দৃঢ়তা

ভয় (এপ্রিল ২০১৫)

আলমগীর মাহমুদ
বড় হয়ে ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা, ইচ্ছা ডাক্তার হয়ে গ্রামের অবহেলিত ও দরিদ্র মানুষদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা করা। কুলসুমের এ ইচ্ছা পূরণ হওয়ার অনেক বাঁধা। বাবা গরিব কৃষক। চাষের জমি নেই, অন্যের জমিতে কাজ করে। মা অন্যের বাসায় কাজ করে। তারপরও কুলসুমের মনোবল খুব দৃঢ়। বেশ কয়েকবার বিয়ের প্রস্তাব এলেও কুলসুম খুব দৃঢ় ভাবে এগুলো ফিরিয়ে দিয়েছে। বাবা বারবার চেষ্টা করেছে বিয়ে দেবার, কিন্তু কুলসুম তা কখনো হতে দেয়নি।

ভাল ভাবে মাধ্যমিক পাশ করে কুলসুম ভর্তি হয়েছে উচ্চ মাধ্যমিকে। কলেজ অনেক দুর। হেটে যেতে হয়। তারপরও কুলসুমের উৎসাহের কোন কমতি নেই। গ্রামের অন্যরা যখন ভ্যান গাড়িতে করে কলেজে যায়, সেখানে কুলসুম পায়ে হেটে যায়। কিছুই করার নেই। অভাবের সংসারে লেখা-পড়া করা যেন বিলাসিতা। তারপরও থেমে নেই কুলসুম। কলেজের শিক্ষকরা কুলসুমকে সাহায্য করে লেখা-পড়ায়। সবারই ধারণা কুলসুম একদিন বড় কিছু হবে। হয়তো কুলসুম তার লক্ষ্যে পৌঁছুবে।

প্রতিদিনের মতো কুলসুম কলেজের পথে রওনা হয়। কিছু দুর যেতেই পথের মাঝে এসে দাঁড়ায় নাঈম নামের এক বখাটে যুবক। পথরোধ করে কুলসুমের।

নাঈম ঃ দাঁড়াও কুলসুম
কুলসুম ঃ পথ ছাড়েন নাঈম ভাই
নাঈম ঃ কুলসুম, তুমি আমাওে এত ভয় পাওনা কেন ?
কুলসুম ঃ আপনাওে আমি ভয় পাই, কেডা কইলো ?
নাঈম ঃ এই যে, তুমি আমাওে দেখলে কেমন যানি হইয়া যাও
কুলসুম ঃ আমারে যাইতে দেন, নাঈম ভাই, কলেওে দেরী হইয়া যায়
নাঈম ঃ যাইবা, যাইবা, কলেজেই যাইবা, কিন্তু আমার একটা কথার জবাব দিয়া যাও
কুলসুম ঃ আমার কথার জবাব দিতে আমি বাধ্য নই
নাঈম ঃ আমার কথার জবাব দিয়া না গেলে তোমাওে আমি যাইতে দিমুনা
কুলসুম ঃ আমি কিন্তু লোক ডাকুম, চিৎকার দিমু
নাঈম ঃ চিৎকার দিবা দেও, লোক ডাকবা, ডাকো, তারপরও আমার কথার জবাব দিতে হইবো
কুলসুম ঃ আমি আপনারে আগেও বলছি, অহন বলতাছি, আপনে আমাওে বিরক্ত কইরেন না। আর আপনারে আমার ভাল লাগেনা।

নাঈম কুলসুমের হাত ধরতে চায়, কিন্তু কুলসুম দৌড়ে চলে আসে বাড়িতে। বাবা বাড়িতে না থাকায় মাকেই সব কিছু বলে কুলসুম। কুলসুমের মা কুলসুমের কথা শুনে ভয় পেয়ে যান। তিন জানেন নাঈম ভাল ছেলেনা। কখন কি করে বসে, ঠিক নেই। রাতে যখন কুলসুমের বাবা বাড়ি ফেরে কুলসুমের মা সব কিছু খুলে বলে। শুনে কুলসুমের বাবা বলে

বাবা ঃ আমি আগেই কইছিলাম, এমন একটা কিছু হইবো, এই জন্যই মাইয়াওে বিয়া দিতে চাইছিলাম। আমার কোন কথা শুনলনা, আমি এহন কি করুম, কার কাছে গিয়া বিচার দিমু
মা ঃ আমি কই কি, মাথা গরম কইরা লাভ নাই, আপনে কলেজের স্যারের কাছে গিয়া ঘটনা খুইলা কন, তারা একটা ব্যবস্থা করবোই।

কথাটি কুলসুমের বাবার খুব মনে ধরে। সে তার পরদিনই চলে যায় কলেজে, কলেজে গিয়ে স্যারের কাছে সব ঘটনা খুলে বলে। স্যার নাঈমকে ডেকে সাবধান করে দেবেন বলে জানান। কিন্তু এতে কুলসুমের বাবার মনে শান্তি হয়না। অজানা একটা ভয় কুলসুমের বাবার মনের মধ্যে বার বার আঘাত করে। কারণ সে জানে নাঈম ভাল ছেলেনা, তার উপর ওর বাবা খুব প্রভাবশালি। একবার ভাবলেন ওর বাবার কাছে গিয়ে বিচার দিবেন, আবার ভাবলেন ওর বাবা যদি বিচার না করে। কোন কিছুই মাথায় ঢোকেনা কুলসুমের বাবার। অজানা ভয় আর শংকা নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে কুলসুমের বাবা।

কলেজের শিক্ষকরা কয়েকজন মিলে নাঈমকে খবর দেয় এবং সাবধান করে দেয়, যাতে আর কোন দিন কুলসুমকে বিরক্ত না করে। এতে করে নাঈম খুব রেগে যায়। সে অপামান বোধ করে। শিক্ষকদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসে নাঈম এবং কুলসুমকে শিক্ষা দেওয়ার মতলব আটে মনে মনে।

পরের দিন সকাল বেলা, কুলসুমের বাড়িতে গিয়ে হাজির নাঈম। কুলসুমের বাবাকে সালাম দিয়ে ঘরের পিড়ায় বসে। তারপর বলে যে, সে কুলসুমকে বিয়ে করতে চায়। এ কথা শুনে কুলসুম ঘর থেকে বেরিয়ে আসে এবং নাঈমের প্রস্তাব সে ফিরিয়ে দেয়। কুলসুমের বাবা নাঈমকে বোঝাবার চেষ্টা কওে যে, মেয়েটা লেখা-পড়া করছে, লেখা-পড়া শেষ হলে তারপর বিয়ে দিবে। কিন্তু নাঈম বলে যে, এখনই সে কুলসুমকে বিয়ে করতে চায়, আর না হলে এর শেষ দেখে নেবে সে। এ কথা বলে চলে যায় নাঈম।

কুলসুমের বাবা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে ঘরের ভিটায়। কি করবে সে কিছুই বুঝতে পারেনা। কুলসুমের মা এসে বলে যে, নাঈমের বাবার কাছে বিচার দেওয়ার জন্য। কিন্তু কুলসুমের বাবা নাঈমের বাবার কাছে যেতে চায়না, কারণ সে জানে বিচার দিয়ে কোন লাভ হবেনা। তারপরও কুলসুমের মায়ের অনুরোধে নাঈমের বাবার কাছে যেতে চায় কুলসুমের বাবা। বিকেলে কাজ থেকে ফেরার পথে নাঈমের বাবার সাথে দেখা হয়ে যায় কুলসুমের বাবার। সে নাঈমের বাবাকে সব ঘটনা খুলে বলে। কিন্তু নাঈমের বাবা কথার কোন গুরুত্ব না দিয়ে বলে যে, ছেলে-পুলেরা এ বয়সে এমন একটু করেই। এতে করে চিন্তার কোন কারণ নাই। নিরাশ হয়ে ফিরে আসে কুলসুমের বাবা। কি করবে সে বুঝে উঠতে পারেনা। ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে সে।

কিছু দিন নাঈম কোন বিরক্ত করেনা কুলসুমকে। কুলসুম ভাবলো নাঈম বোধ হয় আর বিরক্ত করবেনা। কিন্তু বিধি বাম। হঠাৎ একদিন কলেজ যাওয়ার পথে নাঈম কুলসুমের পথ আটকায়। কুলসুম ভয় পায়না। নাঈম বিশ্রি ভাষায় কথা বলে কুলসুমের সাথে। কুলসুম লজ্জায় মুখ ঢেকে রাখে। নাঈম হঠাৎ করেই কুলসুমকে রাস্তার মাঝে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করে। কুলসুম নাঈমকে ধাক্কা দেয় এবং পা থেকে জুতা খুলে নাঈমকে মারথে থাকে। নাঈম হতবাক হয়ে যায়, কুলসুমের এ আচরণে এবং কিছুই বুঝে উঠার আগে কুলসুম বলে সব মেয়েকে সমান মনে করলে আপনার ভুল হবে নাঈম ভাই। আপনার বোন বিদ্যালয়ে পড়ে। আমারে অপমান করলে কেউ না কেউ আপনার বোনকে অপামান করবে। কথাডা মনে রাইখেন। আমি ভয় পাওয়ার মাইয়া না, মরতে একদিন হইবোই। আপনে যে রকম করবেন, আপনার উপরেও সে রকম বিপদ ঘনায়া আসবো।

কুলসুম চলে যায়। পড়ে থাকে নাঈম, কি যেন চিন্তা করে, তারপর নিজের উপর থুথু ছিটিয়ে চলে যায়।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ফরহাদ সিকদার সুজন ভালো লাগলো....ভোট রইলো। আমার পাতায় আমন্ত্রণ রইলো।
নাসরিন চৌধুরী এভাবেই সাহসী হোক বাংলার প্রতিটি নারী। কিন্তু আসলেই কতটা পারে নারীরা! লাখো মানুষের সামনে নারীর কাপড় খুলে নেয় নাঈমের মতঁ জঘন্য কীটগুলো---ভাল লিখেছেন। শুভকামনা ও ভোট রইল
এস আহমেদ লিটন বেশ অর্থবোধক। শুভেচ্ছা নিবেন।
এমএআর শায়েল চমৎকার গল্প। আশা করি,♥আমার লেখা ♥সে কেন এমন করল♥ পড়বেন আশা করি।
ফারুক নুর "আমারে অপমান করলে কেউ না কেউ আপনার বোনকে অপামান করবে। কথাডা মনে রাইখেন। আমি ভয় পাওয়ার মাইয়া না, মরতে একদিন হইবোই। আপনে যে রকম করবেন, আপনার উপরেও সে রকম বিপদ ঘনায়া আসবো। " এই সামান্যবোধ আমাদের সমাজে অনেকেরই হয় না। ভালো লিখেছেন
আখতারুজ্জামান সোহাগ ইভ টিজিং একটা বড় সমস্যা আমাদের সমাজে। আপনার গল্পে সেটা দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। বেশ ভালো লাগল। শুভকামনা আপনার জন্য।
শামীম খান গল্পের বিষয়বস্তু পরিষ্কার । খুব ভাল লেগেছে এটাকে সুন্দর করে তুলে আনার জন্য । শুভ কামনা আর অভিনন্দন । ভোট প্রাপ্য ।
Tumpa Broken Angel চমৎকার গল্প। সামাজিক অসঙ্গতি ইভটিজিং এর বিরুদ্ধে এটা একটা প্রতিবাদ হতে পারে। এমন গল্প আরো লিখুন।

১৬ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ২২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪