বারান্দায় অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে বিপাশা। খুব অস্থির লাগছে তার। আজকে হারুন যখন অফিসের জন্যে বের হচ্ছে ঠিক তখনই ওর হাত থেকে একটা গ্লাস পড়ে ভেঙ্গে গিয়েছে। তখন থেকেই ওর মনটা ছটফট করছে। হারুন ওকে বলেছে, -অ্যারে একটা গ্লাসই তো। এতে এত চিন্তার কি আছে? বিপাশা বলেছিল, -তাই বলে তোমার বের হবার সময়েই অঘটনটা ঘটল? আমার খুব ভয় হচ্ছে জান? -কিসের ভয়? হারুন হেসে এগিয়ে আসে। ল্যাপটপটা টেবিলের উপর রেখে বিপাশাকে জড়িয়ে ধরে। আঙ্গুল দিয়ে থুতনি উঁচু করে বলে, -কি হয়েছে? -কিছু হয়নি। -তাহলে যে -আজকে অফিসে যেও না।আমার মনটা ভাল নেই। -সেকি! এ অবেলাতে থেকে যেতে বলছ? ব্যাপারখানা কি? -ধুর।সবসময় শুধু শয়তানি -আমি শয়তান? তাহলে তুমি কি? -শয়তানের বউ। বিপাশা হাসে। হারুন বিপাশাকে চেপে ধরে ওর ঠোঁটে চুমু এঁকে দেয়। তারপর চুলগুলো কানের ওপাশে সরিয়ে দিতে দিতে বলে, -আজকে না গেলে চাকরি আর থাকবে না। একটা জরুরী মিটিং আছে। -আচ্ছা। ঠিক আছে যাও। তবে কথা দাও আজকে তাড়াতাড়ি চলে আসবে। একদম দেরি করবে না। বিপাশার কন্ঠে অনুনয় ঝরে পড়ে। হারুন এবারও হাসে। বলে, -কথা দিলাম। তারপর হারুন সেই যে চলে গেল এখনও আসল না। এখন বাজে রাত সাড়ে দশটা। ও কোনদিনও এত দেরি করে না। আজ এত দেরি করছে কেন? কোন কাজে ব্যস্ত থাকলে একটা ফোন করবে তো। তা না করে, মোবাইলটাও অফ করে রেখেছে। বিপাশা হারুনের অফিসেও ফোন দিয়েছিল। অফিস থেকে জানিয়েছে যে, হারুন মিটিং শেষে সাইটে ভিজিট করতে গিয়েছিল তারপর আর অফিসে ফেরেনি। তখন থেকে বিপাশার চিন্তা আরো বেড়ে গেছে। বারবার গ্লাস ভাঙ্গার কথা মনে হচ্ছে ওর। কেন যে অলুক্ষনে ঘটনাটা তখন ঘটল। ওদের বিয়ে হয়েছে মাত্র ছয়মাস, ওদের অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ। বিপাশা ছবি দেখেই হারুনকে পছন্দ করেছিল। তবু কেন যেন লজ্জায় কাউকে বলতে পারেনি। অবশ্য নাও বলেনি কখনো। তারপর সামনা সামনি দেখা হল। হারুন সেদিন বিপাশার চাইতেও বেশি লজ্জাবোধ করেছিল। মাঝে মাঝে এ নিয়ে বিপাশা হারুনের সাথে হাসি তামাশা করার চেষ্টা করে। এভাবেই একদিন শুভদিনে ওদের বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। বিপাশার মনে আছে সেদিন রাতে খুব বৃষ্টি হয়েছিল। হারুন ওর ঘোমটা সরিয়ে দিয়েছিল। সারারাত ওরা দুজনে খুব গল্প করেছিল। হারুন এমনিতে চুপচাপ। সেদিন যে ও এত কথা কিভাবে বলেছিল, কে জানে? ভাবে বিপাশা। সে রাতের পর বিপাশাই সবসময় বকবক করে আর হারুন সারাক্ষন হুঁ-হাঁ করে। মাঝে মাঝে দুএকটা কথা বলে। হারুনের প্রতি বিপাশার একটা অভিযোগ আছে। দেখতে দেখতে ছয়মাস পার হয়ে গেল তবু ওরা হানিমুনে যেতে পারেনি। বিপাশার ইচ্ছা কক্সবাজার থেকেই ঘুরে আসে। বাইরের দেশে যাওয়ার দরকার কি? কিন্তু হারুন নাছোড়বান্দা। বলে, -কয়েকদিন ওয়েট কর।তোমাকে নিয়ে নেপাল বেড়াতে যাব। -ধুর। তার চেয়ে কক্সবাজার হয়ে সেন্টমার্টিন যাই চল। -নাহ। ওগুলো আর কত দেখব? -তাতে কি? প্রতিবার গেলে মনে হয় আরেকবার যাই। -আচ্ছা কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন হয়ে নেপাল যাব। -হুম। সময়ই বের করতে পার না আর দিল্লি হয়ে চীনে যাবার শখ। হারুন হাসে। বলে, -এবারের প্রজেক্টটা শেষ হোক। তারপরেই একমাসের ছুটি নিব। তারপর শুধুই ঘোরাঘুরি। -হুম। এ তো কবে থেকেই শুনছি। হারুন বিপাশাকে পিছনদিক থেকে জড়িয়ে ধরে। ওর নরম কাঁধে নিজের থুতনি রাখে। -আমাকে বিশ্বাস হয় না বুঝি? -আমি কি তা বলেছি? -তাহলে যে -তোমাকে বলছি এই কারণে যে আমি খুব করে চাই তোমার কথা সত্যি হোক। -তাই নাকি? হারুন বিপাশাকে নিজের থেকে ঘুরিয়ে ফেলে আর বিপাশ হারুনের বুকের কাছে নাক ঘষতে থাকে। বিপাশা ঘড়ির দিকে তাকায়। রাত সাড়ে এগারোটা বেজে গিয়েছে। এর মধ্যেই একঘন্টা পার হয়ে গিয়েছে। এখনো হারুন ফিরে আসেনি। বিপাশার চোখ ছলছল করছে। ভাবছে, কি করবে, কাকে ফোন করবে? কেন যে আজ সকালে ওকে যেতে দিল? বিপাশা মনে মনে বলে, আল্লাহ তুমি ওকে আমার কাছে ফিরিয়ে আনো। আমি কখনোই আর ওকে আমার কাছে থেকে যেতে দিব না। এদিকে হারুন দশ মিনিট যাবত বাসার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। বারটা বাজতে আর পাঁচ মিনিট বাকি। বারটা বাজলেই বিপাশার জন্মদিন। ওকে দারুণ একটা সারপ্রাইজ দিবে আজ। ভাবে হারুন। অফিস থেকে আসার পথে কেক কিনে এনেছে। একটা শাড়ীও। আর কিছু কেনার সময় পাইনি নাহলে গহনা জাতীয় কোন জিনিসও কিনত মনে হয়। যদিও বিপাশা গহনা তেমন পছন্দ করে না। এদিক দিয়ে বিপাশা কিছুটা অন্যান্য মেয়েদের থেকে আলাদা। ওকে সাধারণ অবস্থায় দেখলে বেশ লাগে। হারুন অস্থির বোধ করে।এখনো বারটা বাজে না কেন? আজ সারাদিন খুব খাটুনি গিয়েছে। তবে একটা লাভ হয়েছে। ছুটি পাওয়া গিয়েছে। এবার বিপাশাকে নিয়ে হানিমুনটা সেরে আসা যাবে। ভাবে হারুন। বিপাশা শুনে যে এত খুশি হবে সে ভেবেই হারুনের ভাল লাগছে। বিপাশা বারান্দা থেকে বেডরুমে আসে। হারুনকে আবার মোবাইল করে, মোবাইল এখনো বন্ধ। মানুষটার যে কি হল? আমার কথা কি একটুও মনে নেই? মনে মনে ভাবে বিপাশা। তার হঠাৎ কান্না পেয়ে যায়। বারটা বেজে গেল এখনো আসার নাম নেই। ঠিক এসময়ে কলিং বেল বেজে উঠে। তড়িৎ গতিতে দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়। সাথে সাথে দরজা খুলে দেয়। -হ্যাপি বার্থডে টু ইউ হারুন এতটুকু বলতেই বিপাশা ওর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। বিপাশা ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। হারুন অবাক হয় বেশ। জিজ্ঞেস করে, -কি হয়েছে বিপাশা? -সারাদিন কোথায় ছিলে? -কেন অফিসে। -না তুমি অফিসে ছিলে না। আমি ফোন করেছিলাম। -আর বল না। সাইটে ঘুরতে ঘুরতে খুব খারাপ অবস্থা। -একটা ফোন তো করতে পারতে? তোমার মোবাইল বন্ধ কেন? -ফোন করিনি এ জন্যে সরি। আর মোবাইল বন্ধ কারণ চার্জ দিতে ভুলে গেছি। -কত সহজে বলে দিলা। আমি কত দুঃশ্চিন্তায় ছিলাম জান? -কেন? সকালের সেই ভাঙ্গা গ্লাসের জন্যে। হারুন হাসে। বিপাশা বাম হাতে দিয়ে হারুনের বুকে আলতো করে বাড়ি দেয়। তারপর সরে দাঁড়ায়। -ভিতরে চল। এবার বিপাশা হারুনের হাতের জিনিস লক্ষ্য করে। -তোমার হাতে কি? -হ্যাপি বার্থডে বিপাশা। চল কেক কাটবে। -আজকে ৩১ জানুয়ারি? -ইয়েস ম্যাডাম। -আমার একদম মনে ছিল না। -হুম। মনে থাকবে কি করে? সারাদিন তো টেনশনেই ছিলে মনে হয়। -অনেক ধন্যবাদ হারুন। -হুম। রান্না হয়েছে তো? তুমি টেনশনে থাকলে আবার রান্না কর না। বিপাশা হাসে। -রান্না করেছি। তোমার ফেভারিট ইলিশ মাছ ভাজা। -ওয়াও। -তুমি কাপড় ছেড়ে হাত মুখ ধুয়ে আস। আমি খাবারের আয়োজন করছি। বিপাশা রান্না ঘরের দিকে যেতে থাকে। হারুন বাধা দেয়। বিপাশা বলে, -কি হল? খাবে না? -খাব পরে। আগে চল কেক কাটবে। -পরে কাটলে হয় না। -না হয় না। -তুমি না একটা পাগল। -আমি পাগল? তুমি কি? -আমি পাগলের বউ। দুজনে একসাথে হেসে উঠে। হারুন মোমবাতি দিয়ে কেক সাজায়। বিপাশা কেক কাটার ব্যাপারে তেমন কোন আগ্রহ দেখায় না। হারুন জোর করে ওকে কেক কাটায়। জন্মদিনের উপহার দেয়। বিপাশা রেগে গিয়ে বলে, -তুমি খালি বাজে খরচ কর। -এটা বাজে খরচ? -নাতো কি? -বারে। আমার সুন্দরী বউটাকে একটা জন্মদিনের গিফট দিব না? তা কি হয়? -সুন্দরী না ছাই। হারুন হাসে। কাছে টেনে নেয় বিপাশাকে। আঙ্গুল দিয়ে বিপাশার মুখ উঁচিয়ে ধরে। বলে, -তুমি অনেক সুন্দর। -যাও। বিপাশা লজ্জা পায়। মাথা নামিয়ে নেয়। বলে, -তোমার সাথে আজ আমার কথা বলাই উচিত না। -কেন? -তুমি আমার কথা একদম চিন্তা কর না। চিন্তা করলে অন্তত একটা খবর দিতে। সারাদিন আমি কত টেনশনে থেকেছি। -সরি বলেছি তো। -সরি বললেই হল? -হুম। অভিমান? -হুম। -একটা খবর দিতাম। কিন্তু এখন আর বলব না। -কি? -বলব না। -বলো। -না। -আচ্ছা অভিমান তুলে নিলাম। হারুন মজা পায়। তারপর খবরটা বিপাশাকে দেয়। -সাত দিনের ছুটি পেয়েছি। কালকে থেকেই আমাদের হানিমুন। -সত্যি? -হুম সত্যি। বিপাশা হারুনকে জড়িয়ে ধরে। তারপর বলে, -আমি তোমাকে খুব ভালবাসি হারুন। -আমিও তোমাকে খুব ভালবাসি বিপাশা। ওরা দুজন দুজনকে শক্ত করে ধরে রাখে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।