মেয়ে, তোমার মন খারাপ কেন?

কষ্ট (জুন ২০১১)

তির্থক আহসান রুবেল
  • ৫৬
  • 0
  • ৭৪
তখন সবে লেখালেখি শুরু করেছি। দু একটি লেখা পত্রিকাতে ছাপার অক্ষরে দেখে নিজেকে একটা কিছু ভাবি আর কি! সে সময় আমার একটি লেখা নিয়ে খুব রেসপন্স পাচ্ছিলাম। প্রথম কয়েকটি ফোনে খুব আপ্লুত থাকলেও আস্তে আস্তে তা একটু অহমিকায় রূপ নিয়েছিল বোধহয়। নিজেকে রাজা রাজা মনে হতে লাগল। এভাবে যখন কাটছিল দিন, ঠিক সে সময় একটা ফোন।

হ্যালো! নীল বলছেন?
জ্বী বলছি। আপনি কোন বেগুনী?
আমি বেগুনী না। আমি জলি বলছি।
জ্বী বলেন।
আসলে আপনার নতুন লেখাটা পড়লাম। খুব ভাল লাগলো। তাই ফোন করলাম।
পড়েছেন, তাই ধন্যবাদ। তারপর?
আমি আপনাকে আমার কিছু কথা বলবো। আপনি কি আমাকে নিয়ে একটা গল্প লিখবেন? না করবেন না প্লিজ!
কথা দিতে পারছি না। আগে শুনতে হবে। তা বেশী বড় কোন গল্প?
হ্যাঁ.... তা একটু বড়ই বলতে পারেন।
কিন্তু অত সময় তো আমি দিতে পারবো না। একটু ব্যস্ত যে।
ঠিক আছে। আজকে একটু বলি। পরে আবার বলব। মানে কয়েকদিন সময় নিয়ে বলব।
বুঝলাম নাছোড়বান্দা। তাই একটা শ্বাস ফেলে বললাম, আচ্ছা শুরু করেন।

......... আমার নামটা শুধু জলি না। আমি মেয়েটাও খুব জলি মাইন্ডের। তবে আজ বহু বছর পর কারো সাথে আমি কথা বলছি। আজ কয়েক বছর, আমি আমার পরিবারের কারোর সাথে কথা বলি না। এমন কি আমার রুম থেকেও বের হই না। আমার বড় ভাই, একটা ম্যাগাজিন নিয়ে আসলো। সেখানে আপনার লেখাটা পড়ে ভাল লেগেছে। তাই আপনাকে ফোন দিয়েছি।
একটু বিরক্তি নিয়েই বললাম, জ্বী... তারপর বলেন!
আমি একজন বিবাহিত মেয়ে। তবে স্বামীর সাথে থাকি না। সেই গল্পটাই এখন বলব। আপনি শুনছেন তো?
হ্যাঁ শুনছি, আপনি বলেন।
রফিক মানে আমার স্বামী প্রায় ৮ বছর আমার পেছনে ঘুরেছে। কিন্তু আমি কোনভাবেই পাত্তা দিই নি। অথচ তারপর আমি এমন অন্ধ প্রেমে পড়লাম যে, তাকে ছাড়া দুনিয়ার সব কিছুই ভুলে গেলাম। আমাকে আমার পরিবারে সবাই না করেছিল ওর ব্যাপারে। কিন্তু আমি ওকে ছাড়তে পারলাম না। তাই পরিবারের অমতে গিয়ে ওকে বিয়ে করলাম আমি।
কিন্তু আপনি ওর প্রেমে পড়লেন কিভাবে? আপনি না ওকে দেখতেই পারতেন না!
আমি জানি না। কেমন জেনো একটা পরিবর্তন হলো আমার মধ্যে। ও কিন্তু কোন রকমে ইন্টার পাশ। আর আমি তখন অনার্স ফাইনাল। এ অবস্থাতেই আমি ওকে বিয়ে করলাম।
ভাল। তারপর..... মনে মনে একটু আগ্রহ পেলাম।
তারপর আর কি! আমাদের বিয়ে হলো। ওর পরিবার আমাকে খুব খুশি মনেই গ্রহণ করলো। আমাদের বাসর হলো। আর সেখানেই ঘটল প্রথম ঘটনাটা।
আমি কিছুটা অবাক হলাম। মেয়েটা কি বাসরের ঘটনাটা শোনাবে এখন! একটু....
বিয়ের প্রথম রাতেই আমরা বেশ কয়েকবার মিলিত হলাম। আর প্রতিবারই মিলন শেষে ও একটু অবাক চোখে আমাকে দেখল। এক পর্যায়ে আমি বললাম, আমি আর পরছি না। ব্যথা করছে। কিন্তু ওর অবাক চাহনি নামছে না। ও আমায় জিজ্ঞেস করলো, তোমার রক্ত বেরোচ্ছে না ক্যান? তুমি কি আগে কারো সাথে সেক্স করছো? আমি যাতা মারতেই ঢুইকা গ্যালো..... আটকাইলো না ক্যান? আমি কি সেকেন্ডহ্যান্ড কাউরে বিয়া করলাম? এই কথা বলেই ও আমাকে জোর করেই উপুড় করে আমার .... বুঝতে পারছেন তো.... ওখান দিয়ে জোর করে.........
আমি একটু অস্বস্তি বোধ করলাম। তবে শারীরিকভাবে গরমও অনুভব করতে লাগলাম। তাই আর একটু শোনার জন্য তাকে উৎসাহ দিয়ে বললাম, তারপর নিশ্চয়ই রক্ত বেরোল?
জলি একটু ক্ষণ চুপ থেকে বলল, হ্যাঁ বেরোল। এবং আমার স্বামী তৃপ্তির হাসি দিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে গেল। বাসর রাতে আমার স্বামীর সাথে আমার কোন কথা হয় নি। শুধু শরীরে তীব্র ব্যথা নিয়ে আমি অনুভব করলাম কোন একটা ভুল বোধহয় করলাম।
এটুকু বলেই, জলি বলল.... নীল, আজকে তবে রাখি.... আপনি তো ব্যস্ত। কাল আবার ফোন দেবো।
আমি তখন কিছুটা উত্তেজনা বোধ করছি। তাই বললাম, না না... এখন আর কাজে ডুবতে ইচ্ছে করছে না। আপনি বলেন, আমি শুনছি।
কিন্তু পুরোটা বলতে গেলে তো রাত শেষ হয়ে যাবে।
৪/৫ ঘণ্টার কাজ তো! ওটা কোন সমস্যা না। বলেন, আমি পুরোপুরি ফ্রি।
জলি আবার শুরু করলো। পরদিন থেকে রফিক কেমন যেনো একটু চুপ হয়ে গেল। একটু পর পরই জিজ্ঞেস করলো, বাড়ী থেকে কেউ ফোন করেছিল? আমি বললাম, না। একটু পর আবারো একই প্রশ্ন। আমারও একই উত্তর। এভাবে বেশ কয়েকটা দিন কেটে গেল। একদিন রাতে রফিক আর ওর মা একসাথে আমাদের রুমে ঢুকলো। ঢুকেই খুব উত্তেজিত ভাবে রফিক জিজ্ঞেস করলো, বাড়ী থেকে ফোন দিয়েছে কি না! আমি আবারো না বলাতেই, ওর মা বললো.. মেয়েরে কি ওরা বেইচা দিছে নাকি! নাকি এই মাগীর আগে থেইকাই মাইনসের লগে থাইকা অভ্যাস! আমি কিছু বলার আগেই রফিক কষে একটা চড় মারলো আমার গালে। তারপর ফোনটা হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, এখন তুই তোর ভাইয়ের কাছে নয় বাপের কাছে ফোন দিয়া ক ৫ লক্ষ টাকা নিয়া বেড়াইতে আইতে.... আর নয়ত তরে নিয়া যাইতে। আমি বললাম, তুমি তো জানো যে তোমার সাথে বিয়েটা বাড়ীর কেউ মেনে নেয় নি। তাই তারা আমাকে কোন ফোন দিচ্ছে না। সাথে সাথে রফিক আরেকটা চড় কষে দিয়ে বলল, মাগী তাইলে তরে বিয়া করছি ক্যান? রাইতে বিছানায় ফালাইয়া গুয়া মারার লাইগা? রাস্তাঘাটে তর মতো মাগীর কি অভাব আছে? আমার কি হলো আমি জানি না। আমার কণ্ঠ দিয়ে কোন কথা বেরোচ্ছে না। আমি চেষ্টা করছি চিৎকার করে কাঁদতে.... কিন্তু হঠাৎ কণ্ঠ বন্ধ হয়ে গেল। আর এদিকে তারা ভাবল, আমি বুঝি বাড়ীতে কথা না বলার জন্য মুখ বন্ধ করে রেখেছি। দুজন দুটি লাঠি নিয়ে আমাকে মারতে লাগলো। কতক্ষণ মারলো বলতে পারবো না। বোধহয় অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। চোখ খুলেই দেখি, চারটি মাথা আমার মুখের উপর। আমার ননদ আর শ্বশুরও যোগ হয়েছে। আমার শ্বশুর শুধু বলল, কাইল সকালে বাড়ী যাইবা। ৫ লক্ষ ট্যাকা নিয়া তারপর আবার ফিরা আইবা। আর যদি ট্যাকা না পাও, তাইলে আওনের দরকার নাই। পুলারে আরেকটা বিয়া দিমু। তুমার শইল্লের যা খাওনের, তার পুরাডাই আমার পুলা খাইছে.... কাজেই ভাইব না, তুমার লাইগা আমার পুলা কানবো। তখনও আমি কিছু বলতে পারছি না। মাথায় শুধু কাজ করছে, ইনি কি আমার শ্বশুর! শ্বশুর কি এমন কথা বলতে পারে?
এখানে জলি একটু বিরতী দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, নীল... আপনি কি শুনছেন?
জ্বী শুনছি। আপনি আমাকে ৩০ সেকেন্ড সময় দেবেন? একটা সিগারেট ধরাবো। সিগারেটটা ধরানোর পর আবার গল্পটা শুরু হলো।

আমি বাড়ীতে ফিরে এলাম। কেউ কোন কথা বলল না আমার সাথে। সবাই শুধু একটু অবাক চোখে আমার দিকে তাকালো। আমি আমার রুমে ঢুকে দরজাটা বন্ধ করে অনেকক্ষণ কাঁদলাম। তারপর শুয়ে রইলাম। চোখ জুড়ে ঘুম এলো। ঘুম ভাঙ্গল। এখন কত সময় জানি না। সকাল কি দুপুর কি রাত কিছুই না। এভাবে কয়েকদিন। একদিন সকালে আমার কণ্ঠ দিয়ে শব্দ বেরুল। কিভাবে তা-ও জানি না। আর ঠিক সেদিনই আমার ডাক পড়লো। ভাইয়া ডেকেছে। বসার ঘরে গিয়ে দেখি সবাই সেখানে বসা। এমন কি আমার স্বামী আর শ্বশুরও। ভাইয়াই কথা শুরু করলো, জলি.... এই কাগজটায় একটা সই দে। এটা ডিভোর্স লেটার। আমি ভাইয়ার মুখের দিকে তাকালাম। ভাইয়া বললো, দেখ.. তুই একটা ভুল করেছিস। আর কোন ভুল আমরা করতে দেবো না। ওরা ৫ লক্ষ টাকা চেয়েছে যৌতুক হিসেবে। এই টাকাটা কোন ব্যাপার না। কিন্তু আমরা চাইছি না তুই সেখানে আর ফিরে যা। তুই তো আমার বোন। তোর শরীরের দাগগুলো কিন্তু আমাদের চোখ এড়িয়ে যায় নি। ভাইয়া যখন এ কথাটা বলছে, তখন আমি শুধু তাকিয়ে দেখছি রফিকের মুখ। আমার মনে হচ্ছে, এই মুখটিকে না দেখে আমি থাকতে পারবো না। আমি যে তাকে ভালবাসি!
ভাইয়া আবার বললো, কিছু বলছিস না কেন? এবার আমি মুখ খুললাম। ভাইয়া, আমি রফিকের সাথে যাবো। এই বাড়ীতে তো আমারও ভাগ আছে। সেখান থেকে তুমি আমাকে ৫ লক্ষ টাকা দাও। ভাইয়া মুখে কিছু বললো না। কিন্তু তার চোখ দেখে বুঝেছি, বুকের চিৎকারটা যদি বেরত তবে পৃথিবীর অর্ধেক লোক চিরতরে শ্রবণ শক্তি হারাতো। ভাইয়া উঠে গিয়ে ৫ লক্ষ টাকার বান্ডিল নিয়ে আসলেন। আমার হাতে দিয়ে বললেন, আজকের দিনটা মনে রাখিস। আমরা বেরিয়ে গেলাম।
এবার আমি বললাম, জলি আপনি আবার ফিরে গেলেন! এর কি কোন মানে হয়?
নীল, এখন আর সে কথা বলে তো কোন লাভ হবে না। যা ঘটেছে সেই গল্পটা শোনেন। তারপর মাস খানেক আমরা খুব ভাল ছিলাম। এবং মাস খানেক পর আমি দ্বিতীয় বারের মতো মার খেলাম। আমাকে ঘরের ভেতর দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হলো।
কেন? এবার আবার কি হলো?
ঐ যে ওদের সামনে ভাইয়াকে বলেছিলাম, বাড়ীতে আমার ভাগ আছে। তো ঢাকা শহরের একটা বাড়ীর অর্ধেক ভাগে তো আর ৫ লক্ষ টাকা হয় না। তাই ওদের আবারো টাকা প্রয়োজন হয়ে পড়লো। আর আমি রাজী না হওয়াতে বেঁধে রাখা হলো। অবশ্য আমি জানি না তারা আমার ভাইয়াকে জানিয়েছে কি না!
এমনই একটা দিনে আমার দেবর আজাদ আমার কাছে আসলো। ও ভার্সিটিতে পড়ে। আমার পাশে বসে গল্প করলো। গল্প বলতে ও বললো আর আমি শুনলাম। এভাবে আস্তে আস্তে আমার অন্য একটা পৃথিবী গড়ে উঠলো। যেখানে একজন আমাকে আবেগ মাখা কথা বলে। আমি মাঝে মাঝে ভাবি, আমার এই দেবরটা কি আমাকে এই নরক থেকে উদ্ধার করতে পারে! আসলে আমি কি মুক্তি চাই! নিজের উপর কেমন যেনো ঘ্যন্না ধরে গেছে। কিন্তু এখানেই আমাকে মুক্তির স্বপ্ন দেখাল ছেলেটা। ছেলেটা আমার শরীরের নীলচে দাগগুলোতে বরফ ঘষে দেয়। আমি শুনেছি, ও ঝগড়াও করছে বাকিদের সাথে। কিন্তু কেন? তারপর একদিন জবাব পেলাম তার। বোধহয় সেদিন বাড়ীতে কেউ ছিল না। আজাদ, ঠাণ্ডা বরফ আমার শরীরে ঘষে দিচ্ছে। যদিও এখন আর বরফ ঘষার তেমন প্রয়োজন নেই। কয়েকদিন ধরে আমার উপর কোন টর্চার হয় নি। কেন হয়নি জানি না। হয়ত আজাদের জন্যই হয় নি। আমি বেশ বুঝতে পারছি, আমার শরীরে কিছুটা বল এসেছে। শরীরের অনুভূতিগুলোও কিছুটা সাড়া দিচ্ছে। আমি জানি না বাইরের পৃথিবীতে এখন কি হচ্ছে। গত এক সপ্তাহে আজাদ আমাকে সেবা দিয়েছে। বাড়ীর লোকের সাথে ঝগড়া করেই দিয়েছে। আমার ঘরে ঢুকে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে কোন সংকোচ ছাড়াই আমার ব্লাউজের হুক খুলেছে। আমার পিঠে, হাতে বরফ ঘষেছে। আমার শাড়ী রানের উপর তুলে ফুলে যাওয়া জায়গাগুলোতে বরফ ঘষেছে। আর ঘষতে ঘষতে সারা পৃথিবীর গল্প বলেছে।
এখন আমি কিছুটা উত্তেজনা বোধ করছি আবারো। কিন্তু সেটাকে পাত্তা না দিয়ে প্রশ্ন করলাম, আচ্ছা জলি.. বরফ তো আপনিও ঘষতে পারতেন? যেহেতু প্রাইভেট জায়গার ব্যপার!
আসলে আমিও একটু কনফিউজড ছিলাম। কারণ, আমার জন্য যে ছেলেটা ঝগড়া করছে... সে একবারের জন্যও কখনো আমার হাতের বাধন খুলে দেয় নি। আমার হাতের সাথে আমার মুখটাও বাধা ছিল তখন। কিন্তু সেদিন এক আশ্চর্য ঘটনা ঘটলো। আমি খেয়াল করলাম, আজাদ আজ আর আগের মতো স্নেহমাখা হাতে আমার শরীরে বরফ ঘষছে না। ওর হাত বারবার আমার বুকে উঠে আসছে। কিন্তু ওর চোখে কোন লোভও দেখতে পাচ্ছি না। আজ ওর হাতটাও আমার রানে এসে থেমে যায় নি। উঠে এসেছে আরো উপরে। একেবারে যেখানে দুটো রান মিলেছে, সেখানে। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই আমার চোখ বন্ধ হয়ে এলো। আমার শরীর কথা বললো। আজাদ আমার মুখটা খুলে দিল। আমি কোন রকমে বললাম, বাড়ীতে লোকজন আছে! আজাদ বলল, কেউ নেই। তুমি আর আমি। পরের কথাটা বলতে পারলাম না। আমার ঠোট আটকে গেল আজাদের ঠোটের ভেতর। আমার হাতটা কিন্তু তবু সে ছাড়ালো না। আমার হাত বাধা অবস্থায় কত রকম করসত যে দেখালো...। তারপর একসময় থেমে গেল। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, আমি তোমায় বিয়ে করবো। আমি কি বলব বুঝতে পারলাম না। সেই রাতেই কেন জানি না, আমার হাত খুলে দেয়া হলো। আমাকে তাদের সাথে এক টেবিলে বসিয়ে খাওয়ানো হলো। আর তার পরদিন ঘটল জীবনের সবচেয়ে বড় ঘটনা।
বলেন কি! আরো ঘটনা আছে?
হ্যাঁ আছে। সেটাই শুনেন। পরদিন সকালে সবার সাথে আমি নাস্তা করলাম। দুপুরে নিজে রান্না করবো বলে রান্নাঘরে একা একাই কাজ শুরু করলাম। আমার শাশুড়ি এসে একবার দেখে গেলেন। রান্না প্রায় শেষের দিকে। এমন সময় আমার স্বামী পেছন থেকে আমাকে জাড়িয়ে ধরে কানের কাছে মুখটি এনে বলল, সোনা... আজ বিকেলে তুমি তোমার ভাইয়াকে ফোন দিয়ে বলবা আরো দশ লাখ টাকা দিতে। আমার ব্যবসা শুরু করতে আরো দশ লাখ টাকা লাগবে। আমি অবাক হয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম, সেটা সম্ভব না। প্লিজ আমাকে আর অপমান করো না। আমি ভাইয়ার কাছ থেকে আর একটা টাকাও নিতে পারবো না। দরকার হলে..... এর পরের দৃশ্যটার জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলাম না আমি। আমার স্বামী এত জোড়ে দুটো চড় মারলো যে, আমি কানে আর কিছুই শুনতে পেলাম না। শুধু দেখলাম আমার শাশুড়ি দৌঁড়ে আসলেন। কি যেনো কথা হলো মা ছেলেতে। আর তার পরপরই আমার শাড়ীতে আগুন ধরিয়ে দিল তারা। আমি কিভাবে ছুটলাম জানি না। দৌড়ে বাথরুমে ঢুকে গেলাম। দরজা ভেঙ্গে আমাকে বের করে আনা হলো। আমার হাত পায়ে ফোসকা পড়ে গেছে। অজ্ঞানও বোধহয় হয়ে গিয়েছিলাম। কারণ একসময় দেখি আমি হাসপাতালে। আমার মা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। একটু পর ভাইয়াও আসলো। খুব কড়া কণ্ঠেই আমাকে জিজ্ঞেস করলো, কেন আমি শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করতে চাইলাম।
মানে, আপনার শ্বশুরবাড়ীর লোকজন আপনার বাড়ীতে জানিয়েছে যে, আপনি শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন। এই তো?
হ্যাঁ.. তাই। ভাইয়াকে সব খুলে বললাম। সব শুনে ভাইয়া মামলা করতে চাইল। কিন্তু আমি না করলাম। একটা নারীবাদী সংগঠন এসে হাজির হলো। বলা যায় সবার চাপে আমি একটা মামলা করি। আমার স্বামীকে গ্রেফতার করা হয়।
কাহিনী কি তবে শেষ?
না। আর একটু আছে। কোর্টে কয়েকটা জেরা শেষে আমি একটু সুস্থ অবস্থায় একদিন হাজির হই। আর সেদিন নতুন আরেকটি ঘটনা ঘটে। কোর্টের বাইরে যখন আমি হাজির, তখন দেখি পুলিশের পায়ের কাছে মাটিতে বসে আছে সে। কোমরে দড়ি বাধা। দেখেই বোঝা যায়, পুলিশ খুব মেরেছে। খুব করুন চোখে আমার দিকে তাকালো। কেমন যেনো মায়া হলো। তাই ওর সামনে গেলাম। আর যেতেই ও আমার পায়ে ধরে কেঁদে ফেলল। বারবার ক্ষমা চাইতে লাগলো। আবার আমাকে নিয়ে নতুন করে সংসার করতে চায়। হঠাৎ কোথা থেকে ওর মা, বাবা আর বোনও এসে আমার পা জড়িয়ে ধরল। আমার চোখে আবারো একটা সংসারের স্বপ্ন বাসা বাঁধলও। আমি কোর্টে মিথ্যা জবানবন্দী দিলাম। সবাই অবাক হয়ে আমাকে দেখল। জজ বললেন, তাহলে আপনি মামলা করলেন কেন? আমি ক্ষমা চাইলাম। আদালত আমাকে তিরস্কার করলো, কোর্টের মূল্যবান সময় নষ্ট করার জন্য। আমাকে ছোট একটা শাস্তি দেয়া হলো।
তাই নাকি! কি শাস্তি?
সেটা বলবো না। তবে অর্থদণ্ডে সেটা থেকে মকুফ পেলাম। আমি কারো সাথে কোন কথা না বলে, আমার স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ী চলে এলাম। শ্বশুরবাড়ীতে ঢুকে বড়জোর মিনিট খানেক সময় পেলাম। আর তারপরপরই চারদিক থেকে চড় আর লাথি। আমার স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি আর ননদ। আমার জ্ঞান ফেরার পর আমি নিজেকে আমার মায়ের বাড়ীর আমার চিরচেনা এই রুমটিতে আবিস্কার করলাম। আমি কতদিন জ্ঞানহারা ছিলাম জানি না। তারপর থেকে আজ দু বছর। আমি বাড়ীর কারো সাথে কথা বলি না। কারো সাথে দেখা করি না। কাজের মানুষ রুমে খাবার দিয়ে যায়। আমার রুমটা সবসময়ই অন্ধকারে ঢেকে থাকে। দরজা জানালা সব বন্ধ। আমার হাত-পায়ে এখনো দাগ আছে। হয়ত থাকবে আজীবন।........নীল, আপনি কি আমার গল্পটা লিখবেন।
আগে একটা প্রশ্ন করি। আপনার দেবর কি আর কোন খোঁজ নেয়নি?
আসলে ও-ই আমাকে এখানে নিয়ে এসেছিল। তাই বাড়ীর লোকজন ওর সাথে কথা বলে। ও আমাকে বিয়ে করতে চায় এখনো। আমি জানি না কেন ও আমাকে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু ও আসে। এই সেই কথা বলে। কোন জবাব না পেয়ে চলে যায়। যাই হোক, অনেক কষ্ট করে আমার গল্পটা শুনলেন। সময় দিলেন। আমি কৃতজ্ঞ। আচ্ছা নীল, আমার গল্পটা কি লিখবেন?

আসলে সে সময় আমার মেজাজটা খুব চরমে উঠে ছিল। কিন্তু তাই বলে তো আর রাস্তা ছেড়ে দিলে চলবে না! তাই খুব ঠাণ্ডা গলায় বললাম, দেখেন জলি.... সত্য দিয়ে কখনো গল্প হয় না। সেখানে কিছু মিথ্যা আর কিছু কল্পনার সংমিশ্রণ লাগে। তাছাড়া আপনার এই গল্পের সবচেয়ে বড় সমস্যা যেটা, সেটা হচ্ছে... একটা কথাতেই গল্পটা শেষ করা যায়। আপনি বারবার গিয়েছেন, বারবার নির্যাতিত হয়েছেন। আবার গিয়েছেন। এটা আসলে কোন গল্প হবার যোগ্যতা রাখে না। আমি সরি...। বুঝতে পারছি আপনি খুব কষ্ট পাচ্ছেন। কিন্তু কিছু করার নেই। আর আমারও কিছুটা কষ্ট হচ্ছে। শুধু শুধু রাতটা নষ্ট করলাম। প্রথম দিকে যতটা ইন্টারেস্ট ছিল, যত সামনে এগিয়েছে তত পানসে হয়ে গেছে গল্পটা। তবে একটা কথা বলতেই হয়, সেক্সুয়াল জায়গাগুলোতে তৃপ্তি পেয়েছি। আচ্ছা ঠিক আছে রাখি। আগামীতে আমার আর কোন লেখা বেরুলে কেমন লাগলো জানাবেন। এই বলে ফোনটা কেটে দিলাম।
বাইরে আস্তে আস্তে দিনের আলো ফুটছে বোধহয়। মুরগীর ডাক শুনছি। আজান শুনেছি বেশ আগেই। ঘর ছেড়ে বাইরে আসলাম। হালকা কুয়াশা। সবুজ ঘাসে শিশিরের ভালবাসা। একা একা হাঁটছি। মনে আছে এরকম এক শিশির ভেজা সকালে আমি অনেক কেঁদেছিলাম সারা রাত জেগে থাকবার পর। এরকম অনেকগুলো রাত, অনেকগুলো সকাল আমার কেটেছে। আমার মুখ মানবী অন্য যে কারো হতে রাজি। সে পরিচিত হোক কিংবা অপরিচিত। শুধু আমি ছাড়া। অনেক স্বপ্ন সাজিয়েছিলাম যাকে নিয়ে, তার মুখের একটু কথার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে বুকের দীর্ঘশ্বাসগুলো যখন কষ্ট হয়ে ঝরে পড়া শুরু করলো... তখন আমিও মানুষকে কষ্ট দিতে শুরু করলাম। জানো মানবী, শুধু তোমায় মনে রাখবো বলেই কষ্ট দিতে ভালবাসি। জলির ব্যপারটাও তাই। আমি চাই না আমার কাছ থেকে কেউ একটু স্নেহ, একটু উষ্ণতা পাক। আমি চাই আমার কথায় বেদনায় নীল হয়ে যাক তোমাদের শহর। এখন আমি হাঁটছি, আর মনে মনে পড়ছি:

কতটা পাপ করলে মানুষকে তার প্রায়শ্চিত্ত করতে হয়
কতটা আঘাত করে মানুষ বুঝতে পারে, ব্যাস অনেক হলো
কতটা দুঃখ পেলে মানুষের চোখ বেয়ে জল গড়ায়
কতটা মন ভাঙ্গলে দীর্ঘ দীর্ঘশ্বাস বেরোয়
কতটা ভালবাসলে, তুমি যখন অন্য হাত
খুঁজছ, তখন চোখ খুঁজে পায়
আর মন বলে: মেয়ে, তোমার মন খারাপ কেন?
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
স্বর্ণলতা একজন লেখক যখন লেখালেখাতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়, তখন সে এধরনের কিছু সস্তা লেখা লিখে ফেলে। কারণ তার ভিতর শৈল্পিকতাবোধ টা আর থাকেনা। আর শৈল্পিকতাবোধ থাকেনা বলেই তার দ্বারা আর লেখালেখি সম্ভব হয়না। কারন সাহিত্য চর্চাটা পুরোটাই শৈল্পিক বিষয়। পৃথিবীতে এমন একজন সফল লেখকও নেই যাদের সাহিত্যে সেক্সুয়াল বিষয়টা এত নগ্নভাবে এসেছে। যাদের এসেছে তারা অব্যশ্যই ব্যর্থ। গল্পের প্রয়োজনে এসেছে, চরিত্রের প্রয়োজনে এসেছে, ঘটনা ১০০% সত্য, এই সব সস্তা সেন্টিমেন্টের কোন দাম নেই সাহিত্যে। এই সব কথা বলে যারা তাদের ব্যর্থতা ঢাকতে চায়, তাদের লেখালেখির আগে ব্যপক পড়াশোনা দরকার।
আসলে এটাই আমি বোঝাতে চেয়েছি বারবার। সবাই শুধু সেক্সটাই দেখছে..... মূল্যবোধটা কেউ দেখছে না.... এখানে যে ম্যাসেজটা ছিল সেটাও কেউ দেখছে না.....
তির্থক আহসান রুবেল ধন্যবাদ খোরশেদ ভাই!!!
তির্থক আহসান রুবেল জারিফ ভাই, অনুভূতিটুকু ধারণ করতে পারার জন্য ধন্যবাদ.... এর বেশী আর কি বলবো!!!
খোরশেদুল আলম লেখক কিন্তু গল্পটি লেখেনি শুধু শোনা কথাগুলোই এখানে এসেছে টাইপিষ্ট হিসেবে যেকেউ তাইনা ? ভালো লিখেছেন।
জারিফ আল সাদিক golper choritrogulo besh shundor fute utheche. Joli choritre doitoshotta birajman mone hocche. Lekhok thik cyko noy birokto hote hote mulvabe eshe vinno akoshone bicholito. Shesher kothagulote lekhok j prokitpokkhe bicholito holeo chondo haranni tar proman rekhechen. Kahini heshebe otishadharon kintu golpo hishebe oshadharon. Vashar bepare bolbo eta bishoy shongslisto.
তির্থক আহসান রুবেল তবে আশা,.... জলি হয়ত শেষ পর্যন্ত চেয়েছিল ভালবাসার জয় হোক... তাই সে ফিরে গেছে বারবার। আমি তাকে পাপী ভাবিনা। ভাবি বিরক্তিকর।
তির্থক আহসান রুবেল আশা,..... আশা পেলাম অন্তঃত প্রকৃত জায়গায় পৌছার মতো কারো সাক্ষাত পেলাম। অনেকে লেখাটি পড়ে লজ্জায় কমেন্টও দেয়নি.... পাছে আরেকজন বলে বসে...এমন বাজে লেখা পুরোটা শেষ করলা?? ..... ভাই যদিও.....??
আশা পড়লাম, ভালোও লেগেছে। যেখানে জলির মুখে গল্প শুনে লেখকের শরীরটাই গরম হয়ে যায়, সেখানে পাঠক কি আর ঠান্ডা থাকবে? তবে- গল্পটাতে একটাও ভালো মানুষ খুঁজে পেলাম না। স্বামী-শ্বশুর-শ্বাশুরি-ননদ-দেবর সবাই খারাপ। সর্বশেষ বুঝতে পারলাম স্ত্রীও (জলি) বাজে মনের। তা না হলে কী আর পাপীর কাছে পাপিনী ফিরে যায়? একটা কথা বলি- আমার এক বন্ধু খুব ভালো আর্ট করতে পারত। একবার সে একটি মেয়ের উলঙ্গ ছবি এঁকেছিল। ক্লাসে এটা নিয়ে খুব তর্ক-বিতর্কও হলো। এক পর্যায় তার নামে নালিশ গেল প্রধান শিক্ষকের কাছে। স্যার এসে সবাইকে বললেন- ছবিটা এঁকেছে খারাপ, তা ঠিক আছে। কিন্তু শিল্পীর দক্ষতা বিচার করলে বলতে হয় খুব সুন্দর। কারণ; শিল্পীর হাত ভালো। কি আঁকলো সেটা নয়- কেমন আকল সেটাই বিচার করলেন স্যার। তাকে কোনা সাজা না দিয়ে স্যার চলে গেলেন। তো যা হোক- ভালো লিখেছেন। চরিত্র অনুযায়ী ভাষার ব্যবহার ঠিকভাবেই দেখিয়েছেন। যদিও .......?
তির্থক আহসান রুবেল AMINA, একটা কথাই বারবার বলতে হচ্ছে..... তাই আর রিপিট করলাম না। আপনার কথা ভাল লেগেছে....। ধন্যবাদ সময় দেয়ায়.......
AMINA সব ক্ষেত্রে একা থাকার ভয়ে নয়. অন্ধ ভুল বিশ্বাস কিংবা তীব্র ভলবাসা বোধের কারনেই বার বার ফিরে যায় মেয়েরা ।সমাজ কত নোংড়া চরিত্রে ভরা--সেটা ফুটে উঠেছে ।তবে ভাষার পরিশীলন জরুরী ছিল।

২১ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ২৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪