এক-
মানিকের সবচেয়ে প্রিয় ও কাছের মানুষ ছিল শেফালী।
আর সে এই সুযোগটারই সদ্ব্যব্যবহার করত সব সময়। ৫ বছর আগেও যেটা করেছিল।
৫ বছর বাদেও তারই পুনরাবৃত্তি করলো।
মানিককে বাইবারে একটা ম্যাসেজ পাঠিয়েছে শেফালী।
এক কথার একটা ম্যাসেজ!
মানিক ‘ভুলে যা’।
এর মানে বুঝলনা মানিক।
কি বুঝাতে চাইল শেফালী?
মানিক ভাবল, সে কি তাকে ভুলে যাওয়ার কথা লিখল!
যদি এরকমটা হয়, তাহলে এর উত্তর কি হবে?
যে সর্ম্পকটা কোন দিন গড়েই উঠেনি, এতদিন পর ভুলে যাবার প্রশ্ন উঠছে কি রে?
একটা সময় ছিল শেফালীকে ভালবাসত মানিক। কিন্তু সে সময়টা মানিকের ছিল না। ছিল শেফালীর। তাই নানান ছুতোয়ঁ মানিককে সে এড়িয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিল। সে ইঙ্গিতটা বুঝতে মানিকের দেরী হয়ে গিয়েছিল। ততদিনে মানিক নিজেকে ডুবিয়ে দিয়েছিল শারিরীকভাবে, মানসিকভাবে, সামাজিকভাবে, অর্থনৈতিকভাবে। ভেঙ্গে পড়েছিল নানানভাবে। ধীরে খাদের কিনারায় চলে যাচ্ছিল। যেদিন মানিকের ঘোর ভেঙ্গেছিল, সেদিন দেখেছিল শেফালী আর শেফালী নেই। বদলে গেছে।
তখন তার মনে হল, শেফালী নিজেকে বদলাতে পারলে, সে কেন পারবে না।
আকাশে উড়া শেফালীর শখ ছিল। শেফালীর ¯^প্নটাও ছিল আকাশ ছোয়াঁ।
মানিকের মনে হয়েছিল শেফালীকে জবাব দিতে হলে তাকে আকাশ থেকে মাটিতে নামিয়ে আনতে হবে। নিজেকে বির্সজন না দিয়ে, নিজেকে না ডুবিয়ে শেফালীকে মাটিতে নামিয়ে আনার প্রতিজ্ঞা করেছিল মানিক। এ প্রতিজ্ঞাই ছিল মানিকের জীবনে সবচেয়ে বড় প্রেরণা।
শেফালীর বেশ কটা ছবি ছিল মানিকের কাছে। ৫ বছর আগে কলেজের পড়াকালীন স্টাডি টোরে তোলেছিল দুজন। ছবিগুলো নিয়ে কি কান্ডই না করেছিল শেফালী। ছবিগুলো নেয়ার জন্য একদিন ঝড় বৃষ্টির রাতে মানিককে ডেকে পাঠিয়েছিল শেফালী। তাও আবার প্রিন্ট করা ছবি। বলেছিল, সেগুলো নাকি যতœ করে রাখবে। সে দিনটি ছিল ৪ ডিসেম্বর।
সেদিন শেফালী মানিককে বলেছিল,-মানিক আমার সম্মানটা তোর হাতে।
মানিক- সেদিন শেফালীকে কথা দিয়েছিল।
মনে না পাওয়ার ব্যথা, যন্ত্রনা, সাথে একরাশ অভিমান আর ক্ষোভ নিয়ে সেদিনই শেফালীকে তার জীবন থেকে মুক্তি দিয়ে ঢাকায় চলে গিয়েছিল। এরপর থেকে ৫টি বছর কেটে গেল শেফালীর সাথে মানিকের কোন যোগাযোগ নেই।
যে শেফালীকে একদিন না দেখে, একদিন তার সাথে কথা না বলে থাকতে পারতনা মানিক, সেখানে ৫টি বছর কাটিয়ে দিল। যোগাযোগের কোন প্রয়োজনই মনে করল না।
এমনকি আজ পর্যন্ত কোন মেয়ের সাথে রিলেশনে গেল না। তার বিশ্বাস ছিল শেফালী ফিরে আসবে। আর এ বিশ্বাসটি আরো পাকাপোক্ত হল, শেফালী যখন বাইবারে তাকে নক করল!
দুই-
মানিকের ছোট একটা বোন ছিল। নাম উর্মি। ঢাকায় চলে আসার পর কারো সাথে যোগাযোগ রাখেনি। এমনকি পরিবারের সাথেও না। মাঝে মাঝে উর্মিকে ফোন দিয়ে মা-বাবার খবরাখবর নিত।
শেফালীর লেখা ম্যাসেজটা পেয়ে কিছুক্ষনের জন্য ৫ বছর আগে কাটানো দিনগুলোতে ফিরে গেল মানিক। এই একই কথা ৫ বছর আগেও একবার বলেছিল শেফালী। ‘
আমাকে ভুলে যারে মানিক!
সেদিন মানিক তাকে কথা দিয়েছিল ভুলে যাবে।
সেই কথা রাখতে গিয়েই ৫টি বছর নিজেকে শেফালী থেকে আড়াল করে রেখেছে মানিক।
তিন-
লিটন নামের এক প্রবাসি ছেলের সাথে এফেয়ার ছিল শেফালীর। আকাশছোয়াঁ ¯^প্ন ছিল তার। লিটন ছিল প্রবাসি। অনেক চেষ্টা তদবিরের পর শেফালী তাকে পটিয়েছিল ।
দুজনের এফেয়ার দেড় বছরের মাথায় ভেঙ্গে গিয়েছিল। এজন্য মানিককে দায়ী করেছিল শেফালী।
মানিককে খুব বিশ্বাস করল শেফালি। সে বিশ্বাসের ঘরে ছাই দিয়েছিল শেফালীর এক বান্ধবী।
মানিককে একদিন সকালে ফোন করেছিল শেফালী। বলেছিল সুমন নামের এক সহপাঠী মানিকের সাথে তোলা ছবিগুলো দিয়ে ইমুশনালি ব্ল্যাক মেইল করছে।
শেফালীর নিকট থেকে ব্লুটুথ দিয়ে সুমন ছবিগুলো নিয়ে গিয়েছিল। পরে সে লিটনের নিকট পাঠিয়েছিল। যার কারনে লিটন শেফালি কে ভুল বুঝে এভয়েড করে যাচ্ছিল। শেফালীকে সুমন বলেছিল, মানিক ওই কান্ড করেছে। যার কারণে মানিককে অবিশ্বাস করতে থাকে শেফালী।
অথচ শেফালি মানিককে বলেছিল, মানিকই নাকি তার জীবনের সব কিছু। মানিকের জন্য সে সবই করতে পারে।
করেছিলও। যা মানিক আশাই করেনি।
তাই ভাবল বাইবারে পাঠানো ম্যাসেজের উত্তর দিবে কিনা?
মনের অজান্তেই জল এসে পড়ে মানিকের।
মানিকের মনে হল, ভালবাসা মানে শুধু পাওয়া নয়। বরং যাকে ভালবাসেন, তার ভাল চাওয়াটাই হল, ভালবাসা।
শেষ পর্যন্ত মানিক সিদ্ধান্ত নিল শেফালীর ম্যাসেজের উত্তর দিবে।
সেও এক কথার একটা ম্যাসেজ লিখল।
‘ভুলেত গেছি ৫ বছর আগেই?
চার-
ওইদিন বিকেলে শেফালী বাইবারে ফের ম্যাসেজ লিখল মানিককে
জানিস মানিক, আমি এমনটা চাইনি। তকে কষ্ট দেয়া, ব্যথা দেয়া আমার কোন ইচ্ছাই ছিল না।
অনিচ্ছা ¯^ত্তেও মানিক শেফালীর সাথে চ্যাট করতে হল।
তাহলে কি ইচ্ছা ছিল?
শেফালী রিপ্লাই দিল-আমি হ্যাপী হতে চেয়েছিলাম।
মানিক-হয়েছিলি কি?
শেফালী-উত্তর না দিয়ে ফোন দিল।
ফোন রিসিভ করে মানিক কোন কথা বলল না।
শেফালী বলল,-এখনো রাগ করে আছিস আমার উপর?
মানিক-না।
শেফালী বলা শুরু করল।
জানিস সুমনের কথায় তকে সেদিন ভুল বুঝেছিলাম। বিশ্বাস কর, তকে প্রত্যাখান করার পর থেকে একটা দিনও ভালভাবে কাটাতে পারিনি আমি। তোর ভালবাসার মূল্যায়ন করিনি বলেই হয়তো লিটন আমার ভালবাসার কোন মূল্য দেয়নি। জানিস, তুই ঢাকায় চলে যাবার পর থেকে নিজেকে খুব একা মনে হত। নিজে নিজেই কষ্ট পেতাম। আর ভাবতাম, কি ভুলটাই না সেদিন করেছিলাম। কোন কোন সময় মনে হত সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
কিন্তু না কোন কিছুই ঠিক হল না। ৫ বছরে অনেক কিছু বদলে গেছে।
মানিক চুপচাপ শেফালীর কথাগুলো শুনে যাচ্ছিল।
শেফালী-কি রে মানিক কিছু বল!
মানিক-কি বলব?
শেফালী-যা ইচ্ছা।
মানিক-আমার আর কোন ইচ্ছা নেই। যেটি ছিল, সেটিকে মেরে ফেলেছি ৫ বছর আগেই।
আমি এখন ক্লান্ত।
তুই তোর সুখের পথ বেচেঁ নিয়েছিলি। সুখের ঠিকানা খুজেঁ নিয়েছিলি।
আর আমি বুকের ভিতর পাহাড়সম ব্যথা নিয়ে আমার জীবন থেকে তকে মুক্তি দিয়েছিলাম।
সেদিন আমি মনে মনে পরাজয় মেনে নিয়েছিলাম।
কারণ আমি জানতাম, ভালবাসা কখনো জোর করে কিংবা কান্না করে পাওয়া যায়না। এমনকি নিজেকে কষ্ট দিয়েও না। তরে ভালবেসে এতো ব্যথা পাব কোনোদিন ভাবিনি। তারপরও আমি হ্যাপি।
তুই ভালবাসিস নি তো কি হয়েছে? কিছু একটাতো সেদিন আমাকে দিয়েছিলি।
হোকনা সেটা দুঃখ-কষ্ট, ব্যথা আর যন্ত্রনা।
বিশ্বাস কর, আমি সেদিনও তোর ভাল চেয়েছিলাম। আজও তোর ভাল চাই। আমি চাই, তুই শুধু ভাল থাক।
আমি ভাল থাকব আমার সেই প্রিয় মানুষটি ছাড়া, যতটুকু ভাল থাকা যায়!
পাঁচ-
সেদিন বাইবারে ১ ঘন্টা ৪০ মিনিট আলাপ হয়েছিল শেফালীর সাথে মানিকের। শেফালী ৫ বছর পর মানিককে সরি বলেছিল।
মানিক শেফালীকে এই বলে শান্তনা দিয়েছিল, তুই সুখে থাক।
আমাকে আমার মত থাকতে দে।
সেদিন রাতে ভাল ঘুম হয়নি মানিকের। বুকের পুরোনো ব্যথাটা যেন মোচড় দিয়ে উঠছিল বারেবার।
কেন করলিরে শেফালী?
মানিক সেই রাতে অঝোরে কেদেঁছিল। ৫ বছর আগে যেভাবে, যে কারণে একবার কেদেছিল।
সেই কান্না সেদিনও শেফালী দেখেনি। ৫ বছর পরেও না!
তাতে কি?
মানিক কি কখনো ভেবেছিল, শেফালী আবার ফিরে আসবে তার পৃথিবী রাঙ্গাতে।
গেল ৫টা বছর মানিকের শুধু মনে হত ভালবাসার আরেক নাম হল যন্ত্রণা। ভালবাসার আরেক নাম হল ব্যাথা পাওয়া। ভালবাসার আরেক নাম হল শেকলে নিজেকে আটকে ফেলা।
শেফালী কেন তুই ফিরে এলি?
সেদিন ১ ঘন্টা ৪০ মিনিট আলাপের পর অনেকটা দিন কেটে গেল। শেফালী মানিককে আর ফোন করেনি। ৫ বছর আগে শেফালীকে নিয়ে দেখা মানিকের দেখা ¯^প্নগুলো নতুন করে ফুফিঁয়ে কাদঁল সেই রাতে।
মানিক আজ অনেক প্রভাব প্রতিপত্তির অধিকারী। কিন্তু এখনো একা। অনেকদিন আগে শেফালী যেরকম একা থাকতে চেয়েছিল। সে রকম। নিজেকে সেই রাতে মানিক অনেক বুঝাল।
ছয়-
এখনো মাঝে মাঝে শেফালীর কথা মনে পড়লে কষ্ট পায় মানিক। মানিক হয়তো সেদিন শেফালীকে জোর করে আটকাতে পারত। কিন্তু এর কি কোন সমাধান হত?
দেহের সাথে জোর করা হয়তো যেত, কিন্তু মনের সাথে? যেত না। কারণ
শেফালী সেদিন প্রতিমুর্হুতে চেঞ্জ হচ্ছিল?
সে মানিকের সাথে যেসব ভুল আচরণ করেছিল সে ভুল সংশোধন কি করে করত শেফালী?
শেফালী কি পারত, মানিকের জীবন থেকে চলে যাওয়া ২০০৬ থেকে ২০১১ পর্যন্ত চলে যাওয়া সময়টা ফিরিয়ে দিতে!
পারত না।
মেয়েদের প্রতি মানিকের এখন আর কোন ফেইড নেই।
মানিকের মনে সেদিন শেফালীকে হারানোর ভয় ছিল। ভয় ছিল শেফালী না তাকে ছেড়ে চলে যায়। মানিক ভয়কে জয় করতে পেরেছিল সেদিন। যার কারণে শেফালী আবার ফিরে আসতে চাইল মানিকের জীবনে....।
সত্যি কথা বলতে কি মানুষের চাওয়া পাওয়ার শেষ নেই।
সেদিন মানিক শেফালীকে চেয়েছিল। কিন্তু শেফালী ভিন্নরূপে ধরা দিয়েছিল।
৫ বছর পর শেফালী যখন নিজের ভুল বুঝল, ততক্ষনে অনেক দেরী হয়ে গেছিল। মানিক আর শেফালী দুজন সময়ের ফ্রেমে বন্দি ছিল তখন....
০২ মার্চ - ২০১১
গল্প/কবিতা:
১২ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪