আমি সোম্য। হৃদয় আমার ভালোবাসা। সময়ের সংলাপগুলো ক্ষয় হতে হতে দীর্ঘ পনের বছর গেলো। এখন শুধু শূন্যতার স্মৃতি হাতড়ে ভালোবাসা খুঁজে মরি। আমাদের ভালোবাসার এখন পূর্ণ যৌবন। সময়ের ডামাডোলে যেদিন এই দেনা পাওনার হিসেবটা শুরু হয়েছিল সেই থেকে বয়স আজ কুড়ি ছুঁই ছুঁই। দিনটি ছিল শুক্লাপঞ্চমী। অক্টোবর ঊনত্রিশ। সেদিন ভালোবাসা ছুঁয়েছিল মনের সকল অভিলাষ। তাই বিধাতাকে সাক্ষী রেখে সবার অলক্ষ্যে মায়ের সিঁদুরের কৌটো থেকে এক চিমটি সিঁদুরে আমার অনামিকা স্পর্শ করেছিল তোমার সিঁথি। মুহূর্তের জন্য গা শিউড়ে উঠল। পঞ্চমীর বাঁকা চাঁদখানা যেন শরতের পূর্ণ আলোয় উদ্ভাসিত। বসন্তের ঝরাপাতাগুলো বিধাতার সাথে সময়ের সাক্ষী হয়ে উলুধ্বনি করল। সিঁদুরের রং লাল। সিঁথির এই লাল রংটায় আমার ভালোবাসাটাকে আজো বাঁচিয়ে রেখেছে।
পথ বেঁধে দিলো বন্ধনহীন গ্রন্থি, আমরা দু’জন চলতি হাওয়ার পন্থি। অতঃপর ভালোবাসা এগিয়ে চললো সময়ের হাত ধরে। হাতে হাত, চোখে চোখ, কখনও মনের অমিল। আবার সামিল হয়েছি মানে অভিমানে, রাগে অনুরাগে। এই আপেক্ষিক ঘ্রাণশক্তিগুলো হৃদয়কে বড় বেশী করে ভালোবাসতে শিখিয়েছে। অভিমানী কষ্টগুলোকে কখনও নিজের মত করে বলতে পারিনি। কেবল ধারণ করে চলেছি অনুভবে, উপলব্ধির উদাসী ভাবনায়। স্মৃতির সেলুলয়েডে ধরে রাখা সময়ের পরতে পরতে। ভালবাসলে সন্দেহ বাড়ে। তাও সত্য। যেদিন বুঝলাম হৃদয়ের ভালোবাসা দ্বিখণ্ডিত। সৌম্য শুধু একটা অংশের মালিক। খুব কষ্ট হল। কাঁদলাম। ভালোবাসার অংশীদারিত্ব হয় না। হৃদয়ের আত্মসর্মপনের পর অনুভবে উপলব্ধিতে আবারও দু’জনের আত্মাহুতি হলো। ভালোবাসার কিশোর বয়সটা বুঝে নিল এ নিতান্ত মনের ভুল। মনের সাথে মেঘের দূরত্বটা ছিল দু’চোখের মাঝে যে দূরত্ব তার চেয়েও কম। ভালোলাগায় ভালোবাসায় বাহ্যিক দূরত্ব লোপ পায়। দেহের ছোঁয়ায় ভালোবাসা আরও গভীর হয়। কোন পাপবোধ ছিল না বলে আমরা উঠে এসেছি সমস্ত পাপাচারের ঊর্ধ্বে।
ইদানীং খুঁজে ফিরি আমার হৃদয়কে মফস্বলের কোন স্কুলের বারান্দায়। কিংবা শীতে শুকিয়ে যাওয়া জমির আল ধরে যখন হেঁটে চলি দক্ষিণের বিল ধরে সোজা উত্তরে। নতুবা চৌচালা মাটির ঘরের খোলা বারান্দায়। চালের উপর লিচু গাছটা যখন সন্ধ্যার আঁধারকে আড়ালে করে। উঠোনে তুলসী তলায় মাটির প্রদীপটা যখন সামান্য আলো দিয়ে আবার নিভে যায়। সবখানেই আমি হৃদয়ের অস্তিত্ব অনুভব করি।
মনে পড়ে প্রতীক্ষার এক সন্ধ্যা। হঠাৎ কালবৈশাখীর তাণ্ডবে সব লণ্ডভণ্ড করে দিচ্ছিল। আমি একা ঠাঁই বসেছিলাম দক্ষিণের খোলা মাঠে। সেদিন অন্তর দিয়ে একটা সত্য উপলব্ধি করেছি যে, আমি হৃদয়কে অনেক ভালোবাসি। অবশেষে এক ভালোবাসা দিবসে কিছুটা সময় খুঁজে পেতে কষ্ট হলো। গভীরভাবে ভালো না বাসলে এতটা কষ্ট বোধ হয় কেউ পায় না। সেদিন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি।
কোন এক নিভৃত ক্ষণে যদি সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে, যদি চেরি ফুলগাছটায় জোনাক জ্বলে কিংবা কোন অলস দুপুরে একাকী পথ চলি, মনে হয় আমার ভালোবাসা ফুরিয়ে যায়নি। এই কাছে না পাওয়ার দূরত্ব যদি সত্যি সত্যিই ভালোবাসার গভীরতা বাড়িয়ে দেয়, তবে আমি দূরেই থাকতে চায়---অনেক দূরে----।
আজ হৃদয়ের বৈরাগ্য লাভ হয়েছে। ভালোবাসাকে অস্বীকার করা যায় না। স্মৃতির সিঁদুর মুছে মুক্তির স্বাদ পেতে চায়। আমি বলি ”বৈরাগ্য সাধনে মুক্তি, সে আমার নয়”। আমি তোমাকে ভালোবাসি-এই সত্যটাকে কখনও ভাষায় প্রকাশ করতে পারিনি। হয়তো আমি এমনই চাপা স্বভাবের। নিজেকে বোঝাতে না পারার অক্ষমতা আড়াল করে সবকিছু। অথচ অনুভবে উপলব্ধিতে ভালোবাসায় বিশ্বাসে আজও মনে হয় আমি একটুও বদলায়নি। সেই সৌম্য-ই রয়ে গেলাম। সময়ের ক্ষতগুলো যদি তোমাকে কখনও বিচলিত করে তবে জেনো, আমিও বেঁচে আছি সেই ক্ষত নিয়ে। তোমার সৌম্য হয়ে। বয়সের কাছে ভালোবাসা কখনও ন্যুজ হয় না। আজ এই ভালোবাসা দিবসে আবারও নির্দ্বিধায় বলছি ”আমি তোমাকে-ই ভালোবাসি”।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।