে বল কি হয়েছে মা ? তার মা কোন কথা বলছেনা শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে । জানা গেল দুপুরে গোসল শেষে কাপড় পাল্টাতে যাবে এমন সময় মাথা ঘুরে পড়ে গেল । মুখ দিয়ে ফেনা বের হতে শুরু করল । সোনা মোল্লার কাছ থেকে পানি পড়া ও হালিম কবিরাজের ঔষধ দেওয়া হয়েছে কোন কাজ হচ্ছেনা । জালু আর দেরী না করে সাধন ডাক্তারকে ডাকতে চলে গেল । ডাক্তার নিয়ে যখন বাড়ী ফিরল তখন প্রায় মাঝ রাত । ডাক্তার নাড়ী দেখে ঘাবরে গেল । সময় প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। আল্লাকে ডাকুন । দ্রুত ব্যাগ থেকে খুজে একটা ইনজ্কেসান বেড় করে জালুর মাকে পুশ করল । ডাক্তার সবাইকে ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করতে বলল । সারা রাত জমে মানুষে টানাটানি চলল । শেষ মহূর্তে জমেরই জয় হলো জালুর মা সকলের মায়া ত্যাগ করে ভোরে শেষ নিষ্বাস ত্যাগ করল । জালু আজ একা হয়ে গেল । তপ্ত আকাশটা যেন জালুর মাথায় ভেঙ্গে পড়ল । কি করবে কোথায় যাবে কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। কর্মঠ ক্লান্তিহীন কৃষক জালুর শুরু হল ছন্ন ছাড়া জীবন যাপন । নাওয়া খাওয়াহীন সারা দিন পাগলের মত ঘুরে বেড়ায় এদিক ওদিক । ফাতু আর মিনা এসে প্রায়ই রান্না করে দিয়ে যায় । কিন্তু ভাত তরকারী তেমনি পরে থাকে । ঘর, গরু, বাছুর দেখার কেউ নেই । গরুগুলো না খেতে পেয়ে মরার যোগার । জমির ফসল আবর্জনা ও আগাছায় ছেয়ে গেছে । জালু যেন জীবমৃত । জালুর এ অবস্থা দেখে প্রতি বেশীরা সবাই গিয়ে ফাতুর বাবাকে ধরল । তিনি জালুর সাথে ফাতুকে বিয়ে দিতে রাজি হলেন । সবাই মিলে জালুর সংসার বাচানোর লক্ষ্যে মসজিদ থেকে সোনা মোল্লাকে ডেকে এনে ফাতুর সাথে জালুর বিয়ে পড়িয়ে দিলেন । অনানুষ্ঠানে ফাতু আটপৌড়ে পুরানো সুতি শাড়ী পড়ে জালুর ঘরে এসে ঢুকল । জালুর কত আশা ছিল লালটুকটুকে বেনারশী শাড়ী, সোনার চেইনসহ দুগদুগি ছড়া, হাতেবালা, কানে ঝুমকা পড়ে ফাতু ঘোমটা দিয়ে তার ঘরে ঢুকবে । কিন্তু নিয়তির কি খেলা ফাতু তার সংসারে এসেছে ঠিকই কিন্তু আজ তার সেই দেখার মন নেই । জালু যেন আজ কেবলই অবয়বহীন একটি অস্তিত্ত মাত্র । মায়ের মৃত্যুর সাথে সাথে তার সকল আশা, স্বপ্ন, সাধ আহলাদের মৃত্যু ঘটেছে । সময় মত নাওয়া খাওয়া নেই চোখে ঘুম নেই । সারাদিন কি যেন ভাবে । ফাতুর বাবা একদিন জালুকে গঞ্জের বড় ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল । ডাক্তার বলল-জালুর কোন শারীরিক রোগ নেই এটা মানষিক ।একদিন আপনা থেকেই ভাল হয়ে যাবে । তবে তাকে কোন কিছু জোর করে করানো হিতে বিপরীত হবে । ফাতু ভেবে পায়না যে মানুষটা তাকে একদিন না দেখলে উতলা হয়ে যেত সে কিনা আজ তার দিকে ফিরেও তাকায় না । হাতের কাছে পেয়েও তাকে ছুয়ে দেখে না কথা বলে না । মাঝে মাঝে ফাতু গুমড়ে গুমড়ে কেদে উঠে । ঝালুর যা জমি ছিল তা বর্গা দিয়ে যা পায় তাদিয়ে ফাতু সংসারের খরচ চালিয়ে নেয় । এদিকে বর্ষা এসে গেছে । ঘরের পাটশলাকার বেড়া গুলো মেরামত করা দরকার । ফাতুর হাতে কোন নগদ পয়সা নেই । খড় কুটা দিয়ে কোন রকমে বৃষ্টির ঝাপটা থেকে ঘরের মেঝে রক্ষা করে যাচ্ছে । বিকালে ঝম ঝমিয়ে আষাঢ়ে ঢল হয়েছে । এখন গভীর রাত আকাশে কোন মেঘ নেই । বাইরে পুর্নিমার চাঁদ । ফাতু ঘুমিয়ে আছে । চাদেঁর একফালি আলো বেড়ার ফাঁক গলিয়ে ফাতুর মুখে এসে পড়েছে । জালু নির্ঘুম বসে আছে । অনেকক্ষন এক দৃষ্টে ফাতুর মুখের দিকে থাকিয়ে আছে । নিবিড় ভাবে কি যেন দেখছে । একসময় জালু তার একটা হাত ফাতুর মুখের উপর বুলাতে শুরু করল । ফাতুর ঘুম ভেঙ্গে গেল । ফাতু উঠে বসে পড়ল । জালু আচমকা আমার ফাতু বলে জড়িয়ে ধরল । ফাতু পরম মমতায় জালুকে নিবিড় আলিঙ্গনে জড়িয়ে ফেলল । বাইরে আবার ঘন অন্ধকার নেমে এল । ঝম ঝমিয়ে বৃষ্টি শুরু হলো । জালু আর ফাতু বর্ষার বরিষণে সিক্ত হলো ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
খন্দকার নাহিদ হোসেন ভাল লাগলো আপনার গল্পটি। সুন্দর একটা লেখা।
এহছানুল করিম খুব ভালো লাগলো।
Shamson Naher Sima আমাদের আশেপাশের খুব পরিচিত ঘটনা গুলো যখন লেখনীর মাধ্যামে আসে তা কখনো কখনো খুব ভালো হয়.
মিজানুর রহমান রানা বিকালে ঝম ঝমিয়ে আষাঢ়ে ঢল হয়েছে । এখন গভীর রাত আকাশে কোন মেঘ নেই । বাইরে পুর্নিমার চাঁদ । ফাতু ঘুমিয়ে আছে । চাদেঁর একফালি আলো বেড়ার ফাঁক গলিয়ে ফাতুর মুখে এসে পড়েছে ।----------শুভ কামনা
শামীম আরা চৌধুরী শুধু গল্প বলাই হলো । গল্পের অংকরণ রক্ষা হয়নি। তবু ভাল লেগেছে।
sakil বেশ ভালো এবং সুন্দর একটা গ্রামের গল্প পরলাম . বেশ ভালো লাগলো . নিয়মিত লিখবেন . জালু নামটা বেশ . শুভকামনা রইলো .
এম এম এস শাহরিয়ার খুব ভালো লাগলো ......................
মামুন ম. আজিজ ইতাবচক একটা গল্প পড়লাম। বেশ লিখেছেন। ছিক্কা শব্দটা নুতুন শুনলাম। নিয়মিত পড়ারা বাসানা থাকল আপনার গল্পের।

০৭ এপ্রিল - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৩৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪