Bijoer Rikshawala

দুঃখ (অক্টোবর ২০১৫)

আলমগীর মাহমুদ
  • ৭৪
আজ বিজয়ের জন্ম দিন। আজ বিজয় দিবস। বিজয়ের দিনে জন্ম হয়েছিলো বিজয়ের। তাই প্রতি বছরই বিজয় এই দিনটা একটু আলাদা ভাবে পালন করে। মাতৃভুমির বিজয়ের দিনে নিজের জন্মদিন। ভাবতেই খুব ভাল লাগে বিজয়ের। আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই বিজয় পরিকল্পনা করে ফেলল, মাকে সালাম করেই সকালেই বেরিয়ে যাবে। ঘন্টা হিসাবে একটি রিকশা ঠিক সারাদিন ঘুরবে। বিজয়ের দিনে মানুষের মুখগুলো দেখতে বিজয়ের খুবই ভাল লাগে, ভাল লাগে আনন্দে ভরা মুখগুলো দেখতে।
সকাল বেলা শিশির ভেজা ঘাসে পা রেখে বিজয় বুঝতে পারলো আজ দিনটা শীত একটু বেশীই লাগবে। তাই একটু আটঘাট বেঁধেই বের হলো বিজয়। রাস্তায় বেরিয়ে এক মধ্য বয়স্ক রিকশাওয়ালা পেয়ে গেলো বিজয়। ঘন্টা হিসাবে ভাড়া করে উঠে পড়লো বিজয়। বললো গ্রামের দিকে ঘুরতে যাবে। রিকশাওয়ালা কথামতো চললো গ্রামের দিকে। দু দিকের সবুজ ক্ষেতগুলো বিজয়ে খুবই ভালা লাগছিল। আচমকা প্রশ্ন করলো রিকশাওয়ালা
- ভাইজান একটু কথা বলবো
- হ্যা বলো
- আজতো বিজয় দিবস, সবাই অনুষ্ঠানে গিয়েছে, আপনি গেলেননা
- আমি সকালে স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছি, অনুষ্ঠানে যাওয়া হয়নি। ভাবছি সারাদিন রিকশা করে ঘুরবো
- দেখলাম বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে অনেক লোকের সমাগম
- হ্যা, তুমি জানলে কি করে ?
- আমি ঐ দিক দিয়্ াআইছি
- ও আচ্ছা
হালকা কথার মধ্যে রিকশা এগিয়ে যায় সামনের দিকে। পথের মধ্যে এক হোটেল থেকে সিঙ্গারা নিয়ে বিজয়। কিছু দুর গিয়ে একটা গাছের নিচে গিয়ে বিজয় আর রিকশাওয়ালা বসে পড়ে কিছুটা বিশ্রামের জন্য। সামনে খোলা সবুজ মাঠ, মাঠে গরু চড়ছে। গরম সিঙ্গারায় ফু দিতে দিতে প্রশ্ন করে বিজয়
- আচ্ছা তোমার গ্রামের বাড়ি কোথায়
- আমি বাড়ি চর শিলইয়ে
- তা শহরে কত দিন ধরে এসেছো
- মেলা দিন হইছে ভাইজান
- তুমি কি মুক্তিযুদ্ধ দেখেছো
মুক্তিযুদ্ধের কথা শুনে রিকশাওয়ালার চোখ ছলছল কওে উঠে। বিজয় চেয়ে দেখে রিকশাওয়ালার চোখদুটো কেমন ছলছল করছে। বিজয় জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে আপনার
- ভাইজান কি কমু দু:খের কথা, যুদ্ধের সময় আমি সবাইরে হারাইছি, পাকিস্তানি শয়তানরা আমার পরিবারের সবাইরে মাইরা ফালাইছে
কথাগুলো বলতে বলতে দু চোখ দিয়ে পানি বেড়িয়ে আসে রিকশাওয়ালার, তারপর বলে
- ভাইজান, যুদ্ধের সময় আমি সবাইরে হারাইছি, সব হারাইয়া আমি যুদ্ধে গেছি, ট্রেনিং নিছি, যুদ্ধ করছি, দেশ স্বাধীন করছি। আমরা কোন সার্টিফিকেট নেই নাই। কিন্তু এই সার্টিফিকেরযে এহন এত দাম তা আগে বুঝিনাই। এহন নাকি মুক্তিযোদ্ধরা ভাতা পায়, কিন্তু আমি কোন ভাতা পাইনা, কারণ আমার কোন সার্টিফিকেট নাই
- তুমি কখনো যোগাযোগ করনি, বা তুমি যারা আন্ডাওে কাজ করেছো তার সঙ্গে যোগাযোগ করনি
- হেয় অহন মেলা বড়লোক। হের লগে দেহা করতে হইলে আগে থেকেই নাকি এপয়ন্ট করতে হয়। একদিন এপয়ন্ট কইরা দেহা করতে গেছিলাম, হেয় আমারে চিনতেই পারেনাই।
- বলো কি, তোমাকে চিনতে পারেনি
- এই দু:খ কারে কমু ভাইজান। অথচ এমন লোকেরে সার্টিফিকেট দিছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় হের ভুমিকা ছিল ভিন্ন। একটা ব্যাপার চিন্তা কইরা দেহেন ভাইজান, অনেক মুক্তিযোদ্ধা এখন বিরাট পযশাওয়ালা, বিরাট বড়লোক, হেরা মাসে মাসে ভাতা পায়, অথচ আমি বয়স্কা মানুষ, রিকশা চালাইয়া খাই, আমি কোন ভাতা পাইনা। আর পামুই বা কেন, আমারতো সার্টিফিকেট নাই। যদি আমার সার্টিফিকেট কিনতে পারতাম তাইলে হয়তো ঠিকই ভাতা পাইতাম।
বিজয় কথাগুলো শুনে স্তব্ধ হয়ে যায়। আজ মুক্তিযোদ্ধাদের সম্বর্ধনা হচ্ছে অথচ এই রিকশাওয়ালার কোন খোঁজ নেই। বিজয় চেয়ে দেখলো রিকশাওয়ালা গামছা দিয়ে দুচোখ মুছছে। বিজয় বললো
- তুমি কোন চিন্তা করোনা আমি তোমাকে মুুিক্তযোদ্ধার সম্মান পাইয়ে দেবো
- ্আমার কোন দরকার নাই ভাইজান।
- কেন দরকার নাই কেন, এইতো তখন দু:খ করছিলে
- ভাইজান আপনারা যেহানে অনুষ্ঠান করতাছেন, যেহানে মুক্তিযোদ্ধাগো সম্বর্ধনা দিতাছেন সবই ঠিক আছে ভাইজান। মুক্তিযোদ্ধারা সম্মান পাউক এইটা আমিও চাই। কিন্তু..
- কিন্তু কি ?
- কিন্তু ভাইজান, মুক্তিযোদ্ধাদের যে খাবার দেয়া হচ্ছে সে খাবার কোথা হতে আসতাছে তার কি কোন খোঁজ রাখেন
- মানে, কোথা থেকে আসছে
- রব সাহেব দিতাছে
- হ্যা, রব সাহেবতো খুবই ভাল মানুষ
- আপনে যেমুন জানেন, শহরের সবাই তা জানে, কিন্তু আসল সত্যটা কেউ জানেনা
- আসল সত্যটা কি, তুমি জানো
- আসল সত্যটা হইলো, ঐ রব মিয়া একাত্তরের সময়ে শান্তি কমিটির মেম্বার আছিলো।
কথাটা শুনে চমকে উঠে বিজয়। একজন শান্তি কমিটির মেম্বার, সে এখন নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা ভেবে, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করছে। বিষয়টা অবশ্যই যাচাই করে দেখতে হবে, বিজয় বললো
- তুমি কি বলছো, কার সম্পর্কে বলছো, তা কি ভেবে বলছো
- ভাইজান, যেইটা সইত্য আমি সেইটাই বলছি। অনেক দিন ধইরা কথাগুলো কাউকে না কাউকে বলার জন্য অস্থির হয়ে আছি, কাউকেই কথাগুলো বলার সুযোগ পাইনি। আজ আপনাকে বললাম, মনের ভিতর যে দু:খটা এত দিন জমাট বেঁধে ছিল তা আজ দুর হয়ে গেলো। আমার আর কোন দু:খ নেই। কারণ আমি বুক ফুলিয়ে, গর্ব করে বলতে পারি আমি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা।

এর কিছুদিন পরের ঘটনা। বিজয় রিকশাওয়ালার সব কথার সত্যতা খুঁজে পেলো। কিন্তু রিকশাওয়ালাকে আর খুঁজে পেলোনা। মনের মধ্যে বিজয়ের সবচেয়ে বড় দু:খ রয়ে গেলো। কারণ ঐ সময়ে সে রিকশাওয়ালাকে সে বিশ্বার করতে পারেনি।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোহাম্মদ সানাউল্লাহ্ সেই রিক্সাওয়ালাকে বিশ্বাস না করার কোন কারণ নেই । কারণ এখন শুধু রিক্সাওয়ালার কথিত সেই রব সাহেব একা নয়, এমন রব সাহেবদের পদচারনা সমাজের সর্বত্র, যাদের মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যেকার প্রভাবশালীরাই যার যখন যাকে প্রয়োজন তাকে শুধু পূণর্বাসিতই করেনি, তার চেয়ে অনেক বেশী কিছু করে বসে আছে ! এবং এটাই সত্য, যার কোন সমাধান নেই এবং হবেও না । নতুন প্রজন্মের জানার মাঝে এখনও অনেক ফাঁক রয়ে গেছে, যা জানা সবার জন্যই খুব দরকার । ভাল লিখেছেন । শুভেচ্ছা রইল ।
রেজওয়ানা আলী তনিমা ভালো হয়েছে। ভোট ও শুভেচ্ছা রেখে গেলাম।
এফ, আই , জুয়েল # বেশ ভালো---, অনেক সুন্দর গল্প ।।
গোবিন্দ বীন ভাল লাগল,ভোট রেখে গেলাম।পাতায় আমন্ত্রন রইল।

১৬ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ২২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪