বাবা হওয়া

বাবা দিবস (জুন ২০১৩)

ধীমান বসাক
  • 0
  • ৫৪
পটলা জনে জনে বলে বেড়াচ্ছিল ওর নাকি বাবা হয়েছে । সবাই শুনে হাসছিল । ও তাতে দমে না গিয়ে আরো বলছিল অচিরেই ও ‘বাবা দিবস’ পালন করবে ।আমি আর থাকতে পারলাম না । পটলাকে ডেকে বললাম , কি ব্যাপার রে পটল ?
আমার বাবা হয়েছে ।
সে কি রে ? ব্যাপারটা একটু খুলে বল ।
তা হলে কোথাও বসতে হবে ।
পাশেই ছিল এক চায়ের দোকান । দোকানের বেঞ্চিতে গিয়ে বসলাম । দোকানি বললো, চা দেবো ? আমি না করলাম । অমনি পটলা বলে উঠলো,
‘চা খাও আর না খাও, আমাকে তো চাখাও’ ।
দোকানিকে পটলার চাখার জন্য কিছু দিতে বলে আমি মুত্র বিসর্জন করতে একটু বাইরে গেলাম ।কিছুক্ষন পরে ফিরে এসে দেখি পটলা ১০০ টাকা চেখে ফেলেছে । কি আর করা যাবে !
এবার বলো দেখি পটল ব্যাপারটা কি ?
তুমি তো জান সবার বাবা আছে ।
হ্যা ।
আমার নেই ।মা বলে আমার জন্মের আগেই তার স্বামী মারা গেছে । সুতরং সে আমাকে দেখেনি আমিও তাকে দেখিনি ।তাহলে এই দাড়ালো যে আমার কোন বাবা নেই ।
আট বছরের পটলের জ্ঞানের বহরে আমি আটখানা হই । আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে পটলা আবার বলে ওঠে ,
কি হ’ল ঠিক বলিনি ?
হ্যা হ্যা ঠিক বলেছো ।
মনে পরলো বছর আটেক আগে পটলের বাবা ওদের জমির পটল তুলে পটলের বস্তা মাথায় নিয়ে বাড়ী ফেরার সময় ঘাসে পা আটকে পড়ে যায় ।পটলের ভারী বস্তাটা পড়ে পটলের বাবার উপর ।তাতেই পটলের বাবা পটল তোলে । পটল তখন মায়ের পেটে ।পটলের জন্মের পরে সবাই মিলে নাম রাখা হয় পটল । পটল কিন্তু পটল খেতে একদম ভালোবাসেনা ।বলে পটল আবার কেউ খায় নাকি ? পটল একেবারে অখাদ্য ।ওর মা-ও পটল তোলার ভয়ে ওদের জমিতে পটলের আবাদ বরবাদ করে দিয়েছে । পটলকে সবাই পটলা বলেই ডাকে ।
‘বাবার অভাবে আমার খুব কষ্ট হতো’ ।পটল তার দুখ ভরা কাহিনী শুরু করে ।
‘আমার বয়সী সব ছেলে মেয়েরা বাবার হাত ধরে বেড়াতে যায়, বাবার কাছে কত কিছু আব্দার করে , আর আমি , কি পোড়া কপাল আমার ,উ হু হু হু’ ।কান্নায় পটলের পটলচেরা চোখ দুটো জলে ভরে উঠে ।আমার চোখ দুটোও চিক চিক করে উঠে ।
‘তাই’ , চোখ মুছে আবার পটল কাহিনী শুরু হয় ।
আমি মামাদের দিয়ে পটিয়ে মাকে আবার বিয়েতে রাজী করিয়েছি ।
‘বলিস কিরে পটল !’ আমি আঁতকে উঠি ।একটু ধাতস্থ হয়ে বলি, ‘তা তোর এই হবু বাবাটি কোথাকার লোক, কি করে ?’
‘হাতিশালের’ ।পটলের এক কথার জ্ববাব ।
‘সে কিরে , হাতিশালে তো হাতিরা থাকে, যেমন ঘোড়াশালে ঘোড়ারা । আগেকার রাজকাহিনীতে তো এরকমই পড়েছি’ ।
আঃ সেসব রাজকাহিনীর কথা বাদ দাও । হাতিশাল হলো বাঁকুড়া জেলার বাঁকাদহ রেঞ্জের একটি গ্রাম । তবে সেই গ্রামে মাঝে মধ্যে হাতি চলে আসে , বোধহয় গ্রামবাসীদের সাথে হাতাহাতি করতে আর জমির ফসল খেতে ।
বাপরে বাপ ! আমার সগোতক্তি ।
হাতিরা হাত অর্থাৎ শুঁড় দিয়ে অ শুঁড় অর্থাৎ মানুষদের হাত দুটো পেঁচিয়ে দূরে ছুঁড়ে দেয় , পটলার প্রান্জল ব্যাখ্যা । ‘ তা ছাড়া হাতিরা কাঠাল খেতে খুব ভালোবাসে , গাছে কাঠাল পাঁকলে , সেই গন্ধে ওরা ছুটে এসে কাঁঠাল খেয়ে তবে যাবে’ , হাতিশালে এখনো না গিয়েও হাতিদের বিষয়ে পটলার এত চমৎকার জ্ঞান, বোধকরি হবু বাবার জন্যই , আমাকে চমকিয়ে দেয়। পটলার কাছে আরো জানতে পারি , মানুষে ছুঁলে হাতিদের জাত যায় , তারা আর দলে ফিরতে পারেনা , নির্দল হয়েই তথা মানুষের সাথেই ওদের জীবন কাটাতে হয় ।পটলার কাছে হাতি বিষয়ে বিশদ জ্ঞান লাভের পরে আমিও একজন হস্তি বিশারদ হয়ে যাই ।

দিন কয়েক বাদেই পটলের বাবা হওয়ার জন্য হাতিশাল থেকে ঘোড়ায় চড়ে পটলের হবু বাবা এসে পড়লেন ।এবারে বাবা দিবস পালিত হবে ১৬ই জুন, ২০১৩ রবিবার ।কিন্তু পটলার আর তর সইছিল না । তাই বাবা দিবসের আগেই ‘বাবা দিবস’ পালনের জন্য পটল আমাকে ওদের বাড়ীতে যেতে বলেছিল, ২রা জুন ২০১৩, রবিবার ।গিয়ে দেখি পটলের বাবা বাড়ী নেই । পটলকে ডেকে বললাম, ‘হ্যারে পটল, তোর বাবা কোথায় ?’
ঘুড়তে গেছে , পটলের উত্তর ।
কার সাথে ঘুড়তে গেছে ?
ঘোড়ার সাথে ।
সে কিরে ! আমি তো অবাক ।
বাবা ঘোড়ার সাথে ঘোড়াঘুডি করতেই ভালবাসে ।
তা তুই গেলি না ?
ঘোড়াটা কেমন চি হিঃ হিঃ হিঃ করে ডাকে, আমার ভালোলাগে না ।পটল আরো বলে উঠে, ‘শেরশাহ্ যে কেন ঘোড়ার ডাকের প্রবর্তন করেছিলেন কে জানে’ ।
মানে ? হতভম্ব আমার প্রশ্ন ।
ইতিহাস বইতে পড়েছি শেরশাহ্ –ই প্রথম ঘোড়ার ডাকের প্রবর্তন করেন। তার আগে ঘোড়ার ডাক ছিলনা ।
পটলের জ্ঞানের বহরে আমার অজ্ঞান হওয়ার দশা ।
‘তা তোর হাতিশালের বাবা হাতিতে চড়ে না এসে ঘোড়ায় চড়ে ঘুড়তে এলো কেন ?’ আমার সকৌতুক প্রশ্ন ।
‘হাতি পোষার খরচ জানো ? তা ছাড়া হাতি চড়ে হাতিশাল থেকে রওনা দিলে হয়তো সাল-ই লেগে যেতো’ পটলার বিজ্ঞের মত অভিজ্ঞ মতামত ।

কিছুক্ষনের মধ্যেই ঘোড়াঘুড়ি সেরে পটলের বাবা এসে পড়লেন ।
‘বাঃ চমৎকার ঘোড়া’ ! আমার সপ্রশংস মন্তব্য ।
এটা তো ঘোড়া নয় । ঘোড়ার উপড় থেকেই পটলের বাবার জ্ববাব ।
ঘোড়া নয় ! তবে কি এটা ? আমি আতান্তরে পরে যাই ।
এটা ঘুড়ি, নাম রাণী ।
ও আচ্ছা , আমি ধাতস্থ হই।
‘আমার রানীর হাতি খেদানোর ইতিহাস আছে’ ।তিনি বলে উঠেন ।
ইতিহাসের দিকে আমার চিরকালের ঝোঁক, ঐতিহাসিক কাহিনী শুনতে আমার ভাল লাগে ।
‘ আমাদের হাতিশালে হাতির খুব উপদ্রপ’ , রাণী কাহিনী শুরু করেন তিনি ।
কাহিনীর শুরুতেই আমি তার নাম জিজ্ঞাসা করি, কারণ নামহীন কাহিনী আমার পছন্দ নয় ।
‘রাজা’ । তার সংক্ষিপ্ত উত্তর ।
আবার রাজা দ্বারা রাণীর কাহিনী শুরু হলো ।
‘আমার বোনের বিয়ে, রাত প্রায় আটটা, খাওয়া দাওয়া শুরু হয়েছে । প্রত্যন্ত গ্র্রাম তায় হাতির ভয় । সবাই তাড়াতাড়ি করছে , এমন সময় মূর্ত্তিমান দাঁতাল এসে উপস্থিত ।সবাই দৌড়ে পালালো, বোনের বরকে নিয়ে আমি উঠলাম বট গাছের মগ ডালে । এমন সময় রাণী চি হিঃ হিঃ করতে দাঁতালের সামনে রুখে দাড়ালো ।দাঁতালটা শুঁড় দিয়ে রাণীকে পেঁচিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিল । আমি ভাবলাম রাণী নির্ঘাত পটল তুলেছে ।কিন্তু অবাক কান্ড !
রাণী উঠে দাড়ালো ।তারপর চি হিঃ হিঃ করতে করতে ছুঁটে গিয়ে জোড়া পায়ে হাতির মুখে জব্বর লাথি হাকালো ।হাতিটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল ।ভাবলো এটা আবার কি জন্তু ! তারপর পিছন ফিরে দৌড় লাগালো । রাণীও পিছন পিছন দৌড়ে গিয়ে হাতিটাকে জঙ্গলে ফেরত পাঠিয়ে ফিরে এলো ।আমরাও গাছ থেকে নেমে এলাম ।বাকিরাও বাড়ী ফিরে এলো । তারপর থেকে রাণীর খ্যাতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লো, আশেপাশের গায়ের লোক হাতির উপদ্রপ হলেই রাজার কাছে রাণীর জন্য ছুটে আসে ।

আমার মনে পড়ে গেল মাস দেড়েক আগে আনন্দবাজার পত্রিকায় ছবিসহ রাণী কাহিনী পড়েছিলাম ।এই তাহলে সেই বিখ্যাত রাণী !

পটলের বাবা হওয়ার দিনে অর্থাৎ বাবা দিবসে খাওয়ার মেনুতে পটলের জয়জয়াকার । পটল ভাজা দিয়ে শুরু ।তারপর আলুপটলের তরকারি, দই পটল, পটল চিংড়ি , পটলের দোলমা , মাংস পটল এবং শেষে পটল মিষ্টি , মানে পটলাকৃতি মিষ্টি । আমাদের পটলা, যে কিনা পটল খেতে ভালবাসতো না , সেও পটলের এতো পদ খেয়ে পটলপ্রেমী হয়ে গেলো ।
পটলের বাবা বললেন , তিনি পটল ভালোবাসেন , পটল কেউ ভালোবাসেন ।
হাতিশালে তিনি অনেকটা জমিতে পটলের চাষ করেছেন, পটল ফলেছেও অনেক ।বাড়ী ফিরেই তাকে পটল তোলার ব্যবস্থা করতে হবে ।

আমরা সবাই পটলের বিভিন্ন পদ তৃপ্তি করে খেয়ে পটলের ‘বাবা দিবস’ পালন করে হাসিমুখে বাড়ী ফিরলাম ।

পরদিন সকালেই হাতিশাল থেকে রাজার কর্মচারী খবর নিয়ে এলো রাণীর অনুপস্থিতিতে হাতিরা পটল খেতে , পটলের বাবার পটল খেতে উপস্থিত হয়েছে । খবর পেয়েই রাজা রাণী, পটল ও পটলের মাকে নিয়ে হাতিশালের দিকে রওনা দিলেন ।

হাতিদের সাথে হাতাহাতি করতে নাকি পটল তুলতে, কে জানে !
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

০৬ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৫৪ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪