সম্পর্ক

আমি (নভেম্বর ২০১৩)

আফরোজা অদিতি
প্রিয় ভাই

তুমি আমার একমাত্র ভাই অথচ বর্তমানে তোমার সঙ্গে দেখা হয় না সবসময়। দেখা হয় মাঝেসাঝে কথা হয়। অবশ্য একসঙ্গে বেড়ে ওঠা নয় আমাদের। কারণ আমি খুব ছোট বয়সে তোমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম অন্য জায়গায়। খুব কম সময়ের জন্য তোমাদের কাছে এসে থাকতাম। তাই হয়তো বা অত আন্তরিকতা গড়ে ওঠেনি। আমরা কখনও খুনসুটি করিনি, ঝগড়া মারামারি তো নয়ই। অনেকে বলে যত খুনসুটি যত মারামারি করে বেড়ে ওঠে ভাইবোনে ততো নাকি বেড়ে ওঠে আন্তরিকতা। আমার বাবা, মা আর আমরা চার ভাইবোন। আমি সবার বড়। তুমি তৃতীয়। তোমার বড় ভাই, আর তোমার ছোট একবোন। ওরা এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে অনেক দূর। আমাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে।

বাবা রাজনীতি করতেন। ¯^নামখ্যাত রাজনীতিবিদ ছিলেন তিনি। তার মনে দেশ আর দেশের মানুষ ছাড়া আর কিছু ছিল না। আর মা সারাদিন সংসারে ব্যস্ত থাকার পরে বাঁকি সময়টুকু বাবার রাজনৈতিক কাজের সহযোগি ছিলেন। আমি তো ছোট থেকেই আলাদা হয়েছিলাম। পরবর্তীতে আমরা সকলে পৃথক পৃথক হয়ে গিয়েছিলাম। তখন আমরা সকলে খুব ছোট ছিলাম। তুমি তখন আট বছরের ছিলে। ছোট বোনের ছিল ছয, আর তোমার রড় যে ভাই সে ছিল চৌদ্দতে। আমি ষোলতে। সবাই বিচ্ছিন্ন সবাই পৃথক হয়তো বা এই কারণেই আমাদের মধ্যে আন্তরিকতার অভাব ঘটেছে। রক্তের সম্পর্ক অ¯^ীকার করা যায় না, কিন্তু আন্তরিকতার অভাব হলে মাঝে মাঝে মন খুব পীড়িত হয়। আমার ওপর তোমাদের মনোভাব আমি বুঝি না। তোমাকে বুঝি না, বাবা মাকেও কখনও বুঝিনি। কখনও কখনও মনে হয়েছে তারা খুবই আপন, আবার কখনও মনে হয়েছে আমি তাদের পালিত কন্যা। আমি কেউ নই তাদের, তোমাদের। হয়তো বা সত্য হয়তো বা আমার বুঝবার ভুল। প্রিয় ভাই কিছু মনে করো না। এখন তো তুমি ছাড়া বাবা, মা, আর দুই ভাইবোন কেউ নেই। ভাই বোনের মতো বাবা মা-ও চলে গিয়েছে আমাদের ছেড়ে।

তোমার, তোমাদের সঙ্গে আন্তরিকতার কারণ হিসেবে আমার মনে হয় আমি সব কাজেই অক্ষম। কারণ যখনই যে কাজে হাত দিয়েছি বা হাত দেই তা কখনই শেষ হয় না বা ভালো হয় না বা লেগে যায় কোন ভজঘট। ওই যেমন ধর তোমার সঙ্গে একটা মেয়ের বিয়ের জন্য মাকে বলেছিলাম কিন্তু মা সেটা ভালো করে না দেখেই মেয়েটাকে উল্টোপাল্টা বকাবকি করে চলে এলো। কী অপমান বলতো ! মা হিসেবে কাজ তিনি ঠিকই করেছেন তবু অপমান ! মা তার ছেলের বউ পছন্দ করবেন এটাই বড় কথা ! আমার তো কোন অধিকার নেই। আমি একজন ঘর ছাড়া মানুষ। তোমার যখন বিয়ে হয় তখন তিনি আমাকে ডেকে বলেছেন, আমার ছেলের সংসারে যেন কোন অশান্তি না হয়। কিন্তু তুমি জানো আমি আজ পর্যন্ত তোমার সংসারে কোন অশান্তি করিনি। করেছি বলো, করিনি।

মা, তার হিসেবে ঠিক আছেন। মা আমার মনটাকে কখনও বুঝতে পারেনি। আমাদের মা কখনও আমার কাছে থাকা পছন্দ করতেন না, অথচ তোমার বউ চাইতো আমার এখানে মা থাকুক। মা, তোমাকে খুব ভালোবাসতো। কারণ আমরা যখন একাত্তরে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলাম তখন মা, তোমাকে কাছে আনতে খুবই কষ্ট করেছেন। তাই যতটা সময় পেতেন তোমার কাছে থাকতে চাইতেন। রাজনীতির কারণে আমরা সবাই বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলাম। বোনটা অসুস্থ ছিল বেশিদিন বাঁচেনি। বাঁচেনি ভাইটাও। ভাইটা যে মারা গেল বুঝতেও পারিনি। ওদের বাসা তো ছিল আমার বাসার সামনে কিন্তু ওরা কেউ বলেনি কিছু। আমিও বুঝিনি। আসলে আমি এক লেখালেখি ছাড়া সংসারের কিছুই বুঝি না। পরেরদিন সকালে ওদের বাসায় গিয়ে দেখি মারা গেছে ভাই। আমি না গেলে হয়তো বা খবরই দিতো না আমাকে। কিন্ত তারপরেও মৃত ভাইয়ের সামনেই তোমার বউএর ভাই আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে। আমি কিছু বলিনি সেসময় কিন্ত এখন পর্যন্ত সেই ব্যবহার আমার মনকে পীড়িত করে। কারণ আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করার অনুমতি তো আমি কাউকে দেই নাই। আমি তো কারো সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করি না।

তোমার বউ আমার সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করেছে, আমি তোমার বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছি। কিন্তু তুমি একবারের জন্যও আমাকে জিজ্ঞেস করোনি আমি কেন তোমার বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছি। আমি কী খাব, কোথায় যাব, কোথায় থাকব, কী ভাবে চলব। আমার চাকরি বেতন কতো ? তুমি, তোমরা, বাবা, মা কেউই জিজ্ঞেস করোনি। আমি কখনও কারো নামে নালিশ করি না করিওনি কখনও। জীবন যার যার জীবনের কষ্টও তার তার। জীবনের কষ্টের ভাগ কেউ নিতে পারে না। জীবন জীবনের মতো চলে যায়্ জীবন তো বহতা নদী। যার দুই কূল তখনও এক হয়না। জীবন এক আমি, সেই আমি অন্য এক জীবন অর্থাৎ অন্য এক আমির সঙ্গে মিশে যাওয়ার জন্য বয়ে যায় তারপর সময় হলে সেই আমির সঙ্গে মিশে যায়। সেই আমিই হলো ঈশ্বর, সেই আমিই হলো অহং। অহং অর্থ আমি। আমি ও ঈশ্বর একই। অর্থাৎ আমার মধ্যেই ঈশ্বরের বসবাস। শুধু আমার মধ্যেই নয় সব মানুষের মাঝেই থাকেন ঈশ্বর। জীবনের কষ্ট নিয়ে বা আমার জীবন সম্পর্কে তোমার ওপর বা অন্য কারো ওপর কোন অভিযোগ নেই। অভিযোগ নেই ঈশ্বরের কাছেও। কারণ আমি কখনও অভিযোগ করতে শিখিনি। অভিযোগ করতে জানি না আমি। কিছু মনে নিও না প্রিয় ভাই আমার। আমার এই চিঠি অন্যভাবে নিও না তুমি। আরো অনেক কথা আছে, যা আবার কখনও সময় হলে বা বলতে ইচ্ছা হলে বলব। কারণ অনেক সময় অনেক কথা বলতে ইচ্ছা করে না আমার।

তোমার বোন
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি গল্পের চ্ছলে বেশ সুন্দর একটা চিঠি পড়লাম........খুব ভাল লাগলো...........অদিতি আপনাকে অনেক ধন্যবাদ..............
মিলন বনিক জীবনের চিরায়ত শুক দুখের গল্প গাথা....নিটল বুনন....খুব ভালো লাগলো...
Rumana Sobhan Porag অভিমানি এক বোনের চিঠি। সব ভাইদেরই এই চিঠিটা পড়ে বোনের প্রতি নিজেদের কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিৎ।
সূর্য প্রকৃতির নিয়মেই গাছ থেকে পাতা ঝরে যায় গাছ কী কখনো পাতার কষ্ট মনে রাখে? জীবনটাই এমন, সবাই নিজের সুখটা নিয়েই ব্যস্ত....... বোনের আবেগী পত্র বেশ আবেগী করলো।
এফ, আই , জুয়েল # লেখার ষ্টাইলটা অন্যরকম । ছোট হলেও এর তা?পর্যগত দিকটা ফেলনা নয় ।।
আফরোজা অদিতি ধন্যবাদ . কেউ ভালো বললে ভালো লাগে.
জাকিয়া জেসমিন যূথী ভাইকে লেখা বোনের হৃদয়ের অকৃত্রিম আবেগের সাথে পারিবারিক অনেক কিছুই ভীষণ বাস্তবভাবে হৃদয় নিংড়ে উঠে এসেছে আপনার এই পত্রগল্পে। খুব ভালো লাগলো অন্যরকম এই চিঠি বিষয়ক পারিবারিক গল্পটা।
আলমগীর সরকার লিটন বেশ ভাল লাগল চিঠি পড়ে

০২ এপ্রিল - ২০১১ গল্প/কবিতা: ২৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪