এমন হয়। মাঝে মাঝে হয়। ঘোরলাগা অাঁধারে কুমকুম মুখের ওপর ছড়িয়ে পড়া নিজের চুলগুলোর বিস্তার দেখে ভয় পায়। বাইরে ঘন অন্ধকার। অাঁধারের ওপাশে ঘন বন, বলয়বিস্তৃত মেঘলা আকাশের সঙ্গে মিশে আছে। প্রকৃতির ভেতরে ঘন অাঁধারের বিস্তৃত রূপ দিয়ে স্রষ্টা কেন গড়েছেন নারীকে? ভেতরের এত এত জমে থাকা গল্পরা কুমকুমকে ঘুমাতে দেয় না। উঠে বসে সে। হোস্টেলের এই রুমটায় সে একা কত রাত কাটিয়েছে। অথচ আজকের নিঃসঙ্গতা যেন সবচেয়ে আলাদা। সুরের সব তন্ত্রীতে কষ্টের বাঁশিরা অদ্ভুত এক তান তুলেছে। অন্ধকারে নিজেকে দেখতে না পেলেও কুমকুম নিজের শরীরের আলাদা আলাদা অস্তিত্ব অনুভব করে। আলাদা আলাদা অঙ্গের কষ্টরা এত একীভূত হয় অবশ করা কষ্টরা কি মৌন মিছিল করে? আশ্চর্য সেই মৌন মিছিলে, নক্ষত্র-খচিত আকাশের অাঁধারে কুমকুমের আরও মিশে যেতে মন চাইছে। কেন? সে জানে না। শুধু জানে ঘরের অন্য প্রান্তের ফ্যানটা থেমে আছে। তিন দিন আগে যে ফ্যানে শিউলির নিথর শরীরটা ঝুলে ছিল। মরে যাবে জেনে মৃত্যুর আগে যে মেয়ে সাজে ... তার কষ্টকে আলিঙ্গন করার চেষ্টা করে কুমকুম। হাতড়ে হাতড়ে পানির বোতল খোঁজে সে। ঢকঢক শব্দ তোলা জলেরা কুমকুমের সারাজীবন অদেখা অথচ নিজের প্রিয় শরীরের কণ্ঠনালি হয়ে কোথায় গিয়ে যেন থেমে যায়? এসব থেমে যাওয়া কি জীবনের থেমে যাওয়ার মতো? শিউলির মতো? তিনজনের এই রুমে শিউলি পৃথিবীর আর কোথাও নেই। প্রতিদিন যার হাসি-ঠাট্টা আর ছুড়ে দেয়া বুদ্ধিদীপ্ত বাক্যগুলো তিন বান্ধবীকে প্রাণবন্ত করত, সে আর সত্যিই কোথাও নেই? ওই যে শিশির ধোয়া উজ্জ্বল তারারা, অন্ধকার আকাশ থেকে একটু নিচে নেমে আসা জ্বলজ্বল তারা ... সেখানেও নেই শিউলি? টিভি রুমে সেদিন কুমকুম বীভৎস গোলাগুলির দৃশ্য দেখে যখন প্রশ্ন করল_
এত গোলাগুলি শুরু হলো কেন? শিউলি সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিল
ছবি দেখা ছেড়ে তুই বাথরুমে গেলি। এই ফাঁকে পরিচালক সাহেব রেগে গিয়ে ... গোলাগুলি শুরু করতে বললেন। হাসিতে হাসিতে নিভাঁজ শরীরে অহঙ্কারি রূপের ভাঁজ তোলা সেই শিউলি আর কোথাও নেই? এখন যদি ফিরে এসে অন্ধকারে কুমকুমের পাশে দাঁড়িয়ে যায় ... এই মধ্যরাতে, তাহলে কুমকুম কী করবে? নাহ, সে ভয় পাবে না। মৃত শিউলি ওর ভয়ের কারণ নয়। যাদের কারণ তারা হোস্টেল ছেড়েছে। হুতোম পেঁচা ডেকে ওঠে। বাদুড় অন্ধকারে পাখা ঝাপটায়। কুমকুমের যদি ওমন একটা পাখনা আর পালক থাকত। কণ্ঠের কাছে ভেজা অনুভূতিগুলো হঠাৎ শুকনা হয়ে দলা পাকিয়ে ওঠে। নবীনবরণের দিনেই ভাগ্যক্রমে এই রুমে ওরা উঠেছিল। শিউলি চকোলেট-বার হাতে দিয়ে বলেছিল_
ওমা! আমার এত সুন্দর রুমমেট। ইস! রুমটা আলোয় ভরে গেল। সুবর্ণা, দ্যাখ কুমকুমের চুলগুলো ... চাঁদমুখের পেছনে মেঘের হাট।
সেদিন শিউলির মুখে সুন্দর বিশেষণের এক আলাদা অর্থ তৈরি হয়েছিল। সুন্দরী শব্দের চেয়ে সুন্দর শব্দটায় এত পরিপূর্ণতা কুমকুম আগে কখনোই খেয়াল করেনি।
মাকে, বাবাকে আর ছোট ভাইয়াকে জীবনে প্রথমবারের মতো ছেড়ে ভেতরের কান্নারা শিউলির স্পর্শে স্থিত হয়েছিল। তারপর তিনটি বছর ...। মুক্তমঞ্চের সামনে আড্ডা, প্রতিটি বিকেলের আলাদা আলাদা রঙের খেলায় জীবনের বসন্তগুলোকে চিনতে পারা। শিউলি যদি বিকেলের হলদে রোদ গায়ে মেখে ঘর আলো করে হঠাৎ এসে পাশে দাঁড়িয়ে যায়? কুমকুম কি ওর চেহারায় ভৌতিক কিছু দেখবে? মনে হবে কি শিউলির চোখগুলো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে? এখনই বের করবে ড্রাকুলার মতো রক্তচোষা দু'দাঁত? নাহ কুমকুম এসব ভাবনাতে মোটেও ভয় পাচ্ছে না। পর্দাটা সরিয়ে দেয় সে। অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে আকাশের তারার দিকে। মনে পড়ে শিউলির সঙ্গে অন্ধকারে বসে তারা দেখা সেই রাত ... তাদের শেষ কথা বলা রাত ...
দ্যাখ কুমকুম তারাগুলো কী যেন বলতে চায়_ বৃষ্টিভেজা এই তারা আমরা হারিয়ে যাওয়ার পরও এমনি থাকবে তাই না? যেন কথা বলার জন্য ব্যাকুল।
শিউলি তুই কবিতা লিখলেই পারিস।
আমার মনের কথারা তোর সঙ্গে যত সহজ, শব্দের সঙ্গে তত নয়। চেষ্টা করিনি বললে ভুল হবে। আমার কবি মন! কাগজ-কলমের চেয়ে তোর মতো বন্ধুর কাছে বেশি তরল ...
শিউলি...
বল।
আমরা মনে হয় বাবা-মার কাছে সারাজীবনের জন্য অতিথি হয়ে গেলাম। এখন যাই ছুটিতে, কিছুদিন পর বরের বাড়ি থেকে যেতে হবে কয়েক দিনের জন্য বেড়াতে। ছেলেগুলোর কত সুবিধা আর স্বাধীনতা।
ওই সুবিধার জন্যই ছেলেরা মা-বাবাকে হয়তো আমাদের মতো করে বোঝে না। বুঝতে চায়ও না। কী জানি হয়তো বোঝে। আচ্ছা কুমকুম তুই কারও প্রেমে পড়িসনি এখনো?
পাগল আজকাল ছেলেদের মাথার ডিজিটে কি আর প্রেম শব্দ আছে?
তবে?
প্রেমের চেয়ে বিছানা ওদের প্রিয় শব্দ।
তুই জানলি কীভাবে? তাহলে ...
ভয় পাওয়ার কারণ নেই। দু'জনের সঙ্গে একটু ভাব হয়েছিল। কয়েকদিন যেতে না যেতেই ...। শুনিনি। আর তাই সম্পর্ক ভেঙে গেল। প্রতিজ্ঞা করেছি ... আর নয়।
এজন্য আমার মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে ... শিউলির কণ্ঠের দৃঢ় ঘোষণায় চমকে ওঠে কুমকুম। মনোযোগ শিউলির কণ্ঠে নিবন্ধ করে, অন্ধকারে শিউলির মুখটা স্পষ্ট করে দেখার চেষ্টা করে। শিউলি বলেই চলে।
... কোটি কোটি বছর আরও হাজার কোটি বছর, ঠিক এই সময়ে এই সেপ্টেম্বরে, তারাগুলো আকাশের এই স্থানটাতে থাকবে। ছেলেগুলো মানুষ হলে এই ছোট্ট সত্যিটুকু বুঝত_
শিউলি ওরা মানুষ নয় তো কী?
জানি না। তবে সেই রকম মানুষ যাদের কথা মনে হলে ঘৃণায় গা রি রি করে। বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে না।
যাহ তুই আবার বেশি ... কুমকুমের মুখের কথা কেড়ে নেয় শিউলি। বর্শাবিদ্ধ মতো বাঘিনীর মতো বলে_
বেশি নয় সামান্য গলাকাটা, ধর্ষিতা রাহেলারা এখানে তিনদিন নয়, শত শত দিন ঘড় ঘড় শব্দ করে ... আর ওই বিশ্রী তারাগুলো চেয়ে চেয়ে দেখে ... আমার এসব একদম সহ্য হয় না।
কান্নার বলকে কেঁপে উঠা শরীরকে কুমকুমের কাঁধে সপে দিয়ে শিউলি ছোট শিশু হয়ে যায়। অলস ভঙ্গিতে বলে_
যাকে ভালোবাসি, সে ভাগ্যিস দেশে নেই।
শাওন দেশে থাকলে কী সমস্যা হতো?
নিজেকে সামলাতে পারতাম না। ওকে আমি এত ভালোবাসি! পড়াশোনা ছেড়ে হয়তো দৌড়ে গিয়ে বলতাম আমাকে বিয়ে কর।
কী পাগল!
হ্যাঁ কুমকুম দূরত্ব মনে হয় ভালোবাসা বাড়ায়। তাছাড়া আমাদের দু'পরিবার আমাদের সম্পর্কটাকে সহজভাবে দেখে।
শাওন ভাইয়া তো অনেক ভালো ছেলে। কেমন নিরীহ আর সুদর্শন স্কলারশিপ নিয়ে বাইরে পড়াশোনা করছে। আর তুইও শিক্ষকদের প্রিয় ছাত্রী। সুন্দরী, লক্ষ্মী মেয়ে। ইস! ব্যাপারটা কেমন মধুর আর কষ্টের। স্বপ্নের কোন হানিমুনে, দূরের বরফ-পাহাড়ে যাওয়ার ট্রেনের টিকিট হাতে পেয়ে স্টেশনে ট্রেনের জন্য অথবা বিমানবন্দরে যেন মাসের পর মাস অপেক্ষা করা। তাও একা একা।
অনুভূতিগুলো তুই এত ভালো বুঝিস। সেজন্যই তুই আমার প্রিয় বান্ধবী। জানিস কুমকুম ও চার লাইনের এক কবিতা লিখে পাঠিয়েছে।
'কাছে আছে যারা কাছে থাক তারা, কেউ পারবে না জানতে ...'। কবির নাম জিজ্ঞেস করেছিলাম। শাওন কী বলল, জানিস, কবির নাম আত্মা। যিনি লিখেছেন সে গিয়ে নাকি তার আত্মায় ভর করেছে।
কবে ফিরবে শাওন ভাইয়া?
আর সাতটা মাস। উফ এক একটা দিন যেন এক এক যুগ।
এত ছটফটানি নিয়ে তুই এত গুছিয়ে পড়াশোনা করিস কীভাবে? এত ভালো রেজাল্ট ...
ওর ভালো বউ হওয়ার জন্য। পড়া শেষ হওয়ার আগেই তো আমার বিয়ে হবে ... তারপর লাড্ডু মারি কি-না কে জানে? সাত মাস পর ওর বউ হব ভাবতেই কেমন ...
কথা শেষ হওয়ার আগেই শিউলি কথা হারিয়ে ফেলে। বুকের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে একরাশ লজ্জা মেশানো উদ্বেগের বজ্রপাত হয়। কুমকুম সে লজ্জাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। শিউলীর বুকে হাত রেখে বলে_
ওমা এখনই এই অবস্থা? তোমার পুরুষ সামনে এলে তুমি তো অজ্ঞান হয়ে যাবে ম্যাডাম। শাওন ভাইয়াকে আমারই এখন হিংসা হচ্ছে ...
সে-ই শিউলি আর কোথাও নেই ...? পৃথিবী নামক গ্রহের ঘূর্ণনের জন্য অথবা মহাবিশ্বের অন্তহীন ছুটে চলার জন্য সপ্তর্ষীম-ল তার অবস্থান বদলে কুমকুমের চোখের আড়াল হয়ে গেছে। ঘরের ভেতরে ফ্যানটার ঘূর্ণন সেই আড়াল শব্দকে আরও লুকিয়ে ফেলছে। কুমকুমের হঠাৎ মনে হয় গাছটার আড়ালে অদৃশ্য হলো তিনটা ছায়ামূর্তি। তাদের একজন নারী বুঝি? শিউলি কি? তুমি কত বাজে কুমকুম! এমন ভাবনায় কত পাপ হয়? হঠাৎ এক রাগিনীর তান ভেসে আসে কুমকুমের কানে। শরীরের সব লোম একসঙ্গে সে তানের বিরুদ্ধে সজাগ হয়। কুমকুমের মনে হয় অসংখ্য শিউলির ছায়ামূর্তিরা বেহালায় মৃদু-মগ্ন সুর তুলে কোথায় যেন যাচ্ছে। ভেসে ভেসে তারা ছাতিম গাছ পর্যন্ত গিয়েই একটা করে বেহালা হাতে নিচ্ছে। ছাতিম গাছের ঘন পাতারা এক একটা বেহালায় পরিণত হয়েছে। সেদিন যে ছাত্রনেতা বক্তৃতার ধুয়া তুলল, সে যেন বেহালাগুলো বিতরণ করছে।
কুমকুম কাঁধে ব্যথা অনুভব করে। বাঁকা হয়ে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকা থেকে মুক্তি পেতে চায় সে। কাঁধ সোজা করার চেষ্টা করতে গিয়েও পারে না। স্নায়ুর অনুভূতি আর সব শক্তি কে যেন কেড়ে নিয়েছে। চিৎকার করতে গিয়েও ঠোঁট সরে না।
'দ্যাখ কুমকুম, তারাগুলো কী যেন বলতে চায়' কিন্তু তারাগুলো কোথায়? শেষ রাতের অাঁধারকে প্রায় তাড়িয়ে দিয়ে ছাতিম গাছের পাতাগুলোর ঘন সনি্নবেশ স্পষ্ট করছে, ভোরের আলো। একটা পাখি পাখা ঝাপটায়। আলো-অাঁধারীর অযুত বিন্যাসে ঘুমপরীরা সারা রাতের গান শেষে যেন ফিরে যাচ্ছে স্বপ্নহীন বাস্তবে। এক ঝটকায় নিজেরই শরীরকে বিছানায় টেনে ফেলে দেয় কুমকুম। মাত্র কারেন্ট আউট হয়েছে। ফ্যানের পাখাগুলো তাদের একক অস্তিত্বে দাঁড়িয়ে আছে।
পাশের বিছানা খালি। শিউলি কোথাও নেই। কাঁধের ব্যথা স্থির হয়ে যায়। কুমকুমের চিত্রকল্পগুলো অমসৃণ, ভূমিদৃশ্যে আটকে থাকা মেঘ আর পাহাড়ের অকপট অবস্থান যেন। শিউলিকে ঘিরে স্মৃতিগুলো ভোর ভোর ঘোরের ভেতরে বাক্যের ক্রিয়াপদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করে। যেন মনে মনে সে ডায়েরির পাতায় লিখছে ...
... হোস্টেল জীবনের শুরুতে ভোর হলেই শিউলি খালি পায়ে ঘাসে হাঁটতে বের হতো, কোচাভর্তি ফুল কুড়িয়ে হাসিমুখে বিজয়ীর বেশে ফিরত। উচ্ছল, প্রাণবন্তু শিউলির কাছ থেকে প্রেরণা ধার করা সময়গুলো বান্ধবীদের অন্তর ধুয়ে দিত। কয়েক মাসের মাথায় দু'একজন বান্ধবী সাবধান করল শিউলিকে।
এত সকালে বন-জঙ্গলে না যাওয়াই ভালো। ছলছল হেসে শিউলি বলেছিল_
ওমা! এসব গাছ-জঙ্গলে বুঝি বাঘ আছে? সাপকে অবশ্য আমি ভয় পাই। তবু ...।
এটা আমার ছোটবেলার অভ্যাস। ঘাসে পা না রাখলে পায়ের তলা জ্বলে আমার। তোরা আমাকে ভয় দেখাস না প্লিজ।
বিয়ে হলে যখন ফ্ল্যাটে বন্দী হয়ে পড়বি?
বিয়েই করব না তাহলে, আমার পৃথিবী এত ছোট হোক ... আমি চাই না।
শিউলির ভাব-বিলাসিতায় বান্ধবীরা হাসে। একদিন ভোরে শিউলি প্রায় পাগলের মতো ছুটে আসে।
যেন তার বুকভরা আর্তনাদ ভেতর গুমরে উঠছে অথচ সে চিৎকার করতে পারছে না।
শিউলিকে কি কেউ তাড়া করেছিল? ঘাস আর শিশিরভেজা শরীরটাকে ওমন করে কাপড়ের মতো ছিঁড়ে ফেলতে কেন চাইছিল শিউলি? শরীর কি আত্মার খোলস মাত্র? শিউলি কী অদ্ভুত উল্টা ভাবনায় আত্মার কাছ থেকে শরীরকে প্রাণপণে সরাতে চাইছিল! পারেনি বলেই কি শরীরকে ওভাবে ফ্যানে ঝুলিয়ে ...
কিন্তু সে রাতে ঘুমের ঘোরে শিউলি বারবার কেন রাহেলা রাহেলা করছিল? তার উত্তরটা লিখে রেখে গিয়েছিল শিউলি। কুমকুমের পড়ার টেবিলে অর্ধসমাপ্ত উপন্যাসের পাতার ভাঁজে। জীবনের শেষ সময়ে বান্ধবীকে ভালোবাসা জানাতে মোটেও ভোলেনি সে। ভাঁজ করা চিঠির ফাঁকে চার রঙের চারটি গোলাপ আর হৃদয় নিংড়ানো অস্ফুট অভিব্যক্তি_
'একটা লাশ আর কতজনকে লাশ বানায় আমরা কি তা জানি? রাহেলা জীবন্মৃত এক লাশই ছিল। দৌড়ে বাঁচতে গিয়ে তার শরীরে পা লেগে পড়ে গেলাম। আর সেখানেই লম্পটগুলো আমাকে ...। ওদের মুখেই নামটি শুনেছি। 'রাহেলা এখনো বেঁচে আছে? মাগিকে কেটে ফেল!' আমার জীবন নিয়ে কষ্ট অথবা দুঃখ কোনটাই তেমন নেই। শুধু জানলাম না, পাপ নিয়ে টানাহেঁচড়া কারা করে? ওরা কি বহিরাগত না আমাদেরই কারও সতীর্থ? যারা দোষ অথবা পাপ করে তারাই বড় গলায় দোষগুলো ছড়িয়ে দেয় সমগ্র বাংলায়। তোর জন্য বসে থাকব ওপারে ... মৃত্যুপারে মনে হয় ফুল পাব না। তাই ...। ভালো থাকিস রে কুমু তোকে আমি অনেক ভালোবাসি।"
ধর্ষিত গলাকাটা এবং পাতার স্তূপের ভেতরে জীবন্মৃত সেই রাহেলা ... ক্রিয়াপদগুলো ডায়েরির পাতা থেকে মনের পাতায় আশ্রয় নেয়। ক্রমশ সুর হয়ে উঠতে থাকে ...।
তুমি নেই, এই অাঁধারনামা সন্ধ্যায় তুমি নেই,
মিশে গেছ তারাদের ভিড়ে, ফেলে আমায় মরমে
কেন নেই তুমি নেই, তুমি নেই, কেন নেই?
তোমার কণ্ঠ রয়েছে বাতাসে, সুর রয়েছে প্রাণে
শুধু তুমি নেই ... নেই। কেন নেই? কেন নেই?
সুরগুলো দূরাগত আভাসের মতো মিলিয়ে যায় বাতাসে। কুমকুম বালিশটা মাথার নিচে টেনে নেয়। চুলগুলো বুকের ওপর বিছিয়ে দিয়ে ঘুম ঘুম চেতনায় ভাসা ভাসা কোন এক অস্তিত্বকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করে। অস্তিত্ব ভেঙে ভেঙে ভিন্ন ভিন্ন ব্যবচ্ছেদিত বাক্য হয়ে যায়।
ঝিঁঝিঁ ডাকা বন। শিউলি। বৃষ্টি ভেজা রাত। চুপচাপ। মোমবাতির নীলাভ অবনমন। স্বপ্ন, শিউলির মোম-আলো মুখ। ঝরে পড়া ফুল। ভোর, একা-একা, চুপ-চুপ। বন। নির্জন, ধর্ষণ রাহেলা, নিথর। পাতার মর্মর, পত্রিকার খবর। ১৪ দিন পর ধর্ষিত গলাকাটা রাহেলার মৃত্যুবরণ। দৌড়। শিউলি। রাহেলার শরীরে ধাক্কা খাওয়া। তারপর? পাতার স্তূপ, রক্তাক্ত, ঘড়ঘড় .... শিউলি .... কনে ... স্বপ্ন ... যৌবন ... আত্মহত্যা, সমাজ, মিডিয়া। শিক্ষক ... প্রলোভন ... সেঞ্চুরিয়ান। আবার বৃষ্টি, ফাগুন ... রঙ, জীবন। শিউলি। শিউলির চিঠি। মা ...। 'পড়া শেষ করে শাওন ফিরেছে। সামনের ছুটিতে তোদের ধুমধাম করে বিয়ে দেব।' চুপ-চুপ অনন্ত জীবন। শিউলি বলল, ছোটবেলায় ঘুড়ি উড়িয়ে ছিলাম একবার। শাওনের সঙ্গে। শাওন শিউলির চোখে চোখ রাখল। আনন্দ লজ্জায় লাল-নীল শিউলি। কবিতা।
'কাছে আছে যারা কাছে থাক তারা
কেউ পারবে না জানতে
তুমি আছ তার চেয়ে কাছে
আমার এই ছোট্ট হৃদয়খানিতে।'
চোখের তলায় খুশির কাঁপন। অতল। শিক্ষক বললেন, দেশটা কোথায় যাচ্ছে? বাবা বলছেন, কবে আসবি মা? শিউলির মা রিকশা থামালেন। নিউমার্কেট। বিয়ের গহনা, কনে শিউলি! বাবা চুপচাপ, ছোট্ট শিউলি ...। বিয়ের গাড়ি, শিউলি কাঁদছে। হাউমাউ। শাওন লাজুক মুখে দাঁড়িয়ে। চুপচাপ। তারপর ... আকাশের নিচ, একটা কবর। এলোমেলো বাতাস। জোছনা রাত। চুপচাপ। অনন্তকাল।
রাতের হৃদয় কুমকুমের শ্রান্ত মুখে নিঃসঙ্গ ক্লান্তির ছাপ এঁকে দিয়েছে। ঘুমিয়ে পড়েছে কুমকুম।
০৪ মার্চ - ২০১১
গল্প/কবিতা:
৭ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।
প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী