মা, জানিনা, তুমি কোথায় আছ! কেমন আছ !! শুনেছি দিদির বাড়িতে বেড়াতে এসেছ। বেশ কয়েক দিন হয়ে গেল তোমার কোন ফোন পাইনা। মনে হয় যেন দীর্ঘ বছর পেড়িয়ে গেছে তোমার কথা শুনিনা। তুমি ভুলে গেছ বলছিনা। হয়তো, তোমার স্মৃতিভ্রম হয়েছে। আমিও সেই অভিমানেই তোমায় ফোন করিনি মা। তাই বলে ভুলে যাইনি মা। গতরাতে অফিসেই রাত কাটিয়েছি। সারারাত অফিস করে সকালে ঘরে ফিরে নাম মাত্র নাস্তা করে ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম ভেঙে উঠে দেখি দুপুর গড়িয়ে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর একটি ছেলে খাবার নিয়ে আমার কক্ষে এলো। গন্ধ চালের ভাত আর অতি ছোট্ট একটা ইলিশ মাছের টুকরো। খাবার দেখে মনটা হঠাৎ করে খুব খারাপ হয়ে গেল। দু' চোখ জলে ভরে এলো। রাতের খাবার এর চেয়েও খারাপ। অথচ প্রতি মাসে আমি দুই বেলা খাবারের জন্য ১৬শ টাকা ওদের হাতে তুলে দেই। অথচ আমি ওদের এজন্য কিছুই বলতে পারিনা। ওদের একটু বিবেক নেই। কিছু বললে ওরা মন খারাপ করে। কারো কালো মুখ দেখতে আমার ইচ্ছে হয়না। তাই ওদের দেয়া ছাই-ভস্ম খেয়ে আবার তন্দ্রাচ্ছন্ন হলাম। এরই মধ্যে তোমাকে স্বপ্ন দেখে তন্দ্রার ঘোরটা কেটে গেল। মনে হচ্ছিল, আমি পেছন থেকে মা মা বলে গলা ছেড়ে তোমাকে ডাকছি। খুব মনে পড়ছে মা তোমায়। খুব মনে পড়ছে। কত দিন দেখিনা তোমায় মা! আমার বুক ফেটে যাচ্ছে, চোখে জল ভরে যাচ্ছে। কেউ দেখেনা মা, তোমার জন্য আমার একান্ত অবসরে এই চোখের জল ফেলা। মা, তুমি শুনতে কি পাও, আমার ব্যথিত হৃদয়ের এ কান্নার শব্দ! ঢাকায় থেকেও মনে হয় যেন বাড়ি থেকে কত যোজন যোজন মাইল দূরে আছি আমি। হয়েছি দেশান্তরী। যারা প্রগতিশীলের ভাণ্ডার বলে নিজেদের দাবি করে তাদের সাথে কাজ করতে করতে আমি ক্লান্ত। ছুটি বিহীন চাকুরী। তাইতো, শত ইচ্ছে থাকলেও তোমার কাছে আসতে পারছিনা মা। গত কয়েকদিন ধরে শরীরটা ভালো যাচ্ছেনা। সারাদিন ছাই-ভস্ম খেয়ে গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা আবারও বেড়ে গেছে। বুকের ব্যথাটাও উঠছে তীব্র হয়ে। খুব অসহায় লাগছে নিজেকে। এই নির্মম প্রাচীরে ঘেরা ঢাকা শহরে আমার আপন বলতে শুধু আমিই। আজ যদি আমার মৃত্যু হয়, তবু, তোমার কাছে খবর পেঁৗছে দেবার কেউ নেই মা। যদিও বা খবর পাও এক সময়, তখন আমার মরদেহ পঁচে গিয়ে বাতাস দূষণের কারণ হবো আমি। এইতো আমার বেঁচে থাকা। এইতো আমার জীবন ধারণ। বলতো মা! আমার মতো হতভাগ্য আর কে আছে! জীবনের প্রয়োজনে এই শহরে মনে হচ্ছে আজ আমি নির্বাসিত। আজ এখানে তো কাল ওখানে আমার বসবাস। নির্ধারিত ঠিকানা বলতে কিছুই নেই। কী ছন্নছাড়া জীবন আমার! আমার সাধ-ইচ্ছার কোন দাম নেই এখানে মা। যত ভাবনা-সাধ-ইচ্ছা, সব কিছুই লুকিয়ে রাখতে হয় নিজের অন্তরে। মা! কতদিন তোমার হাতের থানকুনি পাতার বড়া খাইনা। তোমার হাতে ঘন করে রান্না করা ডালের কথা মনে পড়লে জিহ্বা জলে ভরে আসে। অন্যদের কাছে দামের হিসেবে এগুলো কিছুই না। কিন্তু আমার কাছে এর যে কোন তুলনা নেই। এসব মনে পড়লে এই যান্ত্রিক জীবনে এসে মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। তবু, যন্ত্রের মতো ছুটে চলি অবিরাম। সবার সঙ্গে হাসি- খেলি। এখানে সবাই সুন্দর মুখোশ পড়ে ঘুরে বেড়ায়। মনের মধ্যে থাকে কালিমা। সব কিছুই পাওয়া যায় এখানে। তবে সবই শুধু অভিনয়। এ শহরে আসল বলতে কিছু নেই। তবু এরই মধ্যে বেঁচে আছি মা। তুমি প্রাণ ভরে আশীর্বাদ রেখো। যত্ন নিও নিজের প্রতি। চিঠি দিও। চিঠি দিও মা আমার।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
খন্দকার নাহিদ হোসেন
আমার ভাবনাও অবিকল আপনার মত। আপনার লেখাটা আগে পড়লে হয়তো আমার একটা ছোট গল্প আগামী বিষয়ের জন্য পাঠাতামনা। তবে আশার কথা আমরা সবাই আমাদের নিজেদের মত করে লিখি। ও ভালো লিখেছেন।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।