রাস্তার মাঝে প্রচণ্ড ভিড় দেখে হঠাৎ-ই থেমে পড়লাম। ভিড় গলে বিষয়টা বুঝতে বেশ সময় লাগল। গাড়ির হর্ন আর মানুষের চাপে বিষম যন্ত্রণা। যানজট সামাল দিতে ট্রাফিকের নাভিশ্বাস অবস্থা। তবু যেন কেউ কাউকে কিছুই বলতেও পারছে না। উঁকি ঝুঁকি দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করলাম ঘটনাটা কি? একজন বলল সম্ভবত একটা দুর্ঘটনা। সামনে এগোতেই জানলাম একটা বাচ্চা মেয়ে নাকি অঝরে কাঁদছে। কেন কি কারণে কেউ বলতে পারছে না। তাকে কেউ সেখান থেকে সরাতেও পারছে না। ক্লিক ক্লিক শব্দে বুঝতে পারলাম সাংবাদিকও জুটে গেছে। কাছে গিয়ে দেখলাম একটি পাঁচ কি ছয় বছরের মেয়ে কেঁদে চলেছে অবিরাম। জিজ্ঞেস করলাম কে তুমি ? কি নাম তোমার ? বাবার নাম কি ? বাসা কোথায় ? আধো আধো গলায় সব প্রশ্নের একটাই উত্তর- প্রজাতি! মুশকিলটা হল এখানেই। সবাই ধরে নিলো মেয়েটার নাম প্রজাতি। আর কিছুই সে বলে না। শুধু-ই কাঁদে। কাঁধের ব্যাগ হাতড়ে স্কুলের নাম আর একটা ছোট্ট চিরকুটে তার মায়ের ফোন নাম্বার পাওয়া গেল। অগত্যা বাঁচা গেল। কিছুক্ষণ পর সকুলের ম্যাডাম ও খানিক বাদেই হন্ত-দন্ত হয়ে মেয়েটির মা আসলে বিষয়টা জানা গেল। মেয়েটার নাম অনতি। প্রজাপতি তার ভীষণ প্রিয়। প্রজাপতির গল্প শোনা আর আঁকা তার প্রধান কাজ। আজ ক্লাসে ম্যাডাম যখন প্রজাপতির ছবি আঁকতে বলে তখনই তার মনে পড়ে আসার সময় রাস্তার পাশে একটি প্রজাপতিকে দেখেছিল পাখনা ভাঙা অবস্থায়। অনেক কেঁদে কেটেও নির্দয় স্কুল-ভ্যান চালকের অনুমতি পায়নি শুশ্রূষা করার। বোঝাতে পারেনি ম্যাডামকেও তার মনের কষ্টটা। তাই তাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে টিফিনের জন্য। অবশেষে অপেক্ষার প্রহরটি আসতেই আর দেরি করেনি সে। রাস্তা পারাপারের ভয় বা ম্যাডাম কিংবা ভ্যান চালকের হুমকি কোন কিছুই আর তাকে আটকাতে পারেনি। কিন্তু ততক্ষণে যে তার প্রজাতির অবস্থা আশঙ্কাজনক। হাফাতে হাফাতে যখন পৌঁছল অন্তি ততক্ষণে তার প্রিয় প্রজাতি পৃথিবীর মায়া যে ত্যাগ করেছে সেটা তার অবুঝ হৃদয় বুঝতে পারল না। মা যখন দুহাত তুলে আল্লাহর কাছে কোন কিছু চেয়ে প্রার্থনা করত অন্তি মাকে বলত এটা করলে কি হয় আম্মু ! মা তখন তার গালে চুমু এঁকে বলতেন বড় হলে বুজবি রে মা। আজ সে কখন যে তার অজান্তেই কতবার আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করেছে তা নিজেও বুঝতে পারেনি সে। এ্যাম্বুলেন্স এ্যাম্বুলেন্স করে চিৎকার করেছে। কেউ শোনেনি তার অসহায় আর্তনাদ। কেউ বোঝেনি তার ছোট্ট মনের ব্যাকুলতা। ছেলে-মানুষের ছেলে খেলা হিসেবে অট্টহাসি হেসেছে। কেউ কেউ আবার বলেছে আহা রে বাচ্চা মেয়েটা রাস্তার মাঝে খেলা করছে দেখার কেউ নেই। বাবা মা'য় বা কেমন। অনেকেই ভাবছে সে হয়তো বাবা- মাকে হারিয়ে কাঁদছে। একজন সচেতনতা দেখাতে পুলিশকে খবর দিয়ে খুব গর্ববোধ করতে লাগলেন। পুলিশ তার চিরায়ত ঘটনা আড়াল করার স্বভাব অক্ষুণ্ণ রাখলো। টেলিভিশন সাংবাদিকদেরও হাজির হতে বেশি সময় লাগল না। এতো মানুষের মধ্যে একজন ও অনতির কষ্টটা বুঝতে পারল না। যে যার পেশাদারিত্বকে ভেবেছে ঘটনা কি তদন্তের চিন্তা করেছে কিন্তু তার ছোট্ট মনের ভালোবাসার জায়গায় কেউ প্রবেশ করতে পারেনি। আজ অন্তি প্রথমবারের মতো রাস্তায় নামল আর অনুভূতিহীন পৃথিবীকে দেখল।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সূর্য
একটা কষ্ট কারো বুকে শেলের মত বিধে আর বাকিরা নির্লিপ্ত। গল্পটায় ভালবাসা এবং হারানোর যে কষ্ট উঠে এসেছে একটা প্রজাপতির জন্য তা অনেকের মনকেই নাড়িয়ে দিবে না। কিন্তু যখন ৫/৬বছরের একটা শিশুর ভালবাসা এখানে চিত্রিত, যখন তার পৃথিবীটাই বাবা-মা স্কুল আর প্রজাপতিতে আবদ্ধ, তখন এই আবেগের পরিধি মাপার কোন সুচকই আর আমার ভিতরে কাজ করেনা। অসম্ভব ভাল লাগলো
সেলিনা ইসলাম
অন্তি বুঝিয়ে দিল একটা বাচ্চার হ্রদয়ে অন্যের জন্য যত খানি মানবিকতা আর ভালবাসা আছে তা বড়দের নেই যাদের কাছ থেকেই সে ভাল মানুষ হবার প্রত্যাশায় এই প্রিথিবীতে এসেছে ......ভাল লেগেছে তবে আরও একটু আশা করলে খুব কি চাওয়া হত ? শুভ কামনা ।
নাজমুল হাসান নিরো
পৃথিবীর সকল প্রজাপতির জন্য ভালবাসা রইল। এক অন্যরকম ভাবনার লেখা তবে এটি গল্প নাকি সত্য ঘটনা ঠিক বুঝতে পারলাম না। আর কাহিনীটাই এমন যে আর বেশি বিস্তৃত করা যায় না। তৃপ্তির অপূরণের দোষ তাই লেখককে দিয়ে লাভ নেই।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।