ছোট্ট খুকু সোনা মনি, শোন বলি শোনো,
বলব যে এক মায়ের কথা, সবার মা সে জেনো।
জন্ম তাহার মুর্শিদাবাদ, সুন্দরপুর গ্রাম,
আদর করে ডাকতো সবাই, জাহানারা ইমাম।
আবদুল আলী বাবা তাহার, মা হামিদা বেগম,
এমন মেয়ের জন্ম দিয়ে, ধন্য মানব জীবন।
পড়া শোনায় সবার সেরা, লেখার হাতও বেশ,
দেশের কথায় দশের কথায়, জাগতো সুরের রেশ।
মা যে ছিল রাজকুমারী, তেজ ছিল তাঁর ভীষণ,
মুক্তিযুদ্ধে সব হারালো, ভাঙ্গলো না তাঁর মন।
মা জননী বীর সেনানী, হঠাৎ কেমন করে,
ঘাতক দালাল রাখবো না আর, পণ করলো কঠিন স্বরে।
ঘাতকরা তাঁর স্বামী সন্তান, মারলো একাত্তরে,
মা জননী রূদ্রবেশে, ছুটলো তেপান্তরে।
ঘাতকরা সব ভয়ে কাবু, করবে কারা রোধ,
এবার বুঝি রক্ষা নেই আর, নেবেন প্রতিশোধ।
তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে, সাত সমুদ্রের পাড়ে,
হলো যে এক কঠিন অসুখ, কে বা সারতে পারে।
মা জননী শয্যাশায়ী, হচ্ছে ভীষণ কষ্ট,
ভাবনা তবু দেশের ত'রে, দেশ যদি হয় নষ্ট।
এদেশ জুড়ে লক্ষ সন্তান, বললো ডেকে তবু,
যতই আসুক বিঘ্ন বিপদ, হাল ছেড়োনা কভু।
মা জননীর মুখের কথা, অসুখ নিল কেড়ে,
হাতের লিখায় মনের কথা, বলেন সন্তানেরে।
রইলো না আর মা জননী, গেলেন পরপারে,
আমরা তাঁহার লক্ষ সন্তান, থাকি কেমন করে।
স্বপ্ন ছিল মা জননীর, ঝরবে না আর রক্ত,
রইবে না কো ঘাতক দালাল, এদেশ হবে মুক্ত।
কত শত সন্তানেরা, কাঁদলো আবার মিছিলে,
কাঁধে নিয়ে মায়ের কফিন, জাগলো সাড়া নিখিলে।
আমরা মায়ের লক্ষ সন্তান, হলাম স্নেহ হারা,
মায়ের আজ্ঞা করবো পালন, হবো না দিশেহারা।
বীর সেনানী মা জননী, লও হে লও সেলাম,
বুকের তাজা রক্ত দিয়ে, রাখবো দেশের মান।
অমর করে রাখবো তোমায়, চিরদিনের মত,
জীবন দিয়ে করব পূরণ, স্বপ্ন তোমার যত।
“কবিতাটি শহীদ জননী জাহানারা ইমাম স্মরণে উৎসর্গীকৃত”