আছমার গল্প

শ্রম (মে ২০১৫)

আলমগীর মাহমুদ
  • 0
দিন শেষে যা আয় হয় তা নিয়েই খুশী আসমা। সারাদিনের কাজ শেষে কিছু টাকা নিয়ে যখন বাড়ি ফিরে তখন মনের ভেতরে অন্য রকম একটা আনন্দ অনুভব হয়। বাড়ি বাড়ি শাড়ি-কাপড় বিক্রি করে সে। কোনদিন বিক্রি হয়, কোনদিন হয়না। সারাদিন হেটে হেটে এ বাড়ি, ও বাড়ি যেয়ে শাড়ি কাপড় বিক্রি করা অনেক খাটুনী। কিন্তু আসমা জানে এটা না করলে তার ছেলে-¯^ামী না খেয়ে থাকবে। তাই যা পায় তা নিয়ে খুশী আসমা।
ফিরতি পথে রাস্তায় দেখা হয় অনেকের সঙ্গে। চায়ের দোকানে একটু জিড়িয়ে নেয় আসমা। দোকনদার খুব বেশী বয়স না। আসমাকে সে ভালবসাতে চায়। দোকানের সামনে দিয়ে আসমা যখন যায় তখন অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে দোকানি আসমত আলী।কারণ আসমা একটু মুখরা কিসিমের। কাউকেই সে পরোয়া করেনা। সৎ ভাবে রোজগার করে বলে ¯^ামী-সন্তান নিয়ে সুখেই আছে। চায়ের দোকনাদার আসমত আলী চা বানাতে বানাতে আসমার দিকে আড় চোখে তাকায় কিন্তু পরক্ষণেই চোখ ফিরিয়ে নেয় সে পাছে ধরা পড়ে এই ভয়ে। আসমা আসমত আলীর দিকে তাকিয়ে থাকে।
- কি মিয়া চা বানাও না কেন, আমার দিকে চাইয়া থাকলে হইবো নাকি
- আসমত আলী ইতস্তত করে বলে ‘এই যে হইয়া গেছে’
- কই হইয়া গেছে, এহনো চায়ের মধ্যে চিনিই দেওনাই
- দিতাছি, দিতাছি
- ঐ মিয়া তোমার হাত কাঁপে কেন
- তোরে দেখলে আমি চা বানাইনা ভুইলা যাই
- তাইলে এক কাম করো চা বানান বাদ দিয়ে আমার দিকে ফেল ফেল কইরা তাকাইয়া থাকো
- না কইছিলাম কি
- চুপ করো মিয়া, একটু কথা বলছি বইলা এক্কেবারে গদগদাইয়া পড়ছো, দেও চা দেও

আসমত আলী থতমত খেয়ে আসমাকে চা দেয়। আসমা গরম চা পিরিচে ঢেলে খুব আয়েশ করে খায়। আসমত আলী চেয়ে থাকে ফেল ফেল করে। আসমা চা খেয়ে আঁচলের গিট থেকে টাকা বের করে আসমত আলীকে দেয়
- এই নেও টেকা
- (হকচকিয়ে উঠে) টেকা লাগবোনা
- কেন টেকা লাগবোন কেন
- না মানে তোরে এক কাপ চা খাওয়াতে পারাতো ভাগ্যের কথা
- পিরিতের পেছাল পাইরোনা মিয়া, ধরো টেকা নেও, আর দুইডা কলা দেও।

আসমত আলী টাকা নিয়ে দুটি কলা দেয় আসমাকে। আসমা কলা নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দেয়। আসমত আলী অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে আসমার দিকে।

আসমার ¯^ামী আ: রহিম অনেক দিন যাবত বিছানায় শোয়া। শহরে সে গাড়ি চালাত। এক দুর্ঘটনায় তার দুটি পা নষ্ট হয়ে যায়। সে থেকে আসমা সংসারের হাল ধরেছে। ¯^ামী-সন্তানের কথা চিন্তা করে এ সংসার ত্যাগ করেনি আসমা। বরং ত্যাগ করেছে তার জীবনের অনেক কিছুই। রহিমকে সে ভালবেসে বিয়ে করেছে। আসমার বাবা-মায়ের অবস্থা মোটামুটি ¯^চ্ছল। দুজনে পালিয়ে বিয়ে করেছে বলে আসমার বাবা-মা কখনোই এ বিয়ে মেনে নিতে পারেনি। ¯^ামীর প্রতি অগাধ বিশ্বাস আর ভালবাসা তার। তাই ¯^ামীকে ত্যাগ করেনি। ভালবেসে সংসার গড়েছে। এ সংসারে সন্তান এসেছে। রহিম মিয়া কোন কাজ না পেয়ে শেষে ড্রাইভিং শিখে শহরে গাড়ি চালাত। হঠাৎ একদিন দূর্ঘটানায় রহিম মিয়ার দুটি পা নষ্ট হয়ে যায়। সে থেকে সে বাড়িতে। আসমার বাবা-মা আসমাকে ফিরিয়ে নিতে চেয়েছিলে। বলেছিলে পঙ্গু ¯^ামীর ঘর না করতে। ¯^ামীকে পঙ্গু বলায় আসমার খুব জেদ হয়েছিলে বলে আর কখনো বাবা-মায়ের কাছে ফিরে যায়নি আসমা। বরং পঙ্গু ¯^ামীকে নিয়ে যুদ্ধ করছে জীবনের সাথে। গ্রামের লোকজন প্রায়ই বিরক্ত করে আসমাকে। গ্রামের জুয়ান-মরদ সবাই। আসমা মুখের ভাষার কাছে আর কেউ এগুতে পারেনি।

একবার গ্রামের নব্য ধনি আনোয়ার খাঁর ছেলে মিজান রাস্তা আটাকায় আসমার।
- দাঁড়াও আসমা তোমার সঙ্গে আমার দুটো কথা আছে
- কথাতো অনেক হইছে মিজান ভাই, আপনে আমারে বারবার বিরক্ত করেন কেন
- কেন বিরক্ত করি তুমি বোঝনা
- না বুঝিনা, আর বোঝনের আমার কোন দরকার নাই। আপনে আমার রাস্তা ছাড়েন
- আইজকা যখন রাস্তা আটকাইছি, রাস্তা আর ছাড়–ম না, তুমি রাজি না হওয়া পর্যন্ত
- হারামজাদা, তোরে যদি জুতা দিয়া না পিটাইছি আমার নাম আসমা না
(আসমা জুতা হাতে নেয়, মিজানকে তেড়ে যায়)
- দেখ আসমা বালা হইবোনা কইলাম
- ভালা হইবো কি খারাপ হইবো হেই চিন্তা পরে করুমনে, তরে আইজকা আমি শিক্ষা দিয়াই ছাড়–ম
(মিজান চারদিকে চেয়ে জোড়ে দৌড় দেয় সামনের দিকে, আসমাও পেছনে পেছনে জুতা নিয়ে দৌড়ায়).

এ ধরণের অনেক ঘটনাই ঘটেছে আসমার জীবনে। পঙ্গু ¯^ামীর দিকে চেয়ে কারো কথাতে টলেনি আসমা। ¯^ামীর প্রতি অগাধ বিশ্বাস আর প্রচন্ড রকমের ভালবাসা আসমাকে প্রতিবাদি হতে শিখিয়েছে।

আসমা বাড়ি ফিরে আসে। ¯^ামী ভাঙ্গা ঘরের বারান্দায় শুয়ে। ছেলেটা পাশে বসে পড়ছে। আসমা বাড়িতে ঢুকে ¯^ামীর দিকে এক নজর তাকিয়ে থাকে। লোকটার জন্য খুব মায়া হয় আসমার। সারা দিন শুয়ে-বসে থাকা। কত আর ভাল লাগে। তাই ¯^ামীর প্রতি মায়া একটু বেশীই
- শইলডা আইজকা কেমুন লাগতাছে
- ভালাই, আইজকা একটু দেরী হইলো যে, কোনহানে গেছিলানি
- না কই আর যামু, দোকানে একটু চা খাইলাম, নেও কলাডা খাও, তুম্ওি একটা নেও বাজান
- তুমি আমার জইন্য কত কষ্ট করো
- কষ্ট না করলে সংসার চলবো কেমনে কও-----। বাজান তুমি মন দিয়া লেখা-পড়া করতাছোতো
- হ মা, আমি মন দিয়া পড়া-লেখা করি,
- তোমারে অনেক বড় হইতো হইবো বাজান, চাকরী কইরা তুমি আমাগো কষ্ট দুর করবা
- মা তুমি শুধু আমার লাইগা একটু দোয়া কইরো, আমি যেন তোমাগো সুখে রাখতে পারি
- দোয়া করি বাবা, অনেক বড় হও। তোমার বহ, আমি রাইতের খাবার রান্না করি।

আসমা চুলায় আগুন ধরায়। চুলার আগুনে আসমার মুখ লাল হয়ে উঠে। সারাদিনের খাটুনির পড় আসমার শরীরে কুলাতে চায়না। কিন্তু রান্না না করলে ¯^ামী-সন্তানকে না খেয়ে থাকতে হবে। তাই সব কষ্ট বুকে চেপে রেখে ভাত চাপায় চুলায়।

আসমা রান্না শেষ করে ঘরের উঠানে রাতের খাবার সাজায়। সবার পাতে খাবার দিয়ে হাত পাখা নিয়ে বাতাস করতে থাকে। ¯^ামীর দিকে তাকায় আসমা। ¯^ামী মুখে খাবার তোলার সময় জিজ্ঞেস করে
- কি ব্যাপার আসমা, তুমি খাইবানা
- তোমরা খাও, আমি পরে খামুনে
- পরে আর কহন খাইবা, রাইত মেলা হইছে, নেও প্লেট নেও, খাইয়া নেও, সরাদিন কত খাটুনি কর। আল্লায় আমারে পঙ্গু বানায়া রাখছে। নাইলে কি আর---
- চুপ, খাবার সামনে নিয়া বেশী কথা বলতে নাই
- তাইলে তুমি আমাগো লগে খাও
আসমা অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে ¯^ামীর দিকে। ¯^ামীর অসহায়ত্ব আরো বেশী ¯^ামীর প্রতি দুর্বল করে দেয় আসমাকে।

রাত বাড়ে। চাঁদের আলো বাড়ির উঠানে পড়ে। আসমা আনমনে বাইরে বেরিয়ে আসে। চাঁদের আলো তার মনের মধ্যে কিছু আলো ছড়িয়ে দেয়। রহিমের সাথে পুরনো দিনের স্মৃতি তার চোখে ভেসে উঠে। বারান্দার খুটিতে হেলান দিয়ে বসে ফিরে যায় পুরনো দিনে। রাতে বাড়ে ক্রমশ। হঠাৎ দুটি শক্ত হাত আসমার গলা টিপে ধরে। চিৎকার করে উঠে আসমা। আরো কয়েকটি শক্ত হাত আসমার মুখ চেপে ধরে। আসমার চিৎকারে জেগে উঠে রহিম মিয়া। বুঝতে পারে সে আসমার কোন বিপদ হয়েছে। ছেলেকে সে ঘুম থেকে জাগায়না। নিজেই গড়িয়ে গড়িয়ে দরজার কাছে আসে, দরজা ফাঁক করে দেখে কয়েকজন লোক আসমার সাথে ধস্তাধস্তি করছে। রহিম মিয়া বাঁচাও বাঁচাও বলে জোড়ে চিৎকার করতে থাকে। দু-একজন রহিম মিয়াকে ধরতে আসে, রহিম মিয়া আরো জোড়ে চিৎকার করতে থাকে।
- কে আছো বাঁচাও, আমাগো মাইরা ফালাইলো

মুুহুর্তের মধ্যে আসে-পাশের লোকজন চলে আসে আসমার বাড়িতে। ঘেরাও করে ফেলে সবাইকে। লাইট মেরে দেখে মিজান আর কয়েকজন। সবাই মিজান আর তাদের লোকদের ধরে ফেলে। আসমা দৌড়ে গিয়ে ¯^ামীকে জড়িয়ে ধরে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
নাসরিন চৌধুরী ভাল লেগেছে যদিও লেখা ভেঙ্গে যাওয়াতে পড়তে কষ্ট হচ্ছিল।ভাল থাকুন
এমএআর শায়েল লেখা এতটা ভেঙ্গে পড়লে পড়া যায়না। আহত হই। লেখা আপলোড করার সময় ইউনিকোডে লিখবেন। যেন ভেঙ্গে না যায়। দাদা, আমি কিন্তু আমার লেখায় আপনার কমেন্ট পাইনি। আশা করছি, শ্রম সংখ্যায় আমার লেখা ভিন্নধর্মী গল্প-‘আর কতদূর’ গল্পটি পড়ার আমন্ত্রন জানাচ্ছি। সাথে গঠনমূলক সমালোচনা আশা করছি। আপনার সৃজনশীল মন্তব্যে আমি উপকৃত হব এবং মামলা সাহিত্য পাবে নতুন মাত্রা।
গোবিন্দ বীন ভাল লাগল,পাতায় আমন্ত্রন রইল।
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্ আছমার সংসার আর স্বামী-সন্তানের প্রতি ভালবাসা আমাদের আজকের সমাজকে এই গল্পের মাধ্যমে যে শিক্ষা দিল, তা থেকে আমরা যদি কিছু গ্রহণ করতে পারি, নিঃসন্দেহে সমাজ, দেশ, জাতি অনেক উপকৃত হবে, সেই সাথে উপকৃত হ’বো আমরাও । বেশ ভাল লাগল গল্পটা । শুভ কামনা এবং ভোট রেখে গেলাম ।

১৬ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ২২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪