আফজাল আর ওর বন্ধুরা

ভৌতিক (ডিসেম্বর ২০১৮)

আলমগীর মাহমুদ
  • ৪৪
আফজাল আরিফ দুজনেই খুব ভাল বন্ধু। আরিফ একটু ভিতু প্রকৃতির হলেও আফজাল খুব সাহসী। তাই আরিফ সবসময় আফজালের সাথেই থাকতে চায়। দুজনের সখ্যতাও অনেক দিনের। গ্রামের আর দু-চারজন যে বন্ধু আছে তাদের চেয়ে আফজাল আর আরিফের সখ্যতা বেশি। একদিন গ্রামের অন্য বন্ধুদের নিয়ে আফজাল আর আরিফ গেল আফজালের নানি বাড়িতে। আফজালের নানি বাড়ি অনেকটা দূর হলেও হেঁটে যাওয়ার যায়। তাই ওরা হেঁটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। কারণ যাওয়ার সময় অনেক কিছু দেখা যাবে অনেক কিছু খাওয়াও যাবে পাশের জমি থেকে। তাই ওরা হাঁটা শুরু করলো এবং যথাসময়ে নানি বাড়িতে পৌঁছে গেল। কিন্তু বিপত্তি ঘটল আসার সময়। সন্ধ্যা প্রায় হয়ে গেছে। আফজালের নানি বাড়িতে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নেই বলে কেউ আর থাকতে চাইলো না। তাই সন্ধ্যার আগেই ওরা সবাই হাঁটা শুরু করলো। অল্প দূর এগোতেই সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত হয়ে গেল। ঘুটঘুটে অ্ন্ধকার। বোধহয় অমাবশ্যা। আরিফের মনের মধ্যে ভয় ঢুকে গেলো। এই ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে কিভাবে যাবে। আফজালকে বলেলো
- কিরে আফজাল, কিভাবে যাবো, এ ঘুটঘুটে অন্ধকার। আজকের রাতটা তোর নানি বাড়িতে থেকে গেলেই পারতাম।
- তোরাইতো থাকলি না। অন্ধকার বলে তোরা চলে এলি। এখন কি ঘুটঘুটে অন্ধকার দেখ। এই অন্ধকারে ভুত-প্রেতরা চলাচল করে। আর এই জায়গাটা হচ্ছে ভুত-প্রেতের আড্ডাখানা। দেখ কার ঘাড় মটকে দেয়।

এই কথা শুনে আরিফের মনের ভেতরে ভয়টা আরো বেড়ে গেলো। অন্যান্য বন্ধুরাও একটু ভয় পেয়ে গেলো। এর মধ্যে আফজাল বলে উঠলো
- ঐ দেখ বাঁশ গাছ। ঐ বাঁশ গাছের ডগায় ভুতের বাসা। শোন বাঁশের কিচির মিচির শব্দ। শব্দগুলো কেমন অদ্ভুত মনে হচ্ছে না। ভুতের যখন দৌড়ায় তখন এ বাঁশগাছগুলো অদ্ভুত ধরণের কিচির মিচির শব্দ করে উঠে। খবরদার কেউ ভুলে মাথা উচু করবি না। মাথা উচু করলেই ভুতে এসে মাথা ছিড়ে নিয়ে যাবে।

এই কথা শুনে আরিফসহ অন্য বন্ধুরা সবাই ভয়ে মাথা নিচু করে হাঁটছে আর ভাবছে কতক্ষণে এই পথ শেষ হবে। কিন্তু পথ আর সহজে শেষ হতে চায় না। এই বোধহয় ভুত আসলো আর খপ করে ধরে বসলো। কিছুতেই মনের মধ্যে সাহস্য সঞ্চার হচ্ছে না। কিছু দূর এগোতেই আফজাল বল উঠল-

- সাবধান, ঐ¬েয দেখ বট গাছ। ঐ বট গাছটার আগায় একটা মানুষের কাঁটা মাথা দেখতে পাইলাম। মনে হয় ঐ মাথাটা এদিকে আসবে।
- কাঁটা মাথা কিসের দোস্ত।
- আরে বেটা, ভুতেরা বোধহয় কোন মানুষের মাথা ছিঁড়ে নিয়ে ঐ বটগাছের মাথায় রেখে দিয়েছে। এখন ঐ মাথাটাও ভুত হয়ে গেছে। দেখবি কিছুক্ষণের মধ্যে ঐ কাঁটা মাথাটা এদিকে এগিয়ে আসবে। কারণ কাঁটা মাথা মানুষকে দেখলেই গাছ থেকে নেমে আসে।
- নেমে আসার কি দরকার দোস্ত
- বুঝবি, একটু পরেই বুঝবি। যখন তোর মাথাটা ছিঁড়ে নিয়ে যাবে, তখনই বুঝবি

ভয়ে ওদের কলিজার পানি শুকায়া আসতাছে আর পথ যেন আরো দীর্ঘ হচ্ছে। কি করবে ওরা ভেবে পাচ্ছে না। চারদিকে অন্ধকার, অন্ধকার যেন আরো ঘন হচ্ছে। অন্ধকারের রাতে কিংবা অমাবস্যা রাতে ভুতেরা নাকি দলে দলে বের হয়। যাকে পায় তাকেই নাকি ঘাড় মটকে দেয়। তুলে নিয়ে যায়। এই কথাগুলো মনে উঠতেই আরিফের গায়ের রক্ত হীম হওয়া শুরু করল। কি করবে ভেবে পাচ্ছ না। অন্য বন্ধুরা একবারে চুপ। হঠাৎ করে ঐ গাছটা থেকে ঝুপ করে কি যেন পরার শব্দ হলো। আর শব্দটা এমন ভাবে হলো ওরা সবাই আঁৎকে উঠলো। আর তৎক্ষণাক আফজাল বলে উঠলো

- বলছিলাম না, কাঁটা মাথাটা এদিকে আসবে। ঐ দেখ কাঁটা মাথাটা এদিকেই আসছে, আর এই জন্যই ঝুপ করে আওয়াজ হয়েছে। সবাই যে যার জায়গায় দাঁড়িয়ে যা। সামনের দিকে কেউ আগাবি না। কেউ দেখারও চেষ্টা করবি না। যে দেখবি তার চোখ অন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। না জানি কি হয়, কাকে ধরে নিয়ে যায়।

এই কথা শুনে আরিফ ও ওর বন্ধুরা চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলো। মনে মনে সবাই আল্লাহকে ডাকছে। এই অন্ধকারের পথ দ্রুত যেন শেষ হয়ে যায। একটু পরে শরিরের মধ্যে কেমন যেন একটা ঠান্ডা হাওয়া লাগল আরিফের। কেমন যেন একটা গন্ধ পাওয়া গেল। কি করবে ওরা বুঝতে পারছে না। চোখ খুলবে নাকি চোখ বন্ধ করেই রাখবে। চোখ খুললে যদি কাঁটা মাথাটা সামনে এসে পরে। তাহলেতো চোখ অন্ধ। আফজালও কিছু বলছে না। ভয়ে পেন্ট ভিজে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। কিছু বলতে পারছে কেউ।

- একটু আগে একটা হাওয়া লাগল না। সামনে দিয়া ঐ কাটা মাথাটা গেল। যদি কেউ সামনের দিকে যাইতি বা চোখ খুলতি তাহলে যে কি বিপদ হইতো। এইবার আস্তে আস্তে সামনের দিকে হাঁটা শুরু কর। আফজাল সাহসের সঙ্গে বললো।
- দোস্ত চোখ খুলব, নাকি বন্ধ করেই রাখবো। আরিফ ভয়ে ভয়ে কথাটা বললো
- সব্ইা আস্তে আস্তে হাঁট। এমন ভাবে হাঁটবি যাতে কেউ টের না পায় কিংবা বুঝতে না পারে এখানে কোন মানুষ আছে। যদি বুঝতে পারে তাহলে আর কোনো উপায় থাকবে না। সবার অবস্থা ঐ কাঁটা মাথার মতোই হবে।

সবাই ভয়ে ভয়ে, আস্তে আস্তে হাঁটা শুরু করলো। কিন্তু পা যেন আর চলে না। এ কদম হাঁটলে দুই কদম পিছিয়ে যাচ্ছে যেন। মাটির সাথে পা লেগে যাচ্ছে। পেছন দিক দিয়ে কেউ পা ধরে রাখছে। যেতে যেতে সামনের দিকে একটা কলা গাছের বাগান দেখা যায়। অন্ধকারে তেমন কিছু বোঝা যায় না। কলাগাছের পাতাগুলো মাটির সাথে লেগে আছে।

- ঐ কলা বাগানে অসংখ্য ভুত আছে। কখন যে ভুতেরা আক্রমণ করে বসবে কিছুই বুঝতে পারছি না। আর এখন অন্ধকারতো। এই অন্ধকারে ভুতেরা বের হয় আর মানুষ ধরে ধরে নিয়ে যায়। মানুষ ধরে নিয়ে কি করে জানিস ? বড় কড়াইয়ের মধ্যে ভেজে ভেজে খায়। আফজাল ভয়ে ভয়ে কথাগুলো বললো।

আরিফের ভয়ে গলা শুকিয়ে গেলো। আফজালকে বললো দোস্ত, খুব ভয় হচ্ছে। ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। একটু পানি খাব দোস্ত। আফজাল বললো

- চুপ কর হারামজাদা, ভুতে এসে তোকে পানি খাওয়াবে। তুই পানি খাবি আর ভুত তোকে পানি দিয়ে গিলে খাবে। পানি খাওয়ার কথা ভুলে যা। চুপ করে সামনের দিকে হাঁট।

ওরা ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে। আফজাল এবার একটা অদ্ভুত কান্ড করে বসল। ও জোরে একটা আওয়াজ করলো।
- ঐ চুপ, সব চুপ, সবাই বসে পর।

ওরাও কিছু না বুঝে বসে পরলো। আরিফ হঠাৎ দেখতে পেলো কলা বাগানের কলা গাছগুলো দুলে উঠছে আর অদ্ভুত ধরণের আওয়াজ আসছে সেখান থেকে।

- সর্বনাশ হয়ে গেছে। ভুতেরা বোধহয় আমাদের দেখে ফেলেছে। দেখেই আনন্দ করতাছে। এইবার আর রক্ষা নাই। ঘাড় মটকাইয়া দিবো। ধইরা নিয়া যাইবো। এই খানেই সব শেষ। আফজাল কথাগুলো বললো

ওরা জোরে জোরে আল্লা আল্লা করছে। কি যানি কার ঘাড় মটকাইয়া দেয়। দাঁড়াইলেই শেষ। ঘাড় মটকাইয়া লইয়া যাইবো ঐ কলা বাগানে। আরিফের চোখের মধ্যে ভেসে উঠলো বড় কড়াই। আর সেই কড়াইয়ের চারপাশে ভুতে নৃত্য করছে। এরই মধ্যে আফজাল অদ্ভুত ভাবে চিৎকার করে উঠলো

- কেউ চিৎকার দিবি না। কোন কথা বলবি না। আমি দেখতাছি। দেখ কলা গাছগুলো আরো জোরে জোরে দুলছে। ভুতেরা বোধ হয় এই দিকেই আসতাছে। দেখ দেখ কেমন অন্ধকার আরো ঘন আর কালো হয়ে আসছে। একটু ভয়ে ভয়ে কথাগুলো বললো আফজাল

একটা অদ্ভুত ও ভয়ানক শব্দ ভেসে আসলো। কি করবো ওরা ভেবে পাচ্ছে না। আরিফ বললো,

- কি করবো দোস্ত।
- চুপ কর হারমজাদা। তোর জন্যইতো এই অবস্থা। তোর পানি খাওয়ার কথা শুনেই এই অবস্থা। চুপ কর, কথা বললেই ঘাড় মটকাইয়া দিবো হারামজাদা। যখন আওয়াজ বন্ধ হবে, আর আমি যখন বলবো তখন দৌড় শুরু করবি।

ওরা আফজালের নির্দেশের অপেক্ষায় রইলো। হঠাৎ বন্ধু বলে উঠলো “দৌড়”। ওরাও দৌড় শুরু করলো। কিন্তু পা মনে হয় মাটির সাথে লেগে আছে। কে যেন পেছন থেকে পা ধরে রাখছে। কিছুতেই দৌড় দিতে পারছে না। এবার বোধ হয় ভুতের পেটে যেতে হবে। অন্য বন্ধুরা যে যার মতো দৌড় শুরু করলো। কিন্তু আরিফের পা আটকে গেলো। আফজাল বললো

- কিরে হারামজাদা দৌড় দিচ্ছিস না কেন।
- আমার পা আটকাইয়া গেছেগা।
- তাইলে তুই থাক, আমরা যাই।
- দোস্ত আমারে লইয়া যা। আমার পাও আটকাই গেছে গা। মনে হয় ভুতে পাও ধইরা রাখছে।
- তর পাও ভুতে খাইবো। সারা জীবন ভুতে খাওয়া পা নিয়া থাকতে হইবো। তুই এই খানে পইড়া থাক হারামজাদা।

আরিফ আসলেই দৌড়াইতে পারছে না। কি করবে, পা মাটি থেকে তুলতেই পারছে না। শেষে আফজাল আরিফকে দিলো এক ধাক্কা, আরিফ দিলো দৌড়। আল্লার নাম জপতে জপতে দৌড় শুরু করলো আরিফ আর ওর বন্ধুরা। কিন্তু রাস্তা আর শেষ হয় না। অদ্ভুত ধরণের আওয়াজ বন্ধ হচ্ছে না। ওদের মনে হচ্ছে ওরা এগোতে পারছে না। ভুতেরা বোধহয় ওদের ধরে ফেলেছে। তারপরও দৌড়ানোর চেষ্টা করছে। কিছুক্ষণ পর কয়েকটা বিজলি বাতি দেখা গেল। মনের মধ্যে সাহস ফিরে এলো ওদের। ভুতের চৌদ্ধ গোষ্ঠী উদ্ধার করতে করতে ওরা রাতে বাসায় ফিরলো। জীবনেও আর ঐ দিকে যাওয়া যাবে না।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
রঙ পেন্সিল খুব মজা পেলাম পড়ে। দারুন হয়েছে ভুত কাহিনী!

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

গল্পটা ভৌতিক আফজাল তার বন্ধুদের কি ভাবে ভঁয় দেখায় তার বর্ননা করা হল

১৬ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ২২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪