আচ্ছা বলত?আমায় কি ভালোবাস?ও------ই দূর নীলিমায় অনেক যতনে কি আমার নামটি লিখ? বাসি বাসি অনেক ভালোবাসি।বলেছিনা কত। ধ্যাৎ ছাই বাসো।বউকেতো বলতে হয় তাই বল।আচ্ছা আমি যখন বুড়ি হব তখন আমাকে কি আর তোমার ভালো লাগবে?
তুমি যখন বুড়ি হবে আমিও তখন হব বুড়। আচ্ছা কোন সুন্দরী যদি তোমার কাছে আসে।উন্মুক্ত করে অবয়ব তুমিকি তখন ভুলবে আমায়?উম্মাদ হয়ে জড়াবে তাকে? জানিনা আমি সময় তা বলে দিবে। তবে যে বললে ভালোবাস?ভালোবাসায় নিজের উপর এতটুকুন নির্ভরতা নেই? ভালোবাসা আর সেক্স কি এক হল?
এর উত্তরে নিশ্চুপ হয়ে গেল নিশুপ্তি।স্বামীর এই কথাটি কখনও সে মানতে পারেনা।কি যেন শূলের মত তার বুকে বিদ্ধ হয়।নিশুপ্তি আর তার স্বামীর মধ্যে প্রায় প্রতি রাতেই এধরনের কথা হয়।কথা বলতে বলতে এক সময় দুজনই ঘুমিয়ে পড়ে।
এদের সংসারে এখনও কোন আগন্তুক আসেনি।তবে নিশুপ্তির ননদের ৬থেকে৭ বছরের একটা ছেলে বেড়াতে এসেছে কিছুদিন আগে।ছিমছাম গঠনের নিশুপ্তি দেখতে এক্কেবারে আহামরি সুন্দরী না হলেও সুন্দরের পাল্লা তার অত হালকা নয়।আর তার স্বামী ৫ ফিট উচ্চতায় ধবধবে সাদা চেপ্টা গড়ণের দেখতে।দেখতে হ্যান্ডসাম না হলেও নিশুপ্তি কিন্তু তার স্বামীকে ভীষন ভালোবাসত।অফিষ শেষে যেটুকু সময় বাসায় থাকত সেটুকু স্বামীর জন্য বরাদ্ধ থাকত নিশুপ্তির।কিন্ত এই বাচ্চাটা আসাতে বাচ্চাটাকেও সময় দিতে হয়।
স্বামীকে নিয়ে নিশুপ্তির গর্বের সীমা ছিলনা।কেউ যদি বলত কাকে বিয়ে করলে তোমার সাথে একদমই মানায়না।সে বলত সুন্দর দিয়ে কি হবে চরিত্রই আসল।নিশুপ্তির স্বামী প্রায়ই বলত তার অফিসে আসে এমন অনেক সুন্দরী মহিলা আছে যারা তাকে চায়ের দাওয়াত দেয় কিন্তু সে যায় না।এসব কথা শুনে তো নিশুপ্তির গর্বের পাল্লা আরও ভারি হয়।আবার মাঝে মাঝে নিশুপ্তির স্বামী বলত জানো আমার এমন কিছু বন্ধু আছে যারা কাজের মেয়েদের গায়ে হাত দেয়।নিশুপ্তি বলত তুমিওকি তেমন।‘‘রুচি অত নিচে না” বলত স্বামী।নিশুপ্তির গর্বের পাল্লা বুঝতেই পারছেন কতটা ওজনধারী হল।যাক সেসব কথা আসল কথায় আসি।
কদিন ধরে কেনো জানি কিছুই ভালোলাগছেনা নিশুপ্তির।সকালে ঘুম থেকে উঠে তাড়াহুড়ো করে রান্না শেষে ননদের ছেলেকে নাস্তা খাইয়ে কাজের মেয়েটাকে কাজ বুঝিয়েই স্বামীর সাথে অফিসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। নিশুপ্তি তার অফিসে আর স্বামী যায় স্বামীর অফিস। দুজনের অফিসই পাশাপাশি যায়ও একসাথে আবার আসেও একসাথে।নিশুপ্তির মনের ভিতর কদিন ধরে যেনো কি এক অজানা কষ্ট খচখচ করে উঠে একটু পরপরই।নিশুপ্তি নীরবে এর কারন হাঁতড়ে মরে কিন্তু কিছুই খুঁজে পায়না।
কদিন ধরে কাজের মেয়েটাও কেমন জানি অন্যমনষ্ক থাকে।একটা বললে আরেকটা করে।মেয়েটার এধরনের আচরন মাঝে মাঝে নিশুপ্তিকে খুবই রাগান্বিত করে আবার মাঝে মাঝে খুব ভাবনায় ফেলে দেয়।নিশুপ্তি মেয়েটিকে খুব মায়া করত।ভাবত ছোট মেয়ে পেটের দায়ে এসেছে কাজ করতে।মেয়েটির বয়স ১৪কি ১৫ হবে।মেয়েটি কেমন যেনো পাকামো করছে।তার মধ্যে কোন জড়তা নেই কদিন থেকে।নিশুপ্তির স্বামীর সামনেও সে খুব উচ্চস্বরে কথা বলে।নিশুপ্তি মেয়েটির এমন আচরনে কি করবে বুঝে উঠতে পারেনা।
অগত্যা একদিন রাতে ঘুমুবার সময় নিশুপ্তি স্বামীকে শুধায় মেয়েটির আচরনের কথা।বলে তুমি ওর বাবার বয়েসী।ওর সাথে এমন আচরন করোনা যাতে ও প্রস্রয় পায়।নিশুপ্তির স্বামী বলে আমি ওকে মেয়ের মতই দেখি।এতে নিশুপ্তির বিশ্বাস অনেকগুন বেড়ে যায়।নিশুপ্তি আল্লাহকে বিশ্বাস করে।নিয়মিত নামায কায়েম করে।মেয়েটিও ঠিক সেভাবেই শিক্ষাপ্রাপ্ত।
প্রতিটি জীবন সুখ আর দুঃখের সমন্বয়েই গঢ়া।জীবনে কারও থাকে অর্থের কষ্ট কারওবা বিত্তের।নিশুপ্তিদের ছিলনা অর্থের কষ্ট।কষ্ট ছিল অসুস্থতার ।তার স্বামীকে মৃত্যুর দুয়ার হতে বিধাতা ফেরৎ দিয়েছেন মাত্র কয়েক মাস হল।নিশুপ্তি দিনরাত প্রার্থনা করেছিলো তখন।কারও সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হত না তার।শুধু এক বিধাতা ছাড়া।
এই স্বামীটিকে সে অনেক ভালোবাসে।হাঁসপাতালে থাকা অবস্থায় সবাই নিশুপ্তিকে বলেছিলো স্বামীকে বুঝি আপনি অনেক ভালোবাসেন?নিশুপ্তি উত্তরে চুপ ছিলো।তার স্বামীকে সে বিশ্বাস করে।মেয়েটির এমন আচরন দেখে তার মনে খটকা লাগলেও স্বামীকে সে কখনও এমন ভাবতে পারেনা।তার নিকট তার স্বামী অনেক মহান।
এবার একটু আমরা নিশুপ্তির পেছনের ঘটনাগুলি দেখি যা নিশুপ্তি দেখেনা।মেয়েটিকে নিশুপ্তি পড়াতো।তো একদিন নিশুপ্তি ছিল তার ঘরে স্বামী বসার ঘরে টিভি দেখছে সময় তখন বিকেল ৫টা হবে মেয়েটি একটি খবরের কাগজ নিয়ে গিয়ে বলল খালু এখানে কি লিখা?স্বামী অসমান সাহেব পড়া দেখাতে গিয়ে দিলো মেয়েটির ওড়না ধরে টান।সেই থেকে শুরু হল মেয়েটির শরীর নিয়ে অসমান সাহেবের খেলা।মেয়েটিও হয়ত মজাই পেয়েছিলো।ভাবত আমি দেখতে হয়ত আন্টির থেকেও ভালো তাই খালু আমাকে আদর করে এ টাইপের কিছু হবে।নিশুপ্তির ছোট হতে বড় যেকোনো ধরনের অনুপস্থিতিই লুপে নেয় তার স্বামী।ভাবছেন মেয়েটি দেখতে সুন্দর?মোটেওনা তার থেকে কয়েকগুন সুন্দর করে বিধাতা বানিয়েছেন নিশুপ্তিকে।
একদিন হঠাৎ কেজানে কিকারনে মেয়েটি সব বলে দিলো নিশুপ্তিকে।প্রায় দুমাস অতিবাহিত হবার পর মেয়েটি কেনো বলল তা কারও জানা নেই।নিশুপ্তির উপর যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।কাঁচের পাত্রের মত ঝুরঝুর করে ভেঙ্গে গেল তার এতদিনের বিশ্বাস ভেঙ্গে গেল তার ওজনধারী গর্ব।অন্তর পুড়ার কষ্ট যদি তোমরা কেউ বুঝ তবে হয়ত পারবে অনুভব করতে নিশুপ্তির কষ্টকে।আমি অবশ্য চাই না এমন কষ্টকে কেউ বুঝুক কারন কষ্টকে বুঝতে হলে যে তা পেতে হয় ভাই।মাটিতে গড়াগড়ি দিলে নিভে দেহের আগুন কিন্তু মনের আগুনকি নেভে?তবুও নিশুপ্তি মাটিতে গড়াগড়ি দেয় গলা ফাটিয়ে কাঁদে কিছুই হয়না দাউ দাউ আগুন জ্বলতেই থাকে।
তার স্বামী তার পায়ে পড়ে ক্ষমা চায় আর কখনও করবনা।নিশুপ্তি কি করবে বুঝে না মাকে ফোন দেয় এখানে আর থাকবে না।কিন্তু গিয়েওবা কি হবে একা সে কিভাবে বাঁচবে?এই দেশে একটা মেয়ের কতটা সংগ্রাম করে একা বাঁচতে হয় তা তো আমরা সবাই বুঝি।প্রশ্ন আসে আরেকটি বিয়ের কিন্তু কাকে সে বিয়ে করবে?পুরুষমানুষের উপর থেকে যে তার বিশ্বাস উঠে গেল?সে যায়নামাযে বসে বিধাতাকে স্মরন করতে লাগল বিধাতা ছাড়া কেউই রইলনা এখন আর তার।যে স্বামীকে একমাত্র অবলম্বন ভেবেছিলো যে স্বামীকে অনেক বিশ্বাস করেছিলো তার আসল রুপ উন্মুক্ত হয়ে গেল তার সামনে।পৃথিবীতে এখন আর বিশ্বাস করার মত কেউই রইল না।মা আছে কিনতু মারই এখন চলতে কষ্ট হয়।একধরনের নামায আছে যেটা পড়লে খোদা উপায় মনে জাগ্রত করে দেন। নামাযটি হল এস্তেখার নামায।নিশুপ্তি বারবার এই নামায পড়তে লাগল।
আল কুরআনুলকারিমের সুরা আনআমের ৩২ নাম্বার আয়াতে আছে ‘‘পার্থিব জীবন ক্রিড়া ও কৌতুক ছাড়া কিছুই নয়”সত্যিই তাই।আর কেউ সে কথাটি অনুভব করুক আর না করুক নিশুপ্তি ঠিকই এখন তা অনুভব করছে।যার প্রতিটি স্পর্শ তার তনুমনে শিহরন জাগাতো এখন তাকেই তার প্রচন্ড অচেনা লাগছে।যার কথা ভেবে ভেবে নিশুপ্তির সময় কখন অতিবাহিত হয়ে যেত তাকে ভাবতেই এখন তার ঘেন্না হচ্ছে।কেন এমন করল তার স্বামী।রুপ গুন যৌবন কি দেয়নি বিধাতা তাকে?পৃথিবীটাকে তার তুচ্ছ মনে হতে।
তার এতদিনের গড়া সংসার।সুন্দর করে সাজানো ড্রইং।সব সব কিছু যেনো এক মূহুর্তে মলিন হয়ে গেলো।আর আগের মত অতিব যতনে রাঁধতে ইচ্ছে হয় না,ইচ্ছে হয়না ননদের ছেলেটাকে খাওয়াতে।কিছুই ভালোলাগেনা তার।ইচ্ছে হয় সব ছেড়ে চলে যেতে কিন্তু পৃথিবীটা তার জন্য একটা বিষধর সাঁপ।তাই এখানেই থেকে গেল।
কিন্তু এই নিশুপ্তিকে দেখলে আপনারা চমকে উঠবেন।এখন সে অন্যরকম এক নারী।এ জগতের মালিক যিনি তিনি তাকে অনেক কিছু শিখিয়ে দিল যেন।এখন আর নির্ভরশীল নয় স্বামীর উপর।এখন আর স্বামীর কথা ভেবে নষ্ট করেনা সময়।এখন সে নিজেকে নিয়ে সময় কাটায়।ভাবে রবকে।জানে রব তাকে অনেক ভালোবাসে।এখন সে স্বামীকে ছাড়াও দিব্যি নাক ডেকে ঘুমুতে শিখেছে।এখন স্বামীর সম্মুখে নিজেকে উন্মুক্ত করতে বেছে নেয় আঁধার।স্বামীর নিকট এখন সে দুরের কেউ।
না পাওয়া জিনিসের প্রতি মানুষের আকর্ষণ থাকে প্রবল।জিনিসটি যখন পাওয়া হয়ে যায় কমে আকর্ষণ বেড়ে যায় বিরক্তি ভুলে যায় জিনিষটি কত মূল্যবান।নিশুপ্তির স্বামী এখন আবার নিশুপ্তির পেছন মরিয়া হয়ে ঘুরে যে নিশুপ্তিকে হারিয়েছে তাকে পাবার আশায়।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ শামছুল আরেফিন
গল্প পড়লাম। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি। গল্পে গতি ছিল। ভাল লেগেছে। তবে একটা ব্যাপারে আমার আপত্তি যে আপনি গল্পটি যেভাবে লিখছেন তাতে পড়ার সময় মনে হয় গল্পকার নিজ মুখে গল্পটি পাঠকের কাছে বর্ণনা করছেন। আমার কাছে মনে হয় এটা পরিহার করা বাঞ্ছনিয়। আপনি মুখের কথার মত না লিখে পাঠকরা যেভাবে পড়ে অভ্যস্ত সেভাবে লিখলে মনে হয় গল্পের সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পেত। তবে এটা শুধু আমার ব্যক্তিগত অভিমত এবং চিন্তাধারা। আপনার কাছে যা ভাল, সুন্দর এবং যুক্তিযুক্ত আপনি সেভাবেই লিখে যাবেন। অনেক অনেক শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।
পন্ডিত মাহী
আপনার লেখা আমি এই প্রথম পড়লাম... গল্পে কোথাও কোথাও দূর্বল বর্ণনাভঙ্গি দেখতে পেলাম। আরো চর্চা প্রয়োজন, নিয়মিত লিখুন। তাতে আমরা আরো ভালো লেখা পাবো।
আশা
মানুষের ভেতর যে মনটি আছে, তার মালিকানা বিধাতার হাতে। তবু মনের পবিত্রতা রক্ষার দায়িত্ব তিনি মানুষের উপরই ছেড়ে দিয়েছেন। আপনার এ গল্পটি মনের পবিত্রতা রক্ষায় কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখবে। নিশুপ্তির চারিত্রিক বৈশিষ্ট প্রশংসনীয়।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।