হাবু মিয়ার খুবই শখ হয়েছে এবারের বৈশাখে ইলিশ খাবে। কিন্তু বউকে সে এ কথাটা কিভাবে বলবে সেটাই ভেবে পাচ্ছেনা। বউকে ইলিশের কথাটা বললে বউ ইলিশের পরিবর্তে বৈশাখের জন্য একটা শাড়ি কিনেত চাইবে। কারণ ইলিশের যে দাম সে দামে একটি শাড়িও পাওয়া যাবে। হায়রে ইলিশ, জাতীয় মাছ, তারপরও এত দাম। খাওয়ার ¯^াদ হলেও খাওয়া যায়না। আবার ¯^াদ মিটেনা সাধ্যের কারণে। বউয়ের কাছে একটি ইলিশের চেয়ে একটি লাল পাড়ের শাড়ির অনেক দাম। গত বছর ইলিশের কথা বলতেই বউ খেকালি দিয়ে বললো
- ইলিশ মাছতো প্রায়ই খাও, তা আবার বৈশাখে ইলিশে কোন মহত্ব আছে নাকি যে ইলিশ খেতেই হবে। নাকি বৈশাখের ইলিশ ¯^র্ণ দিয়া বাঁধানো
- না বলছিলাম যে, অন্য সময় খাওয়া, আর এই সময়ে খাওয়া, তাকি এক হলো ?
- কেন ? এক হবে না কেন ? ইলিশের গায়ে কি লেখা আছে, এটা বৈশাখের ইলিশ ?
- না তা নেই, কিন্তু
- চুপ করো, কথা না বাড়িয়ে বাজারে যাও, চাল-ডাল কিছুই নেই। আর ---
হঠাৎ বউ গলার ¯^র নামিয়ে আদুরে গলায় বললো, “শোননা, মাছ খেলোতো খেয়েই ফেললো। তাছাড়া ইলিশতো প্রায়ই খাওয়া হয়, এখনতো অনেক দাম, কিছুদিন পরে খেলেই হয়। আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি, তোমাকে একটা আস্ত ইলিশ ভেজে খাওয়াবো, কিন্তু..
বউয়ের গলার ¯^র নরম শুনতে পেয়ে হাবু মিয়া বুঝে গেছে যে, বউয়ের এবার একটা আবদার ধরবে
- কিগো অতো কি চিন্তা করছো, নরম গলায় বউ বলে উঠলো
- না মানে তুমি যে বললো কিন্তু, সে কিন্তুটা কি
- কিন্তুর একটা মানে আছে, তুমি আসলে কিছুই বোঝনা
- বোঝার মতো তো কিছুই বলনি যে বুঝবো
- আসলে, তুমি যে ইলিশ খেতে চাইছো, এখনতো ইলিশের অনেক দাম, তাই বলছিলাম কি-- তুমি যদি ভাল মনে নাও তাহলে
- তাহলে
- না মানে, ঐ টাকায় একটা সুন্দর লাল পাড়ে শাড়ি পাওয়া যাবে, বৈশাখি এক্সক্লুসিভ
হাবু মিয়ার আর বুঝতে বাকি রইলোনা। গত বৈশাখের এ ঘটনার পরে অবশ্য তার বউ তাকে আস্ত ইলিশ ভেজে খাইয়েছিলো। কিন্তু তার কাছে মনে হয়েছিলো বৈশাখের ইলিশ মানেই অন্য রকম কিছু। বৈশাখের প্রথম দিন যদি ইলিশ ভাজা খাওয়া না যায় তাহলে বৈশাখটাই মাটি। তাই হাবু মিয়া সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো এবার আর শাড়ি নয় ইলিশই নিয়ে আসবে, আর বউকে কিছুই বলা যাবেনা।
হাবু মিয়া বউকে না জানিয়ে ইলিশ মাছ আনার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো। যেহেতু বৈশাখ আসতে আর বেশী দেরী নেই। দু-একদিনের মধ্যেই বাজারে যেতে হবে।
হাবু মিয়া রাতে টিভির নিউজ দেখতে বসেছে। সে মনযোগ দিয়ে নিউজ দেখছে। নিউজের এক পর্যায়ে ইলিশের খবর দেখে হাবু মিয়ার চোখ কপালে উঠে গেলো। ছোট ছোট ইলিশ, এক হালি ছোট ইলিশের দাম চার হাজার টাকা। হাবু মিয়ার মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো। “বলে কি লোকগুলো এক হালি ছোট ইলিশ এক হাজার টাকা। মিডিয়ার এই এক দোষ, এসব খবর প্রচার করে করে ইলিশ মাছের দাম আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। এরা কি আর কোন নিউজ পায়না, ইলিশের দাম প্রচার করতে হবে, এই প্রচার করে করেই ইলিশের দামের এ অবস্থা”।
হাবু মিয়া কি করবে বুঝতে পারছেনা। এরই মাঝে হাবু মিয়ার স্ত্রী এসে পাশে বসলো। হাবু মিয়ার হাত থেকে ছো মেরে নিয়ে গেলা রিমোট, তারপর জি-টিভি। হাবু মিয়ার মেজাজ আরো খারাপ হয়ে গেলো। কি করবে বুঝতে পারছেনা। বউকেও কিছু বলতে পারছেনা। কারণ সিরিয়াল না দেখতে পারলে তার ঝাল মেটাবে হাবু মিয়ার উপর। অতএব, হাবু মিয়া চুপ করে ঘরের বাইরে বারান্দায় গিয়ে বসে রইলো। মনের দু:খ মনেই চেপে রইলো।
কিছুক্ষণ পর হাবু মিয়ার স্ত্রী তার পাশে এসে বসলো। হাবু মিয়া কিছুই বললোনা। তার চিন্তা শুধু ইলিশ নিয়ে। স্ত্রী তার পাশে এসে বসে বললো
- আমি জানি তুমি এখন কি ভাবছো
- আমি আবার কি ভাবছি
- না ভাবছো যে, ইলিশের যে দাম, তাতে এ বৈশাখেও হয়তো ইলিশ খাওয়া হবেনা
- না আমি ইলিশ নিয়ে ভাবছি না
- না ভাবলেই ভালো, তাহলে কি নিয়ে ভাবছিলে
- না ভাবছিলাম, মানুষ যে কেন বৈশাখে ইলিশ খায়, বুঝিনা। ইলিশ না খেয়েতো অন্য কিছু খেতে পারে
- অন্য কিছু কি ভাবে
- না ধরো এই তোমার মোরগ-পোলাও খেতে পারে, তাহলে সারা বছর মোরগ-পোলাও খেতে পারবে।
- তা তোমার হঠাৎ এমন চিন্তা মাথায় এলো কি করে
- না তুমি ভাবো, এক হালি ইলিশের দাম চার হাজার টাকা, চার হাজার টাকা দিয়েও ভালো করে পোলাও-কোর্মা খাওয়া যায়
- ঠিক আছে, তাহলে এ বৈশাখের প্রথম প্রহরে আমরা ইলিশ-পান্তা না খেয়ে মোরগ পোলাও খাবো
- না মানে, ধরগে বৈশাখের প্রথম প্রহরে পান্তা খাওয়া খুবই একটা অন্য রকম ব্যাপার
- অন্য রকম ব্যাপারতো বটেই, কিন্তু পান্তা দিয়ে ডিম ভাজা কিন্তু আরো মজা, অনেক ¯^াদ
- তারপরও ইলিশ ইলিশই
- না তুমি দেখো চিন্তা করে দেখো, পান্তা কিন্তু আল ভর্তা দিয়ে আরো বেশী মজা, আরো বেশী ¯^াদ
- হ্যা তা ¯^াদ, আর তাতে যদি এক টুকরো ইলিশের ভাজা দেওয়া যায়, তাহলেতো কথাই নেই
বউ এবার খেকালি দিয়ে উঠলো।
- তোমার মুখে ঐ একই কথা, ইলিশ আর ইলিশ, কেন আলু ভর্তা দিয়ে পান্তা খেলে কি হবে, বউলে জোড়ে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো
- না কি আর হবে, ইলিশের ¯^াদ কি আর পাওয়া যাবে ?
- তুমি চুপ করো, খেতে আসো
হাবু মিয়া, চুপচাপ খেতে চলে গেলো। রাতের খাবার খেতে গিয়ে হাবু মিয়া অবাক হয়ে গেলো। তার পাতে ইলিশের ভাজা। হাবু মিয়া কি বলবে কিছুই বুঝে উঠতে পারলোনা। বউকে জিজ্ঞেস করলো ইলিশ মাছ কোথায় পেলো। বউ কিছুই বললোনা, শুধু বললো খাও। হাবু মিয়া চুপচাপ খেয়ে উঠলো। উঠে গিয়ে হাত ধোয়ার সময় বললো, “শোন বৈশাখের প্রথম প্রহরে পান্তার সাথে ইলিশ ভাজার কিন্তু অন্য রকম ¯^াদ। আর ইচ্ছে করলে তুমি একটি শাড়িও কিনতে পারো”।