"মন দিয়ে পড়, তুমি পড়া না পড়লে ফেল করবে, আর তুমি ফেল করলে আমার পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যাবে।" এই করুন আকুতিতেও মন গলছে না তাসকিনার। সে পড়াশুনা না করে কেবল দুষ্টুমি করে যাচ্ছে। আজ বাসায় কেউ নেই তাই তার দুষ্টুমি মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেছে। লাগামহীন ভাবে সে দুষ্টামি করেই যাচ্ছে। আর হেসে হেসে বলছে "মাস্টার মশাইয়ের আজ খবর আছে।" এ কথা শুনে জাফরের মাথা ভন ভন করে ঘুরছে। অনেক কষ্টে এই লজিংটা জুটেছে কপালে। এই বাসার লোক জনও বেশ ভাল। বড়লোকদের মধ্যে এমন মানুষ খুব কম আছে। একই টেবিলে বসে খাওয়া, একই ধরণের বিছানায় শোয়া, আবার একই বাড়ীর সদস্যের মত সব সুযোগ সুবিধা পাওয়া। সবকিছু মিলে মনেই হয় না এটা লজিং। মা মারা গেছে সাত বছর বয়সে, ছয় বছর পর বাবাও একাকীত্ব সহ্য করতে না পেরে চলে গেল মায়ের কাছে। তের বছরেই জীবন সংগ্রাম শুরু। অনেক জায়গায় ছিলাম সবাই নানান ভাবে নির্যাতন চালাত। ফলে ভাটা পরে যায় পড়ালেখায়। আর কোন সম্ভাবনায় ছিলনা কোন দিন বই নিয়ে স্কুলে যেতে পারবে। ছোট্ট একটা মন তাতে যে পরিমাণ কষ্ট জমা পড়েছে যে তাতে যে পরিমাণে কষ্ট জমা পরেছে যা সারাজীবন কাঁদলেও একটুও হালকা হবে না। মাঝে মধ্যে নির্জনে বসে কাঁদতে হয় আপন মনে। নিবর কান্না ধরা পড়ে দয়ালু তালেব চৌধুরীর চোখে। উত্তরার খ্যাতনামা ব্যবসায়ীদের মধ্যে তিনি একজন। পড়ালেখায় আর যদি কোন কারণে এই লজিংটা হারাতে হয়। তাই কিছুটা বাধ্য হয়েই তাসকিনার শত দুষ্টুমি সহ্য করে জাফর। আজ না জানি কোন কাণ্ড ঘটিয়ে বসে। তাসকিনা বলে "স্যার আমি আপনাকে বিয়ে করবো তাই এখন আপনার সাথে বর বৌ খেলা করবো।" তা কি করে সম্ভব দুষ্টমী করো না এবার পড়তে বস। "স্যার আমি মিথ্যে করে আব্বা আম্মাকে বলে দেব যে আপনি আমাকে রেপ করেছেন। দেখুন ভেবে কোনটা করবেন।" দিল্লিকা লাড্ডু খাইলেও পস্তাবেন না খাইলেও পস্তাবেন। জাফর পড়ল মহাবিপদে। তাই বাধ্য ছেলের মত তাসকিনার প্রস্তাব মেনে নেয়। মেতে উঠে আদিম খেলায় এটাই তার জীবনের প্রথম অভিজ্ঞতা। "তাসকিনা আমার কাছে সত্যি করে বলবে এ সম্পর্কে তোমার ধারনা কোথা থেকে হল? কেন স্যার আমার বান্ধবী সিমা তাদের বাড়িতে ডেকে নিয়ে যায় এবং ভিসিডি তে নীল ছবি দেখায়। সেই থেকে ইচ্ছে করছে বাস্তবে তা করে দেখার জন্য।" "তাসকিনা তুমি জান না আজ যে কাজটি তুমি আমার দ্বারা করিয়ে নিলে,সেটা পাপ মহাপাপ, আল্লাহ আমাদের মাফ করবে না। চল আমরা গোসল করে আল্লাহর কাছে মাফ চেয়ে নেই।" তাসকিনা স্যারের কথামত তওবা করে নিল এক শর্তে আপনি আমাকে বিয়ে করবেন, অন্যথায় আমি আত্মহত্যা করবো। একদিন তাসকিনা তার এক বান্ধবী বাড়িতে জাফর কে নিয়ে যায় পূর্ব পরিকল্পনা মত হুজুর ডেকে বিয়ে করে নেয়। তাসকিনার মা বাবা এখনো জানে না। জাফর আর তাসকিনার জীবন থেমে থাকেনি। জাফর বিএ পাশ করে প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকুরী করে। মাঝে মাঝে বেড়াতে আসে। এদিকে তাসকিনা মা হতে চলেছে বুঝতে পেরে জাফর কে মোবাইল করে ডেকে আনে। কিছু একটা কর। এস এস সি পরীক্ষাও শেষ। এই সুযোগে পালাতে হবে। তাসকিনা নিত্য ব্যবহারের কাপড় একটা ব্যাগে ভরে নেয়। মা আমার পরীক্ষা শেষ মামার বাড়ি থেকে আসি কয়েক দিন। ঠিক আছে যা ভৃত্য কাদের কে বল একটা রিক্সা ডেকে দিতে। ঠিকমত যাবি। গিয়েই কল দিস। মা রিক্সা ভাড়া দিয়ে দেন। তাসকিনা কিছুদূর এসে রিক্সা ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে নেমে যায়। জাফর কে ফোন করে। জাফর এসে বাস স্ট্যান্ডে দাড়িয়ে ছিল। গাজীপুরে এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে জাফরের এক খালার বাড়িতে আশ্রয় নেয়। জাফর কয়েকটা দিন থেকে চাকুরীতে ফিরে যায়। তাসকিনা ফোন বন্ধ করে রেখেছে। যোগাযোগ করা যাচ্ছে না অবশেয়ে ফরিদা বানু তার ছোট ভাই কে ফোন করে। তাসকিনার মোবাইল কি চুরি হয়ে গেছে, আজ কত দিন হয়ে গেল যোগাযোগ করছে না। আগামী কাল তাকে পাঠিয়ে দিস। "কি বলছ আপা ,তাসকিনা আমাদের বাড়ি আসছে? কই নাতো তাকে তো কখনো দেখিনি?" "কি বলছিস তুই মেয়েটা আমার কোথায় গেল। কাদের রিক্সায় উঠিয়ে দিয়েছে," খোঁজা শুরু হয়ে গেছে সব আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে ফোন করলে সবাই না বোধক উত্তর দেয় পাগলের মত খুঁজছে কেউ তাসকিনার সন্ধান পায়নি। হাসপাতাল, মর্গে, থানাতে সব খোঁজা শেষ। পত্রিকাতে নিখোঁজ সংবাদ দিয়েও খুঁজে পেল না তাসকিনা-কে। সবাই হাল ছেড়ে দিয়েছে। এদিকে তাসকিনাকে জাফর একটেল জয় সিম কিনে দিয়েছে। সারা দিন কাজের অবসরে তাসকিনাকে ফোন করে জাফর। প্রায় নয় মাস হতে চলেছে তাসকিনার আল্ট্রসানো করিয়েছে জাফর। রিপোর্টে বলা হয়েছে ছেলে সন্তান আসছে। তাসকিন ও জাফর দু' জনেই খুশি ভেবেছে তাদের ছেলে হলে তাসকিনাদের বাড়িতে যেয়ে মাফ চেয়ে আসবে এবং ঢাকাতে বাসা ভাড়া করে তাসকিনাকে নিয়ে থাকবে। ইদানীং তাসকিনাকে মোবাইল ফোনে বিরক্ত করে। কে বা কাহারা মধ্য রাতে ফোন করে। তাসকিনা জাফরের ফোন ভেবে রিসিভ করে। পর অন্য পুরুষের কণ্ঠ শুনে কেটে দেয়। জাফরকে বলেছে একটেল কোম্পানিতে নালিশ করতে। ঠিক আছে বলব আর বলা হয়নি। আগামী কাল ডেলিভরি হবার ডেট, একটু একটু করে ব্যথা করছে। রাত দুটোর দিকে একটু চোখ লেগে এসেছে, এমন সময় বেজে উঠে মোবাইল ফোন। রাতে মোবাইল চার্জে দিয়ে ঘুমিয়ে ছিল। তাই বিছানা ছেড়ে উঠে এসে ঘুম ঘুম চোখে মোবাইল ধরে। মোবাইল পেঁচিয়ে রেখেছিল বিষাক্ত এক সাপ। মোবাইল ধরতেই সাপ কামড়ে দিল। তাসকিনা চিৎকার করে উঠে। জাফর বিছানা ছেড়ে উঠে এসে লাইট অন করে দেখে বিষাক্ত এক সাপ ঘরের ভেতর। সাপ তাড়িয়ে দিয়ে তাসকিনাকে ধরে ওড়না দিয়ে শক্ত করে বাধে হাতে তারপর হাসপাতালে নিয়ে যায় কিন্তু ফল হয়নি অবশেষে মারা যায়। জাফর কান্নায় ভেঙ্গে পরে আগত সন্তানদের মুখ দেখতে পেলনা। মা ও শিশুকে হারিয়ে নির্বাক। জাফরের ছোট খালা তাসকিনাদের বাসায় ফোন করে তাসকিনার মৃত্যুর সংবাদ দেয়। সবাই ছুটে আসে। হাসপাতালের করিডোরে ভরে যায়। সবাই আসে এক নজর শেষ দেখার জন্য। সান্ত্বনার ভাষা খুঁজে পায়না।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।