আশ্চর্য এক দেশ

অসহায়ত্ব (আগষ্ট ২০১৪)

Azaha Sultan
একদিন আমাকে ব্যাংকের কাজে বের হতে হল। আমার বাহন ছিল মোটরবাইক। বলতে গেলে তখন, সংসারের ঝটঝামেলা নিয়ে তেমন একটা মাথা ঘামাতে হচ্ছে না আমার। ভাইরা এসব কাজকর্ম সমাধা করে চলছে। তার পরেও মধ্যে মধ্যে কিছু-না-কিছু যে করতে হয় না এমন কথাও নয়। জানি, সংসারের দায়িত্বভার সকল পুরুষকে একদিন কাঁধে উঠিয়ে নিতে হয়। এটাই সংসারের নিয়ম। সংসার-রচয়িতা যেখানে এ সংসার রচনা করে দায়দায়িত্ব শেষ মনে করতে পারে নি, সেখানে সংসারীরা কেন মনে করব নিষ্কৃতি লাভ? সৃষ্টির মঙ্গলার্থে যেমন সৃষ্টিকর্তার দয়াদায়িত্ব অপরিসীম, তেমন এ সংসারের সৌন্দর্যরক্ষার্থে সৃষ্টিরও অনেকবেশি দায়িত্ব থাকা উচিত এবং আছে।

স্রষ্টা যেমন সুন্দর তাঁর প্রত্যেকটি সৃষ্টিকর্মই তেমন সুন্দর, হোক মানুষ অথবা দেশ। তিনি সবকিছুই নিখুঁতভাবেই সৃষ্টি করেছেন। তন্মধ্যে মানুষ যতই সৃষ্টির সেরা হোকনা কেন, প্রায় মানুষের আদত কিন্তু বিশ্রী।

ব্যাংকদালানের সামনে এসে দেখি, রাস্তার অপর পাশে ফুটপাত ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে একটা তালা আটকানো ভ্যানগাড়ি। ভ্যানটার পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে কালোরঙের একটা মোটরকার। যদিওবা এটা কোন পার্কিং নয়। যান চলাচলের ব্যস্ততম রাস্তা। তবু আমরা সবটাই রাস্তা মানতে রাজি নই। সরকারিমাল ব্যবহারের উপর সরকারের যেমন একটা হক আছে তেমন জনগণেরও একটা হক থাকে। এখানে আমরা আবার খুববেশি দায়িত্ববান। কারণ আমরা এমন এক জাতি হাতে করতে না পারলেও মুখে ঠেলে নিতে পারি কয়েক মাইল। আমাদের তুলনা করা ভার।

অন্যকে দেখে ভ্যানটার পিছনে একেবারে ফুটপাত ঘেঁষে আমিও দাঁড় করালাম আমার বাইক। যেহেতু আমার দাঁড়ানোটাও কোন বৈধ আইনে পড়ে না। তবু ফুটপাত বলে কথা। তার পরেও--আমরা অন্যকে দেখে দেখে আদতে অভ্যস্ত। কথায় যে আছে, হাওয়া যেদিকে চলে ছাতা সেদিকে মেলে ধরো। কারণ আমরা জাতিগতভাবে অভ্যস্ত। হুজুকে মাতি, হুজুকে ছুটি! জেনেশুনেই অনেক কিছু করি। একবারও বিবেক দিয়ে চিন্তা করি না। ও কেন করল? আমি করলে ক্ষতি কী? এভাবেই চলছে অপরাধ, বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা।

সামনে বের হওয়ার জন্যে আমার কোন পথ খোলা নেই। আমাকে সামনের দিকে বের হতে হলে হয় ত স্থানত্যাগ করতে হবে কারগাড়িটা আর না হয় ত ভ্যানগাড়িটা। পিছনদিকে তবে বেশ খোলা জায়গা আছে। এমর্মে অন্য উপায় না খুঁজে তড়িঘড়ি করতে গিয়ে আমিও তবে অপরাধের অপরাধী বলব। ঐ যে আদত : দশজন যেখানে ছুটল--চিন্তা করে দেখি না যে, ওরা ছুটছেইবা কেন, হচ্ছেইবা কী!

এখন গ্রীষ্মকাল, জ্যৈষ্ঠের দুপুর। কোথাও বইছে না আর বসন্তের মধুর বাতাস। কাঠফাটা রোদে পুড়ছে শহর। নানা রকম মৌসুমিফলে ছেয়ে গেছে দেশ। ফলের সুগন্ধে যেখানে মাছিদের ভোঁ ভোঁ করার কথা সেখানে মাতোয়ারা কোন মাছিমক্ষিকার ভনভনানি নেই। কারণ আজকালকার ফল মানেই মরণব্যাধি। তাই মাছিমশাদেরও জানা হয়ে গেছে ফল মানেই বিষ। দোষ কাকে দেব, আমরা নিজেরাই যেখানে ভেজাল সেখানে অন্যকে দোষারোপ করা ভুল। এ বিষ খেয়েই আমাদের যেতে হবে!

মিনিট দশেকপর ফিরে এসে দেখি আমার বাইকের পিছন ছুঁই ছুঁই আরেকটা সাদারঙের কারগাড়ি দাঁড়ানো! আটত্রিশ ডিগ্রি রোদের উপর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম তারপর এদিক-ওদিক সবদিকে দেখে একজন পথিককে জিজ্ঞেস করলাম--উপায় কি। ভদ্রলোক একটুখানি গতি থামালেন। সমাধান কী দিবে অতঃপর বোকার মতো হেসে চলে গেলেন। একটু দূরত্বে দেখি জন দুয়েক বসে আড্ডা দিচ্ছে--ভ্যানচালকের মতো লাগছে। ডেকে বললাম, ভ্যানটা আপনাদের কারও কি? ওরা হেসে বলল, আমরা ভ্যানচালক নই জনাব। ওহ্, মাফ করবেন; আমি ভাবছিলাম...দুঃখিত। বলতে পারেন, এ মহাশয়রা কে কোথায় গেছে? না স্যার, আমরা ওদিকে খেয়াল করি নি। আর আমাদের দরকারইবা কী। কথা ঠিক, কে কোথায় যাচ্ছে অন্যের গরজ কী। কি আর করি, উতপ্ত রোদের নিচে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হল নিরুপায়। ভেঁপু? অনেক বাজিয়েছি বাপু, কারও সাড়াভাস নেই।

প্রায় ঘণ্টা হতে চলল, কোন ভদ্রলোকের দেখা নেই। ইউটার্ণের মাথায় কালো গাড়িটা ঝঞ্ঝাটের সৃষ্টি করছে। যত গাড়ি টার্ণ করতে যাচ্ছে সকলেই ব্যাঘাতের সম্মুখ হচ্ছে। ভদ্রলোক হলে সভ্যগালি দিয়ে চলে যাচ্ছে আর অভদ্র হলে অশ্লীল। এমুহূর্তে তবে ওই গালিগুলো তাঁর ন্যায্যপাওয়া। কারণ, গাড়ি যথাস্থানে রাখার নির্দিষ্ট একটা স্থান সবখানে সবদেশে আছে। এব্যাপারে সবখানে সবদেশে একটা কার্যকরি আইনও আছে। এটা কোন চালক এবং গাড়িমালিকের অজানা থাকতে পারে বলেও মনে হয় না। কেননা যারা প্রকৃত চালক বা গাড়ির মালিক তারা একটা ড্রাভলাইসেন্সেরও মালিক। আর এ-ই লাইসেন্স নিতে হলে বেশ কয়েকবার পরিক্ষাদির সম্মুখীনও হতে হয়। সুতরাং এবিষয়ে কোন চালকের অজ্ঞতা প্রকাশ করারও সুযোগ নেই। এশিয়া মহাদেশের হাতেগুনা দুয়েকটা দেশ ছাড়া পৃথিবীর সবখানে এ আইনের কঠোর প্রয়োগ আছে। যেখানে সেখানে গাড়ি পার্ক করলে কঠিন শাস্তি এবং মোটা অঙ্কের জরিমানারও বিধান আছে। অতএব গাড়ির সঙ্গে যাদের সম্পর্ক তারা এ আইন মানতেই হয়; সে যত বড় ধনী বা সম্মানি ব্যক্তিই হয়না কেন, আইনের বাইরে যাবে না। আর আমাদের দেশে পুলিশের সামনে একজন গাড়িওয়ালা অবৈধভাবে তার গাড়ি পার্ক করে চলে যাচ্ছে পুলিশ তাকে কিছু বলবে দূরের কথা, দেখা যাচ্ছে সালাম ঠুকছে। যেন এ রাস্তার মালিক ওই গাড়িওয়ালা! এরাজ্য তাঁর পিতৃদেবের, উত্তরাধিকারসূত্রে সে-ই প্রাপ্য একদিন।

অনেক গাড়িমালিককে দেখা যায় কোনক্রমে একটা দামি গাড়ির মালিক হলেই হইছে, তাঁর চোখ তখন আকাশের দিকে। এ মাটির মানুষকে তখন মনে করে তাঁরা কীটপোকা। তাদের সংস্পর্শে যেন শত আবর্জনার ছোঁয়া। এক জরিপে দেখা গেছে, উচ্চবিত্তরা মধ্যবিত্তদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা দূরের কথা, রাখতেও চায় না। তা হলে চিন্তার বিষয় নিম্নদের অবস্থার কথা। বিত্তশালীরা সব সময় অহংকারী হয়। তাঁরা ছোটজনদের সঙ্গে কথা বললে বিরক্ত বোধ করে। আত্মীয় ছোট হলে তাদের সঙ্গে আত্মীয়তা বজায় রাখতে চায় না। এরকম আত্মীয়ের আগমনে অস্বস্তি বোধ করে। কথা বলতেও মন চায় না। যদিওবা বলতে হয়, তা হলে খুব সীমিত। এমন বিত্তবান আত্মীয় থেকে দূরে থাকা ভাল। আমার কথা হল, তুমি যেখানে বড় সেখানে আমি কেন ছোট?

শহরের এ সড়কগুলোতে যানবাহনের যেমন ব্যস্ত চলাচল, তেমন পথিকেরও চলাচল কোন অংশে কম দেখা যায় না। আমি এসব দেখছি আর ভাবছি, আশ্চর্য এক দেশ। একজন দোকানদার তাঁর কোষাগারে বসে বারবার আমাকে পর্যবেক্ষণ করছে। মনে হচ্ছে ভদ্রলোক কিছু একটা বলবে। ইশারা পেয়ে কাছে গেলাম। সালাম বিনিময়পর চেয়ার টেনে বসতে দিলেন। বেচারা আমাকে তাঁর জীবনে ঘটে যাওয়া এমনই এক দুঃখের কিচ্ছা শুনালেন। গল্প অতি দীর্ঘ না হলেও অত্যন্ত করুণ বটে। সেকথা আর উত্থাপন করলাম না। কারণ প্রতিদিন একই খাদ্যে যেমন রুচি লাগে না, তদ্রূপ এক জিনিস বারবার প্রদর্শনে বিরক্তি আসে। ভদ্রলোকও বললেন, বর্তমানে গাড়ির মালিক যারা রাস্তার মালিকও তারা। কথাটা অসমীচীন হতে পারে তবে অবাস্তবও মনে করা যাবে না। আজকাল যেহারে ধনী বাড়ছে সেহারে যদি মানুষের বুদ্ধিবিবেক বাড়ত তা হলে বোধ হয় আজ পৃথিবী স্বর্গে পরিণত হত। বিশ্বমানবনীতি আজ কোথায়? শিক্ষানীতিতে দেখ ত, নীতির কোন শিক্ষা আছে কিনা? ছাত্রীকে ধর্ষণ করছে শিক্ষক! আবার দেখা যাচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষিকাকে নাজেহাল করছে ছাত্র! সমাজে চলছে অনৈতিক কার্যকলাপ। সমাজপতিরা দেখাচ্ছে অর্থপতির পূজারি, প্রভাব কাটাচ্ছে সহায়সম্বলহীনদের উপর। কিছু মৌলবি ফতোয়া জারি করছে অভিনবকায়দায়। ভণ্ডদের ভণ্ডামিতে মুগ্ধ হচ্ছে ভক্ত। অর্থনীতিতে চলছে লুটপাট। রাজনীতিতে চলছে হানাহানি। আইনের দেবতা চলছে বে-আইনের পথে। তা হলে আইন কোথায়? মানুষ নোংরামি করতে একবিন্দু দ্বিধা করছে না। আল্লাহ্ তবে আঠার হাজার মখলুকাত বা কুলকায়েনাত সৃষ্টি করেছেন মাত্র ছয় দিনে। কিন্তু মানুষ সৃষ্টি করতে নাজানি কত যুগ সাধনা করতে হয়েছে! আজ নিচে দেখে ত সম্ভবত লজ্জা অনুভব করে আর বিদ্রূপের হাসি হাসে এবং বলে, সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে উত্তমসৃষ্টি করছিলাম মানুষ; কিন্তু নিচে দেখি ত আফসোস...

প্রায় দেড় ঘণ্টাপর চল্লিশোর্ধ্ব এক ভদ্রলোক--ভদ্রলোক বললে হয়তো ভদ্রলোকের অপমান হয়। হাঁ, আলালের বিকৃত দুলাল অবশ্য বলা যাবে। খোঁচা খোঁচা দাড়ি, মোটা গোঁফ, পায়ে ক্যাস্, পরনে বাদামি জিনস্ আর সাদার উপর নীলদাড়ি শার্ট চোখে কালো চশমা। সহজেই বুঝা যাচ্ছে দম্ভ প্রকৃতির লোক। হাতের আঙুলে চাবির একটা রিং ঘুরাতে ঘুরাতে সাদারঙের গাড়িটাকে লক্ষ্য করে আসছে। দোকানি ভদ্রলোক বললেন, এ নবাবজাদারই ত সাদা গাড়িটা।
আমি বললাম, কিছু একটা বলি?
দোকানি ভদ্রলোক বাধা দিয়ে বললেন, কোন লাভ হবে না ভাই, পরে আপনাকেই দুচার কথা শুনতে হবে। এরচেয়ে নীরব থাকা ভাল।
আমি দুঃখ প্রকাশ করে বললাম, এভাবে অন্যায় কি চলতেই থাকবে?
দোকানদারজন হেসে বললেন, কোন উপায় নেই। আপনি ন্যায়কথা বলে দেখেন কয়জনের সঙ্গ পান। আর অন্যায় করে দেখেন কত বাহবা আসে! আজকাল আইনের কথা বলেও কোন লাভ নেই। দেখতে হবে আইনের নিয়ন্তা কে? নিশ্চয় ফেরিশতা নয়। মানুষ যেখানে নিয়ন্তা সেখানে সুফল আশা করা যায় না।

টার্নের আগে একজন ট্রাফিক প্রত্যেক গাড়িকে নির্দেশনা দিচ্ছে। কালো গাড়িটার পাশে দুজন সার্জেন্ট দাঁড়িয়ে আছে। আমি নিস্তার পেয়ে মোটরবাইকে বসছি। নবাবজাদা কিঞ্চিৎ ভ্রুক্ষেপ না করেই চালকাসনে বসেই চলদিল ভোঁ। তাকে ট্রাফিক বা সার্জেন কেউ কিছু বলল না! আধা রাস্তাজুড়ে অবৈধভাবে গাড়ি দাঁড় করানোর কৈফিয়ত কেউ চাইল না! তাই অপরাধীরা এভাবে অপরাধ করার সাহস পাচ্ছে এবং অন্যকে অপরাধ করার প্রেরণা দিচ্ছে। একে ত আমরা একে দেখার অভ্যস্ত। একজন যা করল তার পিছে পিছে ছুটি। বিচারে বসি ত মান্য একজন কী বলল তাঁর মন্তব্যের উপর ভিত্তি করে সকলে একই মন্তব্য করি! বক্তৃতামঞ্চে এক নেতা বা নেত্রী যেবক্তব্য পেশ করল তাঁর ভিত্তিতে একই কথা ঘুরেফিরে সকলে দৌড়াই! বিবেক খাটিয়ে ভালমন্দের বিচার করতে পারি না। আমাদের কাণ্ডজ্ঞান এতই নিকৃষ্ট যে, কাউকে ভাল করতে দেখলে তার সমালোচনা করি। আমাদের আছে কেবল গর্ব করার মতো পরনিন্দা। সিনেমা-নাটক দেখে নায়ক-নায়িকার নামানুসারে সন্তানের নাম রাখি অথবা যুদ্ধবীর কোন রাষ্ট্রপ্রধান ও বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের নামানুসারে। ভেবে দেখি না যে, পদ্মলোচন রাখলেই যে কানা ঘুচে যাবে এমন ত নয়। তা হলে? কানাতে মন্দ কী। নিজের স্বতন্ত্র পরিচয় দিতে যে অক্ষম তাকে সক্ষম মানুষ বলা যায় না।

আমাদের সুচিন্তিত বিবেক বলতে কিছুই নেই। আমরা কোনকিছুই ভেবেচিন্তে করি না! অথচ একটু চিন্তা করলে সবকিছুই স্পষ্ট বুঝা যায়। মানুষ হলে যেকোন কাজে সচেতন হওয়া চাই। নাহলে মানুষ হিসাবে উন্নতি করা খুব কঠিন। তাই বোধহয় জাতি হিসাবে আমরা এখনো পিছিয়ে। যতক্ষণ একজন নাগরিক সচেতন নয়, আইন যতই কঠোর থেকে কঠোর হয়না কেন, ততক্ষণ কোন সাফল্য নেই। কারণ আইন কার জন্যে এবং কেন? যেখানে রথী মহারথীরা আইন মেনে চলতে অক্ষম সেখানে সাধারণ একজন মেনে চলবে এমন কথা ভাবা যায় না। উন্নতদেশে ছোটবড় প্রত্যেক নাগরিক যেমন আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, তেমন দেশপ্রিয়ও বলা যায়। তারা এমন কোন কাজ করবে না যা আইনের নথিবহির্ভূত। তবে ভুলক্রমে কেউ যদি এমন অপরাধ করেওবা তাঁকে মহা দণ্ডের সম্মুখীন হতে হয়। যেমন? একজন নগরপিতা খোদ অবৈধপার্ক করা গাড়িকে যখন সাজা দেয় তখন গাড়িমালিকের অপমান মনে করা হয় মৃত্যুদণ্ডসমান। আর এখানে গাড়িকে সাজার কথা দূরে থাক, দণ্ডও যে হওয়ার নয় সেটা নিশ্চিত। তা হলে আইন কোথায়? বর্তমানে মানুষচলাচলের সামান্য ফুটপাত পর্যন্ত দখলে নিয়েছে সাহেবদের গাড়ি! পথচারীর যা দুর্ভোগ। তারা অসতর্ক হলে টোকর খেয়ে পড়ছে নালানর্দমায় এবং ভাঙছে হাতপা আর নাহয় শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গে পাচ্ছে আঘাত। পথচারী ভাঙুক অথবা মরুক সাহেবদের কিছু যায় আসে না, ওঁদের গাড়ি ঠিক থাকলে হয়। কারণ দামি বলে কথা। তাতে যদি একটু আঁচড় লাগে তা হলে সাহেবদের মহা ক্ষতি হয়। তাই পথিকগণ নিজের অঙ্গহানি করে হলেও সাহেবদের এসব গাড়ি বাঁচাতে হয়। তা নাহলে সাহেবদের দন্ততলে চর্বণ হতে রক্ষা নেই।

দিনদিন মানুষ যেহারে শহরমুখী হচ্ছে; কেউ জীবনের তাগিদে, কেউ জীবিকার তাগিদে, কেউ ছেলেমেয়েকে উচ্চশিক্ষিতের মাধ্যমে মানুষের মতো মানুষ গড়ার তাগিদে। সেহারে শহর যেমন সম্প্রসারিত হচ্ছে না তেমন মানুষের মনমানসিকতারও পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। দিন যতই অগ্রসর হচ্ছে পৃথিবীর রূপ কিন্তু ততই পাল্টে যাচ্ছে। শুধু মানুষের রূপের পরিবর্তন হচ্ছে না! এককালে গ্রামের মানুষকেই সহজসরল বোকা মনে করা হত। আজকে সেই সুযোগ নেই। আজকে একজন গ্রাম্যকে বহুদর্শী বলতে হবে। হোকবা অশিক্ষিত অথবা অল্পশিক্ষিত। কারণ আজকাল গ্রামের মানুষরাই বেশির ভাগ দেশবিদেশ ঘুরছে। কথায় আছে, জন্ম থেকে যেচোখ বাইরের আলো দেখে নি সেচোখ অন্ধই বটে।

যেই জাতি ভালমন্দ নির্ণয় করতে পারে না সেই জাতিকে নিয়ে গর্ব করা চলে না। আমরা সকলেই তবে সুনাগরিক। কিন্তু দেশপ্রেমিক হতে পারি নে। সুনাগরিক এবং দেশপ্রেমিকের মধ্যে অনেক তফাত। উস্কানি পেয়ে যে নিজের রাষ্ট্রসম্পদের ক্ষতি করতে পারে, সে নাগরিক হতে পারে কিন্তু দেশপ্রিয় হতে পারে না। মানুষ যতক্ষণ তার বিবেকের কাছে বড় হবে না ততক্ষণ তাকে মানুষ হিসাবে গণ্য করা যাবে না। একজন রাষ্ট্রপ্রধান থেকে আরদালি পর্যন্ত সুনাগরিক বটে। আর যেখানে এসব সুনাগরিকরাই দুর্নীতিগ্রস্ত সেখানে সাধারণ নাগরিকরা আর কতই ন্যায়নীতির হিসাব করে চলতে পারে?
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ঝরা লিখতে থাকেন বলতে থাকেন,দেখাযাক বদলাতে পারিনাকি আমরা।
আখতারুজ্জামান সোহাগ গল্পের ছলে বলেছেন আমাদের সামাজিক অবক্ষয়ের কথা, আমাদের তলানিতে ঠেকা মূল্যবোধের কথা। লেখার স্টাইলে পিন ঢোকানোর ব্যাপার আছে। ভালো লাগল।
অপদেবতা সুন্দর , একটু প্রবন্ধ টাইপ, েলখনির স্টাইল ভাল লাগল
শামীম খান সুন্দর লেখাটি । আমাদের অনেক কাজেই অন্যদের সমস্যা হয় , আমরা তা বিবেচনায় নেই না । আমাদের অনেক কাজ ই করা দরকার , কিন্তু ছেড়ে দেই - দেখার/ কইফিয়ত নেবার কেউ নেই তাই । আমরা বিবেককে জিগ্যেস করলে ঠিক উত্তর পাই । কিন্তু বিবেকের ডাকে সাড়া দিলে প্রায়শই লোকে আমাদের বোকা , কাণ্ডজ্ঞানহীন , অচল ভাবে । আমাদের তাহলে কি করা উচিত ? লোকে যা ই বলুক ঠিক কাজটা করতে হবে । একা করতে সমস্যা হলে জনমত গড়তে হবে । আমরা ভুল করলে কে আর ঠিক করবে , আমরা ই তো মানুষ । লেখককে অনেক ধন্যবাদ । শুভেচ্ছা ।

০২ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৭৯ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪