অদ্ভ’ত এক কাবাব ! এই কাবাব কেউ খায় না। মানুষের কাবাবতো...ইসলাম ধর্মে এগুলো খাওয়া হারাম। গণতন্ত্রের...(?) জন্যে লাগাতার অবরোধ-হরতাল চলছে সারা দেশে। পেট্রোল বোমায় তৈরী হচ্ছে এই মানব কাবাব।
সরকার বলছে, প্রতিপ¶ রাজনৈতীক দল আন্দোলনের নামে এসব বর্বর নাশকতা চালাচ্ছে। অপরদিকে প্রতিপ¶রা বলছে, তাদের শান্তিপূর্ন আন্দোলনকে ভুলু›িঠত করতে সরকারের এজেন্টরা এসব করছে।
এমন এক ভয়ংকর সময়ে সুল¶ীর জন্মদিন। এবার একটু অন্যরকম ভাবে দিনটি পালন করতে চেয়েছিলো সুল¶ী। সামনের সোমবার তার কেক কাটা হবে শুধু’ই শুভকে নিয়ে । ঐদিন দূর দিগন্তে কোথাও কোনো এক অরণ্যে হারিয়ে যাবে ওরা। জন্মদিনের অতিথি হবে নীল আকাশ অগণিত পাখি আর বৃ¶-তরুলতা । কিন্তু চলমান অ¯িহর পরিবেশের কারনে শুভ’কে তা জানাতে সাহস পাচ্ছে না। শুভ বিষয়টি আঁচ করতে পেরে মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয়- রোগী সেজে এ্যাম্বুলেন্সে করে হলেও সে কটিয়াদী থেকে রাজধানীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে । ওর জন্মদিনে তার উপ¯িহতিটা হবে অনেক বড় সারপ্রাইজ ।
শুভ’র আকাশে সুল¶ী যেনো নতুন এক ধূমকেতু । ওর কথা মনে হলেই কেমন বৃষ্টি পড়ার শব্দ হয় তার বুকের ভেতর । সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করার অনন্য প্লাটফর্ম ¯হাপন হয়েছে তার ভালবাসার ছোঁয়ায় । ও দেখতে যেমন সুন্দর এর চেয়েও বেশী সুন্দর তার হ্নদয় । ওর ভেতরের এই সৌন্দর্য্যকেই আবিস্কার করেছে শুভ । তবে দৃশ্যমান একটা দেয়াল উভয়ের মাঝে বিদ্যমান - তবুও চমৎকার বোঝাপড়া ওদের । শুভ’র বক্তব্য- এজীবনে যদি সম্ভব না হয় , পরজীবনে যেনো সুল¶ী তার হয় । উত্তরে সুল¶ীর সরল জবাব- আমি তোমার পাশে ছায়া হয়ে আছি , থাকবো... । গেলো বর্ষায় জল দর্শনে ওরা পাড়ি দেয় হাওড়ে । সাঁতার জানে না শুভ- তবুও সুল¶ীকে নিয়ে নৌকা ভাসায় বিশাল হাওড়ের বুকে । নৌকা যখন হাওড়ের গহীনে- তখন মনে হচ্ছে, এ যেনো আটলান্টিক মহাসাগর । বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে নৌকায় । তবুও বিন্দুমাত্র ভয় নেই ওদের। হঠাৎ একটা মিষ্টি গন্ধ অনুভব করলো শুভ ..। গন্ধটা আসছে সুল¶ীর ¶োপা থেকে। যে গন্ধে শুভ হারিয়ে যায় অন্য ভূবনে ।
(২) এ্যাম্বুলেন্স ছুটে চলেছে ঢাকার দিকে । পথে পথে বাধা ব্যারিকেড..রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে আগুন দেয়া হয়েছে। শুভ ভেবে পায় না এভাবে রাজপথ বন্ধ রাখলে গণতন্ত্র আসবে কিভাবে...? পথ বন্ধ রেখে গণতন্ত্রের অপে¶া...! রাজেন্দ্রপুর ক্যান্টনমেন্ট পার হওয়ার পর গজারী গড়ে চার/পাঁচ যুবক অতর্কিত ভাবে হামলা চালায় এ্যাম্বুলেন্সটির উপর। কিছু বুঝে উঠার আগে’ই গাড়ীতে দাউ দাউ আগুনের লেলীহান শিখা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের আইসিইউতে শুভকে রাখা হয়েছে। শরীরের বিশ ভাগ পুড়ে গেছে তার। চালক দগ্ধ হয়েছে নব্বই ভাগ। তার বেঁচে থাকার কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে শুভও আশংকামুক্ত নয়। সে মাথায় প্রচন্ড আঘাত পেয়েছে। জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত কিছু বলতে পারছেন না চিকিৎসকরা। রাত তখন অনেক গভীর। শুভ’র জন্য সুল¶ী কি অপে¶া করছে ? আজ তার জন্মদিন । যদি টেলিভিশনের সামনে থাকে তাহলে খবরটি চোখে পরবে-কিছু¶ণ আগে শুভও কাবাব হয়েছে। শুভ’র দেহের চারদিকে মাকড়সার জালের মতো ইলেকট্রিক তার জড়ানো। এ অব¯হায় হঠাৎ বৃষ্টি পড়ার শব্দ শুনতে পায় সে । নীল শাড়ী নিয়ে শুভ সুল¶ীর কাছে। সুল¶ী কেক সাজিয়ে একা বসে আছে সমুদ্র তীরে। মোমবাতি গুলো অর্ধেক পুড়ে গেছে । তার পড়নে নীল শাড়ী । চুলগুলো ছড়ানো । যেনো এক নীল পরী । শুভকে দেখে ও ছুটে আসে । শুভকে জড়িয়ে ধরে গভীর আলীঙ্গনে। সুল¶ীর চুলের গন্ধ আজ আরো অদ্ভ’ত লাগছে। এভাবেই বেশ কিছু¶ণ পর শুভ’র চোখ পড়লো আয়নার দিকে । সমুদ্র পাড়ে আয়না এলো কি করে...! বুঝতে পারছে না সে। সুল¶ীর শাড়ীর আঁচল পড়ে যাওয়ায় আয়নায় তার পিঠ দেখা যাচ্ছে । ও কি শুধু শাড়ী’ই পড়ে আছে ...? উদ্দাম উদোম শরীর । যেনো জোছনা রাতের আকাশ তার শরীর । পিঠের উপরে একটি ছোট্র তিল দেখা যাচ্ছে। তিলটাকে মনে হচ্ছে- কালো চাঁদ। মিষ্টি গন্ধটা আর নেই । হঠাৎ পোড়া মানুষের গন্ধ আসছে ।
জ্ঞান ফিরে আসে শুভ’র । ওর কাঁপা কাঁপা ঝাপসা চোখ পড়ে পাশে দাঁড়ানো এক নারীর। ¯^প্নে দেখা ঠিক সেই কালো চাঁদের আকাশের মতো উদোম পিঠ তার চোখের সামনে। সুল¶ী শুভ’র কপালে হাত রেখে ¶ীণ কন্ঠে বললো,এখন কেমন আছো। সহাস্যে ও বললো , ভালো। তুমি কখন এলে। ঃ এইতো সেই কখন..এই অব¯হায় তোমার মুখে হাসি... ? ঃ হাসলাম তোমার পিঠের কালো তিলটা দেখে । ঃ না,আমার পিঠেতো কোনো তিল নেই । ঃ আয়নায় চেয়ে দেখো ।
সুল¶ী আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় । অবাক কান্ড ! হ্যাঁ, তাইতো । এখানেতো তার কখনো তিল ছিলো না ! আজ হঠাৎ... তবে তিলের ¯হানটিতে কিছু¶ন ধরে কেমন যেনো জ্বালা-পোড়া করছে । ও বুঝতে পারলো তিল রহস্যের ঘটনাটির । শুভ’র খবর পেয়ে হাসপাতালে আসার পথে তার গাড়ীটিও পেট্রল বোমা হামলার শিকার হয় । হয়তো আগুনের ফুলকি তার পিঠে লেগেছিলো ।
বার্ন ইউনিটে প্রিন্ট ও ইলেকট্রোনিক্র মিডিয়ার বহু সাংবাদিক ছুটে এসেছে । এই মাত্র যে বাসটিতে পেট্রল বোমা হামলা হয়েছে তাতে তিন জনের মৃত্যু ও বিশ জন দগ্ধ হয়েছে। সবচেয়ে হ্নদয় বিদারক যে ঘটনাটি ঘটে গেলো তা হচ্ছে, আগুনে দগ্ধ এক গর্ভবতী মা মৃত্যুর আগে সন্তান প্রসব করেছে । তার প্রত্য¶্যদর্শী সুল¶ী । ওর সা¶াৎকার নেওয়ার জন্য সাংবাদিকরা হন্যে হয়ে খুঁজছে তাকে।
টেলিভিশন চ্যানেলগুলো সুল¶ীর সা¶াৎকারটি সরাসরি সম্প্রচার করছে । সুল¶ী বর্বর এই পৈশাচিক ঘটনার বর্নণা দিলো...পরিশেষে ও কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলতে লাগলো- যে জাতি ৫২’ এ ভাষার জন্য রক্ত দেয় ৭১’ এ দেশের জন্য রক্ত দেয় সেই জাতি আজ এমন জঘণ্য কর্মে লিপ্ত হলো কিভাবে ? আল-কায়দা আইএস জঙ্গীরাওতো হত্যাযজ্ঞ্যের দায় শিকার করে । আর এদেশের রাজনীতিতে এ কি হচ্ছে ? এরাতো আল-কায়দার চেয়েও ভয়ংকর !
শুনুন বাচ্চাটির হতভাগী মা কি বলে গেছে - নিরাপদ প্রসবের জন্যে মফ¯^ল থেকে রাজধানীতে আসতে ছিলো দিন মজুর পরিবারটি। আমার পাশের সিটটি ছিলো তার। অনেক কথা’ই হয়েছে মহিলার সাথে। তার সন্তানকে লেখা পড়া শিখিয়ে অনেক বড় ডাক্তার বানানোর ¯^প্ন ছিলো । হালের গরু বিক্রি করে চিকিৎসার টাকা জোগাড় করে ছিলো সে। হতভাগী মায়ের মৃত্যুর পূর্বে তার কাছ থেকে নবজাতকটির দায়িত্ব আমি চেয়ে নিয়েছি । ওর মা এখন আমি । ওকে আমি বড় করবো । ওকে আমি ভালো মানুষ বানাবো বলে হাউমাউ করে কেঁেদ উঠলো সুল¶ী । অঝর কান্নায় সে আরো বলতে লাগলো- নবজাতকটির মা বলে গেছে, ও যেদিন বুঝতে শিখবে সেদিন প্রথম থু-থু টি যেনো এই নষ্ট রাজনীতির মুখে নি¶েপ করে !
শুভ নিজে’ই তার মুখ থেকে অক্সিজেন মাস্ক সরিয়ে ফেলে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বললো, আমি ওর বাবা। আমি নবজাতকটির নাম রাখলাম- ‘কালো চাঁদ’।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
নার্গিস আক্তার
মিস . ইফা ও অপর্ণা ঝথার্থয় বলেছেন , গল্পটি দুই নেত্রী পড়লে খুব ভালো হতো. ......কালো চাদ একটি কালজয়ী গল্প.আমার গভীর বিশ্বাস- লেখক রাজু সাহেব একদিন অনেক বড় লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবেন .জয়তো 'কালো চাদ ' জয়তো 'সুলোক্ষী ' .(লেখকের আরেকটি গল্পে সুলোক্ষির আভ্বির্ভাব পেলাম .মনে হচ্ছে -'সুলোক্ষী' এক লক্ষীর চাইতেও সুলোক্ষী চরিত্র .)
নবী হোসেন
রাজনীতির নোংরামি এবং প্রতিহিংসা পরাযনতা প্রবন নষ্টামির শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ্. ভয়াভহতা ও বাস্তব জীবনের এমন নিখুত চিত্র শুভ ও সুলোক্ষীর জখমর মধ্যে রুমান্টিকতার সংমিশ্রন অসাধারনভাবে ফুটিয়ে তুলাই লেখককে ধন্যবাদ .
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।