ফাগুনের দোল

ফাল্গুন (ফেব্রুয়ারী ২০১৬)

আলমগীর মাহমুদ
  • 0
  • ৩২
বৃদ্ধ ঈমান আলী নদী ভাঙ্গা মানুষ। ঢাকা শহরে এসে ঝালমুড়ি বিক্রি করে সংসার চালায়। সংসার বলতে তার ছোট্ট একটি নাতি আর তিনি। আর কেউ বেঁচে নেই তার। নদী তার সব কিছুই কেড়ে নিয়েছে। ঢাকা শহরে কোন রকমে একটি বস্তিতে ঠাঁই নিয়েছে সে। সাথে তার ছোট্ট নবিন নবিন। এক সময় রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ঝালমুড়ি বিক্রি করলেও এখন বয়সের কারণে পার্কে এসে ঝালমুড়ি বিক্রি হয়। দিন শেষে যা আয় হয় তাতে দুজনের চলে যায় কোন রকমে। চেষ্টা করছেন নবিনকে স্কুলে পড়াতে। ভর্তিও করিয়েছেন। যেদিন স্কুল বন্ধ থাকে সেদিন নবিন তার নানার সাথে পার্কে আসে। ঝালমুড়ি বিক্রিতে সাহায্য করে। আসলে নবিনের ভাল লাগে পার্কে এসে দৌড়াদৌড়ি করতে। পার্কে অন্য সব ছোট ছেলেদের সাথে খেলা করতে।
পার্কগুলোতে সকালে আর বিকেলে বড়রা এসে হাটাহাটি করে। আর বাকি সময়টা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে-মেয়েরাই বেশী আসে। এটা সে জেনেছে তার নানার কাছ থেকে। পার্কে ঝালমুড়ি যে পরিমাণ বিক্রি হয় তা দ্বিগুন হয়ে যায় কোন উৎসবে। বৈশাখ, ফেব্রুয়ারি ইত্যাদি। সবগুলো উৎসবের নাম জানেনা ঈমান আলী। তবে যদি কোন উৎসব হয় তাহলে ঈমান আলী পার্কে এসেই তা বুঝতে পারে। তবে শীতের সময় উৎসবের পরিমাণটা একটু বেশী মনে হয় তার কাছে। ঐইতো কিছুদিন আগে কি একটা উৎসব হয়ে গেলো। ঈমান আলী তার নাম জানেনা। দিনের শুরুতেই অনেক ছেলে-মেয়ে মঞ্চ তৈরী করে সেখানে অনুষ্ঠান করেছে। আবার পিঠারও আয়োজন ছিল। দেখে মনে হয়েছে তার কাছে শীত উৎসব অথবা পিঠা উৎসব। সেদিন বেশ হয়ে আয়েশ করে সেও পিঠা খেয়েছে নবিনটাও খেয়েছে। আর ঝালমুড়িও বিক্রি হয়েছে বেশ। পিঠা খেয়ে ঈমান আলী খুব একটা তৃপ্তি না পেলেও তার কাছে ভালই মনে হয়েছে। গ্রামে থাকতে শীতের সময় পিঠা খাওয়ার মজাই ছিল আলাদা। খেজুরের রসের পায়েস, ভাপা পিঠা, মালপোয়া পিঠা, পাটি শাপটা আরো কতকি পিঠা খেয়েছে। প্রাকৃতিক পরিবেশে ছিল সেই পিঠা খাওয়া। আর এখন হয়েছে কৃত্তিম।
শীতের শেষে ঈমান আলী যথারীতি পার্কে চলে এলো খুব সকালেই। সাথে তার নবিনও আছে। এসে দেখে পার্কে অনেক ছেলে-মেয়ে। মেয়েদের পরনে বাসন্তি রঙয়ের শাড়ি, মাথায় ফুল। শুধু পার্কে না। রাস্তা দিয়ে আসতে আসতেও তার চোখে পড়লো এরকম অনেক দৃশ্য। নবিন ঈমান আলী জিজ্ঞেস করলো
- নানা ঐ মাইয়াগুলান হলুদ রঙের শাড়ি আর মাথায় ফুল দিছে কেন
- আমিতো কইতে পারিনা নানা ভাই
- দুর তুমি কিছুই কইতে পারোনা
- আমার মনে হয় কারো কোন বিয়ার গায়ে হলুদ আছে এই জইন্য
- আরে নানা গায়ে হলুদতো বিকেল বেলা, সন্ধ্যা বেলা হয়
- আরে বেটা আমার মনে হয় আইজকার গায়ে হলুদ সকাল বেলা
- দুর তুমি কিছুই জানোনা।
- আইচ্ছা না জানলে নাই, চল জলদি কইরা পা চালা, আইজকা মনে হয় বেচা-বিক্রি ভালই হইবো
দুজনে পা চালিয়ে পার্কে চলে আসে। এসেই দেখে এখানেও একই রকম দৃশ্য। ঈমান আলীর ভালই লাগছে। ছেলে-মেয়েরা আসে, তার কাছ থেকে ঝালমুড়ি কিনে খায়, চলে যায়। ভিড় একটু বেশীই। তাই নবিনকে ডাকে একটু সাহায্য করার জন্য। কিন্তু নবিন কোথায় গেছে জানেনা সে। জোড়ে ডাক দেয়, কিন্তু আসেনা। আবার জোড়ে ডাক দেয়। এবার দৌড়ে কাছে আসে, মাথায় এক গোছা ফুল।
- ঐ হারামজাদা কই গেছিলি, আর এই ফুল পাইলি কই
- গেছিলাম ঐ কোনাটায়, আর এই ফুলগুলান পইরা আছিল, তাই মাথায় বাইন্ধা আইছি
- আরে বেটা তুই কি মাইয়া মানুষ নি, দেহছনা শুধু মাইয়া মানুষের মাথায় ফুল
- আরে নানা কি যে কও তুমি, শুধু কি মাইয়ারা ফুল পড়বো, আমরা পড়–মনা।
পাশে জালমুড়ি কিনতে আসা দুজন ছেলে-মেয়ে তাদের কথায় হেসে উঠে। নবিন এবার ওদের জিজ্ঞেস করে “ভাইজান আইজকা কি কারো গায়ে হলুদ”
- কেন আজকে কারো গায়ে হলুদ কেন হবে ? ছেলেটি জিজ্ঞেস করে
- না সবাই কেমুন হলুদ রঙের শাড়ি, আর মাথায় ফুল পইড়া আছেতো এই জন্য জিগাইলাম, নবিন উত্তর দেয়
- না না আজকে কোন গায়ে হলুদ নয়, আজকে হলো পহেলা ফাল্গুন অর্থাৎ ফাল্গুন মাসের এক তারিখ, তাই সবাই এরকম ভাবে সেজেছে, মেয়েটি বলে
- আচ্ছা তোমার হঠাৎ গায়ে হলুদের কথা মনে হলো কেন, ছেলেটি প্রশ্ন করে
- না আমার নানায় কইলো আরকি, নবিনের জবাব
- না না মানে হইলো গিয়া, আমাগো গ্রামে, কারো বিয়া হইলে, বিয়ার আগে সবাই এমনু হলুদ শাড়ি পইড়া গায়ে হলুদে যায় এই জইন্য আমার মনে হইছে আর কি ? নানার স্বভাবসুলভ উত্তর
ছেলে আর মেয়েটি দুজনে উচ্চস্বরে হেসে উঠে। নানা একটু লজ্জা পেলেও নবিন খুব মজা পায়। সে আবার দৌড়ে চলে যায় একটা দোলনার কাছে। গিয়ে দেখে দুটি ছেলে মেয়ে দোলনায় চড়ে বসে আছে। নবিনের খুব রাগ হয়। সে মনে মনে বলে “কত বুইড়া পোলা-মাইয়া হেরা দোলনায় চইড়া বইসা আছে। দোলনা হইলো ছোডগো লাইগা।” নবিন দাঁড়িয়ে আছে দোলনার কাছে। কিন্তু ছেলে-মেয়েটি দুটি দোল খেয়েই যাচ্ছে। কিন্তু খুবই ধীরে ধীরে দোল খাচ্ছে। তা দেখে নবিন বলে উঠে
- ভাইজান, এত আস্তে আস্তে দোল খাইতাছেন কেন ?
ছেলে-মেয়ে দুটি হকচকিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর ছেলেটি বলে
- কেন ধীরে ধীরে দোল খেলে কি হয়
- আরে ভাইজান, দোল যদি জোড়েই না খাইলেন তাইলে কোন মজা আছে নি। আসেন আমি জোড়ে জোড়ে দোল দিয়া দেই
নবিনের এই কথা শুনে এবার মেয়েটি কথা বলে উঠে
- এই না না, জোড়ে দোল দেওয়ার দরকার নেই, পড়ে যাবো
- আরে কি যেন আপামনি, পড়বেন কেন ? শক্ত কইরা ধইরা রাইখেন তাইলে হইবো
- আরে না, তুমি যাও এখান থেকে, জোড়ে দোল দেওয়ার দরকার নেই
- আরে তুমি এত ভয় পাচ্ছো কেন ? দিকনা জোড়ে জোড়ে দোল, ছেলেটি সাহস নিয়ে বলে
- তোমার খুব সাহস, পড়লে বুঝবে মজা
- না হয় একদিন পড়লাম দোলনা ছিড়ে, আরে পড়লেতো দুজনে একসাথেই পড়বো, এই ছেলে দে জোড়ে ধাক্কা দে
নবিন এইবার জোড়ে ধাক্কা দেয়া শুরু করে। ওরা দুজনও দুলতে থাকে। একবার আকাশের দিকে যায়, আর একবার মাটিতে নেমে আসে। প্রথম প্রথম তাদের একটু ভয় হলেও এখন তাদের খুব ভাল লাগছে। হাওয়ায় দুলছে যেমন দুজনে। অনেকক্ষণ দোলার পড় তারা দুজনে নেমে আসে। তারা নেমে দেখে তাদের মত অনেকেই দাঁড়িয়ে আছে দোল খাওয়ার জন্য। ছেলে-মেয়ে দুটি নেমে যায়, নবিনকে কিছু বখশিশও দিয়ে যায়। এবার অন্য দুজন ছেলে-মেয়ে উঠে। অথচ নবিনের আর দোল খাওয়া হচ্ছেনা। সে শুধু দোল দিয়েই যাচ্ছে। অবশ্য এতে তার লাভই হচ্ছে, কিছু ইনকামও হচ্ছে তার। কিন্তু ইনকামের চেয়ে তার দোল খাওয়ার সখ বেশী। অথচ বড়দের কারণে সে দোল খেতে পারছেনা।
- ও ভাই এইবার আপনারা নামেন, আমি একটু দোল খাই
- আরে তুই কি দোল খাবি, বাচ্চা মানুষ, পড়ে যাবি
- ভাইজান, বাচ্চারাইতো দোল খায়, বড়রা দোল খেলে লোকে হাসে
- হাসুক লোকে, আরেকটু দোল খেয়ে নিই
- ভাইজান নামেন, অনেক্ষণ ধইরা আমি দাঁড়াইয়া আছি, একটু দোল খাই
ছেলে-মেয়ে দুটি বিরক্ত হয়ে নেমে যায়। নবিন এবার দোল খাওয়া শুরু করে। অথচ কেউ তাকে ধাক্কা দিচ্ছেনা। অবশেষে নানাকে ডাক দেয়। নানা দৌড়ে এসে ধাক্কা দিয়ে যায় আবার ঝালমুড়ি বিক্রি করতে থাকে। দোল থেমে গেলে আবার দোল দেয়। নবিন খুবই মজা পায়। অনেকবার পার্কে এসে নবিন দোল খেয়েছে। কিন্তু ফাল্গুনের বাতাসে দোল খাওয়ার মজাটাই আলাদা।

আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ফয়েজ উল্লাহ রবি মন্তব্য শূন্য ভাল লাগেনি একটুও। শুভেচ্ছা আপনার কষ্টের জন্য।
ভালো লাগেনি ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

১৬ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ২২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪