প্রায়শ্চিত্ত

ইচ্ছা (জুলাই ২০১৩)

মিলন বনিক
  • ২৫
সুজাতা এবার চতুর্থবারের মত মা হতে চলেছে।
ভগবানের ইচ্ছা আর আশীর্বাদে এবার যদি একটা ছেলে হয়। এবারের মত এটাই একমাত্র ইচ্ছা। স্বামী রুপলাল ছোট খাট ব্যবসায়ী। তারও খুব ইচ্ছা এবার একটা ছেলে সন্তান হোক। একটা ছেলে না হলে যে বংশে বাতি দেওয়ার কেউ থাকবে না। স্ত্রী সুজাতাও খুব করে আশ্বস্থ করে বলেছে - দেখো এবার আমাদের ছেলে হবেই হবে। ভগবান আমাদের দিকে এবার মুখ তুলে তাকাবেন। আমাদের ইচ্ছা অবশ্যই পূরণ করবেন। বুড়াকালীর মন্দিরে মানত করেছি। জোড় বলি দেবো। একমাস ধর্না দিয়ে পরে থাকবো মা বুড়াকালীর মন্দিরে। তিনি কখনও আমাদের বিমুখ করবেন না।

সহজ সরল মানুষ রুপলাল। একটা ছেলের আশায় তিন তিনটে কন্যা সন্তানের পর রুপলাল নিজেই ভেঙ্গে পরেছে। পৃথিবীতে মা বাবা স্ত্রী-পুত্র নিয়ে বেঁচে থাকার অর্থ-ই হচ্ছে এই মায়া। বিয়ের দশ বছরের মাথায় তিনটা কন্যা সন্তান। ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে মেয়েরা। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে রুপলালের ভাবনা। মেয়েদের লেখাপড়া, সাজ গোজ, ভরণ পোষণ থেকে সর্বোপরি বিয়ের ব্যাপার পর্যন্ত ভাবতে শুরু করেছে। এতকিছুর পরেও কিসের যেন এক শুণ্যতা। কিসের যেন একটা কষ্ট।

সেই সাথে রুপলালের মা সুরবালার মাথাব্যাথাটাও যেন একটু একটু করে বাড়তে থাকে। তার একটা নাতি চায়। সুযোগ বুঝে সুজাতাকে কাছে পেলেই একটু ইনিয়ে বিনিয়ে বলে বসে-ও বৌ মা, আমি কি আর একটা নাতির মুখ দেখতে পারব না। নাতি না দেখে মরলে যে আমিও মরে শান্তি পাবো না। মরার পর নাতির হাতে আম কাষ্ট না পেলে যে স্বর্গেও যেতে পারবো না। আমরা আর কয় দিন। আমার ছেলেটার কথাও তো ভাবতে হবে। একটা নাতি না হলে বংশের বাতি জ্বালাবে কে।

এবার মাথায় বিলি কেটে দেয় সুরবালা। চুলের ভাঁজে ভাঁজে আঙ্গুল চালিয়ে উকুন খোঁজার চেষ্টা করে। তারপর বলে-আজকালকার মেয়েগুলাই বা কেমন। বছর বছর বিয়োতে গেলে শরীর ভেঙ্গে যাবে। জামাইর আদর সোহাগ কমে যাবে ভেবে ছেলে মেয়ে জন্ম দিতে চায় না। বলি কি এমন বয়স হয়েছে তোর। এবার রুপুকে বলে একটা নাতির ব্যবস্থা কর। নইলে আমার মাথার দিব্যি থাকবে কিন্তু।

সোনায় সোহাগা। সুজাতারও একটা-ই স্বপ্ন। কোল জুড়ে একটা ফুটফুটে ছেলে। হাসবে। খেলবে। সারা ঘর আলোকিত করে তুলবে। কথাটা রুপলালকে বলতেই একটা ঘোরের মধ্যে পরে যায়। এতদিন সুজাতা নিজে থেকে বললেও রুপলাল গায়ে মাখেনি। নিজের সংসারের টানাপোড়েনের কথা চিন্তা করে বলেছিল-বাদ দাও ওসব। আবার যদি মেয়ে হয়। তখন আমার কি গতি হবে। সুজাতা আর একটু কাছে ঘেষে বলল-আমি কি আর সাধে বলছি। মা-ই তো দিব্যি দিয়ে বলল-তোমাকে বলতে। নাতি না হলে নাকি মা স্বর্গে যেতে পারবে না। তাছাড়া তোমার কথা ভেবেই তো মা অস্থির। তোমার বংশে বাতি জ্বালাবে কে। ছেলে না হলে তো বাতি জ্বালানোর কেউ থাকবে না।

ঠিক তখনি মাটির দেওয়ালের কুঠরি থেকে একটা টিকটিকি চুক চুক করে ডেকে উঠল। সুজাতা রুপলালের হাতটা বুকের কাছে চেপে ধরে বলল-ঐ দেখ সত্য টুক টুক করছে। এবার নিশ্চয় ছেলে হবে। মা’তো ঠিকই বলেছে। মেয়ের জামাইরা বেড়াতে আসবে। একটা ছেলে ছেলের বৌ না থাকলে একটা দিনও থাকতে চাইবে না। কেমন খালি খালি লাগবে। আমরা তো বুড়ো বুড়ি হয়ে যাবো।

রুপলালের ভিতরের কষ্টটা মাথা ছাড়া দিয়ে উঠল। বলল-আমাকে একটু ভাবতে দাও। শুধু সন্তান জন্ম দিলে তো হবে না। ওদের মানুষতো করতে হবে। আমার যা আয় রোজগার তাতে সংসারের খরপোষ চালাতেই হিমসিম খেতে হচ্ছে। সুজাতা প্রতিবাদ করে বলল-আমি বা তুমি মানুষ করার কে। আমরা তো উছিলা মাত্র। ভগবান চাইলে তাঁর ইচ্ছা আর আশীর্বাদে সবি-ই হবে। ছেলে মেয়ে মানুষের মত মানুষ হবে। এই বলে সুজাতা হাসি মুখে রুপলালের বুকে মাথা রাখল। তার কিছুদিন যেতে না যেতেই চতুর্থ বারের মত পিল খাওয়া বন্ধ করল সুজাতা।

ছয় সাত মাস হতেই সুরবালা সব জায়গায় মানত করা শুরু করেছে। মনা ফকিরের মসজিদে সির্ণি দেবে বলে মোমবাতি জ্বালিয়ে এসেছে। ঠাকুরকে বলে এসেছে এবার ছেলে হলে রক্ষাকালী মন্দিরে জোড়া পাঁঠা বলি দেবে। জ্বালাকুমারী মন্দিরে জোড়া কবুতর ছেড়ে দেবে। যে যেভাবে বলেছে কোনটায় বাদ রাখেনি। বাড়ীর সামনে তিন রাস্তার মোড়ে মা মগধেশ্বরীর ছোট্ট মন্দির। মন্দিরের দু’পাশে বট আর অশ্বথ গাছ। একদিন রুপলালকে বলে একটা লাল পাড়ের শাড়ী আর একটা সাদা ধুতি আনিয়ে নিয়েছে। অশ্বথ-এর গায়ে পরিয়ে দিয়েছে সাদা ধুতি আর বটের গায়ে পরিয়েছে লাল শাড়ী। মানত করেছে। আর প্রতিদিন দুপুরে সুরবালা নিজে গিয়ে গাছের ডালে দু’টো লাল সুতোর গিট দিয়ে আসে। আর সময়ে অসময়ে নাতির মুখ দেখার কথা মনে হলেই মা দূর্গার নাম নিয়ে দু’হাত জোড় করে কপালে ঠেকিয়ে বলে-হে মা ভব-তারিণী, তুমি আমাকে এবার একটা নাতি দাও। আমি প্রতিদিন তোমার পূঁজো দেবো।

লেবার রুমের বাইরে বসে থাকা রুপলাল আর সুরবালা কেবলই ইষ্টনাম জপ করে যাচ্ছে। এতগুলো মানতের কথা মন থেকে একবারও ভুলেনি। ডেলিভারীর আগে যতবারই আল্টসনোগ্রাপী করেছে সুজাতা ডাক্তারের কাছে জানতে চেয়েছে ছেলে না মেয়ে হবে। ডাক্তার বলেছে আগের তিন জনতো মেয়ে। এবার ছেলে হলে বুঝি খুশী হবেন। সুজাতা মনে মনে হেসেছে। আর ভগবানকে বলেছে-হে ভগবান আমার যেন ছেলে হয়। ডাক্তার রোগীর অবস্থা বুঝতে পেরে বলল-আপনার পেটের সন্তান ভালোই আছে। কোন চিন্তা করবেন না। ভালোই ভালোই পৃথিবীর মুখ দেখলেই হয়।

এতক্ষন পাশে বসে ভালোমন্দ খোঁজ খবর নিচ্ছিল রুপলালের পাশের গ্রামের পুটির মা। নাম শিল্পি হলেও কেউ আর ঐ নামে ডাকে না। পুটির মার সাক্ষাৎ মাসী হচ্ছে হাসপাতালের অভিজ্ঞ সিনিয়র নার্স কমলা। বাসায় কমলা মাসীর আলাদা নার্সিং হোম। পুটির মা মাসীর সাথেই থাকে। ডেলিভারীর কাজে সাহায্য সহযোগীতা করে। মাঝে মধ্যে নিজেও দু’একটা এভরশন, ডেলিভারী পুটির মাকে দিয়ে করিয়ে নেয়। মাসী পাশে থেকে সাহস দেয়। হাতে ধরে খুটি নাটি বিষয়গুলো শিখিয়ে পড়িয়ে দেয়। আয় রোজগারও মন্দ নয়। মাসীর যা আয় রোজগার তাতে পুটির মা-কে কখনও বিমুখ করে না।

এসমস্ত বৈধ কাজের জন্য ডাক্তার নার্স, হাসপাতাল ক্লিনিক অনেক আছে। কিন্তু অবৈধ কিংবা অনাকাক্সিখত ভ্রæণ ধ্বংস করার জন্য পুটির মায়ের কদরটাও যেন দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। রোগী দেখলে এখন পুটির মা-ও বুঝতে পারে দামটা কত নেবে। যদিও সবাই বলে আমরা স্বামী স্ত্রী। আসার আগেই নাম ধাম পাল্টিয়ে নেয়। আয়ের সুযোগটাও বেশী। কোন ধরা বাঁধা নিয়ম নেই।

পুটির মার শরীরটাও বেশ দশাসই। পুটির মা ডাকটা বয়সের ভারিক্কি বহন করলেও দেখলে তা মনে হয় না। সারাক্ষণ পানের রসে মুখ লাল করে থাকে। টান টান শরীর। বয়সটা আর এমন কি। তাই পুটির মা বলে কেউ ডাকলে মন থেকে খুশী হতে পারে না। আবার না-ও করতে পারে না। এখন বলতে গেলে পুটির মা একজন পাকা ধাত্রী। মাসীর সাহায্য ছাড়াই অনেক কিছু করতে পারে।

পুটির মাও গ্রামের মানুষ হিসাবে সাত পাঁচ কথার মার প্যাঁচে জেনে গেলো রুপলালের এবার একটা ছেলে সন্তান চাই-ই চায়। একটু ভরসাও দিল। দেখো ভগবান কি করে। দুই হাত মাথায় ঠেকিয়ে প্রণাম করে বলে, জয় মা দূর্গা। মা জগৎতারিণী। উনি যা করেন ভালোর জন্যই করেন। আর, আমি তো আছি। কোন দরকার হইলে আমাকে ফোন দিও। কিছু করা যায় কিনা চেষ্টা করবো। পুটির মা ব্লাউজের ভিতর থেকে মোবাইল বের করে নম্বর দিল। সাথে মাসীর একটা ভিজিটিং কার্ডও দিল। রুপলাল তার মোবাইলে ফোন নাম্বারটা সেভ করে নিল।

নাহ! এবারও শেষ ইচ্ছাটা পূরণ হলো না। লেবার রুম থেকে কমলা মাসী হাসি মুখে তোয়ালে প্যাঁচানো সদ্যজাত শিশুটিকে সুরবালার কোলে দিয়ে বলল-এবার মিষ্টি খাওয়াও মাসী। তোমার নাতœী হয়েছে গো। আমাদের খুশী করতে হবে। বাবাগো যা কষ্টটাই না দিয়েছে। ডাক্তার তো বলেই দিয়েছে ও, টি-তে নিয়ে যেতে। সিজার করতে হবে। এই লাইনে আমি বাইশ বছর। বললাম ম্যাডাম আর একটু দেখি। মনে হয় বুকের নীচে দু’টো চাপ দিলে নরমাল হয়ে যাবে। ম্যাডাম আমাকে যে বকাটাই না দিল। বলল-ঠিক আছে আমি দশ মিনিট দেখব বলে যেই অন্য রুগীর কাছে গেল অমনি আমি দুটো চাপ দিলাম। ব্যাস। মাথাটা বেরিয়ে আসল। আমি ম্যাডামকে ডেকে বললাম-তাড়াতাড়ি আসুন। মাথা দেখা যাচ্ছে।

রুপলালের মাথাটা ঘুরছে। পৃথিবীটা খালি খালি মনে হচ্ছে। অনিচ্ছা স্বত্বেও সুরবালা শিশুটিকে কোলে নিয়ে বিলাপ ধরে কান্না শুরু করে দিল। মনে মনে ভগবানের উপর ভীষণ রাগ হচ্ছে। ভগবান কেন একটি বারের জন্য এতগুলো মানুষের মনের ইচ্ছাটা পূরণ করলো না। ভগবান নেই। থাকলে নিশ্চয় শুনতেন।

রুপলাল চোখ মুছে মাকে একটা ধমক দিয়ে বলল-মেয়ে কি মরে গেছে নাকি। এভাবে বিলাপ করার কি আছে। পুটির মা এগিয়ে আসল। সান্তনা দিয়ে বলল-বাবু মেয়ে বলে তুচ্ছ করতে নাই। লও, কোলে লও। দেখবা এই মেয়েটার ভাগ্যে তোমাদের কপাল খুলে যাবে। রুপলাল মেয়েটিকে কোলে নিয়ে আবার কমলা মাসীর কোলে ফিরিয়ে দিল। কিছুই বলতে পারল না। ভাবতে পারেছে না এই মুহুর্তে সে কি করবে।

মোবাইলটা হাতে ছিল। কখন যে বন্ধু অনিমেষ-কে ডায়াল করেছে খেয়াল নেই। অনিমেষ কল রিসিভ করে শুধু হ্যালো হ্যালো বলে যাচ্ছে। এপাশ থেকে কোন জবাব না পেয়ে অনিমেষ লাইন কেটে আবার ফোন করল। ফোন রিসিভ করতেই জিজ্ঞাসা করল-ব্যাপার কি। ফোন করেছিস, কোন কথা বলছিস না। কি হয়েছে তোর।

কোন ভণিতা না করেই বলল-আবার মেয়ে হয়েছে। তোর তো মেয়ে নাই। মেয়েটা তুই নিয়ে যা।
অনিমেষ বুঝতে পারছে রুপলাল কাঁদছে। কিছু বলতে পারছে না। কি বলবে। একজন জন্মদাতা বাবা বা মা কখন এ কথাটা বলতে পারে। মেয়ে শিশু জন্ম নিলে বুঝি এভাবে কষ্ট পেতে হয়। এ ক্ষেত্রে রুপলালের বিষয়টা আলাদা। বড় তিন মেয়েকে কখনও অনাদরে অবহেলায় বাড়তে দেয়নি। সাধ্যমত চেষ্টা করেছে। ছেলে মেয়ের মত আলাদা করে দেখেনি। শুধু একটা ছেলের আশাতেই কি এই সদ্যজাত কন্যা শিশুটিকে অন্যজনকে দিয়ে দেওয়ার কথা মুখ থেকে ফসকে বেরিয়ে গেল।

ধমক দিয়ে উঠল অনিমেষ। এসব কি বলছিস তুই। তুই কি পাগল হয়ে গেলি। তুই তো জানিস আমার অনির বয়স দুই মাস। আর আমার ছেলেটা মা’র দুধ খেতে পারে না। আমি তোর মেয়ে নেবো। তবে দু’টো শর্তে। প্রথমতঃ ভবিষ্যতে কখনও তোর মেয়ে বলে দাবী করতে পারবি না। দ্বীতিয়তঃ শিশুটা মায়ের দুধ না ছাড়া পর্যন্ত তোর বউয়ের কাছে মেয়েটা দত্তক রাখতে হবে। যেদিন দুধ ছাড়বে সেদিন আমি নিয়ে আসব।
রুপলাল বিরক্ত হয়ে বলল-ঠিক আছে, ঠিক আছে। আমার কোন দাবী থাকবে না। তুই পারলে নিয়ে যা। জোড় করে তো আর তোর গলায় বেঁধে দেব না। তারপর ফোনটা কেটে দিল।

হাসপাতাল থেকে বাড়ী ফিরতে হবে। সুজাতা ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কাঁদছিল। মেয়েটাকে পাঁজা কোলে করে বুকে জড়িয়ে ধরেছে। তল্পি তল্পা গুছানো শেষ। কমলা মাসীর সাথে পুটির মা এসেছে। কমলা মাসী আবারও হাসি মুখে বললেন-ও মা, মেয়ে হয়েছে তো কি হয়েছে। ভগবানের ইচ্ছা হলে একদিন না একদিন একটা ছেলে পেয়ে যাবে। এই আমি বলে রাখলাম।

পুটির মা আর একধাপ এগিয়ে এসে বলল-বাবু আমার লম্বরতো দিয়েছি। যদি ছেলের দরকার হয় আমাকে ফোন করো। তবে কানে কানে একটা কথা বলি। কাক পক্ষিও যেন না জানে। আমার হাতে মাঝে মধ্যে দু’একটা ছেলে আসে। মেয়ে হলে কেউ নিতে চায় না। ছেলে হলে কদর বেশী। দামও একটু বেশী। আলতু ফালতু কাম আমি করি না। ভালা বংশের ছেলে মেয়েরা আসে। কি আর করবে। বংশের মান মর্যদা বলে কথা। ডাষ্টবিনে নালা নর্দমায় ফেলে দিতে মন সায় দেয় না।

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার বলল-কত লোকই তো আছে একটা সন্তানের জন্য হাহাকার করে কাঁদে। তাদের কাউকে পাইলে দিয়া দেয়। আপনে চাইলে আপনারে একটা ভালা বংশের ছেলে দিতে পারব। তবে একটা শর্ত। কাউকে বলা যাবে না। এই ছেলে কোথ্থেকে পাইছেন। আমিও কাউকে বলব না, এই ছেলে কার আর কিভাবে এসেছে। এমনকি আপনারেও না। তবে এই গ্যারান্টি দিতে পারি, আপনে হিন্দু মানুষ। আপনারে একটা ভালা বংশের জাতের পোলা দেব। কোন্ জাতের পোলা সেটা পরে বলব।

কথাগুলো এমন ভাবে বলছে যেন সুজাতার কান পর্যন্ত পৌঁছে। সুজাতা কিংবা রুপলাল মন থেকে ছেলের ইচ্ছাটা তাড়াতে পারছে না। দু’বছর যেতে না যেতে সুজাতা ইনিয়ে বিনিয়ে আবার মা হতে চাইল। মনে পড়ল পুটির মার কথা। এর মধ্যে পুটির মা-র সাথে মাঝে মধ্যে কথা হয়েছে। পুটির মা বলেছিল পনের দিন পরে ফোন করতে। ভগবানের ইচ্ছায় যদি ছেলে হয় তবে আট ঘন্টার বেশী রাখতে পারবো না বাবু। সকালে ডেলিভারী হলে সন্ধ্যার সময় তোমরা জামাই বউ এসে নিয়ে যেও। দাম বিশ হাজার। তবে ভালা বংশের বামুনের পোলা। সেই গ্যারান্টি আছে।

পুটির মাকে ফোন করতেই চাঁদ হাতে পাওয়ার মতোই খুশী হয়ে বলল-বাবু আমি আপনারেই ফোন করতে চাচ্ছি। ভগবান যেন তোমাদের কোলে সাক্ষাৎ দেবশিশু কোলে তুলে দিয়েছে। এই বার তোমাদের সব আশা পূরণ হবে। দামের কথা তো আর বলতে হবে না। আজ সন্ধ্যা আটটায় আমার বাসায় এসে ছেলেটা নিয়ে যাও। না হলে পরে পস্তাতে হবে।

মনের দোলাচলে দু’জনকে বারান্দায় বেশীক্ষন অপেক্ষা করতে হয়নি। পুটির মা ঘর থেকে তোয়ালে জড়ানো সদ্য একটা নবজাতককে সুজাতার কোলে দিয়ে বলল-আজ থেকে তোমরাই এর মা বাপ। শিশুটি একটুও কাঁদছে না। সম্ভবত ঘরের ভিতর গর্ভধারিনী মায়ের নাভিকাটা জল তখনও শুকায়নি। সেও জানে তার নাড়ি ছেড়া ধনটিকে পুটির মা কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। গভীর দীর্ঘশ্বাসে এক বুক যন্ত্রণা নিয়ে ভাবছে আজ ছেলেটার জন্মদাতাও কাছে নাই। ফলে মিলছে না সদ্য পৃথিবীর মুখ দেখা অবুঝ শিশুটির কোন সামাজিক স্বীকৃতি। পুটির মার শর্ত মানলে হয়তো কোনদিন দাবীও করতে পারবে না, এই ছেলে আমার। সামাজিক স্বীকৃতি নিয়ে বেঁচে থাকবে কেবল রুপলাল আর সুজাতার পঞ্চম ছেলে সন্তান হিসাবে।

পরের দিন পাড়াময় রটে গেল রুপলালের ইচ্ছা ভগবান পূরণ করেছে। একটা ছেলে হয়েছে।
বামুন ঘরের সন্তান হলেও স্থানীয় পন্ডিতবর্গ স্পষ্ট বলে দিয়েছে, এই ছেলেকে জাতে তুলতে হলে ছেলের অন্ন প্রাশনের দিন সমাজে বসে প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে। জাগ যজ্ঞ করতে হবে। নয়তো এই ছেলে রুপলালের কোন শ্রাদ্ধ শান্তি বা ক্রিয়া কর্ম করতে পারবে না।
রুপলাল আর সুজাতা খুশী মনে প্রায়শ্চিত্ত করার আয়োজন করতে লাগল।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সুজিত দেব রায় ছেলে হোক আর মেয়ে হোক দুই সন্তান . ভালো লাগলো পরে .
কবি এবং হিমু সমাজের সুন্দর একটা ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন।
অনেক ধন্যবাদ হাসান ভাই....
তানি হক দারুন টানটান একটি গল্প পড়লাম ভাইয়া ... গল্পের শেষ দেখার জন্য খুব অস্থির হচ্ছিলাম ... কিন্তু গল্পের শেষে এসে মনে হচ্ছে যে আরও বড় হলেই মনেহয় ভালো হতো কারন এর পড়ে কি হল রুপলাল এবং সুজাতার সংসারে আর সেই নবজাত শিশুর খুব জানতে ইচ্ছে করছে । যাইহোক ... সব মিলিয়ে খুব খুব ভালো লাগলো গল্পটি ... বিশেষ করে শেষের দিকের কিছু আত্ম উপলব্ধি মূলক কথা মনে রাখার মতো ... আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ মিলন দাদা
প্রিয় তানি...গল্পের কলেবর আরও বাড়ানো যেত সত্যি তবে শেসটা জানার জন্য কিছু সময়ের অপেক্ষা মাত্র...আপনার মনোযোগী পাঠ-এর জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ...
সূর্য দারুন গল্প মিলন দা। আপনার গল্পগুলো সব সময়ই ভালো লাগে।
অনেক ধন্যবাদ সুর্য দা....অাপনি পড়েছেন জেনে ভালো লাগলো....
রীতা রায় মিঠু অসাধারণ গল্প ত্রিনয়ন, সাধারণ মানুষের আচার আচরণের প্রতিটি অংশ ডিটেইলসে এসেছে, সো প্রাউড অফ ইউ!
থ্যাংক ইউ দিদি ভাই...পড়েছেন তাই ভালো লাগলো...আপনি অসাধারণ বলেছেন আমি আর কি বলবো....ভালো থাকবেন....
নাজিয়া জাহান ভাল হয়েছে।
অনেক ধন্যবাদ গল্পটি পড়ার জন্য....
এশরার লতিফ মিলন দা'র কলমে সব সময়ই দারুণ সব গল্প বেরিয়ে আসে। এটিও ব্যতিক্রম নয়।
লতিফ ভাই...খুব প্রীত হলাম....সবচেয়ে ভালো লাগলো আপনার মত একজন গল্পকারকে আমার উঠোনে পেয়েছি...
পাঁচ হাজার সাধারণের ইচ্ছা আকাঙ্খার সুন্দর প্রতিচ্ছবি। গল্পের শুরুতে চতুর্থবারের মতো মা হওয়ার অপেক্ষা, শেষে পঞ্চম সন্তান হিসেবে বেঁচে থাকবে। ঠিক আছে জমজ তো হতেই পারে, আমরা জানলাম, লেখক জানলো ছেলেটা দত্তক নেয়া। একথা তো পন্ডিতরা গল্পের কোথাও জানল না। তবে কেন তারা ফতোয়া দিল জাগ যজ্ঞ করার? গল্পে এইটুকুই ফাঁক রয়ে গেছে তাছাড়া গল্পটা আবহমান বাংলার সাধারণ ধ্যান বোধ সম্পন্ন মানুষেরই কথা এবং বেশ ভাল লাগল।
প্রিয় পাঁচ হাজার ভাই...আপনার মনোযোগী পাঠ এবং প্রশ্নগুলো সত্যিই আমাকে ঋনী করেছে...অঅপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা রেখে বলছি.িএখানে সময়ের একটা ব্যপার আছে...আর সেই সময়টাই ছেলেটার পরিচয় প্রকাশ পেয়েছে..সব চাইতে বড় কথা পরিবেশের ব্যপারটা...গ্রামে একান ওকান হতে কতক্ষন...ফতোয়াবাজরা তো আরও এক ডিগ্রি বেশী...সবসময় খরগোশের মত কান খাড়া করে রাখে...আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
শাহীন মাহমুদ অনেক সন্দর একয golpo
অনেক ধন্যবাদ শাহীন ভাই...
অবিবেচক দেবনাথ আপনি বেশ ভালো লেখেন, তবে এই গল্পের শেষ প্যারাটা আরোকটু বিশ্লেষনের প্রয়োজন ছিল বোধহয়। কারণ আমার মতো পাঠকদের শেষ প্যারায় এসে খটকা বাঁধে।
অাপনার মনোযোগী পাঠ আর মন্তব্য খুব ভালো লাগল...শেষ প্যারাটায় পুরো গল্পের পরিণতিটা টেনেছি খুব পরিষ্কার ভাবে...কেননা আমাদের সমাজের বৈধ আর অবৈধ সন্তানের স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ফতোয়ার শেষ নেই....

০৭ এপ্রিল - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১১৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪