দেখেছো, দেখোনি

কোমল (এপ্রিল ২০১৮)

আলমগীর মাহমুদ
  • ৩২
কোমলতা দেখেছো, কঠোরতা দেখনি। এই কথাগুলো বলতে বলতে চলে গেলো হিজরা মেয়েটি। ট্রেনে চড়ার সময় প্রায়ই ওরা আসে। এসে টাকা চায়। বলে পাঁচ টাকা দাও, দশ টাকা দাও। খুব সুন্দর ব্যবহার করে। কেউ টাকা দেয় আবার কেউ দিতে চায় না। হিজরা মেয়েটি নানান তালবাহানা করে। অনেক কিছুই বলে। অনেকেই হাত দেখিয়ে দিয়ে চলে যেতে বলে। কিন্তু ওরা যায় না। ওরা দাঁড়িয়ে থাকে টাকা না দেয়া পর্যন্ত। হাতে তালি দেয়া, অঙ্গভঙ্গি করে।

আমার সামনে থাকা এক ভদ্রলোক এতক্ষণ জেগেই ছিল। ওদেরকে দেখেই ভদ্রলোক ঘুমিয়ে যায়। হয়তো ঘুমানোর ভান করেছে হিজরা মেয়েটিকে দেখে। হিজড়া মেয়েটি ঘুমিয়ে থাকা লোকটির সামনে এসে দাঁড়ায়। টাকা চায়, লোকটি কোন কথার উত্তর দেয় না। হিজড়া মেয়েটি হাতে তালি দেয়, একটু অঙ্গভঙ্গি করে, দশ টাকা চায়। কিন্তু লোকটি কোন উত্তর দেয় না, তেমন কোন সাড়া দেয় না। হিজড়া মেয়েটি বেশ কিছু সময় ধরে লোকটির ঘুম ভাঙ্গাতে চেষ্টা কওে এবং বিভিন্ ভাবেই লোকটির মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করে। কিন্তু লোকটি নিরুত্তর। হিজরা মেয়েটি এবার ক্ষেপে যায়। চিৎকার করে উঠে। বলে

- আমরা অনেক কিছুই করতে পারি। সবার সামনে কাপড়ও খুলতে পারি। কিন্তু আমরা অত নোংরামি করব না। কিন্তু তোমরা কেন আমাদের দিকে ফিরে তাকাও না। আমরাওতো মানুষ। সমাজ আমাদের ভাল চোখে দেখে না, মানুষ আমাদের ভালো চোখে দেখে না। তাহলে আমরা কি করে বাঁচবো ? আমাদের পেট আছে, আমরা খাবো কী ?

কথাগুলো বলার ফাঁকে ফাঁকে ঘুমিয়ে থাকা লোকটি পিট পিট করে তাকায়। আবার চোখ বুজে যায়। হিজড়া মেয়েটি তা দেখে ফেলে এবং বুঝে যায় যে, লোকটি না ঘুমিয়ে ঘুমের ভান করে আছে। হিজরা মেয়েটি এবার আরো উচ্চস্বরে চিৎকার করে উঠে। মুহুর্তেও মধ্যেই ট্রেনের সকল যাত্রির চোখ চলে যায় ঐ দিকে। চিৎকার শুনে ট্রেনে উঠা আরো কয়েকজন হিজরা মেয়ে হাত তালি দিতে দিতে দ্রুত চলে আসে সেখানে। ঘুমিয়ে থাকা লোকটি একটু হকচকিয়ে উঠে। বোধ হয় একটু ভয়ও পেয়ে যায়। কি করবে সে বুঝে উঠতে পারে না। ইতোমধ্যে অন্য হিজড়া মেয়েগুলো লোকটি সামনে চলে আসে এবং হাতে তালি দিতে দিতে বলে

- ঐ কি হইছেরে, অমন কইরা চিৎকার দিলি ক্যান
- দেখ দেখ একই ব্যাডা ঘুমের ভান কইরা আছে, আবার পিট পিট কইরা আমার দিকে তাকায়
- ঐ ব্যাডা, তর লগে মুখ নাই। ট্যাহা না দিলে মুখ দিয়া না কইরা দিবি, অমন বেকনা করছ কেন, অন্য একটি হিজরা মেয়ে বলে
- ট্যাকা না থাকলে আমার কাছ থিইকা নিয়া যা, পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরেকটি মেয়ে বলে
- না মানে, চোখটা একটু লাইগা আইছিলতো এই জন্য, এই নাও দশ টাকা। ঘুমিয়ে থাকা লোকটি এবার পকেট থেকে দশ টাকা বের করে দিয়ে দেয়

ওরা হাতে তালি দিতে দিতে চলে যায়। প্রথম হিজড়া মেয়েটি বলে “কোমলতা দেখেছো, কঠোরতা দেখোনি, আমরা কোমল ও কঠোর দুটোই হতে পারি”।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী খুব ভালো লাগলো গল্প। হিজড়ার চরিত্রগুলো অন্যরকম ছিল। শুভকামনা রইল
সাদিক ইসলাম নকি আপুর সাথে একমত। শুভ কামনা রইলো। গল্পে আমন্ত্রণ।
সালসাবিলা নকি বাহ! ছোট গল্পে কতো সুন্দর করে মানুষের দুটো রূপ দেখিয়ে দিলেন! আবার একটা শিক্ষণীয় মেসেজও দিলেন। ভালো লাগলো...

১৬ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ২২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪