চলিতেছে প্রায়শ্চিত্ত

প্রায়শ্চিত্ত (জুন ২০১৬)

Firose Hossen Fien
  • 0
  • ৩৫
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। প্রতিটি মানুষের জীবন নানাভাবে নানা রকম কাহিনী দিয়ে গড়া। এক জীবনের গল্পের সাথে অন্য কারো জীবনের গল্পের কোন মিল পাওয়া যায়না সচরাচর। প্রতিটি জীবনের গল্প তার কাছে সেরা গল্প মনে হয়। তেমনি একটি জীবনের গল্প আজ তুলে ধরবো আপনাদের কাছে।

জীবনে চলার পথে সবার জীবনে আসে বন্ধুত্বের ছোঁয়া। বন্ধু ছাড়া জীবন আসলেই অন্য রকম জীবন। ছোট থেকেই আমি আমার মতো এক জন ভালো বন্ধু খুজে বেড়িয়েছিলাম। যার তাথে থাকবে আমার সাথে মিল। আমার সুখে দুখে যে কোন সমস্যায় তাকে পাশে পাবো। জ্ঞান হওয়ার পর থেকে ধূমপানকে ঘৃণা করতাম। তাই আমার একটি স্বপ্ন ছিল আমার মতো কোন একজন ধূমপান মুক্ত ভালো কোন ছেলেকে আমার বেষ্ট ফেন্ড করে নিবো। প্রাইমারী স্কুলের গন্ডি শেষ করলাম। তখন পেলাম না ভালো কোন বন্ধু। হাইস্কুলে ভর্তি হলাম।

প্রতিদিন স্কুলে যেতাম। কারণ স্কুলটাকে অনেক ভালোবাসতাম। হঠাৎ একদিন আমি আর আমার ক্লাস ফেন্ড মিলে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ঘুরতে গেলাম। গিয়ে আমার চোখে পড়ল একটি মেয়ে। তার বান্ধবী তার চুল ও খোপা লাগিয়ে দিচ্ছিলেন। আগে থেকেই মেয়েদের চুলের প্রতি আমার দূর্বলতা ছিল। তখন টিভি চ্যানেলের একটি বিজ্ঞাপন আমার খুব ভালো লাগতো তা হচ্ছে জুঁই নারিকেল তেলের।
“ও সুন্দরী তোর খোপা খুলেছি
চুল ছিড়েছি ছিড়বোইতো
তোমার ঐ রেশমি কালো চুল দেখে
পাগল আমি হবোইতো”
এই বিজ্ঞাপনের সাথে আমার দেখা আজকের সেই মেয়েটির বড় মিল আমি খুঁজে পাচ্ছি । তবে কি আমি আমার মনের মানুষটিকে খুঁজে পেতে যাচ্ছি। কে জানে আমার কপালে কে আছে। সৃষ্টিকর্তা যদি চাই হলে হতেও পারে। এভাবে অল্প অল্প প্রেমের গল্প নিয়েই পড়ালেখা করছি। গণিত আমি খুব কাঁচা ছাত্র ছিলাম। প্রাই মার খেতাম আমার বিমান নামে একটি স্যারের হাতে। কি যে মজা লাগত সেই মার খেতে এখন বুঝতে পারছি। যাই হোক আমি এস.এস.সি পরীক্ষা দিলাম ভালো একটা রেজাল্ট করলাম। সেই দিন মেয়েটিকে আমার ভালোবাসার কথা বললাম সে রাজী হয়ে গেল সহজেই। কলেজ জীবন শুরু। মাঝে মাঝে তার খবর নিতাম। হঠাৎ একদিন একটি ছেলের সাথে তার আলাপরত অবস্থায় দেখে মাথা আমার ঘুড়িয়ে গেল। খোঁজ নিলাম, জানতে পেলাম মেয়েটি আমাকে না আসলে সেই ছেলেটিকেই অনেক ভালোবাসে। পক্ষান্তওে ছেলেটি আমার বন্ধু ছিল। কি আর করা জোর করে তো ভালোবাসা হয় না। কষ্ট পেলাম। কষ্ট থাকবেই সবার জীবনে। গরীবের কষ্ট পরিমানটা একটু বেশি থাকে। এভাবে আমার ইন্টার পড়াশেষ করে আমি ভর্তি হলাম ডিগ্রী কলেজে। নানা রকম অনুষ্ঠানের সাথে জড়িত ছিলাম। সব সময় ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করি। ব্যস্ত থাকলে কষ্ঠের কথা মনে পড়ে না। একটি পত্রিকা বের করতাম আমরা কিছু তরুনরা মিলে। একটি মিটিং এ একদিন একটি মেয়েকে ভালো লেগে গেল। মনে মনে মনকে বুঝালাম না আর কাউকে আমি ভালোবাসার কথা বলবো না। শুধু দূর থেকে ভালোবাসবো। একটি সপ্তাহ শেষ । হঠাৎ একদিন আমার ফোনে অনেকটি মিস কল অপরিচিত নাম্বার তেমন গুরুত্ব দিলাম না। ভাবলাম কে না কে। পরে দেখা যাবে। ৭/৮ টি মিস কি আর করা । পরে কল দিলাম। কথা শুরুতেই অপর প্রান্ত থেকে সালাম। বলল ভাইয়া আমি সেই মেয়েটি, আমি বললাম কোন মেয়েটি, বলল মিটিং এর । আমি ও আচ্ছা বলেন কি বলতে চান। আসল কথা সে আমাদের পত্রিকায় কিছু লেখা দিবে। আমি আমার এক বান্ধবি মানে মহিলা সম্পাদকের ঠিকানা তাকে বলে দিলাম। এভাবে মাঝে মাঝে আমাদের মাঝে এসএমএস দেয়া নেয়া চলল কিছুদিন। আমার একটি স্বভাব ছিল যে, কাউকে সহজে কল দিতাম না বা কল রিসিভ করতাম না। প্রতিদিন এসএমএস কিনতাম তা সব বন্ধুদেরকে দিতাম। কোন কথা থাকলে এসএমএস এ লিখে পাঠাতাম।

সেদিন কলেজ হল রুমে রাত্রী যাপন করছিলাম । পরের দিন স্বরস্বতী পূজা ছিল তাই। দেখলাম সেই নাম্বার থেকে এসএমএস আমিও উত্তর দিলাম। এভাবে অনেকগুলো এসএমএস আদান প্রদান করা হলো। সারারাত আমরা সেদিন এসএমএস দিলাম। এভাবে এগিয়ে যাচ্ছিল আমাদের ছোট জীবনের মূল ভালোবাসার কাহিনী। আমি খোঁজ খবর নিলাম তার সম্পর্কে। নিয়ে জানতে পেলাম ভালো ফ্যামিলীর মেয়ে। নামাজ কালাম পরে। কারো সাথে কোন সম্পর্ক নেই ভালোবাসার।

আমি আমার ফ্যামিলী সম্পর্কে তাকে সব কিছু বললাম। এবং তাকে কিছুদিন ভাবার সময় দিলাম। কারণ হঠাৎ করে জীবনের বড় কোন সিদ্ধান্ত নিতে নেই। এতে বড় কোন অঘটন হতে পারে। কয়েকদিন পর আমি জানতে পেলাম। সে আমার সাথে তার জীবন গড়তে রাজি। দুজনের মধ্যে কথা হলো আমরা শুধু দুজন দুজনার।

ডিগ্রি শেষ বর্ষ। ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে চিন্তায় পরে গেলাম। কারণ তার বিয়ে ঠিক করেছে ৩ মাস এর মধ্যে তার বিয়ে দিবে। তাকে বললাম আমাকে কিছু সময় দেবার জন্য। সে তার মাকে বলে সময় চেয়ে নিল। আমি চাকুরীর আশাই একটি ঔষধ কোম্পানীতে ইন্টারভিউ দিলাম। ঢাকায় ট্রেনিং করে চলে গেলাম চট্টগ্রামের সন্দ্রীপ নামক জায়গায়। প্রায়শ্চিত্ত এর শুরু এখান থেকেই। এর পর আমি সকাল ৬ টা থেকে রাত্রী ১২ টা পর্যন্ত গাধা রামের মতো কাজ করতে লাগলাম। খুব দূর্গম এলাকা। অনেক রাত্রে টাকা নিয়ে আসা খুব কঠিন কাজ। তাছাড়া রাস্তার পাশে কোন প্রকার লাইট ছিল না। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা এখনো তাদের কাছে পৌছাতে পারেনী। প্রতিদিন হোটেলে খেতে হতো। রাত দশটায় হোটেল বন্ধ তাই অনেক দিন না খেয়েই থাকতে হতো। রুমমেট খাবারের খোজ নিতো না। সে অন্যদের সাথে খেতো। এভাবে কাজ করতে কোন মন ছিল না আমার। দেখা যায় শুক্রবারের নামাজ পরার সময় মার্কেট যেতে হতো। তাই আমি আমার সেই আপনজনকে বললাম আমার সমস্যার কথা। মা বাবাকে বলা হয় নি। কষ্টের কথা বললে তারা কষ্ট পাবে তাই। এভাবে মাস শেষ হয়ে গেল। ৫ তারিখ আমার বেতনের টাকা চাইলাম। তারা বললো দেরি আছে। অফিসে জানালাম আমি আর চাকুরী করবো না। তারা বলল নতুন কোন লোক জয়েন্ট না করা পর্যন্ত থাকতে হবে। হাতে টাকা নেই। মাস শেষ বেতন দেয় নি। কি করি। কাউকে না বলে চলে এলাম ঢাকায় । সব নাম্বার বন্ধ করে দিলাম। পরিবার প্রিয়জন সবাইকে ত্যাগ করে নতুন জীবন শুরু করলাম। এক মাস কারো সাথে কথা বলি নি। একমাস পর জানতে পারলাম আমার প্রিয়জন এর বিয়ে হয়ে গেছে। ছেলে গামেন্টস এ চাকুরী করে। কি করবো বুঝতে পারছি না। একদিন কল দিলাম সে চিনতে পারলো না। অনেক গালি দিল। জীবনে আর যেন তার সাথে যোগাযোগ না করি তা বলল। মনকে যে কি বলি যার জন্য চলে গেলাম চাকুরীতে যে আজ অন্যেও ঘরের ঘরণী। এর নাম ভাগ্য। আজও আমি তার জন্য প্রায়শ্চিত্ত করছি। জানি না কবে এর শেষ। একটি কামনায় করি। সে যেন সুখে থাকে। কারণ আমি আজও নিজেকে গুছিয়ে নিতে পারি নি। ভালো কোন স্থানে যেতে পারি নি। মাঝে মাঝে তার কথা মনে পওে কষ্ট পাই ভুলে যায়। এরি নাম জীবন। নানা রঙ্গের জীবন।
ফিরোজ হোসেন ফাইন
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ইমরানুল হক বেলাল golpota onek sondor kore sajiye liklen, lekha pore mone holo kolpona noy bastob! donnobad bondhu, aponar sahittokormo ujjibit hok duya kori,
রুহুল আমীন রাজু বেশ ভাল লাগলো গল্পটি.....শুভেচ্ছা। আমার পাতায় আমন্ত্রন রইল।
কেতকী বেসরকারী অনেক অফিসই কর্মীদের গাধার মতো খাটায় ঠিকই কিন্তু প্রাপ্যটা সময়মতো দেয়না। গল্পের নায়কের জন্যে সমবেদনা রইল। গল্পে ভোট রইল।

২১ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ২১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪