রান্নাঘর ও ফ্যাশন

রম্য রচনা (জুলাই ২০১৬)

Azaha Sultan
  • 0
  • 0
  • ২০৩
আজকাল টিভি চালু করলেই টক শো আর রান্নাঘরের প্রোগ্রামগুলো বেশ নজরে আসে। খুব ভাল কথা। কিছু জিনিস যত বেশি হয় তত আনন্দের বটে তবে সুখের বলা যায় না। আনন্দ আর সুখের মধ্যে বেশ তফাৎ। টিভিসেন্যালও তাই। কেননা ‘ক্ষতি’ জিনিসটা যেমন ভাল নয় তেমন ‘অতি’ জিনিসটাও সুখের নয়। অতিরিক্ত বা অতিরঞ্জিত সবকিছু বেমানান। আজ দুনিয়াজুড়ে অতি ফ্যাশনের একটা রীতিরেওয়াজ চালু হয়ে গেছে! এটা আনন্দের হতে পারে কিন্তু সুখের নয়। আমরা জাতে বাঙালি--আমাদের একটা নিজস্ব পরিচয় আছে, রক্তদানের মতো ভাষা আছে, ঐতিহ্য আছে, সংস্কৃতি আছে সেটাকে পৃথিবীর কোনো জাতির চেয়ে, ভাষার চেয়ে, ঐতিহ্যের চেয়ে এবং সংস্কৃতির চেয়ে কোনো অংশে কম মনে করি না। আমাদের সাহিত্য-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি অতুলনীয়। তবু আমরা নিজের সবকিছু তুচ্ছ ভেবে পরের একটুকিছু উচ্চ মনে করি! কারণ আমরা ভেজালে অভ্যস্ত, খাঁটি জিনিস আমাদের পেটে সইবে না।

সেদিন বাংলা কয়েকটা সেন্যালে একসঙ্গে সম্প্রচার হতে দেখলাম রান্নার একটি কার্যক্রম। আজকাল পৃথিবীজুড়ে খাওয়ার যে একটা প্রতিযোগিতা চলছে সেটাকে এযুগের অপূর্ব পন্থা বলা যায়। বর্তমানে রাঁধুনি নয় অরাঁধুনিও রান্নাঘরের বইপত্তর লিখে রাতারাতি খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছা সম্ভব। রান্নাবান্নার উপর ডক্টরেট ডিগ্রি পাওয়া সেই আর বেশি দূরের রাস্তা নয়। থাক সেসব কথা, যেসব কথা নিয়ে আমাদের এ আলোচনা সেকথা আগে বলি--একজন উপস্থাপিকা উপস্থাপন করছে স্যুপের একটা রেসিপি। এসব খাবার একটু ব্যয়বহুল হলেও আনন্দ পাওয়া যায় ঢের। অনেক খাবারের মধ্যে স্যুপ শুধু আমার নয় অনেকেরই একটি প্রিয় খাবার বলা যায়। তাই অত্যাগ্রহ নিয়ে দর্শকসারিতে বসলাম। রাঁধুনি-উপস্থাপিকা খুব সুন্দরভাবে তার উপকরণগুলো একটি একটি করে পাত্রে ঢালছে আর এক-একটি উপকরণের পরিচয় করাচ্ছে : তেল পানি লবণ পাশাপাশি আবার পরিচয় দিচ্ছে ইংরেজিতে--ওনিয়ন, গার্লিক, জিঞ্জার, ক্যারেট, ব্ল্যাক পেপ্পার, রেড চিল্লি, টারমারিক, করিয়ান্ডার সিড, করিয়ান্ডার লিফ্ বা গ্রীন লিভ্‌‌স্, লাইম ইত্যাদি! শুনে বিরক্তি মনে অস্বস্তি বোধ করলাম এবং নিজেকে খুব অভাগা দেশের নাগরিক মনে করলাম। বাংলার উপস্থাপিকা, বাংলার প্রোগ্রাম, বাংলার সেন্যাল--বাংলায় যেখানে চলছে উপস্থাপন সেখানে যদি উপস্থাপিকা এমন অবাঞ্ছিত কাণ্ড করে, তা হলে আমাদের চেয়ে অভাগা দর্শক আর কে হতে পারে? যেই ভাষায় সাধুচলিত মিশ্রণে গুরুচণ্ডালী হয়, সেই ভাষায় ইঙ্গু-বাংলা মিশ্রণে কী হতে পারে? আর নাইবা হল ক্ষতি, আমি যা হই তার পরিচয় কম কিসে?

আমরা জানি, একজন উপস্থাপক বা উপস্থাপিকা পৃথিবীর অন্য কোনো ভাষাতে নাহোক অন্তত ইংলিশে এক্সপার্ট। আর ইংলিশ একটি আন্তর্জাতিকমানের ভাষা ওটা আয়ত্ত করা ভাল, না জানলে কেউ অচল মনে করা ঠিক নয় তবে তাকে শিক্ষিত বলা যায় না ঠিক। কিন্তু এ পৃথিবীতে প্রায় মানুষ নিজের ভাষার বদৌলতে আকাশে বিরাজ করে গেছে এবং করে যাচ্ছে এটা যেমন ঠিক তেমন অনেককে অন্যের ধারেকাছেও যেতে হয়নি এটাও বেঠিক নয়। আমরা আসলে সবকিছুতে অত্যুক্তি করতে ভালবাসি। আমাদের মনে রাখা ভাল, অত্যুক্তি যেখানে সেখানে সকলেই বিরক্ত হয়। পাগলের পাগলামি যেমন সহ্য করা যায় না তদ্রূপ বাচালের বাচালতাও অসহ্য। বিভিন্ন ভাষা থেকে কিছু শব্দ আমাদের বাংলাভাষায় এসে আজ পাকাপোক্ত স্থান দখল করে বসেছে এগুলোকে যেমন বিকৃত করা যায় না তেমন স্থানচ্যুত করাও যাবে না আর। আদা, পিয়াজ, রসুন, হলুদ, মরিচ, ধনিয়া বা ধনেপাতা ইত্যাদি আজ বাংলাভাষার কত সুন্দর এক-একটি নাম। আর এত সুন্দর সুন্দর নামগুলো উচ্চারণে উপস্থাপিকার এত লজ্জা কেন মনে হল জানি না। আসলে কিছু মানুষ পরের ধনে পোদ্দারি করতে অভ্যস্ত! তাদেরকে আমরা মানুষ হিসাবে ত গণ্য করতে পারি তবে মান্য করতে পারি কি?

এ যে ইঙ্গু-বাংলার মিশেল, এটাকে কি ফ্যাশন বলব নাকি ঢং? এ অভিনব কাণ্ডটা কিন্তু বেশির ভাগ আমরা ভারতীয়দের মধ্যে লক্ষ করি, পৃথিবীর অন্যান্য জাতির মধ্যে আছে কিনা আমার জানা নেই তবে থাকলেও খুব কম? কিন্তু ইংরেজদের মধ্যে ত মোটেও নেই বলা যায়? কারণ তারা আর মিশাবেইবা কী। ভারত বিভিন্ন ভাষার একটি দেশ, তাদের একস্থানে অনড় থাকা সম্ভবত দুষ্কর। কিন্তু আমাদের তা মনে হয় না। এ কার্যক্রম দোষের না হলেও বড়ই হাস্যকর। একজন উপস্থাপক-উপস্থাপিকাকে মনে রাখতে হবে, এধরণের রান্নাবান্নার প্রোগ্রামগুলো কিন্তু বেশির ভাগ গৃহিণীদের খাতে পড়ে। তা হলে? যেদেশের বেশির ভাগ মানুষ এখনো অশিক্ষিত বা অল্পশিক্ষিত সেদেশে গৃহিণীদের শিক্ষার হার কত হতে পারে? একজন উপস্থাপক-উপস্থাপিকাকে এ কথাটা মনে রাখা দরকার। আপনি পিয়াজ-রসুন-আদা-মরিচের জায়গায় স্টাইল বা ফ্যাশন দেখাতে গিয়ে শিক্ষিত বুঝাবেন সেখানে আপনার বুঝা দরকার আপনি বোকামি করছেন। কারণ এ অনুষ্ঠান কোনো বিদেশিদের লক্ষ্যে প্রচার নয়। এ অনুষ্ঠানপ্রচার একমাত্র বাঙালিজাতির উদ্দেশ্যে। আর অন্য জাতিরা ভুলেও দেখবে না। যেহেতু আপনি একজন বাঙালি এবং অনুষ্ঠান প্রচার করছেন বাংলায় সেহেতু আপনার প্রোগ্রাম থেকে অন্যজাতির কোনো ফল হওয়ার আশা নেই। তা হলে? আমার নিজস্ব পরিচয় থাকতে আমি অন্যের পরিচয় দিয়ে কেন বুঝাব? আপনার এমন একটি অনুষ্ঠান থেকে অনেকের অনেক কিছু পাওয়ার আছে, শিখার আছে; তা হলে আপনার মাধ্যমে কে কতটুকু উপকৃত? আপনার অনুষ্ঠান থেকে যদি কেউ কিছু শিখতে বা উপকৃত হতে নাপারল, তবে আপনি বা আপনার প্রোগ্রাম কতটুকু সার্থক? কারণ আমার মতো অশিক্ষিত যেখানে আপনার এধরণের আচরণে কোনো উপকার অনুভব করতে পারল না, সেখানে বাংলাদেশের আশি ভাগ অশিক্ষিতা বা অল্পশিক্ষিতা গৃহবধূরা কি উপকৃত হতে পারবে? কেননা আপনার ওনিয়ন, গার্লিক, জিঞ্জার, ক্যারেট, ব্ল্যাক পেপ্পার, রেড চিল্লি, টারমারিক, করিয়ান্ডার লিভ্‌সের বই খুঁজতে খুঁজতে একজন রাঁধুনি তার স্বাদের রান্নার সর্বনাশ যে করবে না এ গ্যারান্টি কে দিবে? আপনি প্রোগ্রাম করছেন মানুষের উপকারের জন্যে আর আপনার কার্যক্রমে যখন কেউ উপকৃত হতে পারল না, তা হলে এমন প্রোগ্রাম প্রচারের প্রয়োজনীয়তা কী?
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

০২ মার্চ - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৭৯ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“এপ্রিল ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ এপ্রিল, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী