১. ঘরটি ছোট, খুপরির মতন। সূর্যের আলো পৌঁছাবার মতন কোন ব্যবস্থা এতে রাখা হয়নি, তাই ঘুটঘুটে অন্ধকার। অবশ্য ইসহাক মিয়া ঘরটির অবস্থা দেখতে পারছে না। কারন তার দু চোখ কালো কাপড়ে শক্ত করে বাঁধা। লাল উর্দি পড়া ইংরেজ সেপাহিরা তাকে এ ঘরে হাত আর চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে গেছে অনেকক্ষণ হল। সে এখন ইংরেজদের বন্দি। ইসহাক মিয়া প্রচণ্ড তৃষ্ণার্ত,তাছাড়া চোখ শক্ত করে বাঁধায় মাথাটা চিনচিন করছে।
কিন্তু এখন ইসহাক মিয়ার এই খুপরির মতন ঘরে বন্দি অবস্থায় পড়ে থাকার কথা না। আজ সকালে ইংরেজ সেপাহিরা তাকে ধরে না আনলে তার রওনা দেবার কথা ছিল ময়মনসিংহ। সেখানে তার তৈরি মসলিন শাড়ী দুইটির সওদা হবার কথা। ইসহাক মিয়ার এবারের শাড়ী দুইটি হয়েছেও বেশ বাহারি। প্রায় এক বছর ধরে রাত দিন খেঁটে সে এই দুইটি শাড়ী বানিয়েছে। মসলিনের কারিগর হিসেবে ইসলামপুরের ইসহাক মিয়ার খুব নামডাক আছে। তার মতন নরম আর বর্ণালী মসলিন শাড়ী এ তল্লাটে কেউ বানাতে পারে না। মসলিনের কারিগরি ইসহাকের মিয়ার বাপ দাদার পেশা। তার বাবা ছিলেন ঢাকার বিখ্যাত মসলিন কারিগর, কালা মিয়া।
ইসহাক মিয়া যে পেটের দাঁয়ে মসলিনের কারিগরি করে তা কিন্তু না। বাপ দাদা যে জমি রেখে গিয়েছিলো তা বর্গা দিয়ে ইসহাক মিয়ার ছোট পরিবারের বেশ কেটে যায়। তবে ইসহাক মিয়া আসলে মসলিন কে ভালোবাসে, তাই মনের সুখে মসলিনের কারিগরি করে যায়। কিন্তু ইসহাক মিয়ার বিবিজান ফুলবানু তাকে খুব করে বলে এ কাজ ছেড়ে দিতে। কারন কিছুদিন আগে সরকারি আদেশ এসেছে, মসলিনের কারিগরি বন্ধ করতে হবে, নাহলে ভয়ংকর শাস্তি। কিন্তু ইসহাক মিয়া এসব কথা কানে তুলে না। তার বাপ দাদার পেশা সে ছাড়ে কি করে? তবে মাঝে মাঝে তার আদরের একমাত্র মেয়ে ফাতেমার দিকে তাকিয়ে খানিকটা দুশ্চিন্তা কাজ করে। তার কিছু হলে মেয়েটার কি হবে?
২. ইসহাক মিয়া মনে হয় ঘুমিয়ে পড়েছিল। সাদা চামড়ার এক ইংরেজের ডাকে তার ঘুম ভাঙে। ইসহাক মিয়াকে তারা এখান থেকে নিয়ে যেতে এসেছে। কিন্তু কোথায় নিবে তা সে বুঝতে পারছে না। হঠাৎ তার খুব ভয় লাগতে শুরু করে। নাহ, নিজের জন্য তার তেমন কোন চিন্তা হচ্ছে না। কিন্তু ফুলবিবি আর ফাতেমার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে। তাকে যখন সেপাহিরা নিয়ে যাচ্ছিল তখন ফুলবিবির কান্না আর দেখে কে। আচ্ছা, ফাতেমা এখন কি করছে? মেয়েটা হয়েছেও খুব বাপ পাগলী। তাকে ছাড়া এক দণ্ডও থাকতে পারে না।
ইসহাক মিয়াকে এক ইংরেজ বাবুর সামনে আনা হয়েছে। বাবু ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলায় তাকে জিজ্ঞেস করে, নিষেধ করা সত্ত্বেও কেন সে মসলিনের কারিগরি চালিয়ে গেল। ইসহাক মিয়া কিছু বলে না। অসহায় চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। বাবু এক সেপাহিকে ডেকে কি যেন বলে। সেপাহিটি একটি ছোঁরা নিয়ে আসে, আর চারজন সেপাহি ইসহাক মিয়াকে শক্ত করে ধরে। বাবু ছোঁরাটি দিয়ে ধীরে ধীরে ইসহাক মিয়ার দুই হাতের দশটি আঙ্গুল কেটে নেয়। তার বুকফাটা আর্তনাদে কেঁপে উঠে ইংরেজ কুঠির শক্ত দেয়াল।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আরমান হায়দার
প্রথম কথা গল্পটি ভাল লাগল। পরবর্তী কথা সমুহ এরুপ - (১) একটি শিল্পকে ধ্বংশ করার জন্য দন্ড হিসেবে মসলিন বুননের জন্য কারিগরদের হাতের আঙ্গুল কেটে দেওয়া হত বলে কোন কোন সুত্রে লোক কথা পরিচিত আছে। সম্ভত সে রকম একটি লোককাহিনীর উপর ভিত্তি করেই হয়তো গল্পটি লেখা হয়েছে। (২) যদি সে রকম লোক কথার উপর ভিত্তি করেই হয় তবে এক্ষেত্র গল্পের নায়ক ইসহাক মিয়াকে পরিবর্তন করে একজন অল্প বয়স্কা বালিকায় রুপান্তর করলে ভাল হত যার চক্ষের দৃষ্টি শক্তি অতিমাত্রায় প্রখর। কেননা কথিত আছে নদীর তীরে যেখানে প্রথর সুর্যালোক পড়ে সেখানে অতি তীক্ষ দৃষ্টি শক্তির অধিকারীনি কম বয়স্কা যুবতীদের দ্বারা কল্পনাতীত সুক্ষ মসলিনের বুনন হত। এবং এই লোককথা মতে ইংরেজগন এই অল্প বয়স্কা যুবতী কারিগরদেরই আঙ্গুল কর্তন করেছিল। সেই হিসেবে বিবাহিত ইসহাক মিয়ার চক্ষের দৃষ্টিশক্তি কত প্রখর ছিল তা পাঠকদের মনে কৌতুহল জাগাতে পারে। (৩) এ দেশের কারিগর সমাজের কোন কালেই তেমন জমিজমা থাকে না এবং সর্বোপরী তারা জমি জমার উপর নির্ভর করে জীবিকা চলবে কি করবে না এমন হিসাবটি অন্তত সচরাচর করেন না। //////// লেখকের জন্য শুভকামনা রইল।
মিলন বনিক
একটি ইতিহাস আর ঐতিহ্যকে ধংস করার গল্প অল্প পরিসরে ফুটিয়ে তুলেছেন...একটু ডিটেলস হলে সত্যিই একটা মিরাকল হত...আগামীর প্রত্যাশায় থাকলাম...খুব ভালো লাগলো...
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।