আমার ছোট্ট খালাত ভাই মারূফ এলে সারাক্ষণ তার সাথে খেলা করি। আরো কত মজা করি। কিন্তু যখন সে তার বাসায় চলে যায় তখন ভীষণ খারাপ লাগে। আর তখন মনের মধ্যে একটি কথাই আসত যে, ইস্ আমার যদি একটা ছোট ভাই থাকত তাহলে সেতো কেথাও যেতনা। সারাক্ষণ আমার পাশে থাকত আর তার সাথে কত দুষ্টামি করতাম। আর যখন শুনলাম সত্যি সত্যি আমি একটি ছোট ভাই পেতে যাচ্ছি তখন খুশিতে আমি আত্মহারা হয়ে পড়লাম। তার সাথে লুকোচুরি খেলব, নদীর পাড়ে কাঁদা মাখামাখি করব তারপর নিজে আবার তাকে গোসল করাব। তাকে লেখাপড়া শিখিয়ে আমার চেয়েও বড় ইঞ্জিনিয়ার গড়ে তুলব। একটু একটু আদুরে শাসন করব। মাকে না বলে তাকে কাঁদে করে গ্রামে গ্রামে ছুটে বেড়াব। তাকে মাঝে মাঝে বিরক্তিকর কথা বলে রাগিয়ে দিব, তারপর সে আমাকে এদিক ওদিক ছুটাবে আমি ঝুপের মাঝে লুকিয়ে যাব আর সে ভাইয়া ভাইয়া বলে আমায় খুঁজবে। তার সাথে ঘুড়ি উড়ানো থেকে শুরু করে ক্রিকেট ফুটবল কিছুই বাদ যাবেনা। আর তার জন্য ঠিক করে রেখেছি আমার নামের (আরজু) সাথে মিলবে এমন অনেক নাম। যেমন: আলভী, আকিব, আরমান, আরফান ইত্যাদি। পৃথিবীতে ওর আগমনের অপেক্ষা যেন আর মনে ধরে না। সকালে বের হলাম বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে। হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূরে চলে এলাম। এক সময় পকেট থেকে মোবাইল হাতে নিতেই দেখি বাসা থেকে ১৫ বার কল এসেছিল। মোবাইল সাইলেন্ট থাকায় বলতে পারিনি। দ্রুত বাসায় আসলাম। বাসায় কেউ নেই আছে শুধু ফুফাতো বোন রোকসানা। সে আমায় বকার সূরে বলল : কোথায় গিয়েছিলে? : এইতো বন্ধুদের সাথে একটু হাঁটতে বের হয়েছিলাম। : ফোন রিসিভ করনি কেন? : সাইলেন্ট ছিল বলতে পারিনি। : বাসার সবাই হাসপাতালে সেখান থেকে ফোন আসেছিল তোমাকে সেখানে খুব তাড়াতাড়ি যেতে বলেছে। : কোন হাসপাতাল? : মেসন হাসপাতাল, ৪র্থ তলা, ৪০৮ নম্বর কেবিন। আমার মন বলছে আমি ভাইয়া ডাক শুনার সময় এসে গেছে। সে অনেক জ্যাম-ঝট ফেলে মেসন হাসপাতালে এসে পৌছলাম। আপুর সাথে দেখা হতেই জিজ্ঞাসা করলাম মা কোথায়? আপু বলল: একটু আগে ৩য় তলার একটি কেবিনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দেখলাম ফুফু ছাদর মুড়ানো কাউকে কোলে নিয়েছেন। আমি সে দিকে ছুটে গেলাম, স্বপ্নে রাজ্যে বাস করা সেই ছেলেটিকে এক নজর দেখার জন্য। ফুফুর কাছে গিয়ে বললাম: ফুফু ছাদর দিয়ে এভাবে ঢেকে রেখেছ কেন? নিশ্বাস নিবে কেমন করে? ফুফু যেন আমার কথা শুনতে পারছে না। তাই গলার আওয়াজ একটু বাড়িয়ে দিয়ে বললাম : দেখি একে আমার কোলে দাও! চেহারাটাও দেখতে দিবেনা? ফুফু তাকে আমার কোলে তোলে দিল। তাকে কোলে নিয়ে তো আমি খুশিতে যেন পাগল হয়ে যাব। আমার স্বপ্ন আজ সত্যি হল! ছাদর না সরিয়ে কত মনের কথা তাকে বুঝাতে লাগলাম। চাদরটুকু সরিয়ে দেখি চাঁদ যেন আজ আমার কোলে নেমে এসেছে। কিন্তু সে নড়াচড়া করছেনা কেন? সে কি ঘুমিয়েছে? আপু কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে আর আমায় জড়িয়ে ধরে বলল: সে চিরদিনের জন্য ঘুমিয়ে গেছে। আর কখনো সে তার ঘুম ভাঙ্গবেনা তুকে একবার ভাইয়া বলে ডাকার জন্য!!! আমি যেন শূন্যে অবস্থান করছি। আমি তাকিয়ে আছি সে নিষ্পাপ ছেলেটির চেহারার দিকে। মুখে কোন আওয়াজ নেই। মন বার বার প্রভুর কাছে প্রশ্ন করছে কি অপরাধ ছিল প্রভু ভাইয়া ডাক একবারও শুনতে দিলেনা? কেন প্রতিটা স্বপ্নের মত আমার এই স্পর্শটাও কলি থেকে ফুল হয়ে ফুটার আগে ঝরিয়ে দিলে? কেন তবে স্বপ্ন দেখাও? যার জন্য মনের কোণ বাগান সাজালাম তাকে সে বাগান দেখার আগে তোমার বাগানের বাসিন্দা বানালে কেন? আমি ও ফুফু তাকে নিয়ে আমাদের গ্রামের বাড়ী রাংগুণীয়া চলে এলাম। যার গায়ে নিজে কাঁদা মেখে দিয়ে গোসল দিব স্বপ্ন ছিল আজ তাকে জীবনের শেষ গোসল দিতে হচ্ছে আমাকে। যাকে কাঁদে নিয়ে ছুটে বেড়ানোর স্বপ্ন ছিল তাকে কোলে নিয়ে হাজির হতে হল গোরস্থানে। তাকে দাদুর কবরের পাশ শুয়ে দিলাম। "আসবে না ভাই আমার ডাকতে ভাইয়া বলে সাড়াদিয়ে মাওলার ডাকে ভাই চলে গেল পরপারে, কে আমার ডাক শুনে গো এসে দাঁড়াবে মোর দুয়ারে?"
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
সূর্য
অর্জু ভাল লিখেছ তবে আরো কিছুটা গুছানো হওয়ার দরকার ছিল। যেমন ছেলেটা না লিখে ছোট ভাইটা লিখতে হতো, এরকম কিছু সংশোধন গল্পটা সুন্দর করবে। তোমাকে অনেক অভিনন্দন। তোমার লেখা আরো পরিনত হোক এই দোয়া থাকলো।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।