বিড়াল বিড়ম্বনা

বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী (নভেম্বর ২০১৭)

কনিকা রহমান
  • 0
পুরনো হলেও ক্লাসি একটা সদর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে আরিফ। বিরক্ত হওয়ার কোনই উপায় নেই কারণ এই বাড়ির মালিক তার ক্লায়েন্ট, খুব ভালো মাপের ক্লায়েন্ট। সে আনন্দের সাথেই দরজার ডিজাইন দেখছে...
প্রাচীন একটা শব্দ হলো, দরজাও খুলে গেলো; আরিফ বুঝতে পারলো শব্দটা দরজা খোলারই, একটু অন্যমনষ্ক হয়ে গিয়েছিলো। ঘরে পা দিয়েই আরিফ বুঝতে পারলো কলিংবেলের আওয়াজ শুনেই কয়েক মুহূর্ত আগে ঘরটা গুছিয়েছে এরা। বাইরে থেকে ডুপ্লেক্স মনে হলেও ভিতরে কিছুটা মাল্টিপ্লেক্সের মতো মনে হচ্ছে, মার্বেল পাথরের বিশাল ফ্লোর। ডিজাইন নিশ্চয়ই কোন ইতালিয়ান ভদ্রলোক করেছিলেন, এই ব্যাটার বাপ-দাদা হয়তো জমিদার টাইপের কেউ ছিল, ইনি হয়তো কালক্রমে ভাগ্যদোষে গরীব হয়ে গেছেন তাই তার মতো গরীব আর্কিটেক্টকে দিয়ে কাজ করাতে চাইছেন। আরিফ পিওর আর্কিটেক্টও নয়, তারা কয়েকজন বন্ধু মিলে একটা কন্সালটেন্সি ফার্ম খুলেছে, তিনজন সিভিল তাদের মধ্যে সে একজন, একজন ইলেক্ট্রিক্যাল এবং একজন আর্কিটেক্ট। সেইই প্রধান উদ্যোক্তা, আরো দুইজন সহউদ্যোক্তা। আরিফ সাহেব যেখানে দাঁড়িয়ে সেখান থেকে বিশ/বাইশ গজ দূরে বাড়ির মালিক বসে আছেন। স্টার জলসার বয়স্ক লোকগুলি যেভাবে ভাঁজ হয়ে বসে থাকে ঠিক সেভাবে বসে আছেন, সিরিয়ালগুলিতে এরা সবসময় চুপচাপ, নিরীহ, রাশভারি ভূমিকা পালন করে থাকে এবং পরিবারে কোন সমস্যা দেখা দিলে এদের তুলনামূলক বেশি দেখানো হয়, এবং গুরুগম্ভীর ডায়ালগ দিতে দেখা যায়। আরিফের শাশুড়ি দেখেন এইসব রাশভারি সিরিয়াল! চেয়ারের পাশে একটা লাঠি ঠেস দিয়ে দাঁড় করানো, দূর থেকেও স্পষ্ট: সেটাতে তুর্কি ঘরানার ডিজাইন করা। বাড়ির মালিকের থেকে আরো দশ/বারো গজ দূরে একজন মহিলা দাঁড়িয়ে, বুড়োর লাঠির মতোই সিঁড়িতে ঠেস দিয়ে দাঁড়ানো। দাসী বাদী টাইপের কেউ হবে।

কয়েক মুহূর্ত যেমন আরিফ পরিবেশটাকে রিড করার চেষ্টা করলো, বাড়িওয়ালা ভদ্রলোকও যেন তাকে মুখস্ত করে ফেলেছে এই কয়েক মুহূর্তেই, চোখেমুখে হাসি, ঠোঁটের কোণে বিদ্রুপ, চেহারা দিয়ে একরকম আনন্দ প্রকাশ পাচ্ছে, এ'আনন্দ কাউকে পড়ে ফেলার আনন্দ, এ'আনন্দ তুলনাহীন...

আরিফ বুঝতে পারছে না, কী বলবে?
"ভালো আছেন? আমি স্টুডিও আর্কিটেক্টনিক থেকে এসেছি।"
"আসসালামু আলাইকুম! আমি জানি, আপনি যে স্টুডিও আরকিটেক... দাঁততো ভেংগে যায় যায় অবস্থা! সংক্ষিপ্ত কোন নাম নেই?"
"এ. আর. কে. বলতে পারেন।" আরিফ সাহেবের মনে হলো সে সালাম দিতে ভুলে গেছিলো। যাই হোক এখন আর কিছুই করার নেই।
"এ. আর. কে. মানে কি?" এখনো বিদ্রুপ স্পষ্ট।
ভদ্রলোক মজা নিচ্ছেন জেনেও আরিফ বেচারির কিছুই করার নেই।
"এ'তে আরিফ মানে আমি, আর'তে রহমান সাহেব, কে'তে কবীর সাহেব, আমরা তিনজন বন্ধু।"
"এর মধ্য থেকে আমাকে একজন লেডি ফোন করেছিলো সে কোনজন?"
"মিস রহমান সাহেব অথবা শ্রীমতী রহমান সাহেব।" নিজের অজান্তেই আরিফও মজা নেওয়ার চেষ্টা করছে।
"হা হা হা...! তবু তুমি "সাহেবা" বলবে না, গুড! গুড!"
একটু থামলেন আর কী যেন ভাবলেন, "শোন, তোমাকে তুমিই ডাকি, তুমি আমার নাতির বয়সী হবে। শোন আরিফ, বাংলা ভাষার একটা মজা আছে, ভালো বাংলা জানতে হলে ল্যাংগুয়েজ হিউমার থেকে সেন্স অব হিউমারটা বেশি জরুরি। ভদ্রতাজ্ঞান থাকাটা জরুরি।'
"জ্বী!"
দাসী বাদী টাইপের মহিলাটি একটা আরেফেলের চেয়ার এনে তার থেকে অনেকটুকু সামনে রাখলো, সে এগিয়ে এসে বসলো। আরিফ একটু চেষ্টা করলো তাকে বসতে দেয়া এবং কিছুটা সামনে এগিয়ে আসার পাসওয়ার্ডটা কি? মহিলারও কি বাংলায় সেন্স অব হিউমার ভালো, নাকি বুড়ো ভদ্রলোকের হাসিই তার পাসওয়ার্ড? নাকি বুড়ো তাকে আগেই বলে রেখেছিলো, এতো মিনিট পর মেহমানকে চেয়ার দিতে হবে!
কিছুক্ষণ পরই দাসী মহিলাটি ইরানি তৈজসপত্রে করে চা নিয়ে আসছে, পেছন পেছন একটা মোটাতাজা বেড়াল। দেখেই মেজাজটা বিগড়ে গেলো, এই চা সে খাবেনা অসম্ভব! যে রান্নাঘরে বেড়াল থাকে সেই রান্নাঘরের খাবার সে খাবেনা।
"নাও, চা নাও। এটা চাইনিজদের ঐতিহ্যবাহী উলং চা।"
আরিফের স্ত্রীও সৌখিন চা'খোর। বৌয়ের কল্যানে সে দুধ চা, র'চা, লেবু চা, আদা চা, মাসালা চা, লং চা এমনকি রংধনু চা'ও খেয়েছে কিন্তু ওরাং ওটাং চা সে জীবনে খায়নি, নামও শোনেনি।
"এই চা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী বিশেষ করে ত্বক এবং চুলের জন্য।"
দেখতে কিছুটা লেবু চা'র মতো। আরিফ একটু একটু করে খাচ্ছে আর বেড়ালটার দিকে তাকাচ্ছে, বেড়ালটাও বাড়িওয়ালার পায়ের কাছে ঝিমাচ্ছে আর একটু পরপর আরিফকে দেখছে।
চা'টা ভালো লাগলো, সকাল সকাল চলে এসেছে কোনরকম খেয়ে, এটাও ভালো লাগার কারন হতে পারে। আজ তার অফিস ছুটি ছিলো, ভেবেছিলো অনেক্ষণ ঘুমাবে তারপর তার ফার্মে যাবে.... জীবনের কিছুই প্ল্যানওয়াইজ হলোনা, আফসোস!
"চলো, আমার মহল তোমাকে ঘুরে ঘুরে দেখাই। সব ঠিক থাকবে শুধু ইন্টেরিওর লুক চেঞ্জ হবে। বাড়িতে ছোট ছোট অনেক ঘর, এগুলো সব ভেংগে ফেলবে। নিচে থাকবে শুধু রান্নাঘর আর বাথরুম এই দুইটারই শুধু দেয়াল থাকবে, ঘরের ভেতর আলাদা করে আর কোন ঘর থাকবে না, দেয়াল থাকবে না শুধু মানুষ থাকবে, কতদিন মানুষ দেখিনা, ঘরের ভেতর ঘর দেখতে দেখতে আমি ক্লান্ত!" দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো মানুষটার ভেতর থেকে।
আরিফের একটু মায়া হলো।
"রান্নাঘরটা অনেক বড় হবে..."
"যেন ফুটবল খেলা যায়...?"
"হ্যা, ল্যান্ডলেডি রান্না করবে আর শিশুরা তাকে ঘিরে ফুটবল খেলবে..."
"ল্যান্ডলেডি কে?"
"এই বাড়ির মালিক।"
"ও..."
"এই বাড়িটা বৈবাহিক সূত্রে পেয়েছিলাম, অর্থাৎ আমার শ্বশুর সাহেব আমাকে দিয়েছিলেন, আমি আবার সেটা তার মেয়েকেই দিয়ে দিয়েছি, হা হা হা!"
এবার আরিফের কেন যেন বুক ফুঁড়ে দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো।
"আমার মেয়ে আসছে ছয়মাস পর, তার তিনটা মেয়ে একটা ছেলে, তার বড় মেয়ে মানে আমার প্রথম নাতনির আবার দুইটা মেয়ে, সবাই আসছে..."
"কোথায় আছেন তারা?"
"আমার মেয়ে আর তার দ্বিতীয় স্বামী কানাডা, তাদের একমাত্র ছেলে অষ্ট্রেলিয়ায়। প্রথম স্বামী দুই কন্যা নিয়ে আছে নিউইয়র্কে, আমার বড় নাতনি স্বামী-সন্তানসহ আছে সুইজারল্যান্ডে।"
আরিফ তার বিস্ময়টাকে হজম করার চেষ্টা করছে।
তার জানতে ইচ্ছে করছে, তার মেয়ের দুইজন স্বামীই কি আসবেন?
"আর উপরে বেশ কিছু ঘর আছে, সেগুলো সংস্কার করতে হবে, লাইব্রেরি ঘরটাকে দ্যাখো বাড়ানো যায় কিনা, একটা ঘর থাকবে সেটাকে যতটা খোলামেলা করা যায় সেই চেষ্টা করবে, প্রয়োজনে একটা দেয়াল খুলে গ্লাস লাগানো যায় কিনা দ্যাখো যেদিক দিয়ে আলো-বাতাস আসবে, দিনে আকাশ দেখবে, রাতে তারা দেখবে, চাঁদ দেখবে.... এই ঘরটায় থাকবে শিশুরা। একটা ঘর হবে নারীদের আরেকটা ঘর পুরুষদের জন্য। প্রতিটা ঘরেই থাকবে এটাচ্ড বাথ কাম টয়লেট আর বিশাল বারান্দা। আর সবশেষে আমাদের ঘর যেখানে থাকবে ল্যান্ডলেডি সাথে আমি।"
বেড়ালটা আবার কোত্থেকে উদয় হলো কে জানে, তারা এখন লাইব্রেরি ঘরে ঢুকলো! দিনের বেলায়ও এই ঘরটা অন্ধকার হয়ে আছে। কিছুক্ষনের জন্য হঠাৎ গাঢ় অন্ধকার হয়ে গেলো...
"কী রে! কারেন্ট গেলো নাকি?" বুড়ো ক্লান্ত গলায় হাঁক দিলো।
আলো এলো, তাও নামমাত্র! এখন করিডোর চলেনা, উপরের ফ্লোরটায় শুধু সরু গলির মতো আঁকাবাঁকা করিডোর, দুইপাশে হোটেলের মতো ঘর, বিরক্তিকর! আরিফ মনে মনে একটা রাফ প্ল্যান করছে...
এই ফ্লোরের মাঝখানটায় থাকবে বিশাল উঠোন'স্পেস, নিচের ফ্লোরের ছাদের দিক দিয়ে আর দেয়াল থেকে আলো আসার পথ করে দিতে হবে।
ঘুপচি মতো একটা জানালা খোলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে বুড়ো এদিকে আসতে যাবেন এমন অবস্থায় তাঁর চোখ আরিফের পেছনে স্থির হলো। আরিফও পেছনে তাকালো, ভিতরঘরের জানালার ভাংগা কাঁচে আটকে আছে নাদুস নুদুস বিড়ালটা।
ভদ্রলোক কোন কথা বলতে পারলেন না। বুকে হাত দিয়ে বসে পড়লেন। দাসীও উপস্থিত, বিস্ময়ে সেও হতবাক।
"তোর খালাম্মাকে কিছু বলার দরকার নেই।" বুকে হাত চেপে রেখেছেন।
"মনে হয় মরে নাই...!" পরম যত্নে রক্তমাখা শরীরটা কোলে তুলে নিলো দাসী রমণী, "ভাইজান! ডাক্তারের কাছে নিয়া যান।" আরিফের হাতে তুলে দিলো বিড়ালটাকে, এখনো টপটপ করে রক্ত ঝরছে।
আরিফ কী ভেবে বললো কে জানে, "স্যার চিন্তা করবেন না আমার পরিচিত পশু ডাক্তার আছে, ভালো হয়ে যাবে, বেশি কাটেনি।" আরিফ ভদ্রলোকের চোখে একটু ভরসা দেখতে পেলো।
প্রধান ফটক পার হয়ে আরিফ রাস্তায় বেরিয়ে এলো, কাউকে যে ফোন দেবে সেই উপায়ও নেই, হাত রক্তে ভিজে গেছে। কোনরকম একটা রিক্সা নিয়ে সোজা চলে এলো ডাক্তারের চেম্বারে, মেইনরোডেই এসেছে ট্রাফিক আটকায়নি।

আরিফ ওয়েটিং রুমে বসে ঘুমিয়ে গিয়েছিলো। ডাক্তার বলেছিলো চিন্তার কোন কারন নেই, এখানে গোসলের ব্যবস্থা আছে, ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিতে বলেছিলো। আরিফও বাধ্য ছেলের মতো গোছল-টোছল করে ঘুমিয়ে গেছে।

তার ঘুম ভাঙলো একজন মহিলার চিৎকারে, চোখ খুলে বুঝতে পারলো তার স্ত্রী; শুধু চিৎকার না কান্নাও শুনতে পাচ্ছে সে। শাশুড়ি আম্মাও এসেছেন, সান্ত্বনা দিচ্ছেন। লাভ হচ্ছেনা, চেঁচামেচি আরো বাড়ছে।
"আমার বিড়ালটাকে কেমন করে মেরে ফেললো! কিভাবে পারলো?"
ডাক্তার বলছে, "বাঁচানো গেলোনা, কিছু করার ছিলোনা।"
সব কথা একসাথে আসছে যেন আরিফের কাছে।
আরিফের স্ত্রী জয়ী ডাক্তারের চেম্বারে বসে আছে, সামনে বসা পশুপাখির ডাক্তার যে তার স্কুলের বন্ধুও।
"কী হয়েছিলো, আরিফের সাথে কি কোন ঝামেলা হয়েছে? ওকে যতটুকু জানি ও খুব ভদ্র ছেলে।"
"আমিও তো তাই জানতাম..."
"তাহলে?"
"আজ ওর অফিস ছুটি ছিল, ঘুম থেকে উঠেই খাওয়া দাওয়া করলো, মেয়ের সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটালো, আমি রান্নাঘরে, মা টিভির ঘরে বসে স্বব্জি কাটছিলো। বিড়ালটাও টিভি দেখছিলো। আমার মেয়ে ছাদে যাওয়ার জন্য বায়না ধরলে আরিফ বলে বিকেলে নিয়ে যাবে কারণ আজ তার ফার্মে যেতে হবে..."
"নতুন যে কন্সাল্টেন্সি খুলেছে?"
"হ্যা। যাই হোক মেয়ের কান্না থামাতে ছাদে যাবে, এমন সময় বিড়ালটাও পিছু নিলো, আরিফ তখন একটু চেঁচামেচি করলো, 'এই বিড়ালটাকে বাড়িতে রাখারতো আমি কোন প্রয়োজন দেখিনা।'
আমি বিড়ালটাকে আমার সন্তানের মতো ভালোবাসতাম, আরিফ মাঝে মাঝেই বিড়ালটাকে নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করতো, আমি পাত্তা দিতাম না, বিড়ালটার রান্না ঘরে যাওয়াও পছন্দ করতো না, আমিও আসতে দিতাম না... আমাদের ফ্লোরের উপরেই ছাদ, আমার মেয়ে হঠাৎ ছাদ থেকে আমাকে ডাক দিলো, রান্নাঘরের জানালার উপরের জায়গা থেকে। আমি সরাসরি ছাদে চলে গেলাম। আমার মেয়েটা ভয় পেয়েছে বুঝতে পারলাম দৌড়ে আমার কাছে চলে এলো। আর আরিফ রক্তমাখা বিড়ালটা হাতে নিয়ে বসে আছে। আমাকে দেখে বলছে, 'চিন্তা করোনা, বেশি কাটেনি, ভালো হয়ে যাবে।'
আমি রক্ত দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম, কান্না করছিলাম, মা ছুটে আসে, ততক্ষণে বোধয় আরিফ তোমার কাছে চলে আসে।"
"হ্যা, ও ঠিক সময়েই এসেছিলো, তখনো জীবন ছিল বিড়ালটার কিন্তু একেবারে জবাই হয়ে গিয়েছিলো..."
জয়ী কান্না করছে, "ওর মনে যে এই ছিলো, বুঝিনি, হায় খোদা..."
"আমার মনে হয়না আরিফ মেরেছে, ওর চোখেমুখেও আতংক দেখেছি, মায়া দেখেছি, বাঁচানোর জন্য অনুরোধ করছিলো।" একটু থেমে ডাক্তার বললো, "তবে একটু গোলমাল লাগছে, আরিফ যখন বিড়ালটাকে নিয়ে আসে তখন সে বলছিলো, বিড়ালটাকে বাঁচাতে যেন সর্বোচ্চ চেষ্টা করি, বিড়ালটাকে বাঁচাতে না পারলে সে তার স্যারকে কিভাবে মুখ দেখাবে... এইসব বলছিলো। বিড়ালটাকে যে বাঁচানো যাবেনা তখনই বুঝেছিলাম কিন্তু তাকে তখন বলিনি।"
"আমার অভিজ্ঞ ছেলেমেয়েরা বিড়ালটাকে বাঁচাতে চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখেনি, আমি আসলে এই মুহূর্তে বিড়ালটাকে নিয়ে না আরিফকে নিয়ে চিন্তা করছি।"

আরিফ বুঝতে পারছে না কী করবে, সেতো বেড়ালটাকে মারেনি সে জানে, কিন্তু কেউ বিশ্বাস করবে না, বলে লাভ নেই। ছাদের এক ইউনিটে তার মেয়ে আর বেড়ালটা খেলছিলো, আর সে ফোনে কথা বলতে বলতে অন্য ইউনিটে চলে গিয়েছিলো। হঠাৎ মেয়ের চিৎকার শুনে সে দৌড়ে আসে, ভাঙ্গা কাঁচ দিয়ে গলাটা কাটা। মেয়ে ভয় পাবে ভেবে তাকে আর কিছুই জিজ্ঞেস করেনি।
আরিফের স্ত্রী জয়ী ডাক্তারের চেম্বারে বসে আছে, সামনে বসা পশুপাখির ডাক্তার যে তার স্কুলের বন্ধু।
সামান্য বিড়ালের জন্য এতো মাতামাতিরই কি আছে সে বুঝতে পারেনা। সকালটাই মাটি। হঠাৎ তার মনে হলো, তার সাইটে যাওয়ার কথা। ছাদে উঠার পরই তার ফোন এসেছিলো, মেয়েকে আর বিড়ালটাকে রেখে অন্যপাশে চলে গিয়েছিলো আর তখনই বিপত্তি!
কিছুদিন আগে সে আর তার দুই বন্ধু মিলে একটা পুরনো বাড়ির সয়েল টেস্ট করতে গিয়েছিলো, সে ভেবেছিলো বাড়িটা ভেঙ্গে ফেলবে। দশ/বারো তলা একটা বিল্ডিং করা যাবে, ত্রিশ/চল্লিশটা ফ্ল্যাট হয়ে যাবে অনায়াসে কিন্তু না বাড়ির মালিক তা করবে না। তিনি সেই বাড়িটাকে ঠিক করাবেন। সেদিন আর সেই বাড়িওয়ালার সাথে কোন কথা হয়নি, সয়েল টেস্ট করেই চলে এসেছিলো। তার ফ্রেন্ড এবং তার ফার্মের ইন্টেরিওর কাজের দায়িত্বে থাকা সামিরা পরে জানিয়ে দিলো, শুধু বাড়িটাকে নতুন করার দায়িত্ব তাদের। তাহলে সয়েল টেস্টের কী প্রয়োজন ছিলো, সে বুঝেনি। আজ সকালে ফোনে সামিরা নিশ্চিত করলো টাকাটা বড় অংকেরই দিবে তাদের, আজ তাকে বাড়িটা দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে বাড়িওয়ালা ভদ্রলোক। কাজটা যে তাদের ফার্মকেই দিবে সেটাও কনফার্ম হবে আজ।

আরিফ সেখানেই যাবে এখন।
বাড়ির প্রধান ফটকের সামনে পৌঁছে ফোনটা বের করে সময় দেখে নিলো বারোটা বেজে ছয় মিনিট। তার আসার কথা এগারোটায়, একটু দেরি হয়ে গেছে যদিও তবে তার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কেন যেন মনে হলো এই সময়টায় ঠিক আছে। বিশাল নকশা করা দরজার পাশেই ঘণ্টার দড়ি টানলো, মিস্টি সুরে আওয়াজ হলো 'ঢং'!
অনেকক্ষণ হলো সে ঘণ্টা বাজিয়েছে, আর বাজাবে না, অপেক্ষা করবে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সে দরজার ডিজাইন দেখছে, বাইরে থেকে বাড়ির চেহারা অনুযায়ী ভিতরের ডিজাইন আন্দাজ করার চেষ্টা করছে। হঠাৎ প্রাচীন একটা শব্দ হলো, দরজাও খুলে গেলো; আরিফ বুঝতে পারলো শব্দটা দরজা খোলারই, একটু অন্যমনষ্ক হয়ে গিয়েছিলো। ঘরে পা দিয়েই আরিফ বুঝতে পারলো কলিংবেলের আওয়াজ শুনেই কয়েক মুহূর্ত আগে ঘরটা গুছিয়েছে এরা। বাইরে থেকে ডুপ্লেক্স মনে হলেও ভিতরে কিছুটা মাল্টিপ্লেক্সের মতো মনে হচ্ছে, মার্বেল পাথরের বিশাল ফ্লোর। সে আরো কয়েকবারের মতো এবারও অবাক হলো, মুগ্ধ হলো। কিছু একটা মনে হতে ধরেও মনে পড়ছে না তার...।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ মোখলেছুর রহমান বেশ সচ্ছন্দ,শুভেচ্ছা সতত।
এশরার লতিফ সময়ের রহস্য মোড়া গল্প। ভালো লেগেছে।

০৮ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১৯ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪